(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
فَإِنَّـهُمَا يَـنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُـوْبَ
নিশ্চয়ই হজ্জ ও উমরাহ মানুষের জিন্দেগীর সমস্ত গুনাহখতাগুলি ক্ষমা করিয়ে দেয়। তার রিযিকে বরকত দিয়ে দেয়। সুবহানাল্লাহ! তার অভাব দূর করে রিযিকে বরকত দিয়ে দেয়।
كَمَا يَـنْفِى الْكِيْـرُ خَبَثَ الْـحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ
যেমন লোহা র্যাত দিয়ে পরিস্কার করা হয়, স্বর্ণকে পরিস্কার করা হয়, রুপাকে পরিস্কার করা হয়, তার সমস্ত গালিজগুলো বের করে দেয়া হয়। তদ্রƒপ একজন হাজী ছাহেব উমরাহ্কারী, হজ্জ ও উমরাহ করলে তার জিন্দেগীর সমস্ত গুনাহ্খতাগুলো একদিকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, আরেকদিকে তার অভাব অনটন দূর করে তাকে সচ্ছল করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ!
وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْـرُورَةِ ثَـوَابٌ إِلَّا الْـجَنَّةُ
এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হজ্জে মাবরূরের বদলা জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছু নয়। সুবহানাল্লাহ! যেটা বান্দা-বান্দি, উম্মতের জন্য ফিকিরের বিষয়। হজ্জে মাবরূর করার জন্য যে শর্তগুলি দেয়া হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَمَنْ فَـرَضَ فِيْهِنَّ الْـحَجَّ
যাদের জন্য হজ্জ ফরয, হজ্জ যারা করবে তারা যেন হজ্জে যেয়ে
فَلَا رَفَثَ
বেপর্দা- বেহায়া, অশ্লীল-অশালীন কোন কাজ না করে।
وَلَا فُسُوْقَ
ফাসেকী কাজ, নাফরমানীমূলক কাজ যেন না করে।
وَلَا جِدَالَ فِي الْـحَجِّ
সেখানে ঝগড়া-ঝাটি, মারি-মারি, ইত্যাদি না করে বা মিথ্যাঝুটা না বলে হজ্জের মধ্যে। মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট নিষেধ করে দিলেন। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলতেছেন-
وَمَا تَـفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّـعْلَمْهُ اللهُ
তোমরা যে ভালো আমলগুলি করে থাক, সে বিষয়গুলি মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। অর্থাৎ তোমরা যে আমলগুলি করো ভালো অথবা খারাপ অথবা অন্য কেউ যদি করে থাকে তা মহান আল্লাহ পাক তিনি কিন্তু জানেন।
وَتَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, তোমরা পাথেয় অবলম্বন করো। উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া। সুবহানাল্লাহ! এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলতেছেন-
وَاتَّـقُوْنِ يَاۤ أُولِي الْأَلْبَابِ
হে জ্ঞানী ব্যক্তিরা, ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমরা আমাকে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব উনাকে তোমরা ভয় করো, এ বিষয়ে। অর্থাৎ তোমরা শরীয়তের খিলাফ কাজ করো না হজ্জে যেয়ে। তোমরা বেপর্দা-বেহায়া হয়ো না, অশ্লীল-অশালীন কাজ করো না, নাফরমানীমূলক কোন কাজ করো না। ঝগড়া-ঝাটি, মারা-মারি, কাটা-কাটি, তর্ক-বির্তক ইত্যাদি ফিতনা-ফাসাদ হজ্জের মধ্যে করো না। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন, তোমরা সব অবস্থায় তাক্বওয়ার উপর ইস্তেক্বামত থাকবে। সব অবস্থায় তাক্বওয়ার উপর থাকবে। সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، قَالَ : قَالَ رسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ حَجَّ لِلّٰهِ فَـلَمْ يَـرْفُثْ وَلَـمْ يَـفْسُقْ رَجَعَ كَيَـوْمٍ وَّلَدَتْهُ أُمُّهٗ
যে হজ্জ করলো মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দী সন্তুষ্টির জন্য
فَـلَمْ يَـرْفُثْ وَلَـمْ يَـفْسُقْ
সে বেপর্দা- বেহায়ামূলক কোন কাজ করলো না, নাফরমানীমূলক কোন কাজ করলো না, সর্বপ্রকার অবৈধ, অশালীন, হারাম কাজ থেকে সে বিরত থাকলো
رَجَعَ كَيَـوْمٍ وَّلَدَتْهُ أُمُّهٗ
সে এমনভাবে (হজ্জ থেকে) ফিরে আসবে যেন আজকে তার জন্ম হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হজ্জে মাবরূর যদি সে করতে পারে তাহলে সে নিস্পাপ মা’ছূম হিসাবে তার বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করবে। সুবহানাল্লাহ! এখানেই তাকীদ দেয়া হচ্ছে। আর বিশেষ করে হজ্জে যেতে হলে মূল বিষয়গুলো বলা হচ্ছে, একজন লোকের জন্য যে হজ্জ করতে যাবে সে বেপর্দা-বেহায়া হতে পারবে না, অশ্লিল-অশালীন কাজ করতে পারবে না, নাফরমানীমূলক কোন কাজ করতে পারবে না এবং ঝগড়া-ঝাটি, মারা-মারি, কাটা-কাটি, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদি মিথ্যা, ঝুটা কোন কাজ সে করতে পারবে না। এটা নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। এবং এটাতে যদি সে দৃঢ় থাকতে পারে তাহলে তার জন্য কি হবে? তখন তার জন্য হজ্জে মাবরূর নছীব হবে। হজ্জে মাবরূরের যে বিষয়টা যেটা বলা হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ بُـرَيْدَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلنَّـفَقَةُ فِى الْحَجِّ كَالنَّـفَقَةِ فِى سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ سَبْعِيْنَ ضِعْفًا
হযরত বুরাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلنَّـفَقَةُ فِى الْحَجِّ كَالنَّـفَقَةِ فِى سَبِيْلِ اللهِ سَبْعِيْنَ ضِعْفًا
একজন লোক হজ্জে যে পয়সা খরচ করে, সে পয়সাটা কেমন, মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব উনার রাস্তায় জিহাদ করার সময় যে পয়সা খরচ করা হয় সে পরিমাণ ফযিলত তো অবশ্যই সে লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!
بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
বরং কমপক্ষে সে সাতশতগুণ ফযীলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন। কি বলেছেন পবিত্র কুরআন শরীফে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
مَثَلُ الَّذِيْنَ يُـنْفِقُوْنَ أَمْوَالَـهُمْ فِي سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْـبَـتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْـبُـلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ وَّاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ
মহান আল্লাহ পাক তিনি এখানে বলেন-
مَّثَلُ الَّذِيْنَ يُـنْفِقُوْنَ أَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
ঐ ব্যক্তির মেছাল যে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করে, তা জিহাদ হোক, অর্থাৎ উনার সন্তুষ্টির জন্য যারা খরচ করে
كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْـبَـتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْـبُـلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ
যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য খরচ করে, জিহাদে খরচ করে, রেজামন্দী- সন্তুষ্টির জন্য খরচ করে তাহলে কি হবে? (অসমাপ্ত)