বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪১

সংখ্যা: ১৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক

হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন ফেরদাউসী

রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৩৩-৬৯৯ হি:)

হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খাজা বদরুদ্দীন সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ছিলেন, তিনি দিল্লীতে অবস্থান করতেন। যখন সুলত্বান কায়কোবাদ নতুন শহর আবাদ করার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি সেখানে তাশরিফ নিলেন এবং যমুনা নদীর কিনারে স্বীয় অবস্থানস্থল নির্ধারণ করলেন। তাঁর মাঝে এবং হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লহি আলাইহি-এর মাঝে অতুলনীয়  মুহব্বত ও সুসম্পর্ক ছিল। সিয়ারুল আউলিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহ্ িআলাইহি-এর একজন যুবক ছেলে এবং অন্য মুরীদ সহ অধিকাংশ সময় নৌকায় চলাফেরা করতেন আর সামা’-এর মজলিস করতেন। একদা সামা’-এর মাহফিল করতে করতে কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বাড়ীর নীচ দিয়ে অতিক্রম করতে ছিলেন এমন সময় হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে দেখে হুজরা শরীফ থেকে বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন এতদুভয়ের মধ্যে একজন এমন যিনি দীর্ঘদিন যাবত অনেক বালা মুসিবত বিপদাপদ সহ্য করে ও রাগ-গোস্বা হজম করে আছেন। আর এপথেই তিনি বিলীন হয়ে গিয়েছেন। আর দ্বিতীয় জন  ঐ যুবক যিনি বলতেন “তুমি কেমন, যেমন আমি নই” অর্থাৎ তিনি বলতেন যে, “হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমার মাঝে কি পার্থক্য?  ইহা বলে নিজের হাত আস্তিন থেকে বের করে তাঁর দিকে ইশারা করে বললেন, সাবধান হয়ে যাও। কিন্তু হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছেলে ঐ কথা বলতে বলতে স্বীয় ঘরের কাছে পৌছে গেলেন। কিস্তি থেকে উঠে তিনি গোসল করতে চাইলেন। যখনই তিনি পানিতে প্রবেশ করলেন তখন তিনি সম্পূর্ণ রূপে ডুবে গেলেন।

হযরত শায়খ নাজীবুদ্দীন ফেরদাউসী

রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬৭৮-৭৬১হি:

হযরত শায়খ নাজীবুদ্দীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ রুকনুদ্দীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ছিলেন, তাঁর মাজার শরীফ হাইজে মাশরেকী-এর পূর্ব পার্শ্বের এক উচু জায়গায় হযরত মাওলানা বুরহানুদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি-এর মাজার শরীফ-এর নিকটে অবস্থিত।

হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ

রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৮৫-৭৫৬হি:)

হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইয়াহয়া মুনীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বংশধর ছিলেন। তাঁকে হিন্দুস্থানের প্রসিদ্ধ মাশায়েখগণের অন্তর্ভূক্ত ধরা হয়। তাঁর ফাযায়েল ফযীলত ও মর্যাদা মর্তবা অপরিসীম। তাঁর লিখিত কিতাবাদীর সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে “মাকতুবাত” সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। ইলমে তরীক্বত ও ইলমে মা’রেফতের আদব কায়দার দিক থেকে উহা দৃষ্টান্তহীন উত্তম একখানা কিতাব। যদিও তাঁর মালফুযাত সমূহ কোন একজন মুরীদ একত্রিত করেছেন তথাপিও উহাতে দূরদর্শীতা ও সূক্ষ্মতা অত্যাধিক। এটাও প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি “আদাবুল মুরীদীন” নামক একখানা মহামূল্যবান ব্যাখ্যা সম্বলিত কিতাব রচনা করেছেন। তিনি হযরত শায়খ নজীব্দ্দুীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর  মুরীদ ছিলেন।

বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট মুরীদ হওয়ার জন্য নিজ বাড়ি থেকে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তিনি দিল্লীতে পৌছার পূর্বেই কুতুবুল মাশায়িখ হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ লাভ করেন, ঐসময় শায়খ নজীবুদ্দীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন।

হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাঁর সোহ্বতে পৌছেন এবং উনার সাথে সক্ষাত করেন তখন হযরত নাজীবুদ্দীন ফেরদাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন দীর্ঘদিন  যাবত আপনার অপেক্ষায় একটি আমানত আপনাকে সোপর্দ করার জন্য এখানে বসে আছি। তখন তিনি উনার হাতে বাইয়াত হয়ে গেলেন। অতপরঃ হযরত শায়খ শরফুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ নজীবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট থেকে নেয়ামতরাজী নিয়ে স্বীয় বাড়ীতে আসলেন।

মানুষের মাঝে একথা প্রচলিত আছে যে, দিল্লী থেকে ফিরার পথে তিনি আগ্রার জঙ্গলে দীর্ঘদিন ইবাদতে ইলাহীতে মশগুল ছিলেন। এরপরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর মাজার শরীফ সুবাহ বাহার-এর কস্বা মুনীর নামক স্থানে অবস্থিত ।

এক ফার্সী কিতাবে বিশিষ্ট চৌদ্দ গোত্রের বর্ণনা দেয়া হয়েছে উহাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কবি ফেরদাউসী-এর পূর্ববর্তী সিলসিলা সোহরাওয়ার্দিয়া তরীকার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।

 (চলবে)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৭

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৮

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৯

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪০

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪২