বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪০

সংখ্যা: ১৮১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি,

 ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক

হযরত খাজা আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি

(৬২৯ হিজরী-৭৪৭ হিজরী)

হযরত খাজা আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়খ আবু ইয়াযীদ ইবনে হযরত শায়খ কিয়ামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছেলে ছিলেন। ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদ কিতাবে হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, হযরত খাজা শায়খ আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পুতী ছিলেন।

তিনি বলেন, আমার এক বন্ধু স্বীয় ঈমানের নিরাপদের বা হিফাযতের জন্য প্রতিদিন মাগরীবের পরে দু’রাকায়াত নফল নামায আদায় করতেন যাতে তিনি প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহা শরীফ-এর পরে সাত বার সূরা ইখলাছ ও একবার সূরা ফালাক্ব আর দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরে সাতবার সূরা ইখলাছ ও একবার সূরা নাস পড়তেন। দু’রাকায়াত-এর শেষে সিজদায় গিয়ে তিনি বলতেন,

يا حى  يا قيوم ثبتنى على  الايمان

“হে চিরস্থায়ী, চিরজীবী আল্লাহ পাক! আমাকে ঈমানের উপর দৃঢ়তা দান করুন।”

আজমীর শরীফ-এর এক এলাকায় আমাদের চলতে চলতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সামনে চোর-ডাকাতের ভয়ে আমরা মাগরীবের নামায আদায় না করেই দ্রুত শহরের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। যাতে চোর-ডাকাত আমাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে। কিন্তু আমাদের এক বন্ধু সেখানেই নামায আদায় করে আমাদের পরে ফিরে আসলেন। (তিনি চোর-ডাকাতকে ভয় করলেন না)। আমি উনার ইন্তিকালের সময় তার কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি এমন স্বতঃস্ফুর্তভাবেই স্বীয় জান দিচ্ছেন যা আমি জীবনে আর কাউকে দেখিনি। হযরত খাজা আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের যদি মহান আল্লাহ পাক-এর সামনে পেশ করা হয় তবে আমি সাক্ষ্য দিব যে আমার ঐ বন্ধু অবশ্যই ঈমানের সাথে বিদায় নিয়েছেন।

হযরত খাজা ওয়াহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি

(৬৯৪-৭৪৮ হিজরী)

হযরত খাজা ওয়াহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খাজা আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রকৃত ভাই ছিলেন। ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ কিতাবে হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, একদা ছাত্র জীবনে আমি এবং শায়খ নাছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে একজন যোগী এসে তাঁর সামনে বসে গেল। তখন হযরত নাছীরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই যোগীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, বাবা! কোন ঔষধের দ্বারা মানুষের চুল লম্বা হয়?  শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপস্থিতিতে যোগীকে প্রশ্ন করা আমার কাছে ভাল বা উচিত মনে হয়নি। এমন সময় সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পুতী হযরত খাজা ওয়াহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এসে বাইয়াত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তখন হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি তো আপনারই বংশ থেকে ভিক্ষা করে নিয়ামত লাভ করেছিলাম। আপনাকে আমি কি করে বাইয়াত করাই। তখন হযরত খাজা ওয়াহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সীমাহীন অনুনয় বিনয় করে মুরীদ হয়ে গেলেন। এরপরে তিনি তার মাথা মু-ন করে নিলেন এবং হযরত নাছীরুদ্দীন যিনি যোগীকে চুল বড় হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি তার মাথা মু-ন করে দিলেন, আল্লাহ্ওয়ালাদের ছোহবত তার মধ্যে তাছির করল।

হযরত শায়খ বদরুদ্দীন সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি

(৬১৩-৬৯৭ হিজরী)

হযরত শায়খ বদরুদ্দীন ইয়াহ্ইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মালফুযাত থেকে জানা যায় যে, হযরত শায়খ বদরুদ্দীন সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি  হযরত শায়খ নজমুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুরীদ ছিলেন। ছিয়ারুল আওলিয়া কিতাবে লিখা হয়েছে, তিনি হযরত শায়খ সাইফ্দ্দুীন বাখরুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খালীফা ছিলেন। হযরত শায়খ নিযমুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করে জানা গিয়েছে এবং ছিয়ারুল আওলিয়া কিতাবেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত বদরুদ্দীন সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি অনেক বড় ওলী আল্লাহ ছিলেন। তিনি হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে সামা-এর মাহফিল শুনতেন। তিনি অনেক উত্তম ছূরত ও ছিরত-এর অধিকারী ছিলেন। যখন হযরত শায়খ সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিছাল শরীফ লাভ করেন, তখন তাঁকে হযরত নিযাম্দ্দুীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এলাকাতে দাফন করা হয়েছে। তাঁর বিছাল শরীফ-এর তৃতীয় দিনে হযরত শায়খ নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তথায় তাশরীফ আনলেন। তখন সামা-এর মাহফিল প্রায় সমাপ্তির পথে ছিল। তিনি মজলিশ থেকে উঠে অন্যত্র চলে গেলেন। উপস্থিত লোকজন চেয়েছিলেন যে তিনি যেন মজলিসে থাকেন। যখন তারা তাঁর কাছে দরখাস্ত করল তখন তিনি বললেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝে আসমান যমীন পার্থক্য। এখানে তোমরা থাক আমি বসবো না। এটাও বললেন যে, আসলে সমকক্ষতা আবশ্যক। (আর যেহেতু তোমাদের আর আমার মাঝেও সমকক্ষতার ব্যাপারে কোন মুনাসেবাত নেই সেজন্যই আমি এই মাহফিলে বসবো না।

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৭

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৮

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৯

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪১

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪২