সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৭৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব হামদ কেবল সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ পাক উনার জন্য। যাঁর অশেষ রহমতে জুমাদাল উখরা মাসে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত প্রকাশিত হলো। সব  ছলাত—সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। উনার সন্মানিত আহলে বাইতের প্রতি। হযরত  ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগনের প্রতি। সাইয়্যিদুস সিদ্দীক্বীন , হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি জুমাদাল উখরা  মাসে এ মহান ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ উনার মাস হওয়ায় তা বিশেষ মর্যাদা ও তাৎপর্যের দাবী রাখে। মূলত হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বোত্তম এ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদার মূল্যায়ন করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। যাঁর ভূয়সী প্রশংসায় বহু আয়াত শরীফই নাযিল হয়েছে। সূরা তাওবা  উনার চল্লিশ নং আয়াত শরীফটি বিশেষ প্রানিধানযোগ্য। এই আয়াত শরীফেই তাঁর  তিনটি প্রশংসার উল্লেখ সহ তাঁকে ’সানী ইসনাইন’ (দু’জনে র দ্বিতীয়) বলে সুমহানমর্যাদা দেয়া হয়েছে। তিবরানী শরীফ উনার হাদীস শরীফে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেন,”নবী আলাইহিমুসসালামগনের পরে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহু উনিই সর্বোত্তম মানুয।” রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই তাঁর সম্পর্কই ছিল প্রগাঢ়। অধিক পছন্দের মর্যাদার ও অধিক আস্থার। উনার চিন্তা—চেতনা ও চরিেএর সাথে সর্বাধির সামাঞ্জস্যশীল এবং একীভুত। যে কারনে উনি বিস্ময় প্রকাশ করেননি, মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর জানাযায়। বিমর্য হননি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে। এমনকি হুশ হারাননি আজীবনের আঁাকা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেছাল শরীফে।
স্মরনীয় যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার অব্যাহতির পর পরই খলীফা হওয়ার প্রসঙ্গ উ্ঠলে তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ পেশ করে বলেন, ’খলীফা হবে কুরাঈশগন হতে’। আর স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইমামতি দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই ছিল মূল মূল্যায়ন। এর ভিত্তিতেই প্রম খলীফা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খলীফা হবার মুবারক অধিষ্ঠান। তিঁনি খলীফাতু রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে অভিহিত হন। তএব, প্রতিভাত হয় যে, ”তিনি গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামে গনতন্ত্র এর ভিত তিনিই সর্বপ্রম স্থাপন করেন।”
(নাউযুবিল্লাহ) এসব কথা সবই মিথ্যা। স্মরনীয় খেলাফা—ই—রাশেদার কেউ গনতন্ত্র করেননি। গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতও হননি। গনতান্ত্রিক নির্বাচনী ভিত্তিতে হলে, খলীফা হতেন আনছার ছাহাবাদের প্রধান আবু ওবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কারন আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন চেয়েছিলেন তাদের মাঝ থেকে খলীফা হোক। এবং আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন
উনাদের সংখ্যাই ছিল বেশী। কাজেই আজকের সংখ্যাধিক্য নির্বাচনী তথা গনতন্ত্র যদি তখন থাকত তাহলে হযরত আবু ওবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনিই খলীফা হতেন। কিন্তু তাঁরা গনতন্ত্র করেননি। তাঁরা খেলাফত করেছেন। কুরআন—সুনড়বাহ উনাদের আদর্শ অনুসরন করেছেন। তাই গনতান্ত্রিক নির্বাচনী সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে নয় বরং  কুরআন—সুনড়বাহ উনাদের আলোকে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে আফযালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনিই খলীফা হয়েছেন। আবার হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সরাসরি নিয়োগ করেছেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বিছাল শরীফ লাভের পূর্ব মূহুর্তে এক ফরমানে উল্লেখ করেন, ” হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা, ্ আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পক্ষ হতে মু’মিন মুসলমান উনাদের প্রতি। প্রশংসনীয় আল্লাহ পাক উনি আপনাদের নিরাপদ রাখুন। আমি হযরত উমর ইমনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আপনাদের খলীফা মনোনীত করলাম। উনাকে মানুন এবং উনার আদেশ পালন করুন। (তারিখে ইয়াকুব নজফ, কানজুল উম্মাল) এরপর হযরত উমর ইমনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি যখন উনার শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পড়লেন, তখন উনি হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যুবায়ের
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ্ইবনে আবি ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সহ কুরাইশদের মধ্যে থেকে ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন যে, উনাদের মধ্যে থেকে খলীফা হবেন।
পরবতীর্তে এই ছয়জন উনাদের মধ্যে থেকে চারজন স্বেচ্ছায় খলীফা হতেই অস্বীকৃতি জানালেন, বাকি দুই জনের মধ্যে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি সিদ্ধান্ত দাতার ভুমিকায় অবতীর্ন হন। হাদীছ শরীফ অনুযায়ী তিনি হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তৃতীয় খলীফা মনোনীত করেন। আর তাঁর পরবর্তীতে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চতুর্ খলীফা মনোনীত হন। উল্লেখ্য, ইতিহাসে বর্নিত দামেস্কের উমাইয়া ও বাগদাদের আব্বাসীয় খলীফাদের কথিত খেলাফত ৬৫৬ হি: বা ১২৫৮ সালে ব্যহত হয়। অত:পর ১২৬২ সালে মিশরে ্এ খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে, ২৫০ বছরের বেশি অব্যাহত থাকে। এর পরে ১৫১৭ সালে তুকীর্ সুলতান সেলিম সে খেলাফতের ধারাবাহিকতা জারী করেন। খেলাফতের ধারনা পরবতীর্তে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত বর্তমান থাকে। আর তুরষ্কে কামাল পাশার গনতন্ত্র চর্চার কারনেই সে ধারনা অবলুপ্ত হয়। অথচ সে গনতান্ত্রিক রীতিতেই, খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করে ব্রিটিশ আমল থেকেই, উপমহাদেশের মুসলমানগন বিভ্রান্তির, বিড়ম্বনার স্বীকার হয়ে আসছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ’নিখিল ভারত খেলাফত কমিটি’ গঠন থেকে একইরুপে চালিত সকল জমিয়ত, আঞ্জুমান বা ইসলামিক পার্টি ঐক্যজোট, জামাত, শাসনতন্ত্র, খেলাফত আন্দোলন মজলিশ ইত্যাদি মুসলমানদের ভুল দিক নির্দেশনা, ব্যর্থতা আর হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। ইতহাস সাক্ষ্য দেয় , পূর্বোক্ত কমিটির কার্যকলাপে প্রম পর্যায়েই বাংলার আট হাজার এবং পরবর্তীতে পঞ্চাশ হাজার স্কুল—মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। বহু লোক চাকুরী ছাড়ে, আশি হাজার লোক কারাবরন করে। অথচ যে হিন্দু গান্ধীর সাথে মিলে তারা হরতাল, ধর্মঘট ও অসহযোগ আন্দোলন করেছে, সে হিন্দুদের স্কুল—কলেজে হরতাল, ধর্মঘট হয়নি। চাকুরীচ্যুতদের মধ্যে ৯৫% ই ছিল মুসলমান। যা পরবর্তীতে হিন্দুদের দ্বারাই পুরন হয় এবং গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হিন্দুদের তালিকা , ক্ষেএ বিশেষে ছিল শূন্য। অপরদিকে যেসব মুসলিম নেতৃবৃন্দ বিদেশী পন্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন, তাদেরকেই আবার কোন কোন সভায় দেখা গিয়েছে বিদেশী সিগারেট টানতে। অর্থাৎ আমলহীন, ফাসিক বা আলেমরুপী মুনাফিকদের বিশেষ সমাবেশও তাদের মাঝে হয়েছিলো। মূলত: খেলাফত আল্লাহ পাক উনার দান। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ” হে দাউদ আলাইহিস সালাম, আমি আপনাকে প্রতিনিধি (খলীফা) করেছি।” (সূরা যুমার) আর এ দান আল্লাহ পাক উনার লক্ষস্থল খাছ ওলী আল্লাহ ব্যতীত দান করেন না। আমাদের তাই বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার ছোহবতে যেতে হবে। তবেই যেমন জানা যাবে, গনতন্ত্র চর্চার কুফল, নেতার প্রকৃতগুন। তার সাথে তেমনি সুগম হবে খেলাফত প্রতিষ্ঠার পথ। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহর সানিড়বধ্য ও খেলাফত নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়