বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদসহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক সংশ্লিষ্ট মওযূ হাদীছ ও তার খণ্ডনমূলক জবাব

সংখ্যা: ২৯৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব, ছহীহ ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আবী ইয়া’লাসহ অন্যান্য কিতাবে এসেছে,

حَدَّثَـنَا حَضْرَتْ عَمْرُو بْنُ دِيْـنَارٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ سَـمِعْتُ حَضْرَتْ جَابِرَ بْنَ عَـبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ يُـحَدِّثُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَـنْـقُلُ مَعَهُمُ الْـحِجَارَةَ لِلْكَعْبَةِ وَعَلَيْهِ اِزَارُهٗ فَـقَالَ لَهٗ حَضْرَتْ اَلعَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَمُّهٗ يَا ابْنَ اَخِىْ لَوْ حَلَلْتَ اِزَارَكَ فَجَعَلْتَ عَلـٰى مَنْكِـبَـيْكَ دُوْنَ الْـحِجَارَةِ قَالَ فَحَلَّهٗ فَجَعَلَهٗ عَلـٰى مَنْكِـبَـيْهِ فَسَقَطَ مَغْشِيًّا عَلَيْهِ فَمَا رُئِـىَ بَـعْدَ ذٰلِكَ عُرْيَانًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “হযরত আমর ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশদের সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার (মেরামতের) জন্য পাথর বহন করছিলেন। উনার পরিধানে ছিলেন ইযার বা লুঙ্গি মুবারক। উনার চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত খ¦াতিমুল মুহাজিরীন আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম) তিনি উনাকে বললেন, হে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ভাতিজা! আপনি ইযার বা লুঙ্গি মুবারক খুলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কাঁধ মুবারক-এ পাথরের নীচে রাখলে ভাল হতো। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইযার বা লুঙ্গি মুবারক খুলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কাঁধ মুবারক-এ রাখলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। এরপর উনাকে আর কখনো বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখা যায়নি।” না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

ثُـمَّ اَفَاقَ فَـقَالَ اِزَارِىْ اِزَارِىْ فَشَدَّ عَلَيْهِ اِزَارَهٗ

অর্থ: “যখন উনার চেতনা মুবারক ফিরে আসলেন, তখন তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমার ইযার বা লুঙ্গি মুবারক, আমার ইযার বা লুঙ্গি মুবারক।’ তৎক্ষণাৎ উনার ইযার বা লুঙ্গি মুবারক পরিয়ে দেয়া হল।” না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব, ছহীহ ইবনে হিব্বান ইত্যাদি)

হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই হাদীছটি ‘বুন্ইয়ানুল কা’বা বা কা’বা শরীফ নির্মাণ’ অধ্যায়সহ আরো কয়েকটি অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও এটি বিভিন্ন সীরাতগ্রন্থসহ আরো অনেক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। এটি একটি মওযূ হাদীছ।

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ অনুরূপ আরো যতো বর্ণনা রয়েছে, প্রত্যেকটি বর্ণনাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এই ধরণের কোনো ঘটনাই সংঘটিত হয়নি। খ্বালিক্ব¡ মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْـثَاقَ النَّبِــيّٖـنَ لَمَاۤ اٰتَـيْـتُكُمْ مِّنْ كِـتٰبٍ وَّحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّـمَا مَعَكُمْ لَـتُـؤْمِنُنَّ بِهٖ وَلَـتَـنْصُرُنَّهٗ قَالَ ءَاَقْـرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلـٰى ذٰلِكُمْ اِصْرِىْ قَالُوْاۤ اَقْـرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشّٰهِدِيْنَ. فَمَنْ تَـوَلّٰـى بَـعْدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓـئِكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ

অর্থ: “আর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াদা মুবারক গ্রহণ করলেন যে, আপনাদেরকে সম্মানিত কিতাব মুবারক এবং হিকমত মুবারক দেয়া হবে। অতঃপর আপনাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুননাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন। তিনি আপনাদেরকে এবং আপনাদের কাছে যা কিছু রয়েছেন সমস্ত কিছুর তাছদীক্ব বা সত্যায়ন করবেন। আপনারা অবশ্যই অবশ্যই উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনবেন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি তা স্বীকার করে নিলেন এবং এই বিষয়ে আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াদা মুবারক গ্রহণ করলেন অথার্ৎ আমার শর্ত মুবারক মেনে নিলেন? উনারা বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম, মেনে নিলাম, গ্রহণ করলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তাহলে আপনারা সকলে সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। সুবহানাল্লাহ! এরপর যারা এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াদা মুবারক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াদা মুবারক উনার খিলাফ করবে, তারাই হচ্ছে ফাসিক্ব অর্থাৎ চরম নাফরমান, কাট্টা কাফির।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১-৮২)

এখানে মহান আল্লহ পাক তিনি বলেছেন, ‘তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন।’ কখন ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন? রোজে আজলে।

তাহলে এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, মহান আল্লহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নবী ও রসূল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন। কেননা এখানে বলা হয়েছে যে, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ঈমান মুবারক আনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ!

খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে তো অবশ্যই; শুধু তাই নয়, উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, উনার মাহবূব, হাবীব, মুরাদ ও সমগ্র কায়িনাতের মালিক হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন এবং সৃষ্টির শুরু থেকেই তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুবহানাল্লাহ!

তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক সংক্রান্ত এই ধরণের ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হতে পারে? কাজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক সংক্রান্ত উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ অনুরূপ আরো যতো বর্ণনা রয়েছে, প্রত্যেকটি বর্ণনাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এই ধরণের কোনো ঘটনাই সংঘটিত হয়নি।

উল্লেখ যে, এখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক সংক্রান্ত মওযূ হাদীছটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ পুনর্নির্মাণের সময় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি স্বচোখে এই দৃশ্য দেখেছেন। কিন্তু এটা কাট্টা একটা মিথ্যা কথা। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, দুনিয়াবী দৃষ্টিতে যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বয়স মুবারক ৩৫ বছর, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ পুনর্নির্মাণ করা হয়। তখন হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার বিলাদত শরীফই হয়নি। তিনি বিলাদতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার ১৬ বছর পূর্বে। আর উনার বিছাল শরীফ হচ্ছেন ৭৮ হিজরী শরীফ-এ। (আল আ’লাম লিয্ যারকালী ২/১০৪) তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ নির্মাণের সময় তিনি উপস্থিত থাকা তো দূরের কথা; তিনি তখন দুনিয়ার যমীনেই আগমন করেননি। আর যদি দুনিয়ার যমীনে আগমনও করেন, তাহলে উনার সর্বোচ্চ বয়স মুবারক ছিলেন ২-৪ বছর। (ইবনে সা’দ) এছাড়া তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী। অথচ উনার নামে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ এই ডাহা মিথ্যা, মওযূ, বাতিল ও বানোয়াট বর্ণনাটি চালিয়ে দেয়া হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! কাজেই নিঃসন্দেহে এটা একটি মওযূ হাদীছ।

প্রকৃত ঘটনা মুবারক হচ্ছেন- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ পুনর্নির্মাণ করার সময় সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ মুবারক স্থাপন করার বিষয় নিয়ে কুরাইশ উনাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রত্যেক গোত্রই চাচ্ছিলেন উনারাই সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ মুবারক স্বস্থানে পুনঃস্থাপন করবেন, অন্য কেউ নয়। উনাদের এই মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এমনকি উনারা পরস্পর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। তখন কুরাইশ উনাদের মধ্যে একজন প্রবীণতম ব্যক্তি তিনি পরামর্শ দিলেন,

يَا مَعْشَرَ قُـرَيْشٍ اِجْعَلُوْا بَـيْـنَكُمْ فِـيْمَا تَـخْتَلِفُوْنَ فِـيْهِ اَوَّلَ مَنْ يَّدْخُلُ مِنْ بَۢابِ هٰذَا الْمَسْجِدِ يَـقْضِىْ بَـيْـنَكُمْ فِـيْهِ فَـفَعَلُوْا

‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! আপনারা যেই বিষয়ে মতবিরোধ করছেন সেই বিষয়ে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরজা মুবারক দিয়ে সর্বপ্রথম যিনি প্রবেশ করবেন, উনাকে আপনাদের পরস্পরের মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়ছালা মুবারককারী হিসেবে গ্রহণ করুন। তখন উনারা সকলে এই প্রস্তাবে সম্মত হন।’

দেখা গেলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুননাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরজা মুবারক দিয়ে প্রবেশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে সকলেই সমস্বরে বলে উঠলেন,

هٰذَا اَلْاَمِـيْـنُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَضِيْـنَا

‘ইনি হচ্ছেন আল আমীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। (উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফায়ছালা মুবারক মেনে নিতে) আমরা সকলেই রাজী।’ সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর উনারা বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পেশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

هَلُمَّ اِلَـىَّ ثَـوْبًا فَاُتِـىَ بِهٖ

‘আমাকে একটি কাপড় বা চাদর মুবারক এনে দিন। উনার নিকট তা আনা হলো।’

فَـبَسَطَهٗ وَوَضَعَ الْـحَجَرَ فِـيْهِ

‘তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাপড় বা চাদর মুবারকখানা বিছিয়ে সেখানে সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ মুবারক রাখলেন।’

অন্য বর্ণনায় রয়েছেন,

فَـوَضَعَهٗ فِـيْهِ بِيَدِهٖ

‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নিজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক-এ) সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ মুবারক সেই কাপড় বা চাদর মুবারক উনার উপর রাখলেন।’ সুবহানাল্লাহ!

তারপর ইরশাদ মুবারক করলেন, প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে এসে চাদর মুবারক উনার ৪ কোণা ধরুন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে প্রতিনিধি চাদর মুবারক উনার ৪ কোণা ধরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার দেয়াল মুবারক উনার সন্নিকটে নিয়ে যান। অতঃপর

اَخَذَهٗ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـوَضَعَهٗ بِـيَدِهٖ

‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নিজ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক-এ) সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ মুবারক ধরে দেয়াল মুবারক উনার মধ্যে স্থাপন মুবারক করেন।’ সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম, ইবনে হিশাম, ইবনে ইসহাক্ব, আল বিদয়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্, মুসনাদে আহমাদ, আখবারু মাক্কাহ্, আর রওদ্বুল উন্ফ, শারহুয যারক্বানী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ্, ‘ঊয়ূনুল আছার, মাজমাউয যাওয়াইদ ইত্যাদি)

এখন বলার বিষয় হচ্ছে- যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ পুনর্নির্মাণ করা হয়, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বয়স মুবারক ৩৫ বছর। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবেত আযীম শরীফ করেছেন এবং তখন পর্যন্ত উনার মোট ৫ জন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আওলাদ (সন্তান) আলাইহিমুস সালাম-আলাইহিন্নাস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। তাছাড়াও তিনি তখন সম্মানিত ও পবিত্র হেরা গুহা মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিতেন। আর মাত্র ৫ বছর পরে উনার আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত এবং রিসালত মুবারক প্রকাশিত হবেন। তাহলে এই সময় উনার দ্বারা এই ধরণের ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হতে পারে? না‘ঊযুবিল্লাহ!

অথচ একজন সাধারণ ভদ্র-শরীফ এবং সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী মানুষের দ্বারাই এই ধরণের ঘটনা চিন্তাও করা যায় না। একজন ইমাম-মুজতাহিদ বা ওলীআল্লাহ উনার দ্বারাও এই ধরণের ঘটনা চিন্তা করা যায় না।

এই ক্ষেত্রে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা অবিস্মরণীয়। তিনি ‘বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদসহ’ আরো অনেক কিতাবে বর্ণিত একটি হাদীছের ব্যাপারে বলেন,

نِسْبَةُ الْكَذِبِ اِلَـى الرَّاوِىْ اَوْلـٰى مِنْ نِسْبَتِهٖ اِلـٰى سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اَلْـخَلِـيْلِ عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মিথ্যা বলেছেন, এটা বলার চেয়ে রাবী মিথ্যা বলেছে, এটা বলা উত্তম।” সুবহানাল্লাহ!

এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলা হয়, তাহলে যে সকল রাবীগণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক সংশ্লিষ্ট এই মাওযূ হাদীছটা বর্ণনা করেছেন এবং যাঁরা উনাদের স্ব স্ব কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন, উনারা উনাদের পরিণত বয়সে বা ৩৫ বছর বয়সে লোকজনের সামনে বিবস্ত্র হয়েছেন। এটা কি সবাই মেনে নিবে? বা ঐ সকল রাবীগণ বা হাদীছ শরীফ বিশারদগণ ও ইমাম-মুজতাহিদগণ বা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা কি মেনে নিবেন? বা কোনো ঈমানদ্বার, দ্বীনদ্বার ও আল্লাহওয়ালা লোকের ব্যাপারে যদি তার সন্তানের নিকট এই কথা বলা হয় যে, তোমার পিতার ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই সন্তান কি সেটা মেনে নিবে? না; কখনোই মেনে নিবে না। কেনো মেনে নিবে না? কারণ একজন ঈমানদ্বার, দ্বীনদ্বার, আল্লাহওয়ালা লোকের দ্বারা এই ধরণের ঘটনা সংঘটিত হতে পারে না। আর কোনো ছিক্বাহ্ রাবী, ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ উনার দ্বারা এই ধরণের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। যদি তাই হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা এই ধরণের ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হতে পারে? তাহলে কি তারা বলতে চায় যে, একজন ইমাম-মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, ছিক্বাহ্ রাবী বা একজন ঈমানদ্বার, দ্বীনদ্বার, আল্লাহওয়ালা লোকের চেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাক্বওয়া-পরহেযগারীতা বা শিষ্টাচার মুবারক কম ছিলো? না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! যে ব্যক্তি এরূপ চিন্তা করবে, সে প্রথম শ্রেণীর কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে এবং ইবলীসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

এখানে আরো একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ-এ রয়েছেন- হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে আগমন করার পরপরই কথা বলেছেন এবং উনার সম্মানিতা মাতা উনার পবিত্রতা মুবারক বর্ণনা করেছেন। আর এটি একটি অত্যন্ত মশহূর ঘটনা যে, বড়পীর হযরত আব্দুল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আবু ইব্রাহীম ইসহাক মামশাদ উলুদিনারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা যেদিন দুনিয়ার যমীনে আগমন করেছেন, সেদিনই রোযা রেখেছেন এবং উনাদের উসীলায় অসংখ্য মুসলাম ঐ বৎসর পহেলা রমাদ্বান শরীফ-এ রোযা রাখতে পেরেছেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়; বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি মায়ের রেহেম থেকেই ১৮ পারা কুরআন শরীফ মুখস্থ করেছেন। বিশেষ করে হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত মীর্জা মাযহার জানজানান শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা মায়ের রেহেমে থেকেই পুরো ৩০ পারা কুরআন শরীফ মুখস্থ করে দুনিয়াতে আগমন করেছেন। উনারা ছিলেন মাদারজাদ ওলী।

এজন্য সম্মানিত শরীয়ত উনার একটি উছূল হচ্ছেন-

اَلنَّبِـىُّ نَبِـيًّا وَلَوْ كَانَ صَبِـيًّا وَالْوَلِـىُّ وَلِـيًّا وَلَوْ كَانَ صَبِيًّا

অর্থ: “একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম তিনি নবী-রসূল; যদিও তিনি শিশু হন না কেন। আর একজন ওলীআল্লাহ তিনি ওলীআল্লাহ; যদিও তিনি শিশু হন না কেন।” সুবহানাল্লাহ!

আর ক্বাদরিয়া ত্বরীক্বার ইমাম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি মশহূর ক্বওল শরীফ হচ্ছে- তিনি বলেছেন, ‘আমার কোনো এক আদনা মুরীদও যদি পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে থাকে। আর ঘুমন্ত অবস্থায় তার ইযার বা লুঙ্গি সরে গিয়ে তার সতর খুলে যাওয়ার উপক্রম হয়, তাহলে আমি এখান থেকে তার ইযার বা লুঙ্গি ঠিক করে দেই। ফলে তার সতর ঠিক থাকে।’ সুবহানাল্লাহ!

 যদি তাই হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক সংশ্লিষ্ট এই ধরণের ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হতে পারে? তাহলে কি তারা বলতে চায় যে, একজন ওলীআল্লাহ উনার চেয়েও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রূহানী কুওওয়াত মুবারক কম ছিলেন? না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! যে ব্যক্তি এরূপ চিন্তা করবে, সেও প্রথম শ্রেণীর কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে এবং ইবলীসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

কাজেই এই মওযূ হাদীছটা যে সকল রাবীরা বর্ণনা করেছেন এবং যে সকল ইমাম-মুজতাহিদ উনারা স্বীয় কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন, উনাদের প্রত্যেককেই খালিছ তাওবা-ইস্তিগফার  করতে হবে। আর আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি এই বিষয়ে কায়িনাতবাসী সবাইকে সঠিক ইলিম মুবারক দান করার পরও যদি কেউ উপরোক্ত মওযূ হাদীছটি বিশ্বাস করে বা এটা সমর্থন করে বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক-এ এরূপ মন্তব্য করে, সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী তাদের একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। তারা নামধারী মুসলমান হোক, মুনাফিক্ব হোক বা কাফির হোক অথবা নাস্তিক হোক কিংবা যেকোনো ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেনো। তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি যারা তাদেরকে সমর্থন করবে, তাদেরও একই হুকুম অর্থাৎ তাদেরও একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম। সম্মানিত খিলাফত মুবারক ক্বায়িম থাকলে তা অবশ্যই জারী করতে হবে। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَـعْدَ اِيْـمَانِـهِمْ ثُـمَّ ازْدَادُوْا كُـفْرًا لَنْ تُـقْبَلَ تَـوْبَــتُـهُمْ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الضَّآلُّوْنَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে তারপর তারা তাদের কুফরীকে বৃদ্ধি করেছে, তাদের তওবা কখনোই ক্ববূল করা হবে না। তারাই পথভ্রষ্ঠ।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সতর মুবারক নিয়ে এরূপ কথা বলার চেয়ে বড় কুফরী আর কি হতে পারে? না‘ঊযুবিল্লাহ!

সেজন্য এই বিষয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে সেটাই বলতে হবে, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি শিক্ষা দিয়েছেন,

وَلَوْلَآ اِذْ سَـمِعْتُمُوْهُ قُـلْتُمْ مَّا يَكُوْنُ لَـنَآ اَنْ نَّــتَكَلَّمَ بِـهٰـذَا سُبْحٰنَكَ هٰذَا بُـهْتَانٌ عَظِـيْمٌ

অর্থ: “তোমরা যখন (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ এলোমেলো) এই কথা শুনলে, তখন কেন বললে না যে, এই বিষয়ে আমাদের কোনো কথা বলার অধিকার নেই। তিনি (অর্থাৎ উনারা) অত্যন্ত পবিত্রতম। মহান আল্লাহ পাক তিনিও পবিত্র থেকে পবিত্রতম। এটা একটা কঠিন অপবাদ।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)

অতএব সমস্ত সৃষ্টিকে বলতে হবে যে, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রতার মালিক। এগুলো সব কঠিন অপবাদ। যারাই বলেছে, লিখেছে বা বর্ণনা করেছে, তারা মিথ্যা বলেছে, মিথ্যা লিখেছে, মিথ্যা বর্ণনা করেছে। সৃষ্টির কারো উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ কথা বলার বা লিখার কোনো অধিকার নেই।’

কাজেই এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সমস্ত বান্দা-বান্দী, উম্মত সকলের জন্য এটা বলা ফরযে আইন সাব্যস্ত হয়েছে যে, ‘বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে বায্যার, মুসনাদে আবী ইয়া’লা, ছহীহ ইবনে হিব্বান, তাফসীরে জীলানী, তাফসীরে মাতুরীদীসহ হাদীছ-তাফসীর, ফিক্বহ্-ফতওয়া, আক্বাইদ-উছূল, শরাহ্, তাছাউফ ও ইতিহাসের বড় বড় নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ যতো হাদীছ ও বক্তব্য রয়েছে, প্রত্যেকটাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট, মিথ্যা, মনগড়া এবং ভিত্তিহীন।’

এখানে আরেকটা বিষয় ফিকিরের- সমস্ত সৃষ্টি তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনেছে। কোনো ছিক্বাহ্ রাবী বা ইমাম-মুজতাহিদের প্রতি ঈমান আনেনি। কাজেই ছিক্বাহ্ রাবী বা ইমাম-মুজতাহিদের কথা বা বর্ণনার প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস স্থাপন করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বদ আক্বীদাহ্ পোষণ করার অর্থই হচ্ছে- কার্যত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছিক্বাহ্ রাবী বা ইমাম-মুজতাহিদদেরকে প্রাধান্য দেয়া, শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! যা নিঃসন্দেহে সুস্পষ্ট কুফরী। না‘ঊযুবিল্লাহ!

খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাই হাক্বীক্বী ছহীহ সমঝ, বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ ও হুসনে যন মুবারক নছীব করুন। আমীন!

-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।

আল হাদ্বির ওয়ান নাযির, ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা ক্বাওসাইনি আও আদনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সব

সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ উনার শানে নুযূলকে কেন্দ্র করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ কুফরী বক্তব্য ও তার খণ্ডনমূলক জবাব

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা বিরোধী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমস্ত উম্মতের জন্য ফরযে আইন

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে খরচ করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুননাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শারে’ বা সম্মানিত শরীয়ত প্রণেতা