সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।

 সুওয়ালঃঃ চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াবঃঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।

হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলেই উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আর … আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার শরীয়ত সম্মত কোন ওজর বা আপত্তি না থাকলে আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা যে বলেছে, “জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।” তাদের এধরণের কোন  বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত ‘আল ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া গ্রন্থেরمباحث الاذان    অধ্যায়ের اجابة المؤذن পরিচ্ছেদে উল্লেখ নেই।

সুতরাং প্রমাণিত হলো তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখকের প্রশংসা করে বলেছে, “সর্বজনমান্য হানাফী ফক্বীহ্ ইমাম আবদুর রহমান জাযীরিহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি…..।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মোতাবিক ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব যদি হানাফী হন, তাহলে হানাফীদের বিরুদ্ধে এধরনের স্ববিরেধী বক্তব্য প্রদান করে কিভাবে?

কারণ ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব, তার লিখিত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ৩১৭ পৃষ্ঠার اجابة المؤذن পরিচ্ছেদের প্রথম লাইনে উল্লেখ করেছেন।

اجابة  المؤذن  مندوبة

(অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব)

অথচ হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের মতে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই আযানের মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব।

যেমন- হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আলা দুররিল মুখতার কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعلى المعتمد يجيب بالسان

অর্থঃ وعلى المعتمد নির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

يجيب عل السامعين عند الاذان الاجابة وهى ان يقول مثل ما قال المؤذن … وهو الصحيح.

অর্থঃ “আযানের সময় আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবে দিবে যে, আযানে মুয়াযযিন যা বলে আযান শ্রোতা তাই বলবে। … ইহাই صحيح বা বিশুদ্ধ মত।”

“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ظاہر یہ ہے کہ زبان سے جواب دینا بھی واجب ہے تاکہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کے ظاہر حکم کی اطاعت ہو کیونکہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا ہے کہ جب تم موذن کی اذان سنو تو جس طرح وہ کہے تم بھی کہو اور اس ظاہر حکم سے اعتراض کرنے کا کوئی قرینہ ںہیں.

অর্থঃ “প্রকাশ্য বর্ণনা অনুযায়ী মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি-এর প্রকাশ্য হুকুমের ইত্বায়াত হবে। কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “যখন তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুন, তখন মুয়াযযিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বল। আর হাদীছ শরীফের প্রকাশ্য হুকুম থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে কোন কারণ নেই।”

“ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খ-ের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه  قال الحنفية.

অর্থঃ “হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লেখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটা ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লেখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করে আমাদের হানাফীগণ বলেন, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

“তানযীমুল আশতাত্”-এর ২য় খ-ের ২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

حنفیہ کے نزدیک … اجابۃ  المؤذن واجبۃ علی السامعین.

অর্থঃ “আমাদের হানাফী মাযহাবের নিকট আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব।”

“মুয়াত্তা ইমাম মালিক” কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠার ৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

قوله فقولوا مثل ما يقول اى وجوبا عند ابى حنيفة وندبا عند الشافعى.

অর্থাৎ, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল। অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর শাফিয়ী মাযহাবে মুস্তাহাব।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মোতাবিক ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব হানাফী নন। এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব নিজের মনগড়া বক্তব্যকে হানাফীদের নামে চালিয়ে দিয়ে, হানাফী মাযহাবের নামে মিথ্যাচার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

মুহম্মদ মনজুরুল হক্ব, গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতওয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতওয়া দারুল উলূম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হল-

মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের খ-নমূলক আলোচনা-

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতওয়া দারুল উলূম, ১ম খন্ড, পৃ.১৮০)

এর জবাবে বলতে হয় যে, “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণামূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব বলেছে, “ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”

অথচ ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই।

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা ও ধোঁকাপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।

ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর বক্তব্য খ-ন

দ্বিতীয়ত: ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে,

یہ تثویب ہے جس کو بضرورت جائز رکھا گیا تھا اور امام ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ نے خاص قاضی وغیرہ کے لئے اس اطلاع کو جائز رکھا تھا کہ یہ لوگ مسلمانوں کے کاموں میں مشغول رہتے ہیں ان کو دو بار جماعت کی اطلاع دینا ضرورت ہے وخصه ابو يوسف رحمة الله عليه بمن يشتغل بمصالح العامة کالقاضی والمفتی والمدرس واختاره قاضی خان الخ پس اب یہ قصہ ہی نہیں لہذا تثویب بھی متروک ہوگئے.

অর্থঃ (“আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা) এটাকে তাছবীব বলা হয়। জরুরতে তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে। ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাছ করে বিশেষ ব্যক্তিদের যেমন- কাজী, মুফতী, মুর্দারিস প্রমুখ ব্যক্তিদের জন্য এ আহ্বানকে (অর্থাৎ “আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য আহবান করাকে) জায়িয রেখেছেন। কেননা তাঁরা মুসলমানদের খিদমতে মশগুল থাকেন। তাই তাঁদেরকে দ্বিতীয়বার জামায়াতের  জন্য আহ্বান করা জরুরী। সুতরাং এখন যেহেতু এ কারণ অবশিষ্ট নেই। সুতরাং তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর উক্ত বক্তব্য কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়।

(ক) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবে উল্লিখিত

تثویب بھی متروک ہوگئے.

(তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের দলীল পেশ করতে পারেনি। কাজেই ফতওয়ায়ে দারুল উলূমের উক্ত দলীলবিহীন, বানোয়াট, গুমরাহীমূলক ও  মনগড়া বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

(খ) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের উল্লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ইমাম মুজতাহিদগণের খিলাফ। কারণ ইমাম মুজতাহিদগণ বলেছেন, তাছবীব আমভাবেই জায়িয। আর ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে জরুরতে জায়িয বলেছে। অথচ সর্বজনমান্য, নির্ভরযোগ্য, ফিক্বাহের কোন কিতাবেই জরুরতের কথা উল্লেখ নেই।

(গ) ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে শুধুমাত্র একটি মত অর্থাৎ ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে উল্লেখ করেছে। যা ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়। বরং ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত। কেননা “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।

কারণ ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহসান।” অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয়। বরং আম-খাছ সকলের জন্যেই প্রযোজ্য) (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়।…..”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ, তাদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে অস্বীকার করেছে। অথচ ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম, মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।

ইজমা, কিয়াসে তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ-

এ প্রসঙ্গে “সীরাতে হালবীয়া” কিতাবের ১ম খ- ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوا بذكر وضعه صلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ মুহব্বতকারীর স্বভাব এটাই ছিল যে, তারা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর কথা শুনে সাথে সাথেই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করেছেন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম করা সম্পর্কে আল্লামা কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিতাবুশ শিফা”-এ উল্লেখ করেন,

اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره وتعظيمه لازم كما كان حال حياته وذلك عند ذكره صلى الله وذكر حديث وسنته وسماع اسمه وسيرته.

অর্থঃ “জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাতের পর তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তা’যীম-তাকরীম করা ঐরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারকে ওয়াজিব ছিল। কাজেই, তাঁর বরকতময় জীবনী মুবারক শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে ও তাঁর বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখ্লাকের কথা শ্রবণকালে, তাঁর প্রতি তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।”

“ইক্বদুল জাওয়াহির” নামক কিতাবের ২৯ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.

   অর্থঃ “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহসান বলেছেন।”

“ইশবাউল কালাম” নামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان  القيام المذكور وقال عليه الصلاة والسلام لاتجتمع امتى على الضلالة.

অর্থঃ “উম্মতে মুহম্মদীর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিম মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবে না।” (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর

দৃষ্টিতে ক্বল্বী যিকিরের গুরুত্ব

মূলতঃ অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে- “ক্বাল্বী যিকির” অর্থাৎ তাসাউফ তথা মুহ্লিকাত ও মুন্জিয়াত সম্পর্কিত ইল্ম অর্জন করার সাথে সাথে ক্বাল্বী যিকির করতে হবে। তবেই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে এবং হুযূরী ক্বল্ব অর্জিত হবে এবং নামাজসহ সকল ইবাদত শুদ্ধভাবে বা ইখলাছের সহিত আদায় করা সম্ভব হবে। যার ফলে সকলেই ক্বাল্বী যিকির করাকে ফরজ বলেছেন।

যেমন দায়িমী বা ক্বাল্বী যিকির সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক-এর সূরা আ’রাফ-এর ২০৫ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

واذكر ربك فى نفسك تضرعا وخيفة ودون الجهر من القول بالغدو والاصال ولاتكن من الغافلين.

অর্থঃ “সকাল-সন্ধ্যা স্বীয় অন্তরে সবিনয়ে, সভয়ে, অনুচ্চ আওয়াজে তোমার রবের যিকির (স্মরণ) কর। আর (এ ব্যাপারে) তুমি গাফিলদের অন্তর্ভূক্ত হয়োনা।”

কুরআন শরীফ-এর উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে খোলাছাতে” উল্লেখ আছে যে,

کہ مراد ذکر سے ذک قلبی اور پاس انفاس دوامی ہے

অর্থঃ- (উক্ত আয়াত শরীফে) যিকির দ্বারা ক্বাল্বী যিকির ও সার্বক্ষণিক পাছ-আন ফাছ বা শ্বাস-প্রশ্বাস যিকিরকে বুঝানো হয়েছে।

উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাস্সির, ইমামুল মুফাস্সিরীন, ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর জগদ্বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কবীরে” উল্লেখ করেন,

ومن الناس من قال ذكر هذين الوقتين والمراد مداومة الذكر والمواظبة عليها بقدر الامكان.

অর্থঃ- “কেউ কেউ বলে, শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার কথা  উক্ত আয়াত শরীফে বলা হয়েছে। মূলতঃ উক্ত আয়াত শরীফ-এ সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- দায়েমী বা সার্বক্ষণিক যিকির এবং সাধ্যানুযায়ী যিকিরে মশগুল থাকা। অনুরূপ তাফসীরে রুহুল বয়ানেও উল্লেখ আছে।

দায়িমী বা ক্বাল্বী যিকির সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ-এর অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,

يايها الذين امنوا اذكروا الله ذكرا كثيرا. وسبحوه بكرة واصيلا.

অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক মাত্রায় আল্লাহ্ পাক-এর যিকির কর। আর সকাল-সন্ধ্যা তাঁর তাস্বীহ্ পাঠ কর।” (সূরা আহ্যাব-৪১, ৪২)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে খোলাছাতে” উল্লেখ আছে যে,

کھا ابن عباس رضی اللہ تعالی عنہ نے کہ ھر عبادت محدود ھے اور مجبوری میں عذر مسموع مگر ذکر نہ اسمیں حد ہے نہ عذر ہر حال ہر وقت ہو عنوان سے ہر زبان مطلوب ومحمود ہے.

অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “প্রত্যেক ইবাদতের সীমা নির্ধারিত রয়েছে, তদুপরি তা সম্পন্ন করতে অপারগ হওয়ার ওজর গ্রহণযোগ্য। কিন্তু যিকিরের জন্য কোন নির্ধারিত সীমা নেই এবং যিকিরের ব্যাপারে অপারগতার কোন ওজরও গ্রহণযোগ্য নয়। যিকির সর্বাবস্থায়, সর্বসময়, সর্ব প্রকারে, যেকোন ভাষায় সমর্থনযোগ্য ও প্রশংসিত।”

উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ আছে যে,

قوله ذكرا كثيرا. فى جميع الاوقات ليلا ونهارا صيفا وشتاء وفى عموم الامكنة برا و بحرا وسهلا وجبلا وفى كل الاحوال حضرا وسفرا صحة  وسقما سرا وعلانية قياما وقعودا وعلى الجنوب.

অর্থঃ “কুরআন শরীফ-এর এ আয়াত শরীফ “অধিক পরিমাণে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির কর।” এর দ্বারা দিবা-রাত্রি, সর্বসময়, সর্বঋতুতে, পানি ও স্থলে, মাঠে-পর্বতে, স্বদেশে-প্রবাসে, সুস্থতায়, অসুস্থতায়, প্রকাশ্যে, গোপনে, দ-ায়মান-উপবেশনে ও শয়নে অর্থাৎ প্রতি অবস্থায় বা দায়েমীভাবে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে আযানে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

‘শরহুস্ সুন্নাহ্’ কিতাবে

 باب تكبيرات صلاة العيد والقراءة فيها.  অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে-

روى عن عبد الله بن مسعود انه يكبر فى الاولى ثلاثا قبل القراءة سوى تكبيرة الافتتاح وفى الركعة الثانية ثلاثا بعد القراءة سوى تكبيرة  الركوع.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি ঈদের  নামাযে প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত  তিন তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পর রুকুর তাকবীর ব্যতীত তিন তাকবীর বলতেন।

‘ফিক্বহুস সুনানি ওয়াল আছার’ কিতাবে

 فصل فى صلاة العيدين পর্বে বর্ণিত আছে-

وللطبرانى بسند جيد عن ابن مسعود قال التكبير فى العيد اربعا كالصلوة  فى الميت.

অর্থঃ ত্ববারানী শরীফে জাইয়িদ বা উৎকৃষ্ট সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, প্রতি রাকায়াতে ঈদের নামাযে চার তাকবীর দিতে হবে যেমনটি জানাযা নামাযে চার তাকবীর দেয়া হয়। (আল মাজমা ২য় জি. ২০৫ পৃষ্ঠা, হাইছামী, হাশিয়ায়ে মুছান্নাফ আব্দুর রয্যাক্ব)

‘আল মুছান্নাফ লি আব্দির রয্যাক্ব-এ বর্ণিত আছে-

عبد الرزاق عن معمر عن ابى اسحاق عن علقمة والاسود ابن يزيد قال: كان ابن مسعود جالسا وعنده حذيفة وابو موسى الاشعرى فسألهما سعيد بن العاص عن التكبير فى الصلاة يوم الفطر والاضحى فجعل هذا يقول سل هذا وهذا يقول سل هذا فقال له حذيفة سل هذا لعبد الله بن مسعود فسأله فقال ابن مسعود يكبر اربعا ثم يقرأ ثم يكبر فيركع ثم يقوم فى الثانية فيقرأ ثم يكبر اربعا بعد القراءة.

অর্থঃ হযরত আব্দুর রয্যাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করনে। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন একস্থানে বসেছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাঁদের দু’জনকে হযরত সায়ীদ বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা নামাযের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তাতে একজন বললেন, উনাকে (এ ব্যক্তিকে) জিজ্ঞাসা করুন। আবারো বললেন, উনাকে (এ ব্যক্তিকে) জিজ্ঞাসা করুন। হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে বললেন, এ ব্যক্তিত্ব হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করুন। অতঃপর তিনি তাঁকেই জিজ্ঞাসা করলেন। জাওয়াবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন, প্রথম চার তাকবীর দিবে, তারপর ক্বিরায়াত পাঠ করে তাকবীর বলে রুকু করবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে ক্বিরায়াত পাঠ করে ক্বিরায়াতের পরে চারটি তাকবীর বলবে। (ত্ববারানী, হাইছামী, হাশিয়ায়ে মুওয়াত্তা লিল ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, তুহফাতুল আহওয়াযী, ফিক্বহুস সুনানি ওয়াল আছার লিল আমীমিল ইহসান আল মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আছারুস সুনান, ইবনু হাযম লিল মহল্লী, আল হাফিয ফিদ দিরায়াহ)

وروى الطبرانى فى الكبير عن كردوس قال ارسل الوليد الى عبد الله بن مسعود وحذيفة وابى موسى الاشعرى وابى مسعود بعد العتمة فقال ان هذا عيد للمسلمين فكيف الصلاة ؟  فقالوا: سل ابا عبد الرحمن فسأله فقال يقوم فكبر اربعا ثم يقرأ بفاتحة الكتاب وسورة  من المفصل ثم يكبر اربعا يركع فى اخرهن.

অর্থঃ  হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আল জামিউল কবীর’ কিতাবে হযরত কিরদাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একবার হযরত ওয়ালীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সকাল বেলা হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আজকে মুসলমানগণের ঈদের দিন, তাই কিভাবে নামায পড়বো? তাঁরা সকলে বললেন, আপনি হযরত আবূ আব্দুর রহমান (হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করুন। তাই তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি উত্তরে বললেন, দাঁড়িয়ে চার তাকবীর বলবে অতঃপর ফাতিহাতুল কিতাব অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করে তিওয়ালে মুফাচ্ছাল-এর সূরা পাঠ করবে। অতঃপর তাকবীর দিয়ে রুকু-সিজদা করে দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে ক্বিরায়াত পাঠ করবে) তারপর চার তাকবীর দিবে, তারমধ্যে শেষ তাকবীর বলে রুকু করবে।

উল্লেখ্য, যে সকল হাদীছ শরীফে আট তাকবীর ও নয় তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে সে হাদীছ শরীফগুলোও হানাফী মাযহাবের দলীল। অর্র্থাৎ আট তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের দলীল তার বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নয় তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের স্বপক্ষে দলীল হতে পারে এর ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল ক্বদীর শরহে হিদায়াহ্’ কিতাবে বর্ণিত আছে-

المراد بالخمس تكبيرة الافتتاح والركوع  وثلاث زوائد وبالاربع بتكبرة الركوع .

অর্থঃ প্রথম রাকয়াতে পাঁচ তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীর আর ক্বিরায়াতের পূর্বে যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর । দ্বিতীয় রাকয়াতে চার তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: ক্বিরায়াতের পর যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে রুকুর তাকবীর।

‘ফতহুল্ ক্বদীর’ কিতাবে বর্ণিত আছে-

مارواه عبد الرزاق فى مصنفه : اخبرنا سفيان الثورى عن ابى اسحاق عن علقمة والا سود: ان ابن مسعود كان يكبر فى العيدين تسعا تسعا، اربع قبل القراءة ثم يكبر فيركع وفى الثانية يقرأ فاذا فرغ كبر اربعا ثم ركع. قال النيموى اسناده صحيح. ( تحفة  الاحوذى )

অর্থঃ হযরত আব্দুর রয্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মূছান্নাফ-এ বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আলক্বামা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যে, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দু’ ঈদের নামাযে নয়বার করে তাকবীর বলতেন। প্রথম রাকায়াতে তাকবীরে তাহরীমাসহ ক্বিরায়াতের পূর্বে চারবার অতঃপর ক্বিরায়াত পাঠ করে একবার তাকবীর বলে রুকু করতেন। দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াত পাঠ শেষ করে (রুকুর তাকবীরসহ) চারবার তাকবীর দিয়ে রুকুতে যেতেন। হযরত নাইমূবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ্ তথা বিশুদ্ধ। এ বর্ণনা তুহ্ফাতুল আহওয়াযী কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে।

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে। আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুর্যুগগণের ওসীলাকে সমর্থন করে। এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খ-নমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।

১. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-

وما لكم من دون الله من ولى ولا نصير.

অর্থঃ আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত তোমাদের জন্য  কোন অভিভাবক ও কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা বাক্বারা-১০৭)

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন একমাত্র সাহায্যকারী। সুতরাং কাউকে ওসীলা মেনে নেয়া এক ধরনের সাহায্যকারী মেনে নেয়া, কাজেই এটা শিরক।

এর জাওয়াব হলো-

প্রথমতঃ আয়াতে কারীমায় من دون الله (আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত) দ্বারা আল্লাহ তায়ালার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আযাব বা শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে কেউ আল্লাহ তায়ালার মোকাবেলায় তাঁর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না। অতএব, আল্লাহ তায়ালার প্রতিদ্বন্দ্বীর ওসীলা জায়িয নয়।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ওলীগণের ওসীলা সে রকম নয় বরং তাঁদের ওসীলা আল্লাহ তায়ালার অনুমতি সাপেক্ষেই হয়। কাজেই, সে ওসীলা গ্রহণ জায়িয।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

وان يخذلكم فمن ذا الذى ينصركم  من بعده وعلى الله فليتوكل المؤمنون.

অর্থঃ যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে অপমানিত করতে ইচ্ছা করেন তাহলে তোমাদেরকে সাহায্য কে করতে পারবে? মুসলমানদের আল্লাহ তায়ালার উপরই তাওয়াক্কুল করা উচিৎ। (সূরা আলে ইমরান-১৬০)

এ আয়াত শরীফ হলো ওসীলাবিরোধীদের পেশকৃত আয়াত শরীফ-এর তাফসীর।

দ্বিতীয়তঃ এখানে সাহায্য দ্বারা আল্লাহ তায়ালার চিরস্থায়ী সাহায্যকে বুঝানো হয়েছে। অবশিষ্ট ওসীলাসমূহের সাহায্য আল্লাহ তায়ালার অনুমতিক্রমে হয়।

তৃতীয়তঃ উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা একথা বুঝানো হয়েছে যে, যদি তোমরা কুফরী অবলম্বন কর তাহলে তোমাদের কেউ সাহায্যকারী নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وما للظلمين من انصار

অর্থঃ যালিম বা কাফিরদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা বাক্বারা-২৭০)

মূল কথা হলোঃ সাহায্য বা ওসীলা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেন-

انما وليكم الله ورسوله والذين امنوا الذين يقيمون الصلوة ويؤتون الزكوة وهم راكعون.

অর্থঃ- হে মুসলমানগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের সাহায্যকারী আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ঐ সকল মু’মিন যারা নামায আদায় করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালনে অবনত। (সূরা মায়িদা-৫৫)

এখানে তিন সত্ত্বাকে ওসীলা বা সাহায্যকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক. আল্লাহ পাক, দুই. আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিন. মু’মিন বান্দাগণ।

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-

والمؤمنون والمؤمنات بعضهم اولياء بعض

অর্থঃ মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারীগণ পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা তওবা-৭১)

আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যের সাহায্যের কথা আয়াত শরীফেই রয়েছে।

কাজেই, সাহায্য বা ওসীলা গ্রহণ শিরক এ কথা বাতিল বলে প্রমাণিত হলো।

মুহম্মদ জুনায়েদ, চাকতাই, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-

১.         আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

২.         মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?

৩.         রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?

৪.         রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।

৫.         তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?

৬.         হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণ মানুষের ঈমান হিফাযতের সহায়তা  করবেন বলে আমি আশাবাদি।

জাওয়াবঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-

৪.         “রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।”

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর একজন মাহবুব মুরীদ হচ্ছেন হযরতুল আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ হারুনুর রশীদ ছাহেব। বর্তমােেন তিনি রংপুর, মাহিগঞ্জ সর্দারটারী মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ কমপ্লেক্স জামে মসজিদ-এর খতীব ও পেশ ইমাম।

হযরতুল আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ হারুনুর রশীদ ছাহেব ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর সেনপাড়া জামে মসজিদে ইমাম ও খতীব হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন থেকে ২০০৪-এর ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত অত্যন্ত যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সাথে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি উক্ত মসজিদের যাবতীয় উন্নয়নমুলক কাজেও যথেষ্ট অবদান রাখেন। তাঁর ইলমী যোগ্যতা, দলীলভিত্তিক বয়ান ও সুন্নতভিত্তিক আমলের কারণে মসজিদের প্রায় মুছল্লীই ছিলেন তাঁর মহাভক্ত। তাই ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে কোন সমস্যাই সৃষ্টি হয়নি।

সমস্যা সৃষ্টি হলো কখন?

কেন সমস্যা সৃষ্টি হলো?

কারা সমস্যা সৃষ্টি করলো?

মূলতঃ যখন তিনি জামাতি, খারিজী ওহাবী, তাবলীগী লা-মাযহাবীদের বদ আক্বীদা ও আমলগুলো মুছল্লীদের সামনে প্রকাশ করে দিলেন। বিশেষ করে শাইখুল হদছ আজীজুল হক্ব, হাটহাজারীর মোহতামিম আহমক শফী, মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন, খতীব উবাই, রাজাকার নিজামী, জঙ্গী আমীনী গংদের হাক্বীক্বত উন্মোচন করে দিলেন। অর্থাৎ তাদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার, হারাম ছবি তোলার এবং ইহুদী, খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের অনুসরণে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন, লংমার্চ, হরতাল করার যাবতীয় চিত্রগুলো যখন মুছল্লীদের মাঝে তুলে ধরলেন, তখন মুছল্লীরা রাজারবাগ শরীফ-এর প্রতি আকৃষ্ট হলো। আর তাদেরকে ধিক্কার দিতে লাগলো। তারা দেখলো যে, এভাবে চলতে থাকলে তাদের অস্তিত্ব সেনপাড়ায় থাকবে না। তাই তারা তাদের পূর্বসূরী আবূ জাহিল, আবূ লাহাবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। দলীলবিহীন বিরোধীতা এবং মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করলো।

মসজিদ কমিটির কয়েকজন ও কতিপয় তথাকথিত মুছল্লী যারা উল্লিখিত উলামায়ে “ছূ”দের অন্ধপূজারী, তারা ইমাম ও খতীব ছাহেবের আক্বীদা ও আমলগত কোন ভুল প্রমাণ করতে না পেরে অপপ্রচার করতে থাকে যে, ইমাম ও খতীব ছাহেব যে পীর ছাহেব-এর মুরীদ তিনি বিদয়াতী। নাউযুবিল্লাহ। তাদের উক্ত মিথ্যা অপপ্রচারের তীব্র প্রতিবাদ করেন মুছল্লীবৃন্দ। তারা বলেন, আমাদের ইমাম ছাহেব শরীয়ত ও সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ এবং তাহাজ্জুদগুজার। তাঁর মধ্যে একটি বিদয়াতও নেই। কাজেই, মুরীদ যদি শরীয়ত ও সুন্নতের পুর্ণ পাবন্দ হন, কোন বিদয়াত আমল না করেন তবে তাঁর পীর ছাহেব কি করে বিদয়াতী হন? মুছল্লীরা ফিৎনাবাজদের কাছ থেকে দলীল তলব করেন। তারা ভ- উবায়দুল হক্বের কাছ থেকে একটি ফতওয়া নিয়ে মুছল্লীদের কাছে পেশ করে।

মুছল্লীরা ফতওয়াটি দেখে বললেন, এ ফতওয়া গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ এটা সম্পূর্ণ মনগড়া ও হিংসাবশতঃ লিখা। এখানে ভ- খতীব উবায়দুল হক্ব দলীল দ্বারা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর কোন আমলকে বিদয়াত প্রমাণ করতে পারেনি।

মুছল্লীদের একথা শুনে ফিৎনাবাজ সন্ত্রাসীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে মুছল্লীদের সাথে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়। পরবর্তীতে ফিৎনাবাজ ও সন্ত্রাসীরা বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটাতে পারে এই আশঙ্কায় রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী, হযরতুল আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ হারুনুর রশীদ ছাহেবকে উক্ত মসজিদের ইমাম ও খতীব পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নিজেই সেনপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। এই হলো সেনপাড়া জামে মসজিদের উক্ত ইমাম ও খতীব ছাহেবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

অথচ দীর্ঘ ৪ বৎসর পর দাজ্জালে কাজ্জাব, ভ-, বিদয়াতী, গোমরাহ, প্রতারক, হাটহাজারীর উলামায়ে “ছূ”রা উক্ত ঘটনাটিকে বিকৃতভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উপস্থাপন করে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করেছে। এর দ্বারা তারা এটাই প্রমাণ করলো যে, তারা আসলেই ভ-, প্রতারক, মিথ্যাবাদী। হক্বের বিরোধিতা করাই তাদের মূল কাজ।

কাজেই, এসমস্ত ভ-, বিদয়াতী, গোমরাহ ও মিথ্যাবাদীদের থেকে সতর্ক থাকা সকল মুসলমানের জন্যই ফরয ও ওয়াজিব। (চলবে)

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন শিশির

মুহম্মদপুর, ঢাকা

সুওয়ালঃ আমরা জানি, ছবি তোলা হারাম এবং বেপর্দা হওয়াও হারাম। কিন্তু বর্তমানে পুরুষ ও মহিলাকে হজ্জ করতে হলে বিশেষ করে এ দু’টি হারাম কাজের শিকার হতে হয়। এমতাবস্থায় হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের কি হুকুম? জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াবঃ স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর কালাম পাকে এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ পাকে হজ্জের বিধি-বিধান সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। সেই সমষ্টিগত বর্ণনা থেকে আখিরী উম্মতগণের প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে শর্ত করা হয়েছে পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তার।

পথের সামর্থ্য বলতে “সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকা এবং যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকা।” আর পথের নিরাপত্তা বলতে সুস্থ্য থাকা এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকা।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর জন্যেই মানুষের প্রতি হজ্জ করা ফরয যার পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তা রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান-৯৭)

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-

فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال فى الحج.

অর্থঃ “যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালন করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭)

আয়াত শরীফে স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, হজ্জ করতে গিয়ে যদি ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকে তথা হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে হারাম ও কুফরী কাজ করতে হয় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। যেমন ছবি তোলা, পর্দা লঙ্ঘণ করা উভয়টি শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং চরম ফাসিকী ও নাফরমানীমূলক কাজ। সুতরাং হজ্জের অজুহাতে এই হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ করা কখনই শরীয়তসিদ্ধ নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এ হারাম কাজে বাধা প্রদান করা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেন অন্তরে তা ঘৃনা করে দূরে সরে থাকে। আর এটাই সবচেয়ে দূর্বল ঈমানের পরিচয়। এরপর ঈমানের আর শরিষা পরিমাণও অবশিষ্ট নেই। (মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ ক্ষমতা থাকলে প্রথমতঃ শক্তি বা বল প্রয়োগ করে ছবি ও বেপর্দা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে যবানে বা মুখে বলতে হবে বা জানিয়ে দিতে হবে যে, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া হারাম। হজ্জসহ সর্বক্ষেত্রে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ। জায়িয মনে করা কুফরী। কাজেই মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ এবং হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্থান থেকে সি.সিটিভি ও ক্যামেরা সরিয়ে নেয়া হোক। তৃতীয়তঃ যদি যবানে বলার ক্ষমতাও না থাকে তাহলে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়াকে অন্তর থেকে হারাম ও গুনাহর কাজ স্বীকার করে তা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। আর এটা হচ্ছে একেবারে দূর্বল ঈমানদারের পরিচয়। এরপরে ঈমানের আর কোন স্তর নেই। অর্থাৎ যারা হাতেও বাধা দিবে না, যবানেও প্রতিবাদ করবে না এবং সেই হারাম কাজকে অন্তরে খারাপ জেনে বিরত বা দূরেও সরে থাকবে না বরং সেটাকে সমর্থন করবে এবং তাতে জড়িত হবে হাদীছ শরীফ মোতাবেক তাদের ঈমান নেই। তাহলে ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা কি করে জায়িয হতে পারে?

অতএব, কেউ যদি সত্যিই শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী হজ্জ কতে চায় তাহলে তাকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষণাকৃত ছবি তোলা ও বেপর্দাসহ সর্বপ্রকার হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি হজ্জ করতে গিয়ে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া অথবা অন্য কোন হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে হজ্জ ফরয হবে না। যেমন কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয়, আর তার যদি কোন মাহ্রাম পুরুষ না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ মাহ্রাম পুরুষ ব্যতীত হজ্জে গেলে তার দ্বারা হারাম কাজ হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান।

কেউ কেউ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে, “জরুরত বা মা’জুরতার কারণে হারামটা মুবাহ হয়ে যায়। তাই হজ্জের জন্য ছবি তুললে  কোন গুণাহ হবে না। কারণ তা জরুরতবশতঃ তোলা হয়। এর জবাবে বলতে হয় যে, হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের উক্ত বক্তব্য আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হজ্জের জন্য ছবি তোলাটা কখনই মা’জুরের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা হজ্জ করার জন্য সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে বাধ্য করা হয়নি এবং ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকায় যেখানে হজ্জই ফরয নয় সেখানে কি করে সে মা’জুর হলো? এখন কোন মহিলা যদি বলে, আমার সম্পদ রয়েছে কিন্তু মাহরাম নেই এক্ষেত্রে আমি মা’জুর, সুতরাং মাহরাম ছাড়াই হজ্জ করবো। তার এ কথা কি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে? কস্মিনকালেও নয়। কারণ মাহ্রাম ছাড়া তার উপর হজ্জ ফরয নয়। আর যদি হজ্জ ফরয না হয় তাহলে সে মা’জুর হলো কি করে? বরং কোন সরকারের পক্ষ থেকে হজ্জের ক্ষেত্রে ছবি তোলাকে আবশ্যক করাটা হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি কারণ বা বাধা। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يمنعه من الحج حاجة ظاهرة او سلطان جائر او مرض حابس.

অর্থঃ “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তির হজ্জ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধকারী বিষয় হচ্ছে- প্রকাশ্য বাধা অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর অসুখ।” (মাছাবীহুস সুন্নাহ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)

অর্থাৎ, কোন ব্যক্তির হজ্জ করার সামর্থ না থাকলে অথবা অত্যাচারী শাসকের কারণে জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকলে অথবা কঠিন অসুস্থতা থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। অর্থাৎ হজ্জের ফরয সাকিত হয়ে যাবে। (দলীলসমূহঃ সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)

মুহম্মদ আল আমীন

ঘোড়াশাল, নরসিংদী

সুওয়ালঃ   কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

জাওয়াবঃ  যিলহজ্ব মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ্ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহঃ- (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।}

মুহম্মদ গোলাম রব্বানী, রাজশাহী।

সুওয়ালঃ   ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও  আক্বীকা এক সাথে জায়িয হবে কিনা? জাওয়াবঃ   হ্যাঁ, জায়িয হবে।  {দলীলঃ- শামী, আলমগীরি ইত্যাদি।}

মুহম্মদ মিজানুর রহমান, চাঁদপুর।

সুওয়ালঃ   আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে কুরবানীর পশু কুরবানীকরার পূর্বে অথবা কুরবানীকরার সময়ে হাঁস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি যবেহ্ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াবঃ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজুসী বা অগ্নী উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবা বা সাদৃশ্য রেখে কোরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা কুফরী হবে। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।”

আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, যেহেতু এটাও মোশাবাহ্ হয়ে যায়।

আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তান্যিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগী ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন সুব্হে সাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ্ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ্ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে।  (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭, তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন।)

{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}

মুসাম্মত সোলেমা, মুসাম্মত পান্না, রংপুর

সুওয়ালঃ  হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ? জাওয়াবঃ  কুরবানীবা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অন্ডকোষ, (৩) মুত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ্ তাহ্রীমী, আবার কেউ মাকরূহ্ তান্যিহী বলেছেন। {দলীলসমূহঃ শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।”

মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার।

 সুওয়ালঃ    কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়েয আছে কি? জাওয়াবঃ  কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা জবেহ্ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)

মুহম্মদ উমর ফারুক, চাঁদপুর।

সুওয়ালঃ   কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন। জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, যারা কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্বের চাঁদ ওঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ কুরবানীকরা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

 অর্থঃ- “হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (কুরবানীনা করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)

মূলতঃ ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা কুরবানীকরবে এবং যারা কুরবানী করবেনা, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ হাদীছ শরীফ- যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,

عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ পাক উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না। তুমি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবে না। বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবে। তোমার গোঁফ খাট করবে এবং তোমার নাভীর নীচের চুল কাটবে, এটাই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা তুমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি কুরবানীর ছওয়াব পাবে। {দলীলসমূহঃ- নাসায়ী, মিশকাত, শরহে নববী, বজলুল মাযহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব ইত্যাদি।}

মুহম্মদ কবীর হুসাইন, বরিশাল

সুওয়ালঃ অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশ্ত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কি না? জানালে খুশী হবো।

জাওয়াবঃ যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশ্ত পিতা-মাতা খেতে পারবে না তাদের সে কথা শরীয়ত সম্মত নয়। শরীয়তের মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশতের হুকুম কুরবানীর পশুর গোশতের হুকুমের মত। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ