‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

সংখ্যা: ১৭৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

{কারো উপর ভর করে পাপের প্রচলন করার ইবলিস কাহিনী ইতিহাসে অনেক পুরানো। কাবিলের দ্বারা- হত্যা, আমর বিন লুহাইর দ্বারা- মুর্তি পূজা, হযরত লুত আলাইহিস্ সালাম-এর ক্বওম দ্বারা সমকাম, জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামকে আগুনে নিক্ষেপকারীদের সর্দারের দ্বারা ব্যভিচার ও টিপ প্রচলন- ইতিহাসে ইবলিসের এরকম বহু নজীর। আর সম্প্রতিক সময়ে এদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ প্রর্বতনে ইবলিসের নতুন সংযোজন, ইবলিসের মুয়াজ্জিন শফিক রেহমান।

১৯৯৩ সালের সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে ছোট এক লেখার মাধ্যমে লোফাফার শফিক রেহমান যদি এদেশে ভ্যালেন্টাইন ডে সংস্কৃতি চালুর জন্য অভিযুক্ত হয় তবে আজকের রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের উৎসবের জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত করতে হয় তথাকথিত ছায়ানটের অধ্যক্ষ সানজীদা খাতুন ও নাওয়াজেশ আহমেদকে। ১৯৬৭ সালে তারাই প্রথম আজকের রমনার অশ্বথ মূলে (প্রকৃতপক্ষে বটমূলে নয়) পহেলা বৈশাখের এ উৎসব চালু করে।

আজকের পহেলা বৈশাখের নামে জান্তব মুখোশ র‌্যালীর প্রচলন ঘটায় চারুকলার ছাত্ররা ১৯৮৯ সালে। আর পান্তা-ইলিশের প্রচলন ঘটায় বোরহান আহমেদ গং ১৯৮৪ সালে।

এসব তথ্যকণিকা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয় যে, আজকে পহেলা বৈশাখের নামে যে মাতামাতি চলছে তা আসলে বাঙালী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা নয়, বিকাশ তো মোটেও নয়। সুতরাং অতি উৎসাহী দু’একজনের আহ্বানে মাতোয়ারা হওয়া বাঙালী সংস্কৃতির অবগাহন প্রমাণ করে না। বরং চিলে কান নিয়েছে ঘোষণাকারীর পিছনে হুযূগে মাতা বাঙালীর হুযূগী মনোভাবই প্রতিভাত হয়।

এক্ষেত্রে তাই চিলে কান নেয়নি এ ঘোষণাটাই হুযূগে মাতা বাঙালীর হুযূগ থেকে উত্তম। একইভাবে উৎকৃষ্ট কথিত পহেলা বৈশাখ ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানের জন্য পালনীয় নয় এ আহ্বানও।

 এক সানজীদা খাতুন, বোরহান আহমেদ আর চারুকলার কিছু ছাত্ররা যদি পহেলা বৈশাখের নামে এমন উন্মাদানা তৈরি করতে পারে তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে উলামায়ে হক্কানী রব্বানীর কি এই অধিকার নেই যে, বিভ্রান্ত, পথহারা মুসলমানদের ইসলামের পথে আহ্বান করা। শরীয়তের সীমারেখা বর্ণনা করা।

কারণ, পহেলা বৈশাখে মাতোয়ারা বিভ্রান্ত মুসলমান কখনো বলেনি যে, তারা ইসলাম ত্যাগ করেছে। বরং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে গিয়েও তারা স্বীকার করে যে তারা মুসলমান। অথচ পহেলা বৈশাখের তথাকথিত আনন্দ যে মুসলমানিত্বের বাইরে এ অনুভবের ঘাটতি তাদের মাঝে বিরাজমান।

এ ঘাটতির পিছনে দায়ী তথাকথিত সংস্কৃতিবাদী এবং ধর্মব্যবসায়ী, জামাতী, খারিজী, রাজাকার আল বাদরদের কুপমু-তা ও আদর্শহীনতা তথা আমলহীনতা। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক মহা অবিমৃষ্যকারীতা ও ঢের অনৈসলামীপনা। এ গোলকধাধা হতে বেরিয়ে আসতে হবে মুসলমানকে তার নিজের তাগিদেই। নিজেদের কল্যাণেই। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে তৌফিক নছীব করুন, কবুল করুন। (আমীন)}

(ক)

আজকের পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিকে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হাজার বছরের ঐতিহ্যম-িত বলে দাবী করা হচ্ছে। বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনা বলে ঢোল সহরত বাজানো হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন পহেলা বৈশাখেই আজকের কথিত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক। এতদ্বপ্রেক্ষিতে সরকারকেও বেশ তটস্থ থাকতে হয় বা সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নিবেদিত, সক্রিয় তথা তরিৎকর্মা থাকে যাতে পহেলা বৈশাখের চেতনা প্রতিফলনে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি না হয়।

অথচ পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতি দিনে দিনে পরিবর্তিত হয়েছে। আর এ পরিবর্তনের পথ ধরেও অনেক অনাকাঙ্খিত অসত্য অগ্রহণীয় দিক সংযুক্ত হতেই পারে। সুতরাং  তার প্রতিক্রিয়ায় যদি কোন মত উঠে, কোন আদর্শ প্রচারিত হয় তবে তাকে প্রতিবন্ধকতা গণ্য করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যোগ্য প্রশাসনের কাজ নয়।

প্রশাসন যন্ত্রেও বরং পহেলা বৈশাখ সংস্কৃতি পালনের নামে ফায়েদা লুটেরাদের সম্পর্কে সচেতন ও তাদের প্রতি ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় হওয়া বাঞ্ছনীয়।

পাশাপাশি তথাকথিত সংস্কৃতিবাদীদের স্ববিরোধীতা তথা ভিত্তিহীনতা সম্পর্কেও জনগণের সচেতন ও সজাগ হওয়া কর্তব্য।

পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিবাদীরা পহেলা বৈশাখকে শুভ সূচনার দিন মনে করে। এদিনে ভাল পোশাক, ভাল পরিবেশ, ভালো মন, ভালো খাওয়া তাদের উদ্দীপনা। বিশেষ করে ভালো খাওয়ার চল ও প্রবণতা এত বেশি যে, তাদের সবারই বিশ্বাস, পহেলা বৈশাখের দিনে যে যত বেশি ভালো খাবে সারাবছর তার তত ভাল খাওয়া হবে অথবা পহেলা বৈশাখে যে যেমন খাবে, সারা বছর তার তদ্রুপই খাওয়া হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

পহেলা বৈশাখ পালনকারীরা তাই সাধ ও সাধ্যের শেষ বিন্দু ব্যবহার করে সর্বাত্মক ভাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে।

কিন্তু অদ্ভুত সত্য হলো যে, এই পহেলা বৈশাখ সংস্কৃতিবাদীরাই আবার পহেলা বৈশাখের দিনে পান্তা-গান্ধা খাওয়ার সংস্কৃতি পালন করে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গ্রাম বাংলার কৃষক- যে তিন বেলা গরম ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না; সেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পান্তা গ্রহণ করে শান্তনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। কাজেই পান্তাটা মূলতঃ খারাপ খাবারের প্রতীক।

সুতরাং যে তথাকথিত ‘শুভ’র সূচনা দিয়ে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি, সে শুভ দিনে এই খারাপ ও অভাবের প্রতীক পান্তা খাওয়া যে প্রকাশ্যে পরস্পর বিরোধী সংস্কৃতিক কর্মকা-ের পর্যায়ে পড়ে এবং প্রকারান্তরে তা ভূয়াই প্রতিপন্ন হয়, পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিবাদীরা তার কি জবাব দিবেন?

এদিকে, পহেলা বৈশাখের দিনে বাংলার কৃষক যে পান্তা ইলিশের পরিবর্তে সারাবছর ব্যাথা-বেদনা থেকে বেঁচে যাবার অভিপ্রায়ে পাটশাক খেতেন, গরম ভাত খেতেন তাও বা আজকের পহেলা বৈশাখ পালনকারীরা ক’জন জানেন? পাশাপাশি সাধারণে প্রায় সবাই জানেন না যে আজকের পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন কবে, কোথায়, কিভাবে হল!

তাদের অবগতির জন্য পান্তা-ইলিশ প্রচলনকারীদের নিজস্ব উদ্ধৃতিতেই তা তুলে দিচ্ছি।

“৮৪ সালের এপ্রিল। দৈনিক দেশ তখন বন্ধ। বন্ধ করা হয়েছিল দৈনিক ইনকিলাব। দৈনিক খবরও কিছুদিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল। স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি এরশাদ তখন দৈনিক দেশের উপর ছিলেন দারুণ রুষ্ট। বিজ্ঞাপন বন্ধ ছিল। নিউজপ্রিন্ট কোটার উপর ছিল নিষেধাজ্ঞা। এমনি সময় কক্সবাজারের আরাকান সম্পর্কিত একটা নিউজ ছাপাকে কেন্দ্র করে দৈনিক দেশ রাতারাতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েকশ’ পুলিশ ঘিরে ফেলে পুরো অফিস। রুমে রুমে তল্লাশি চালানো হয়। সেদিনের নির্বাহী সম্পাদক আওয়াল খান আর স্টাফ রিপোর্টার শফিকুল ইসলাম কাজলের নামে ওয়ারেন্ট নিয়ে ঘুরছিলো পুলিশ।

এরপর পুলিশ প্রায় প্রতিদিন দৈনিক দেশ অফিসে হানা দিত। যখন তখন বিভিন্ন রুমে তল্লাশি চালাত। অযথা হয়রানি করত আমাদের। এরপরও আমরা প্রতিদিন অফিসে আসতাম, গল্পগুজব করতাম। সহকর্মীদের খবরাখবর নিতাম। প্রেসক্লাবে গিয়ে সময় কাটাতাম। এমনিভাবে আমাদের দিনযাপন চলছিলো। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল তখন উত্তপ্ত। দৈনিক দেশের চারিদিকে সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের টহল ছিলো। আমরা এসব তোয়াক্কা করতাম না। সেগুনবাগিচার ৫ নম্বর বাড়িতে ছিলো দৈনিক দেশের অফিস।

কর্মহীন জীবন আস্তে আস্তে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে লাগলো। কী করা যায় ভেবে পাচ্ছি না। এমনিভাবে আর কতদিন কাটবে? মনমেজাজ সবারই একই রকম। সবার মনেই একই প্রশ্ন, কী করা যায়? এর মাঝেই রফিক ভাই বলে উঠলেন কাজ তো আছে অনেক, কিন্তু করতে পারবেন কি? গভীর কৌতুহল আর উদ্বেগ নিয়ে সবাই এক সঙ্গে বলে উঠলেন, কী কাজ বলেন, পারব।”

কিছুক্ষণ ঝিম মেরে তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন, আর ক’দিন বাদেই তো পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের এই দিনে পান্তার দোকান দিতে পারবেন? ঘরভর্তি সকলে এক সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন। তাচ্ছিলের সাথে সবাই বিষয়টা উড়িয়ে দিলেও পর মুহূর্তে পুরো ঘরে নেমে এল পিনপতন নীরবতা। এর মধ্যে সংস্কৃতি সম্পাদক শহীদুল হক খান বললেন, আমরা সবাই আছি। সংস্কৃতির প্রতীক পান্তা ভাতের দোকান চাই। পান্তা ভাতের দোকান দেব।

দৈনিক দেশের সম্পাদকীয় বিভাগের সেদিনের তরুণ সাংবাদিকরা আজ একেকজন পেশার অনেক খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠিত কেউ বা মহীরুহ। রফিক ভাই তখনই ছিলেন প্রবীণ প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ও রেডিওর সংবাদ পাঠক। শহীদুল হক খান লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক, টিভি প্রযোজক ও ঔপন্যাসিক। একাধিক জাতীয় পুরুস্কারে ভূষিত। মাহবুব হাসান আজ প্রতিষ্ঠিত কবি, সাংবাদিক ও ডক্টেরেট ডিগ্রীধারী, শেখ নুরুল ইসলাম। কবি নজরুলের উপর গবেষণামূলক বই লিখে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দুঃখজনক হলেও আজ তিনি প্রয়াত। রোজী ফেরদৌসী জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহী পরিষদেও নির্বাচিত প্রতিনিধি। বিএসএসে কর্মরত। মকবুল পারভীন বর্তমানে ইনকিলাবে মহিলা পাতার দায়িত্বে নিয়োজিত, মুন্সী মান্নান ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এবং ইউনিয়নের একজন নেতা। হাসমত আরা ক্রীড়া জগতে কাজ করছেন। পুরো জীবনটাই সাংবাদিকতা পেশায় কাটিয়েছেন। আরও অনেকে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের অনেকের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। সম্পাদনা সহকারী বিভাগের কর্মকর্তারাও সব রকম সহায়তা করেছিলেন। সেদিনের কথা ভাবতে গেলে কেমন যেন আবেগপ্রবণ হয়ে উঠি।

যার যা দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছিলো। কাউকে দেয়া হয়েছিলো কেনাকাটার দায়িত্ব, কাউকে পাবলিসিটি, কাউকে দেয়া হয়েছিলো ডেকোরেশনের কাজ, কেউবা ছিলেন স্টলের শিল্পনির্দেশক হিসাবে। প্রকৃতপক্ষে যার ঘাড়ে দায়িত্ব দেয়া হোক না কেন, প্রয়োজনে যার যা দরকার তাই তারা করেছেন। অর্থাৎ আমাদের পারস্পারিক সম্পর্ক ও আন্তরিকতা ছিল নিবিড়।

তাই সেদিন ‘আমরা বাংলাদেশী’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে শুরু করেছিলাম পান্তা ভাতের দোকান। ১১ এপ্রিল রফিক ভাইকে নিয়ে দোকানের জায়গা দেখে রীতিমতো খুটি গেড়ে সীমানা নির্ধারণ করে ফেললাম। রমনা রেস্টুরেন্টে পার হয়ে ছায়ানটের মঞ্চ ডানে রেখে আরও বেশ কিছুটা দক্ষিণে বিশাল গাছের নিচে বেছে নিলাম আমাদের জায়গা। তারপর বিকেলে পুরানা পল্টনের এক ডেকোরেটরের লোকজন এনে বুঝিয়ে দিলাম জায়গাটা।

একপাশে বসার জায়গা, সামনেও থাকবে চেয়ার আর বসার ব্যবস্থা। দোকানের অন্য পাশটায় থাকবে থাকার জিনিসপত্র বাসনকোসন। পরের দিন অফিসে গিয়ে দেখি আর্টিস্ট শামসুদ্দীন খুব সুন্দর করে কার্টুন আঁকছে। শহীদুল হকের ডিরেকশনে ছড়া লিখছে। শেখ নুরুল ইসলামের মতো নিরীহ শান্তশিষ্ট মানুষও মেতে উঠলেন। ১৩ তারিখ বিকেলে রমনা উদ্যানে গিয়ে দেখি রফিক ভাই, শহীদুল হক, শামসুদ্দীন ও রোজী মিলে স্টলটি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। চারদিকে রং, ছবি, কবিতা, ছড়া আর কার্টুন। বাইরে বড় করে লেখা রয়েছে ‘আমরা বাংলাদেশী’। একটা কবিতা এখনও মনে পড়ছে। সেটি হলো, ‘পান্তা ভাত ইলিশ ভাজা/লঙ্কা লবণ পেঁয়াজ মজা? পাঁচ টাকা দিলে এক শানকী মেলে।’ ছড়াটি লেখা ছিলো শহিদুল হক খানের।

সন্ধার অন্ধকার চারদিকে আবহাওয়াকে আরও রোমান্টিক করে তুলেছিলো। রাতে স্টল পাহারা দেয়ার জন্য একজন দারোয়ান ঠিক করে আমরা একে একে বিদায় নিলাম। রফিক ভাইকে নিয়ে ১৫ কেজি চাল আর ৩৫টি মাটির শানকি (প্লেট) কিনে রেখে এসেছিলাম রফিক ভাইয়ের পুরানো পল্টনের বাসায়। ভাবি রাতেই ভাত রান্না করে যথাযথ ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা এগুলো নিয়ে রফিক ভাই যাবেন স্টলে। আমিও খুব ভোরে স্টলে আসব। রফিক ভাইয়ের বাসা থেকে বের হলাম অনেক রাতে। বাসায় ফিরে ঘুম আসছিল না। কেমন একটা আতঙ্ক যেন পেয়ে বসেছিলো। বার বার মনে হচ্ছিলো এ ধরনের পান্তার আসরের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে। বিশেষ করে ‘আমরা বাংলাদেশী’ সংগঠনের মাধ্যমে এ ধরনের উদ্যোগকে কে কি ধরনের ব্যাখ্যা করবে তা ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়ছিলাম। দেশের রাজনৈতিক অবস্থা তো মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। খুব ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড় করে উঠে পড়লাম। তারপর গিন্নিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সূর্যের আলোতে তখন উদ্ভাসিত হয়েছে সারা শহর। বছরের প্রথম দিনকে বরণ করতে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী সকল বয়সের মানুষ সেজেগুজে ছুটছে বটতলায়।

আমরা পৌছেই দেখি রোজী চুলা তৈরি করে ইলিশ মাছ ভাজা শুরু করেছে। ও নিজেই পাঁচটা ইলিশ নিয়ে এসেছিলো। ছায়ানটের গান তখনও শেষ হয়নি। আগন্তুক অতিথিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমাদের স্টলে রীতিমতো ভিড় শুরু হয়ে গেছে। অনেক তরুণ-তরুণীদের কৌতূহল ছিলো আমাদের স্টলের প্রতি, আমাদের প্রতি। শহীদুল হকের সঙ্গে ছিলো তার অনেক শিল্পী বন্ধুবান্ধব।

শানকিতে পান্তা ভাত ইলিশ মাছ আর বেগুন ভর্তা নিয়ে উন্মুক্ত উদ্যানে বসে অনেকে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। একটু পরে এলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত নাজমুদ্দীন হাশেম। তার সঙ্গে ছিলেন বেশ ক’জন পদ্স্থ আমলা আর ক’জন রাজনীতিবিদ। দুবলা ঘাষের উপর বসেই খাওয়া শুরু করে দিলেন। তারপর বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হাবিবুল্লাহ খান, মাঈদুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক হুমায়ুন, আনোয়ার জাহিদসহ অনেকে।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ১৫ সের চালের পান্তা শেষ। অথচ ভিড় সামনে বাড়ছে। রোজী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। রফিক ভাই ভাবিকে নিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন। খাওয়া শেষে কে পয়সা দিল আর কে দিল না তার হিসাব রাখার মতো অবস্থা তখন ছিল না। সে ছিল এক মধুময় দৃশ্য।

অতিথিরা এসে কবিতা পড়ছে, কার্টুন দেখছে আর সুন্দর পরিবেশে বসে পড়ছে। আশেপাশের স্টলগুলোতে ছিলো চুটি, ফুচকা, নয় তো আইসক্রিম। সেগুলোতে লোকজনের ভিড় ছিলো অনেক কম। তারপর আস্তে আস্তে বৈশাখের কড়া রোদে ভাঙল মিলনমেলা। একে একে বিদায় নিলেন সকল অতিথি। আমি গিন্নিকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম।

পরের দিন সংবাদ, ইনকিলাবসহ বিভিন্ন পত্রিকায় নববর্ষে, জাতীয়তাবাদের প্রথম পান্তার আসনের সচিত্র খবর দেখে খুব ভাল লাগলো।” সূত্র: নববর্ষের পান্তার আসর। – বোরহান আহমদ।

উপরের তথ্য বয়ানের পর বলতে হয়, যেসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবি আজকের পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতিকে হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি বলে মুখে ফেনা তুলেন আর তাদের কথা শুনে যে প্রশাসন পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে কোনো কথা, কোন প্রচারণা না শোনার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকেন তাদের সবার সতেজ বোধোদয় হওয়া উচিত। ভীষণ লজ্জা পাওয়া উচিত।

পাশাপাশি হুজুগে মাতা বাঙালীরও জানা উচিত যে, আজকের পহেলা বৈশাখ সংস্কৃতির ইতিহাস আসলে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা নয় বরং এটা সানজীদা, নওয়াজেশ আহমেদ আর বোরহান আহমেদ গং-এর নিজস্ব খেয়ালখুশীর পরিক্রমা ও প্রচারণা।

সুতরাং মাত্র ৩/৪ জনের প্রচারণার ফাঁদে গোটা জাতি দিনের পর দিন মেতে থাকতে পারে না। বিশেষ করে দেশবাসীর শতকরা প্রায় পঁচানব্বইভাগ যখন মুসলমান। দেশের রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম। অতএব কি ধর্মীয়, কি সামাজিক অথবা কি সাংবিধানিক মূল্যবোধ সব প্রেক্ষিতে আজকের তথাকথিত পহেলা বৈশাখের চেতনা ও কর্ম উদ্দীপনার অবসান হওয়া জরুরী।

-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫১

অবশেষে জামাতীরা স্বীকার করিল যে, মুক্তি পাইতে চাহিলে মুরীদ হইতে হয়। আল্লাহ পাক-এর ওলী বা দরবেশ হইতে পারিলে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জামাতীরা তাহা নয় বলিয়াই আখিরাত তো দূরের কথা দুনিয়াতেই তাহারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার। আর মইত্যা রাজাকারের ফতওয়া অনুযায়ী তো- তাহাকেই কতল করা ওয়াজিব।

আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাথা মুবারক বেয়ে রক্তের প্রবাহ এবং পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রীর আনন্দে গদগদ হবার ঘটনা প্রসঙ্গ