মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ১৮০তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

يا ايها الذين امنواكتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون.

“হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী মু’মিনগণের উপর। এই রোযার মাধ্যমে অবশ্যই তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করবে।” (সূরা- বাক্বারা-১৮৩)

আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন-

تزودوا  فان خير الزاد التقوى

“তোমরা পাথেয় অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হলো তাক্বওয়া।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭)

উল্লেখ্য, তাক্বওয়া শব্দটি আল্লাহভীতি বা খোদাভীতি অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই ‘তাক্বওয়া’ যদিও ঈমানের শর্তের অন্তর্ভূক্ত নয়, কিন্তু ঈমানের পূর্ণতার জন্য শর্ত। অর্থাৎ তাক্বওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে মু’মিনে কামিল বা পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয়। ফলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ তাক্বওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক আলোচনা এসেছে।

ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে মুত্তাক্বী বা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী ব্যক্তিই আল্লাহ পাক-এর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত।”

আরো ইরশাদ হয়েছে, “আলিম বা আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য ঈমানের সাথে সাথে তাক্বওয়া অপরিহার্য শর্ত।”

‘তাক্বওয়া’ বাহ্যিক বা দৃশ্যত কোন বিষয় নয়। ঈমানের মত তাক্বওয়াও অন্তরের বিষয়। তবে ঈমান আক্বীদা বা বিশ্বাসের সাথে সম্পর্র্কযুক্ত। আর তাক্বওয়া আমলে বাস্তবায়ন করার বিষয়। যার একটা প্রকৃষ্ট বর্ণনা আল্লাহ পাক নিজেই তাঁর পাক কালামে পেশ করেছেন উল্লেখিত ছিয়াম বা রোযা সংক্রান্ত আয়াত শরীফ-এর মধ্যে।

উল্লেখ্য, ছিয়াম বা রোযার ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার বিষয়টি এমন, যে সম্পর্কে বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, কোন ব্যক্তি যখন রোযা রাখে তখন সেই ব্যক্তি বা রোযাদারের ঘরে খাদ্য-পানীয় মওজুদ থাকা সত্বেও এবং তার পানাহার করার সূযোগ থাকা সত্বেও সে কিন্তু তা খায় না বা পান করে না। এমনকি দেখা গেছে, কেউ রোযা রেখে স্বপ্নেও কিছু খেলে এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসয়ালা জিজ্ঞেস করে। এই যদি হয় রোযার ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার অবস্থা তাহলে অন্য সব আমলের ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার কি হুকুম হবে? প্রকৃতপক্ষে রোযার মতো প্রতিটি আমলের মধ্যেই তাক্বওয়ার বিষয়টি জড়িত রয়েছে।

যদি তাই হয়, তাহলে আল্লাহ পাক মুসলমান নর-নারীর জন্য মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর রোযা যেমনি ফরয করেছেন তেমনি তাদের জন্য ফরয করেছেন পর্দা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে হাবীব! আপনি মু’মিন ও মু’মিনাদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে।”

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, “বেহেশ্তের দরজায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, ‘দাইয়ূছ’ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না। ‘দাইয়ূছ’ হলো ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করে না এবং তার  অধিনস্তদেরকে পর্দা করায় না।” (মুসনাদে আহমদ)

অনুরূপ মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের জন্য ছবি তোলা হারাম করা হয়েছে। মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “প্রত্যেক ছবি তোলনেওয়ালা, তোলানেওয়ালা জাহান্নামী।”

এমনিভাবে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বান্দা ও উম্মতকে যেসব বিষয় পালন করার জন্য আদেশ কিংবা নিষেধ করেছেন সেসব পালনের ক্ষেত্রে তাক্বওয়া কোথায়? বরং সেসব বিষয় পালনের ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার বিপরীতে চরমভাবে নাফরমানী করছে। ফলে জান্নাতের পরিবর্তে তারা নিজেদের জন্য জাহান্নামকে ওয়াজিব করে নিচ্ছে।

কাজেই, রোযার ন্যায় সর্বক্ষেত্রে ‘তাক্বওয়া’ বা আল্লাহভীতি অর্জন করা  প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। আর এই তাক্বওয়া সত্যিকার ওলীআল্লাহ’র ছোহবত ব্যতীত অর্থাৎ তাঁর রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ব্যতীত অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয়। মর্মে আল্লাহ পাক নিজেই বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন কর। এবং এজন্য অর্থাৎ আল্লাহভীতি অর্জন করার জন্য যাঁরা ছাদিক্বীন অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর ওলী তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ার কর।”

আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, যাঁকে দেখলে আল্লাহ পাক-এর কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি হয় এবং যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল করতে আগ্রহ পয়দা হয় এমন ব্যক্তির ছোহবত ইখতিয়ার করো।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর হাক্বীক্বী মিছদাক্ব হয়ে থাকেন যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমামগণ।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত বর্তমানার যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ছোহবত ইখতিয়ার করে তাক্বওয়া অর্জন করা।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা