মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী মাসের একাদশতম মাস মাহে যিলক্বদ। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভূক্ত এ সম্মানিত মাসটিতে হজ্জ পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিগণ হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক হারামাইন শরীফাইন অর্থাৎ মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ রওয়ানা করেন। সেখানে পৌঁছে তারা রওযা শরীফ যিয়ারত করেন, মসজিদে নববী শরীফে নামায আদায় করেন,  তাওয়াফ করেন, হজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয় সায়ী  করেন, মাক্বামে ইবরাহীম-এ নামায পড়েন, আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান করেন, মিনায় কুরবানী করেন, কঙ্কর নিক্ষেপ করেন ইত্যাদি। এসবই হচ্ছে হজ্জের বিধান।  আর এই হজ্জ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি পালনীয় বহু আদেশ ও নিষেধের মধ্যে একটি।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে যা আদেশ করেছেন তা মানো বা পালন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। আর এ বিষয়ে তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭)

আয়াতে কারীমার দ্বারা প্রমাণিত হলো, শরীয়তের আদেশ ও নিষেধ উভয়ই মানা ফরয। শুধু আদেশগুলো মানবে,  নিষেধ মানবে না অথবা শুধু নিষেধগুলো মানবে আদেশগুলো মানবে না এমন নির্দেশ শরীয়ত দেয়নি। বরং আদেশ ও নিষেধ উভয়টাই মানার ব্যাপারে  শরীয়তে সমান হুকুম।

কাজেই, যদি দেখা যায় শরীয়তের কোন আদেশ পালন করতে গিয়ে যদি কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় সেই বাধাকে সাধ্য মুতাবিক প্রতিহত করতে হবে। একইভাবে কোন নিষেধ মানতে গিয়ে অর্থাৎ বিরত থাকতে গিয়ে যদি বাধাগ্রস্ত হতে হয় তাহলেও সাধ্য মুতাবিক প্রতিহত করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেন অন্তরে তা ঘৃণা করে দূরে সরে থাকে। আর এটাই সবচেয়ে দূর্বল ঈমানের পরিচয়। এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণও অবশিষ্ট নেই। (মুসলিম শরীফ)

উল্লেখ্য, হজ্জ করা যেমন ফরয তেমন পর্দা করাও ফরয। ছবি তোলা হারাম এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকা বা বিরত থাকাও তেমন ফরয। সব ফরযই মানার হুকুম সমান। একটি পালন করতে গিয়ে আরেকটি তরক করা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষেধ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন-

افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعل ذالك منكم الا خزى فى الحيوة الدنيا ويوم القيامة يردون الى اشد العذاب وما الله بغافل عما تعملون. اولئك الذين اشتروا الحيوة الدنيا بالاخرة فلا يخفف عنهم العذاب ولاهم ينصرون.

অর্থঃ “তোমরা কি কিতাবের কিছু আদেশ মানবে আর কিছু আদেশ অমান্য করবে? যারা এরূপ করবে তাদের জন্য ইহকালে রয়েছে লাঞ্ছনা এবং পরকালে তারা কঠিন আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহ পাক তোমাদের আমল সম্পর্কে বে-খবর নন। আর এরাই হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা দুনিয়াকে গ্রহণ করেছে আখিরাতের পরিবর্তে। সুতরাং তাদের আযাব লাঘব করা হবেনা এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।” (সূরা বাক্বারা-৮৫, ৮৬)

কাজেই, হজ্জের জন্য যখন ছবি তুলতে বাধ্য করা হয় এবং ছবি তোলার কারণে মহিলাদের পর্দাও তরক হয় এবং সউদী ওহাবী সরকারের মদদে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে হজ্জের স্থানসমূহে হাজার হাজার সিসিটিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করে কোটি কোটি ছবি তুলতে বাধ্য করা এবং পর্দার প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে পুরুষ মহিলা উভয়ের পর্দা নষ্ট করা হয় তখন এ অবস্থায় শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মুতাবিক কি করনীয় তা জানতে হবে।

স্মরণ রাখতে হবে, মক্কা শরীফ ও  মদীনা শরীফ-এর মালিক সউদী সরকার নয়। এর মালিক স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব। আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে যেখানে আল্লাহ পাক ছবি, মূর্তি ধ্বংস করার জন্য পাঠিয়েছেন এবং তিনি ধ্বংসও করেছেন, কা’বা শরীফ-এর অভ্যন্তরে ৩৬০টি মূর্তিকে ভেঙ্গে ধুয়ে মুছে পবিত্র করেছিলেন। কিন্তু সেই মূল কা’বা শরীফ-এর অভ্যন্তরে আজ ইহুদী-নাছারাদের ষড়যন্ত্রে  সউদী ওহাবী সরকার ৩৬০টি সিসিটিভি স্থাপন করেছে। নাউযুবিল্লাহ।

কাজেই, হারামাইন শরীফাইন-এর ইজ্জত-হুরমত রক্ষা করার দায়িত্ব পৃথিবীর ২৫০ কোটি মুসলমান সবারই। এবং তাদের একমাত্র ইমাম হচ্ছেন বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। উনার পতাকাতলে এসে শরীয়ত ও সুন্নত মুতাবিক হজ্জ সম্পাদনের জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা