তাফসীরুল কুরআন : কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৯

সংখ্যা: ১৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

وَاِذَا قِيْلَ لَـهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ

তরজমাঃ যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, কখনই নয়, বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তার অনুসরণ করবো। যদিও তাদের বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিল না এবং তারা সৎ পথে পরিচালিত ছিল না। (সূরা বাক্বারা-১৭০)

তাফসীরঃ আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি নাযিলকৃত তিনখানা কিতাব-তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইন্জীল শরীফ এবং একশ’খানা ছহীফা শরীফ-এর হুকুম এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানবরচিত সকল মতবাদ বাতিল ঘোষণা করে তাঁর যিনি হাবীব, যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, যিনি কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে হিদায়েতকারী, সাক্ষ্য দানকারী, সতর্ককারী, সুসংবাদ দানকারী হিসেবে দ্বীন ইসলাম দিয়ে, কুরআন শরীফ দিয়ে, হাদীছ শরীফ দিয়ে যমীনে পাঠিয়েছেন।

কাজেই, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনের পর তাঁর প্রতি নাযিলকৃত কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর হুকুম তথা আদেশ-নিষেধের বিপরীত অন্য কোন দ্বীন-ধর্ম ও মতবাদের অনুসরণ অনুকরণ চলবে না। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফ-এর একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফ-এর একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনে চুপ থাকলেন। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এ অবস্থা দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কিরূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। আর আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী ও রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছি। অতঃপর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কসম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এখন যদি তোমাদের মাঝে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম (যার উপর তাওরাত শরীফ নাযিল হয়েছে) যাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে উনার অনুসরণ করতে তথাপিও তোমরা সঠিক পথ অর্থাৎ হিদায়েত থেকে অবশ্যই বিচ্যুত হয়ে যেতে অর্থাৎ গুমরাহ হয়ে যেতে। এমনকি আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও অবশ্যই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)

বণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীয়ত তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর পরিপূর্ণ আহকাম বা বিধান আসার পর আর কোন দ্বীন-ধর্ম ও মতবাদের নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন বান্দা ও উম্মতের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা সম্পূর্ণরূপে পরিহারযোগ্য।

অথচ আশ্চর্য! কি সাধারণ মুসলমান, কি মুসলমান রাজা-বাদশা, আমীর-উমারা ও সরকার আর কি মুসলমান মাওলানা-মুফতী, মুহাদ্দিছ-মুফাসসির, ইমাম-খতীব, ছূফী-দরবেশ, পীর-মাশায়িখ, আমীর-মুরুব্বী সকলেই একসাথে মিলে ইহুদী-নাছারাদের প্রবর্তিত গণতন্ত্র করছে। নাঊযুবিল্লাহ। কট্টর হিন্দু মহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রবর্তিত হরতাল করছে। নাঊযুবিল্লাহ। কট্টর নাস্তিক মাওসেতুংয়ের প্রবর্তিত লংমার্চ করছে। নাঊযুবিল্লাহ। এমনিভাবে তারা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফবিরোধী বেদ্বীন-বিজাতীয়দের কর্মপদ্ধতি অসংখ্য হারাম ও কুফরীকে সমর্থন করছে এবং তার মধ্যে গা ভাসিয়ে চলেছে। যেমন গান-বাজনা, ছবি, টিভি-সিনেমা, বেপর্দা-বেহায়াপনা, খেলাধুলা ইত্যাদি।

এসব মুসলমান নামধারী ব্যক্তিদের কি ফায়ছালা? মূলতঃ তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাকই ফায়ছালা জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- “আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর তাঁর নাফরমানী করে এবং তাদের নিকট কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সুস্পষ্ট বিধান আসার পর তা অমান্য করে। এরা মূলতঃ যালিম। আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। অনন্তকাল ধরে সেই লা’নতের মধ্যে তারা থাকবে। তাঁদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তাদেরকে ফুরসতও দেয়া হবে না। (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৮

তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১০

তাফসীরুল কুরআন:  কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১১

তাফসীরুল কুরআন: মুসলমানের জন্য ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম ও মতবাদের নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা কুফরী