মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে-মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-৮)

সংখ্যা: ২৯৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

 (৩৮তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া মুবারক পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ كَبْشَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ كَانَ كِمَامُ اَصْحَابِ رَسُوْلِ اللّٰهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُطْحًا

অর্থ: হযরত আবূ কাবশা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমগণ উনারা যে ধরণের টুপি মুবারক পরিধান করতেন তা ছিল প্রশস্ত-গোল। (তিরমিযী শরীফ, পবিত্র মিশকাত শরীফ)

পবিত্র সুন্নতী টুপি মুবারক উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখিত বুত্বহুন (بُطْحٌ) শব্দের অর্থ প্রসংগে মুহাদ্দিসীনে কিরাম উনারা যে অর্থ স্পস্ট করেছেন তা হলো :

بُطْحًا اَىْ كَانَتْ مَبْسُوطَةً عَلَى رُءُوْسِهِمْ لَازِقَةً غَيْـرَ مُرْتَفِعَةٍ عَنْـهَاـ

অর্থ: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক মাথার উপরের দিকে প্রশস্ত হয়ে লেগে থাকতো, মাথা থেকে উঁচু ছিলনা। (তুহফাতুল আহওয়াজি ৫/৪৭৯)

بُطْحًا بِضَمِّ الْمُوَحَّدَةِ فَسُكُوْنُ الْمُهْمَلَةِ جَمْعُ بُطْحَاءِ اَىْ كَانَتْ مَبْسُوطَةً عَلَى رُءُوسِهِمْ لَازِقَةً غَيْـرَ مُرْتَفِعَةٍ عَنْـهَا

অর্থ: বুত্বহুন এর বা এর উপর পেশ, ত্বোয়া এর উপর সাকিন, বুত্বহুন এর বহুবচন হলো “বুত্বহাউন” অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহুম উনাদের টুপি মুবারক মাথার উপরের দিকে প্রশস্ত হয়ে লেগে থাকতো, এমন ভাবে লেগে থাকতো যে, মাথা থেকে উঁচু হয়ে থাকতো না। (আত তা’লীকুছ ছবীহ্ ৪/৩৮৬, মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/২৪৬, তুহফাতুল আবরার ৩/১৪৩, মাজমাউ’ বিহারিল আনহার ৪/৪৩৫, শরহুল মিশকাত লিত¦-ত্বীবী)

وَالْمُرَادُ اَنَّـهَا مَاكَانَتْ ضَيِّقَةً رُوْمِيَّةً اَوْ هِنْدِيَّةً بَلْ كَانَ وَسْعُهَا مِقْدَارُ شِبْرٍ

অর্থ: ওয়াসিয়াতুন, শব্দ উল্লেখ করার দ্বারা একথা বুঝানো উদ্দেশ্য যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমগণ উনাদের টুপি মুবারক রোমী বা হিন্দী টুপির ন্যায় সংকোচিত ছিলনা বরং উনাদের টুপি মুবারক মাথার উপরের দিকে এক বিঘত পরিমাণ চওড়া বা প্রশস্ত ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/২৪৬)

উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে بُطْحٌ (বুত্বহুন) শব্দটির মাধ্যমে মাথার উপর এক টুকরার মাধ্যমে প্রশস্ত হয়ে মিলিত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। কেননা, মাথার উপর এক টুকরা না থাকলে টুপি কখনো উপরের দিকে প্রশস্ত হবেনা। আর তা হলো, একবিঘত পরিমাণ চওড়া। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমগণ উনারা এরূপ টুপি পরিধান করতেন না, যে টুপি মাথার উপরের দিকে প্রশস্ত নয়, মাথায় পরিপূর্ণ প্রবেশ করেনা, সব দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকেনা বা মাথা হতে উঁচু থাকে।

اور عمامہ کے نیچے سر مبارک سے چمٹی ہوئی ٹوپی ہوتی تہی ـ یہ ٹوپی سر سے پست و پیوست تہی بلند نہ تہی طاقیہ کی مانند اور حضور صلی اللہ علیہ وسلم کی ٹوپی سفید تہی ـ (جیسے اجکل کلاہ کہتے ہیں)) مدارج النبوة ـ سراج منیر ـ اسوۂ رسول

অর্থ: এবং পাগড়ীর নীচে মাথা মুবারক উনার সাথে মিলিত টুপি ছিল। এ টুপি মাথা মুবারক উনার সাথে ভালভাবে মিলিত থাকতো। ত্বাকিয়াহ (যাকে বর্তমানে কুলাহ বলে) এর ন্যায় উঁচু ছিলনা। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার টুপি মুবারক সাদা রংয়ের ছিল। (মাদারেজুন নবুয়্যাত, সিরাজুম মুনীর, উসওয়ায়ে রাসূল)

টুপি চার টুকরা বিশিষ্ট হওয়া খাছ

সুন্নত মুবারক

চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত মুবারক। এই বিষয়ে দলীল হচ্ছে: আনীসুল আরওয়াহ এবং ইসরারুল আউলিয়া যথাক্রমে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসঊদ গঞ্জেশকর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বিশ্ববিখ্যাত মালফুজাত সম্বলিত গ্রন্থ দুটিতে স্পস্ট উল্লেখ করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমগণ উনারা চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি মুবারক পরিধান করতেন। এবং আরো উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বেহেস্ত মুবারক থেকে সাদা, চার টুকরা বিশিষ্ট সূতি কাপড়ের গোল টুপি হাদিয়া প্রদান করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে উক্ত জান্নাতী টুপি মুবারক পরিধান করেন এবং পরবর্তিতে উক্ত চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি মুবারক উনার চারটি টুকরা যথাক্রমে হযরত সিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া প্রদান করেন।

خواجہ حریق المحبت فرید الحق والدین مسعود گنجشکر اجودھنی رحمة اللہ علیہ تحریر فرماتے ھیں کہ جب اس بندئے حقیر خادم درویشاں کو دولت قدم بوسی حضرت قطب الاسلام رحمة اللہ علیہ  کی حاصل ہؤئے اپنے اسی وقت کلاہ چہار ترکی میرے سرپر رکہی

অর্থ: খাঁজা, হারীকুল মুহব্বত, ফরীদুল হক্ব ওয়াদ দ্বীন, হযরত ফরীদুদ্দীন গঞ্জে শোকর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, যখন এই অধম বান্দা, দরবেশ উনাদের খাদিম, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম বূসী করার সৌভাগ্য লাভ করে, তখন তিনি আমাকে চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করিয়ে দেন। (ফাওয়ায়িদুস সালিকীন ১ম মজলিস, পৃঃ ১০৬)

اسکے بعد ارشاد فرمایا کہ خواجہ عبد اللہ سہل تستری رحمۃ  اللہ علیہ نے درباب کلاہ چہار ترکی تحریر کیا ہے  کہ اس  کلاہ میں جو چار خانہ ہیں اس نے یہ مراد ـ خانئے اول انوار و اسرار ہے ـ خانئے دوم محبت و توکل ہے ـ خانئے سوم عشق و اشتیاق ہے ـ خانئے چہارم رضا و موافقات ہے ـ اسکے بعد ارشاد فرمایا کہ اے درویش کلاہ چہار ترکی پہننے والے کو لازم ہے کہ رعایت انسب امور کی کرے ـ

অর্থ:..এর পর তিনি ইরশাদ করেন, হযরত খাঁজা আব্দুল্লাহ সুহাইল তসতরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপির ব্যাপারে লিখেন যে, চার টুকরা বিশিষ্ট টুপির মধ্যে যে চারটি টুকরা রয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রথম টুকরা নূর ও আসরার। দ্বিতীয় টুকরা মুহব্বত ও তাওয়াক্কুল। তৃতীয় টুকরা ইশক্ব ও ইশতিয়াক। চতুর্থ টুকরা রিদ্বা ও মুয়াফিক্বাত। তারপর বলেন, হে দরবেশগণ চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি পরিধান কারীদের জন্য উক্ত বিষয় গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। (রাহাতুল মুহিব্বীন চতুর্থ মজলিস পৃষ্ঠা: ৩২০)

হযরত খাঁজা, কুতুবুল আক্বতাব, বখতিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন যে, আমি উল্লেখিত তারীখে বাগদাদ শহরের আবুল লাইছ সমরকন্দী মসজিদে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি রহমাতুল্লাহি উনার নিকট সম¥ানিত বাইয়াত গ্রহন করার সৌভাগ্য হয়। তিনি দয়া করে আমাকে উনার দলভুক্ত করেন। এবং চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি প্রদান করেন। (দলীলুল আরিফীন-প্রথম মজলিস পৃষ্ঠা: ৪৭)

 কিনায়া পরিধান করা পবিত্র মুবারক সুন্নত

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ الله تَـعَالٰى عَنْـهُمَا قَالَ كَانَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ الْقنَاعَ كَأَنَّ ثَـوْبَهُ ثَـوْبُ زَيَّاتٍ

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহুমা হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অধিকাংশ সময় উনার নূরুল হুদা (মাথা) মুবারকে টুপি মুবারক উনার নীচে একটি কাপড়ের টুকরা মুবারক ব্যবহার করতেন। অধিক তৈল ব্যবহারের কারণে উক্ত কাপড়ের টুকরা মুবারক উনাকে মনে হতো তৈলের কাপড়। যাকে ক্বিনায়া বলা হয়। (শুয়াবুল ঈমান লিল-বাইহাক্বী শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

জুব্বা পরিধান করা পবিত্র সুন্নত মুবারক:

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,

فَـقَالَتْ حَضْرَتْ أَسْمَاءُ بِنْتِ أَبِيْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهَا هٰذِهِ جُبَّةُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏.‏ فَأَخْرَجَتْ إِلَىَّ جُبَّةَ طَيَالَسَةٍ كِسْرَوَانِيَّةً لَهَا لِبْـنَةُ دِيْـبَاجٍ وَفَـرْجَيْـهَا مَكْفُوفَـيْنِ بِالدِّيْـبَاجِ فَـقَالَتْ هٰذِهٖ كَانَتْ عِنْدَ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ حَتَّى قُبِضَتْ فَـلَمَّا قُبِضَتْ قَـبَضْتُـهَا وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْبَسُهَا فَـنَحْنُ نَـغْسِلُهَا لِلْمَرْضَى يُسْتَشْفَى بِهَا ‏.‏

অর্থ: হযরত আসমা বিনতু আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জুব্বা মুবারক, একথা বলে তিনি একটি পারস্য দেশীয় শাল জাতীয় জুব্বা মুবারক বের করে দেখান। জুব্বা মুবারকটির কাঁধ গলার কাছে রেশমের কাজ করা এবং তার সামনের খোলা দুই প্রান্তে রেশমের ফিতা মুবারক লাগানো। তিনি বলেন, এ জুব্বা মুবারকটি উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট ছিল। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পর আমি নিয়েছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটি পরিধান করতেন। তিনি জুমুয়ার দিন ও বাইরের প্রিতিনিধিগণের সাথে সাক্ষাত মুবারক করার জন্য এটি ব্যবহার করতেন। আমরা এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জুব্বা মুবারক ধুয়ে সেই পানি রোগীদের সুস্থতার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি। (মুসলিম শরীফ, আছ-ছহীহ-৩/১৬৪১, বুখারী শরীফ, আল আদাবুল মুফরাদ পৃষ্ঠা ১২৭, আলবানী, ছহীহুল আদাবিল মুফরাদ পৃষ্ঠা ১৪০)

লুঙ্গি পরিধান করা পবিত্র সুন্নত মুবারক:

লুঙ্গি সাদা হওয়া, সূতি কাপড়ের হওয়া এবং সেলাই বিহীন হওয়া এবং নিছফে সাক্ব পর্যন্ত পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ سَالِمٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبيْهِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ جَرَّ ثَـوْبَهُ خُيَلَاءَ لَمْ يَـنْظُرِ اللّٰهُ يَـوْمَ الْقِيَامَةِ فَـقَالَ حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقُ الْاَكْبَـرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنَّ اَحَدَ شِقَّىْ اِزَارِىْ يَسْتَرخٰى اِلَّا اَنْ تَـعَاهَدَ ذٰلِكَ مِنْهُ فَـقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ لَسْتَ مِمَّنْ يَّصْنَـعُهُ الْخُيَلَاءَ

অর্থ: হযরত সালিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, উনার পিতা বলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ পায়ের গোড়ালীর নীচে লুঙ্গি পরিধান করে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি তার প্রতি রহমত উনার দৃষ্টিতে তাকাবেন না অর্থাৎ লোকটি জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহি ইয়া হাবীবাল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমার সেলাই বিহীন ফাঁড়া লুঙ্গির একটি প্রান্ত মাঝে মধ্যে পায়ের গোড়ালীর নীচে ঝুলে যায়। এই কারণে আমি কি লুঙ্গির একটি প্রান্ত অন্য প্রান্তের সাথে গিট বা গিরা দিয়ে দিব? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি ঐসকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত নহেন, যারা অহংকার বশতঃ পায়ের গোড়ালীর নীচে লুঙ্গি পরিধান করে। (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড)

পবিত্র সুন্নতী লুঙ্গির পরিমাপ

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেলাই বিহীন লুঙ্গি মুবারক ছিলেন লম্বায় সাড়ে চার হাত এবং প্রশস্ত আড়াই হাত। যেমন, শামায়িলুত তিরমিযী এর বিখ্যাত শরাহ “শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী” এর ১ম খণ্ড ২১৬ পষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,

قَالَ حَضْرَتْ اَلشِّهَابُ ابْنُ حَجَرِ الْـهَيْـثَمِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ إِزَارُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعَةَ أَذْرُعٍ وَشِبْـرًا فِيْ عَرْضِ ذِرَاعَيْنِ وَشِبْرٍ

অর্থ: হযরত ইমাম ইবনে হাজার হাইছামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সেলাই বিহীন ইযার (লুঙ্গি) মুবারক উনার পরিমাপ ছিলেন, সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রশস্ত।

তদ্রুপ “ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ গ্রন্থ সমূহে আরোও বর্ণিত রয়েছে,

قَالَ حَضْرَتْ اَلْوَاقِدِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَكَانَ إِزَارُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعَةَ أَذْرُعٍ وَشِبْــرًا فِيْ عَرْضِ ذِرَاعَيْنِ وَشِبْرٍ

অর্থ: হযরত ইমাম ওয়াক্বিদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সেলাই বিহীন ইযার (লুঙ্গি) মুবারক উনার পরিমাপ ছিলেন, সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রশস্ত। (আল-ফতহুর রব্বানী লি-তারতীবি মুসনাদিল ইমাম আহমদ বিন হাম্বল আশ-শাইবানী ৬/২৪৪, আত-তাওদ্বীহু লি শরহিল জামিয়িছ ছহীহ ৮/২৩৯, নাখবুল আফকার লি-তানক্বীহিল মাবানিল আখবার ফী শারহি মায়ানিল আছার ৫/২৯৩)

মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ سَعِيْدِنِ الْخُدْرِىِّ رَضِى الله عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ اِزَارَةُ الْمُؤْمِنِ اِلٰى اَنْصَافِ سَاقَـيْهِ لَاجُنَاحَ عَلَيْهِ مَا بَـيْـنَهُ وَ بَـيْنَ الْكَعْبَـيْنِ وَمَا اَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَـيْنِ فِى النَّارِ يَـقُوْلُ ثَلَاثًا لَايَـنْظُرُ اللهُ اِلٰى مَنْ جَرَّ ثَـوْبَهُ بَطَرًا

অর্থ: হযরত আবূ সায়ী’দ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে একথা বলতে শুনেছি যে, মুমিন ব্যক্তি তার লুঙ্গি পরিধান করবে পায়ের নালার অর্ধেক পর্যন্ত। পায়ের গোড়ালীর উপর পর্যন্ত লুঙ্গি ঝুলন্ত রাখলে কোন সমস্যা নাই। তবে পায়ের গোড়ালীর নীচে যতটুকু পরিধান করবে, ততটুকু স্থান জাহান্নামে যাবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমত উনার দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যে ব্যক্তি অহংকার বশত পায়ের গোড়ালীর নীচে কাপড় পরিধান করে। এই কথা মুবারক তিনি তিনবার বলেছেন। (আবূ দাউদ শরীফ ও ইবনে মাজা শরীফ)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)