গণমাধ্যমে ভারতের কুখ্যাত হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী মোদীর বরাতে এসেছে- “১৪০ কোটি ভারতীয় বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন” অথচ ভারতে অব্যাহতভাবে চলছে মুসলিম নির্যাতনের ভয়ঙ্কর আর পৈশাচিক সব কাহিনী  প্রধান উপদেষ্টা “বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর কোনো নির্যাতন হবেনা” পরিপূর্ণ আশ্বাস ও আস্থা দিয়েছে কিন্তু ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছে কী? ভারতের মিডিয়া, হাজার হাজার হিন্দুত্ববাদী সংস্থা, ভারতীয় জণসাধারণ হিন্দুদের পক্ষে তোলপাড় তুলেছে কিন্তু ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, ইসলামী মহল তথা বাংলাদেশী জনগণের সমস্বরে আওয়াজ কৈ? কোথায়? তবে কী বাংলাদেশে হিন্দুরা জামাই আদরে থাকবে আর ভারতের মুসলমানরা পৈশাচিক অত্যাচারে জর্জরিত থাকবে এবং নির্বিচারে শহীদ হবে? (নাউযুবিল্লাহ)

সংখ্যা: ২৯৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

(প্রথম পর্ব)

৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশে ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে হামলার শিকার হয়েছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের অতি উগ্রপন্থি দলের নেতাকর্মীরা এসব হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক না দেখে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে মত দিয়েছে ফ্যাক্ট চেকাররা।

ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশের ইসলামপন্থিরা’ একটি মন্দিরে হামলা চালিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, চট্টগ্রামে ধারণ করা এই ভিডিওতে নবগ্রহ মন্দিরের পেছনে অবস্থিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলার ঘটনা দেখা গেছে।

বিবিসি ভেরিফাইয়ের হাতে এই ঘটনার কিছু ছবি এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, হামলার সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবিসহ বেশ কিছু পোস্টার পোড়ানো হয়েছে।

আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গণহত্যা’ চলছে দাবি করে অনেকে সেই ভিডিওগুলো শেয়ারও করছে। বিবিসির মতে, মূলত কট্টর উগ্রপন্থিরা এসব কন্টেন্ট শেয়ার করছে।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি, বাড়িঘর, সম্পত্তি ও মন্দিরে হামলার খবর আসতে থাকে। তার মধ্যেই এমন বহু ভুয়া পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয় যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপরে ব্যাপক অত্যাচার শুরু হয়েছে। এনিয়ে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান চালিয়েছে বিবিসি বাংলার তথ্য যাচাই বিভাগ ‘বিবিসি ভেরিফাই’।

বিবিসি ভেরিফাই-এর মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের অনেকগুলো যাচাই করে দেখা গেছে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের গুজবও ছড়ানো হয়েছে।

ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোদি বাংলাদেশের তথাকথিত হিন্দু নির্যাতন প্রসঙ্গে বলেছে, ‘বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশেষত হিন্দু নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতের ১৪০ কোটি জনগ।’ মোদি আরো বলেছে, ‘১৪০ কোটি দেশবাসী চাইছে, সে দেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করা হোক।

ভারতের নির্লজ্জ ও একপেশে পৃষ্টপোষকতায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় অবৈধভাবে দীর্ঘদিন টিকে থাকা স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ ৫ আগস্ট পতনের কারণে নিজেদের পলিসির ব্যর্থতা ও হতাশা ঢাকতেই মোদির এই প্রতিক্রিয়া, বলেছে অনেকে। তাছাড়া, মোদি কথিত বাংলাদেশের সুখ-শান্তির প্রত্যাশার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার মতো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাদের কোনো কর্মকান্ডে কখনোই পাওয়া যায় না। এগুলো শুধুই কথার কথা, মিথ্যাচারের নামান্তর। বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতির জন্য ভারতই দায়ী।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদির ৬৩ শতাংশ ভাষণ ছিল ঘৃণা উদ্রেককারী। গত ১৬ মার্চ নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার পর জনসভায় মোদির দেওয়া ১৭৩টি বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, ১৭৩টির মধ্যে ১১০টি (৬৩ শতাংশ) ভাষণে মোদি ‘ইসলামভীতি’ নিয়ে মন্তব্য করেছে। আর সে এই কাজ করেছে রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে।

১৪ আগস্ট প্রকাশিত এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদি এমন কথা বলেছেন, যা শুনে মনে হয়, একমাত্র মুসলমান সমাজই আগামী দিনে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদির হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার ৯ জুন থেকে নতুন মেয়াদ শুরু করেছে। তৃতীয়বারের এই মেয়াদ শুরুর আগে প্রচারণার সময় প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্য, শত্রুতা ও সহিংসতাকে উসকে দেওয়া হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করছে, ধারাবাহিকভাবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই ধরনের ঘৃণা উদ্রেককারী মন্তব্য করার কারণে ভারতে মুসলমান ও খ্রিষ্টান-এই দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরই হামলার ঘটনা বেড়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপির নেতৃত্বাধীন বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই মুসলমানদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসা ধ্বংস করেছে এবং এমন সব কাজ করেছে, যা বেআইনি। নির্বাচনের পর এই কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে।

মোদির মুসলিম-বিদ্বেষের ইতিহাস নতুন নয়। এই লোক গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালেই মুসলিম-বিদ্বেষ ও মুসলিম নির্যাতনের রেকর্ড করে এসেছে। বহু মুসলিম ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকসহ অসংখ্য মুসলমানকে হত্যা ও নির্যাতনের জন্য সে গুজরাটের কসাই হিসেবে কুখ্যাত হয়েছিলো। এমনকি আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের ভিসাও তার জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সে ব্যক্তিই পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলে ভারতের কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা কংগ্রেসও মুসলমানদের সাথে কোন ওফাদারি বা বিশ্বস্ততার আচরণ করেনি; তবুও বিজেপির এবং আরো নির্দিষ্ট করে বললে মোদির আমলেই সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হচ্ছে ভারতের মুসলিম সমাজ।

ঠুনকো বিষয় নিয়েও নির্মমভাবে শহীদ করা হচ্ছে মুসলিমদের। দখল করা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো। সেখানে বানানো হচ্ছে মন্দির। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মিরে চলছে নির্যাতনের কঠিন পরিস্থিতি। রাজ্যটির বিশেষ বিধানও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলীদের ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি স্থাপনের মতো কাশ্মিরেও হিন্দুদেরকে নিয়ে জবরদখল করানো হচ্ছে। যেন রাজ্যটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার অবস্থান হারায়। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মুসলিম রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সমাজপতিদের কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে চরমভাবে।

আসামে তার দলের সরকার তো তিন কোটি মুসলমানকে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী বলে আদালতে মামলাই ঠুকে দিয়েছে! ২০১৮ সালের এক জনসভায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বলেছিলেন, ‘ভারতে অবৈধভাবে আসা বাংলাদেশীরা অনুপ্রবেশকারী। তারা আমাদের দেশকে উইপোকার মতো খেয়ে ফেলছে।’

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি প্রবীণ তেগোরিয়ার দাবি, ‘ভারতে প্রায় তিন কোটি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী রয়েছে।’

লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের দ্বিমুখী নীতি প্রতিফলিত হচ্ছে। একদিকে তারা ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন ও সরকার গঠনে অনেকটা প্রকাশ্যেই হস্তক্ষেপ করে আসছে। এদেশের আওয়ামীলীগ সরকারের কতিপয় মন্ত্রীও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে দ্বিধা করেনি, সরকারও ভারত এবং ভারতের বর্তমান সরকারকে শ্রেষ্ঠ বন্ধু মনে করেছে। দিয়ে দিচ্ছে অবারিত সুযোগ-সুবিধা। অথচ সে ভারত ও তার সরকারই কি না তার দেশের মুসলমানদের নির্যাতনের সকল দ্বার খুলে দিয়েছে। এমনকি তাদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলে নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়নে তৎপর হয়ে উঠেছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও মোদির এধরনের মুসলিম-বিদ্বেষী অপতৎপরতার

শক্ত জবাব দেয়া ও ব্যাপক প্রতিবাদ-প্রতিরোধের এখনই সময়। ভারতের কোটি কোটি মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে সরব হয়ে জেগে উঠতে হবে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)

-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিলআলুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৪৯

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৮

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৪৯

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাউসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী