সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৮১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মুহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন,

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা

সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলারেম মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ণ করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মুল বিষয়বস্তু হলো-

… ৯. তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তাদের নিজেদের লিখিত কিতাব “ফতওয়ায়ে দারুল উলুম হাটহাজারী ও ফয়জুল্লাহ্র লিখিত কিতাব এবং তাফসীরে ইবনে কাছীর, কবীর, বযলুল মাযহুদ, ফয়জুল বারী, মা’য়ারিফুস্ সুনান ও আল ই’তেছাম লিশশাতেবীর নাম উল্লেখ করেছে।

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবাদীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদী।

ধারাবাহিক

জাওয়াবঃ হাটহাজারীর জাহিল মৌলভীরা মুনাজাতের বিপক্ষে যেসকল কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে তার অধিকাংশগুলোই তাদের নিজেদের এবং তাদেরই মতাদর্শে বিশ্বাসী লোকদের দ্বারা লিখিত। যা হক্বপন্থীদের নিকট মু’তাবার বা নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।

তাছাড়া সরাসরি অসংখ্য ক্বওলী ও ফে’লী হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমানিত যে, ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা সুন্নত।

যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-

عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لا يؤمن رجل قوما فيخص نفسه باالدعاء  دونهم فان  فعل  ذالك  فقد خانهم.

অর্থঃ- “কোন ইমাম সাহেব মুক্তাদীগণকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য মুনাজাত করবে না। যদি সে তা করে, তবে সে মুক্তাদীগণের প্রতি খিয়ানতকারী হবে।” (তিরমিযী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ-৪৭)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়। কেননা এ হাদীছ শরীফে সরাসরি ইমাম ও মুক্তাদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।

لا يجتمع  ملأ  فيدعو  بعضهم ويؤمن  بعضهم الا  اجابهم الله

অর্থঃ “সম্মিলিত মুনাজাতে কিছু লোক মুনাজাত করলো, আর কিছু লোক ‘আমিন’ বললো, আল্লাহ্ পাক অবশ্যই তাদের এ মুনাজাত কবুল করবেন।” (মায়ারিফুস্ সুনান)

উল্লেখিত হাদীছ শরীফ ফরজ, নফল বা কোন সময়ের নির্ধারণ ছাড়াই সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ হাদীছ শরীফ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয হওয়ারও প্রমাণ বহন করে। তাছাড়া হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারাও ফরজ নামাজের পর (ইজতিমায়ী) সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। যেমন ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবায়’ উল্লেখ রয়েছে,

عن الاسواد العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.

অর্থঃ “হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তাঁর পিতা বলেন- আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামাজ পড়লাম। যখন তিনি নামাজের সালাম ফিরালেন, ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করলেন।”

কাজেই, হাটহাজারী মৌলভীদের উল্লিখিত কিতাবের বক্তব্য যেহেতু সরাসরি হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ তাই উল্লিখিত কিতাবের বক্তব্য দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য নয়।

শুধু তাই নয়, হাটহাজারী মৌলভীরা যে ফিরক্বার অনুসারী। অর্থাৎ দেওবন্দী ফিরক্বা সেই দেওবন্দীদের অনেক মুরুব্বীর বক্তব্যেরও খিলাফ তাদের উল্লিখিত কিতাবসমূহের বক্তব্য।

যেমন-ফতওয়ায়ে দেওবন্দ-এর ৪র্থ খ-, ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

امام جس وقت نماز  سے فارغ  ہو  مع مقتد یوں  کےسب اکھٹا دعا  مانگیں.

অর্থঃ “ইমাম ছাহেব যখন নামায শেষ করবেন, তখন মুক্তাদীগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাতক করবেন।”

“আশরাফী বেহেশ্তী জিওর” কিতাবের ১১ খ-, ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

بعد نماز ختم کر  چکے کے دونوں  ہاتھ سینہ تک اٹھا کر   پھیلائے اور اللہ  تعالی سے ا پنے لئے دعا مانگے اور امام ہو تو  تمام  مقتدیوں کے لئے بھی اور  بعد  دعا مانگ چکنے کے دونوں ہاتھ  منہ پر پھیر  لے. مقتدی خواہ اپنی دعا مانگنے یا امام  کی دعا سنائی دے تو خواہ سب أمین أمین کھتے رہیں.

অর্থঃ “নামায শেষ করার পর উভয় হাত সীনা পর্যন্ত উঠাবে এবং আল্লাহ পাক-এর নিকট নিজের জন্য মুনাজাত করবে। আর ইমাম হলে সকলের জন্য মুনাজাত করবে, মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখ মাসেহ করবে। মুক্তাদীগণ নিজ নিজ দোয়া চাইবে অথবা ইমাম ছাহেবের মুনাজাত শোনা গেলে তার সাথে সকলে ‘আমীন, আমীন’ বলবে।”

“ফতওয়ায়ে রহীমিয়া”-এর ১ম খ-, ২১৫-২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

مسنون یہ ہے کہ جس طرح فرض نماز جماعت سے پڑ ھی دعا بھی جماعت کے ساتھ کی جائے یعنی امام اور  مقتدی سب مل کر  دعا مانگنیں …..أں حضرت صلی اللہ علیہ وسلم ، صحاب کرام  اور سلف صالحین رضی اللہ عنہم  کا طریقہ یہ تھاکہ فرض ماز جماعت سے ادا فرماکر دعا بھی جماعت کے سا تھ  (امام اور مقتدی سب ملکر) ماںگا کر تے تھے.

অর্থঃ “নামায যেভাবে জামায়াতের (সম্মিলিতভাবে) সাথে আদায় করা হয়, মুনাজাতও তদ্রুপ সম্মিলিতভাবে করা সুন্নত। অর্থাৎ ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবে। ….। আখিরী রসুল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও ছলফে ছলিহীনগণের সুন্নত তরীক্বা এটাই ছিল যে, তাঁরা ফরয নামায জামায়াতে আদায় করার পর (ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতেন।”

কাজেই, হাটহাজারী মৌলভীরা যে শুধু হাদীছ শরীফ অস্বীকার করে কুফরী করেছে তা নয়। বরং সাথে সাথে সমস্ত দেওবন্দীদেরকে বিদয়াতী ও গোমরাহ সাব্যস্ত করেছে। অর্থাৎ হাটহাজারীর ফতওয়া মুতাবিক দেওবন্দীরা বিদয়াতী ও গোমরাহ।

মুলকথা হলো- ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৪-২০তম সংখ্যায় যে ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে সে ফতওয়াই দলীলভিত্তিক, ছহীহ ও গ্রহনযোগ্য। হাটহাজারী মৌলভীদের যদি ইলমের জোর এতই বেশী হয় তবে যেন তা ধারাবাহিকভাবে দলীল দ্বারা খ-ন করে দেয় অথবা প্রকাশ্য বাহাছে এসে প্রমান করে দেয় যে, তাদের বক্তব্য সত্য।

আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রতি ক্ষেত্রে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক আমল করার তাওফীক দান করুন এবং দেওবন্দীসহ সকল বাতিল ফিরক্বা থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করুন। (আমীন)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।

 সুওয়ালঃঃ চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াবঃঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।

হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খন্ডনসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আর … আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার শরীয়ত সম্মত কোন ওজর বা আপত্তি না থাকলে আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমণ করা ওয়াজিব।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা যে বলেছে, “জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমণ করা ওয়াজিব।” তাদের এধরনের কোন  বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত ‘আল ফিক্বহ আ’লা মাযাহিবিল

 আরাবা’আহ গ্রন্থেরمباحث  الاذان    অধ্যায়ের اجابة المؤذن পরিচ্ছেদে উল্লেখ নেই।

সুতরাং প্রমাণিত হলো তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখকের প্রশংসা করে বলেছে, “সর্বজনমান্য হানাফী ফক্বীহ্ ইমাম আবদুর রহমান জাযীরাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি…..।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মোতাবিক ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব যদি হানাফী হন, তাহলে হানাফীদের বিরুদ্ধে এধরনের স্ববিরেধী বক্তব্য প্রদান করে কিভাবে?

কারণ ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব, তার লিখিত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ৩১৭ পৃষ্ঠার اجابة المؤذن উল্লেখ করেছেন।

اجابة  المؤذن  مندوبة

(অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব)

অথচ হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব।

যেমন, ‘মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ’ কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠায় ৪নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

قوله فقولوا استدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف  وبه قال الحنيفة.

অর্থঃ “হাদীছ শরীফের ইবারতে উল্লিখিত  فقولوا  শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটা ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ছলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফের ইবারতে উল্লিখিত   فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করে হানাফীগণ বলেন, মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

“ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

يجب فى الراجح عند الحنيفة لمن سمع الاذان … فالاجابة انما هى باللسان وهو الظاهر عند الحنيفة

   অর্থঃ “হানাফী মাযহাবের راجح (রাজেহ্) অর্থাৎ তারজীহপ্রাপ্ত বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই .. মৌখিক বা শাব্দিকভাবে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” আর হানাফী মাযহাবের এটাই জাহির রেওয়ায়েত।“

“আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খ-ের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ابن الہمام نے کہا کہ ظاہر حدیث سے وجوب نکلتا ہے اور کوئی قرینہ نہیں جو وجوب سے پھر سے اور لکھا کہ یہی ظاہر  خلاصہ وتحفہ ہے میں کہتا ہوں کہ یہی ظاہر  نہایہ ومحیط سرخسی ہے اور غرائب میں کہا کہ یہں صحیح ہے.

অর্থঃ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হাদীছ শরীফ-এর প্রকাশ্য বর্ণনা অনুযায়ী মৌখিক  বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা হাদীছ শরীফ-এর সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা ওয়াজিব ছাবিত হয়। আর ওয়াজিব না হওয়ার ব্যাপারে কোন কারণ নেই এবং আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহাও লিখেছেন যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া যে ওয়াজিব, ইহা খোলাছাতুল ফতওয়া এবং তোহ্ফা কিতাবের মধেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মুছান্নিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমিও এটাকে সুস্পষ্টভাবে মনে করি যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। ইহা নেহায়া ও মুহীতে সারাখসী কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে এবং গারায়েব কিতাবের মধ্যেও উল্লেখ আছে যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব। ইহাই ছহীহ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। (চলবে)

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতওয়া দারুল উলুম, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো-“আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতওয়া দারুল উলূম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হল-

মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের খন্ডনমূলক আলোচনা-

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ, শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতওয়া দারুল উলূম, ১ম খন্ড, পৃ.১৮০)

এর জবাবে বলতে হয় যে, “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণামূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব বলেছে, “ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”

অথচ ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই।

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা ও ধোঁকাপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।

ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর বক্তব্য খণ্ডন

দ্বিতীয়ত: ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম, খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে,

یہ تثویب ہے جس کو بضروت جائز رکھا گیا تھا اور امام ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ نے خاص قاضی وغیرہ کے لئے اس اطلاع کو جائز رکھا تھا کہ یہ لوگ مسلمانوں کے کاموں میں مشغول رہتے ہیں ان کو دو بار جماعت کی ضرورت ہے وخصہ ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ بمن یشتغل بمصالح العامۃ کالقاضی والمفتی والمدرس واختارہ قاضی خان الخ پس اب یہ قصہ ہی نہیں لہذا تثویب بھی متروک ہوگئے.

অর্থঃ (“আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা) এটাকে তাছবীব বলা হয়। জরুরতে তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে। ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাছ করে বিশেষ ব্যক্তিদের যেমন- কাজী, মুফতী, মুর্দারিস প্রমুখ ব্যক্তিদের জন্য এ আহ্বানকে (অর্থাৎ “আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য আহবান করাকে) জায়িয রেখেছেন। কেননা তাঁরা মুসলমানদের খিদমতে মশগুল থাকেন। তাই তাঁদেরকে দ্বিতীয়বার জামায়াতের  জন্য আহ্বান করা জরুরী। সুতরাং এখন যেহেতু এ কারণ অবশিষ্ট নেই। সুতরাং তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর উক্ত বক্তব্য কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়।

(ক) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবে উল্লিখিত

تثویب بھی متروک ہوگئے.

(তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের দলীল পেশ করতে পারেনি। কাজেই ফতওয়ায়ে দারুল উলূমের উক্ত দলীলবিহীন, বানোয়াট, গুমরাহীমূলক ও  মনগড়া বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

(খ) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের উল্লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ইমাম মুজতাহিদগণের খিলাফ। কারণ ইমাম মুজতাহিদগণ বলেছেন, তাছবীব আমভাবেই জায়িয। আর ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে জরুরতে জায়িয বলেছে। অথচ সর্বজনমান্য, নির্ভরযোগ্য, ফিক্বাহের কোন কিতাবেই জরুরতের কথা উল্লেখ নেই।

(গ) ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে শুধুমাত্র একটি মত অর্থাৎ ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে উল্লেখ করেছে। যা ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়। বরং ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত। কেননা “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া

 হলো(من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।

কারণ ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহসান।” অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয়। বরং আম-খাছ সকলের জন্যেই প্রযোজ্য)

যেমন, “কাশফুল হাকায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ১৬১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

اامام ابو یوسف رحمۃ  اللہ علیہ…..نیے فرمایا کے امراء ووزراء اور  مسلمان حکام کیلئے تمام نمازوں میں تثبیب بہتر   ہے کیونکہ یہ حضرات عمومی طور پر کاموں میں مشغول رہتے ہیں اسلئے ان کو بتلادیا جائے کہ اور اس طرح کے الفاظ استعمال کئے جائیں. ايها الامير حى على الصلواة حى على الفلاح  الصلواة رحمك الله وغيره. لیکن امام محمد رحمۃ اللہ علیہ نے امام ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ کے اس قول بارے میں کہا کہ شریعت میں شاہ امیر  ورعایا کا کوئی اعتبارنہیں سب برا بر ہیں.

 অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমীর-উমারা, উজীর এবং মুসলমান হাকীমদের জন্য সকল নামাযেই তাছবীব করা উত্তম। কেননা এই সকল ব্যক্তিগণ সাধারণত কাজ কর্মে মশগুল থাকেন। এজন্য তাদেরকে তাছবীবের মাধ্যমে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া হবে এবং আমির-উমারাদেরকে তাছবীব করার জন্য এ ধরণের শব্দগুলো ব্যবহার করা যায়। যেমন,

ايها الامير، حى على الصلواة ، حى على الفلاح .

 (আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছছলাহ্ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) الصلواة (আছ ছলাহ্) رحمك الله (রহিমাকাল্লাহু) এবং এ ধরণের অন্যান্য শব্দগুলোও ব্যবহার করা যায়।

কিন্তু ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত বক্তব্যের ব্যাপারে বলেন, শরীয়তে ধনী-গরীব, রাজা-প্রজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সকলেই সমান। (কাজেই তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য।”

মূলকথা হলো তাছবীব করার ব্যাপারে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি শুধুমাত্র আমীর-উমারা অথবা মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে বা সর্বসাধারণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া

হলো (من غير تخصيص)     তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামযেই তাছব্বী করবে। আর এটার উপরই ফতওয়া। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি, বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভূলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

আর ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। যদি তাই হয়, তাহলে কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং ইজমা-ক্বিয়াসের কোথায়, কোন ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।

সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়।…..”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ, তাদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে অস্বীকার করেছে। অথচ ইজমা, ক্বিয়াস তথা ইমাম, মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।

ইজমা, কিয়াসে তথা ইমাম-মুজতাহিদ, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ।

এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে, বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তদ্বীয় “রিসালাতুল ফায়সালা” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

ہمنے رسالہ ملخص میں مولود شریف کو پچیس عالموں اور  اماموں کے قول سے اور اپنے طریقہ کے پیشوا  ووں کے قول سے اور توارث سے ثابت کیا ہے اور مولد کا منع کرنیوالا فقط شخص فاکہانی  مالکی ہے سو جماعت کی مقابلہ میں انکے دھکے کااعتبار  ہے . اور قیام کو ایک مجتہد اور مکئہ معظمہ کے دو معتمد اور نامی عالم قد یم کے فتاوی سے اور بری  بری معتبر کتابو ں سے اور توارث سے ثابت کیا ہے اور یہ قیام چونکہ قیام تعظمی ہے اسواسطےاسکی اصلی حضرت عائشہ کی حدیث سےثابت  کیا ہے.

অর্থঃ আমি ‘মুলাখ্খাছ’ কিতাবে পঁচিশজন আলিম ও ইমামের  বানী ও   কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফকে যথার্থভাবেই (জায়িয) সাব্যস্ত করেছি। মীলাদ নিষেধকারী ব্যক্তি হলেন মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (মীলাদ জায়িয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোঁকাবাজী মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। আর একজন মুজতাহিদ ও মক্কা শরীফ-এর দু’জন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলিমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমুহ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফে “ক্বিয়াম” কারা জায়িয প্রমান করেছি। আর উক্ত ক্বিয়াম ও ক্বিয়ামে তা’যীমী বিধায় এটাকে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়িয) প্রমাণ করেছি।”

আশিকে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন,

ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم

অর্থঃ “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় বিলাদত শরীফ-এর আলোচনার সময় তাঁর সম্মানার্থে বা তা’যীম-তাকরীমের জন্যেই ক্বিয়াম করা হয়।” (আল উসীলাহ-৬৮)  (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খন্ডনণমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠ পোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্বানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্বানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদ্বা পোষন করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহন করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পস্ট হয়ে যাবে।

হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২.ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলো মেলো কথা বলে থাকে। আথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্বানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরয আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

তাই শুধুমাত্র মুহ্লিকাত ও মুনজিয়াতের তারীফ, সবব, আলামত ও এলাজ মুখস্ত করলেই বা তার পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করলেই অন্তরের ব্যধি থেকে মুক্তি পাওয়া বা ইল্মে তাছাউফ অর্জন করা সম্ভব নয়। বরং সাথে সাথে ক্বলবী যিকির করা বা তরীক্বার সবক সমূহ আদায় করা একান্ত কর্তব্য। তবেই ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব, যেমন- কোন রোগী যদি ডাক্তারের দেয়া ব্যবস্থাপত্রের শুধু নিয়ম-কানুনই মুখস্ত করে কিন্তু সে অনুযায়ী ওষুধ না খায়, তবে সুস্থতা লাভ করতে পারবে না।

বিশেষ করে ক্বল্বী যিকির ব্যতীত অন্তর পরিশুদ্ধ করা অর্থাৎ মুহ্লিকাত বর্জন ও মুনজিয়াত অর্জনসহ হুযূরী অর্জন করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। অথচ নামাজসহ সকল ইবাদত যথাযথ আদায় করতে হলে এবং মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রিযামন্দী হাছিল করতে হলে অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বল্ব হাছিল অর্থাৎ ক্বাল্বে দায়িমীভাবে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির জারী করা একান্তই অপরিহার্য।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন-

يوم لا ينفع مال ولا بنون الا من اتى الله بقلب سليم

অর্থঃ “ক্বিয়ামতের দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুষ্টি কোন কাজে আসবেনা, একমাত্র ক্বল্বে সালীম বা পরিশুদ্ধ অন্তর ব্যতীত। (সূরা শুয়ারা-৮৮, ৮৯)

আর হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

  ان فى الجسد مضغة اذا صلحت صلح الجسد كله واذا فسدت  فسد الجسد كله  الا وهى القلب.

অর্থঃ “মানুষের শরীরে এক টুকরো গোশ্ত রয়েছে, যা সংশোধিত হলে গোটা শরীর সংশোধিত হয়। আর যদি তা দূষিত হয়, তবে গোটা শরীরই দূষিত হয়। সাবধান! উক্ত গোশ্তের টুকরাটি হলো- ক্বাল্ব। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত, ত্বীবী তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী)

আর হুযূরী ক্বল্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে এরশাদ করেন-

قد افلح المؤمنون الذين هم فى صلاتهم خاشعون

অর্থঃ- “ঐ মু’মিনগণ কামিয়াবী হাছিল করেছে, যারা তাদের নামায খুশু-খুজু বা হুযূরী ক্বল্বের সহিত আদায় করেছে।” (সূরা মু’মিনুন-১, ২) এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لا صلوة  الا بحضور القلب

অর্থঃ- “হুযূরী ক্বল্ব বা খুশু-খুজু ব্যতীত নামায (পূর্ণ) হয় না।”

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য “অন্তর পরিশুদ্ধ” করা এবং “ হুযূরী ক্বল্ব” হাছিল করা অবশ্য কর্তব্য অর্থাৎ ফরয। আর তজ্জন্য ক্বল্বী যিকির বা তরীক্বার সবকসমূহ আদায় করাও ফরয।

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর

 দৃষ্টিতে ক্বল্বী যিকিরের গুরুত্ব

মূলতঃ অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে- “ক্বাল্বী যিকির” অর্থাৎ তাসাউফ তথা মুহ্লিকাত ও মুন্জিয়াত সম্পর্কিত ইল্ম অর্জন করার সাথে সাথে ক্বাল্বী যিকির করতে হবে। তবেই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে এবং হুযূরী ক্বল্ব অর্জিত হবে এবং নামাজসহ সকল ইবাদত শুদ্ধভাবে বা ইখলাছের সহিত আদায় করা সম্ভব হবে। যার ফলে সকলেই ক্বাল্বী যিকির করাকে ফরজ বলেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ করেন-

الا بذكر الله تطمئن القلوب

অর্থঃ “সাবধান! আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরের দ্বারাই ক্বাল্ব (অন্তর) এত্মিনান বা পরিশুদ্ধ হয়।” (সূরা রা’দ-২৮)

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

لكل شئ صقالة وصقالة القلوب ذكرالله

অর্থঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক জিনিস পরিস্কার করার যন্ত্র রয়েছে, আর ক্বল্ব বা অন্তর পরিস্কার (পরিশুদ্ধ) করার যন্ত্র (মাধ্যম) হচ্ছে- আল্লাহ্ পাক-এর যিকির (ক্বল্বী যিকির)।” (বাইহাক্বী, মিশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব)

উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের দ্বারা বুঝা গেল যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে- যিকির অর্থাৎ “ক্বল্বী যিকির।” ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ কুরআন- হাদীছের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ যিকিরকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন- (১ লিসানী যিকির অর্থাৎ মৌখিক যিকির। (২) ক্বল্বী যিকির অর্থাৎ অন্তরের যিকির।

লিসানী যিকির হচ্ছে, বিভিন্ন প্রকার তাছবীহ্-তাহ্লীল, দোয়া-দরূদ, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি। মূলতঃ লিসানী যিকিরের দ্বারা সার্বক্ষণিকভাবে অর্থাৎ দায়িমীভাবে আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকা সম্ভব নয়। কারণ উল্লিখিত যিকিরসমূহ সময় ও স্থান বিশেষে করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। যেমন- ওযু-ইস্তিঞ্জা, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা ও ঘুম ইত্যাদি। অথচ শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে- সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে যিকিরে মশগুল থাকার। কারণ বান্দা যে মুহুর্তে বা সময়ে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির থেকে গাফেল বা অমনোযোগী হয়, তখনই শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে পাপ বা নাফরমানীতে লিপ্ত করে দেয়।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-

ومن يعش عن ذكر الرحمن نقيض له شيطان فهو له قرين وانهم ليصدونهم عن السبيل ويحسبون انهم مهتدون.

অর্থঃ “যে বা যারা আল্লাহ্ পাক-এর যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গি হয় এবং তাকে সৎপথ থেকে ফিরায়ে রাখে, অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎপথেই রয়েছে।” (সূরা যুখরূফ-৩৬)

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس.

অর্থঃ “শয়তান আদম সন্তানের ক্বল্বের উপর বসে, যখন সে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়। আর যখন সে যিকির থেকে গাফেল বা অমনোযোগী হয়, তখন শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী, মিশকাত, ফাতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)

উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ানে উল্লেখ আছে যে,

فيه اشارة الى ان من دوام على ذكر الرحمن لم يقربه الشيطان بحال قال بعضهم من نسى الله وترك مراقبته ولم يسخى منه او اقبل على شىء من حظوظ نفسه قيض الله له شيطانا يوسوس له فى جميع انفاسه ويغرى نفسه الى طلب هولـها حتى يسلط على عقله وعلمه وبيانه.

অর্থঃ উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা ইহাই বুঝানো হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সর্বদা বা দায়েমীভাবে আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকে, শয়তান কস্মিনকালেও তার নিকটবর্তী হতে পারেনা। মুফাস্সিরীনে কিরামগণ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাককে ভুলে যায় বা আল্লাহ্ পাক-এর যিকির থেকে গাফেল থাকে এবং নফ্সের তাড়নায় কোন কিছুর আকাঙ্খা করে, তখন আল্লাহ্ পাক শয়তানকে তার উপর গালেব করে দেন। শয়তান প্রতি মুহুর্তে তাকে পাপের দিকে ধাবিত করে এবং তার বিবেক ও ইল্মের উপর তার রিপুগুলো গালেব (জয়ী) হয়।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, শুধুমাত্র লেসানী বা মৌখিক যিকিরের দ্বারা অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে বা শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে হলে “ক্বাল্বী যিকির করতে হবে। কারণ ক্বাল্বী যিকিরেই সার্বক্ষনিক বা দায়েমী যিকিরের একমাত্র মাধ্যম।

তাই মহান আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফের অসংখ্য স্থানে সদা সর্বদা বা দায়িমীভাবে যিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন।  (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

‘মায়ালিমুস্ সুনান’ কিতাবে ঈদের নামাযের তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال يكبر الامام اربع تكبيرات متواليات ثم يقرأ ثم يكبر فيركع ويسجد ثم يقوم فيقرأ ثم يكبر اربع تكبيرات يركع باخرها واليه ذهب اصحاب الرأى.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, প্রথম রাকায়াতে ইমাম তাকবীরে তাহরীমাসহ পরপর চারবার তাকবীরে বলবে, তারপর ক্বিরায়াত পাঠ করবে, তারপর তাকবীর বলে রুকুতে গিয়ে রুকু করবে এবং পর্যায়ক্রমে সিজদায় গিয়ে সিজদা করবে, অতঃপর দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়াবে অতঃপর পরপর চারবার তাকবীর বলবে এবং শেষোক্ত তাকবীর অর্থাৎ চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে গিয়ে রুকু করবে। এর উপরই ছিল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমল।

‘আওনুল মা’বূদ’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

فى اللاولى ثلاث بعد تكبير الاحرام قبل القراءة وفى الثانية ثلاث بعد القراءة وهو مروى عن جماعة من الصحابة ابن مسعود وابى موسى وابى مسعود الانصارى .

অর্থঃ প্রথম রাকায়াতে তাকবীরে তাহরীমার পর ক্বিরায়াতের পূর্বে তিন তাকবীর। দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পর তিন তাকবীর। যা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বড় এক জামায়াত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ মূসা আশায়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবূ মাসউদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ ছাহাবীগণ থেকে বর্ণিত আছে।

উক্ত ‘আওনুল মা’বূদ’ কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

قال ابن حزم روينا من طريق  شعبة عن  خالد الحذاء وفتادة كلاهما عن عبد الله ان الحارث  هو ابن نوفل  قال  كبر ابن عباس  يوم  العبد فى الركعة  الا ولى   اربع  تكبيرات ثم قرأ ثم ركع ثم قام فقرأ ثم كبر ثلاث تكبيرات  سوى   تكبيرة  الركوع.

অর্থঃ হযরত ইবনু হয্ম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খালিদ আল হাযা ও হযরত ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকে। উভয়েই হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, যাঁকে ইবনু নওফাল বলা হয়। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদের দিনে ঈদের নামাযে প্রথম রাকায়াতে চার তাকবীর দিয়ে ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকুতে যেতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে ক্বিরায়াত পাঠ করে তিন তাকবীর দিতেন রুকুর তাকবীর ব্যতীত।

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

فقال ابو موسى رضى الله تعالى عنه كان يكبر فى كل ركعة (اربعا) اى مع تكبيرة الاحرام فى الاولى وتكبيرة الركوع فى الثانية (تكبيره) اى مثل تكبيره (على الجنائز فقال حذيفة صدق) ابو موسى.

অর্থঃ হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাযে তাকবীর দিতেন) প্রত্যেক রাকায়াতে (চারবার) অর্থাৎ প্রথম রাকায়াতে তাকবীরে ঊলাসহ চার তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর (যার তাকবীর ছিল) অর্থাৎ যার তাকবীরের সাদৃশ্য হলো (জানাযা নমাাযের তাকবীরের মতো। তখন হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি সত্যই বলেছেন) অর্থাৎ হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সঠিক বলেছেন। (চলবে)

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

 (২৪) আল্লাহ পাক-এর বিশিষ্ট ওলী আল্লামা মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি মছনবী শরীফে বর্ণনা করেন যে, সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় বোস্তাম শহরে এক খারাপ মহিলার আগমন ঘটে; যে পুরুষদের চরিত্র নষ্ট করে দিতো। যার সৌন্দর্য্য ও সুন্দর কণ্ঠের উপর মানুষ আশিক হয়ে গেল, মসজিদসমূহ শূন্য হয়ে গেল এবং সেই মহিলার ঘরে তামাশাবাজদের সবসময় মেলা লেগে রইল। কোন এক ব্যক্তি সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বরকতময় খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল যে, হুযূর! আপনার যামানায় এবং আপনার শহরে এমন পাপাচার! সুলত্বানুল আরিফীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, কি করতে হবে? ঐ ব্যক্তি একটা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আরয করলেন। তিনি বললেন, আমাকে ঐ মহিলার ঠিকানা বলো। ঠিকানা বলা হলো। আল্লাহ পাক-এর ওলী সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামাযের মুছল্লা ও পানির বদনা নিয়ে যথাসময়ে ঐ মহিলার ঘরের নিকট পৌঁছলেন। উনাকে দেখে সকল তামাশাবাজ পালিয়ে গেল। তিনি ঐ মহিলার দরজায় গিয়ে  মুছল্লা বিছিয়ে দিলেন এবং নফল নামায পড়তে আরম্ভ করে দিলেন। যে ব্যক্তি এদিকে আসতো সে উনাকে দেখে ফিরে যেত। এভাবে, রাতের অন্ধকার যখন নেমে আসলো  আর কারো আসার আশংকা রইল না। তখন আল্লাহ পাক-এর ওলী সুলত্বানুল আরিফীন রহমতুল্লাহি আলাইহি মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, দৈনিক রোজগার কত হয়। সে যত বলল তিনি অত মুদ্রা মুছল্লার নীচ থেকে বের করে তাকে দিয়ে দিলেন।

অতঃপর তিনি তাকে বললেন, এখন তোমার এ রাত আমি ক্রয় করে নিয়েছি। কেননা, তোমার প্রাপ্য দিয়ে দিয়েছি। সে বলল-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তারপর তিনি বললেন, আচ্ছা এখন আমি যা বলব তাই করো, সে বলল বেশ ভাল। তিনি বললেন, ওযু করে দু’ রাকায়াত নফল নামায আদায় করো। তিনি তাকে নামাযে দাঁড় করিয়ে দিলেন। সে দাঁড়ানো থেকে রুকুতে গেল, রুকু থেকে সিজদায় গেল। যখন তার মস্তক সিজদায় অবনত হলো। আর এদিকে অল্লাহ পাক-এর ওলী সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় হাত মুবারক দুয়ার জন্য উঠালেন। তিনি আল্লাহ পাক-এর দরবারে আরয করলেন-

آنچہ کارم  بود آخر کر دش +  کز  زنا سوئے نماز آو ر دش

অর্থাৎ, হে মাওলা! আপনি শক্তিমান। আমি বান্দা দুর্বল, অক্ষম ও অসহায়। বান্দার কাজ হলো এতটুকু যে, পাপীটাকে পাপাচার থেকে হটিয়ে আপনার দ্বারে ঝুঁকিয়ে দেয়া। সামনের অবশিষ্ট কাজ আপনার। আপনি এ ঝুকানো মস্তককে কবুল করে নিন। অতঃপর তিনি আরয করলেন, যদি আপনি এ অবনত মস্তককে ফিরিয়ে দেন তাহলে আমার দুর্নাম হয়ে যাবে যে, মানুষ বলবে সুলতানুল আরিফীন তার মাওলার তরফ থেকে কি দিয়ে গেলেন?

بردرت اورده ام اورا  خد ا+ا  قلبہا قلب طفیل مصطفے

এটা দেখবেন না যে, আগমনকারী কে? বরং দেখুন যে, এনেছে কে? তাই আপনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় তার অন্তরের অবস্থা পরিবর্তন করে দিন।” একথা বলতেই ঐ পাপিষ্ঠ মহিলা আল্লাহ তায়ালার মকবুল ওলী হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ। অতঃপর পরবর্তী সময়ে তার সখী যখন তাকে ডাকতো তখন সে ভিতর থেকে খবর পাঠাতো যে, এখন আমি এ চোখে সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়িজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দেখেছি। যে চোখ সুলতানুল আরিফীনকে দেখে ফেলেছে সে আর কাউকে দেখতে পারে না। সুবহানাল্লাহ।

প্রমাণিত হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়া কবুলের মহান ওসীলা।

সুতরাং, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূরানী কিরণসমূহ আল্লাহ পাক-এর ওলীগণের মাধ্যমে গ্রহণ করে নাও। তবেই আল্লাহ পাক-এর দরবারে তুমি কবুল হয়ে যাবে। (চলবে)

মুহম্মদ জুনায়েদ, চাকতাই, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-

১.    আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

২.    মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?

৩.    রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?

৪.    রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।

৫.    তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?

৬.    হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণ মানুষের ঈমান হিফাযতের সহায়তা  করবেন বলে আমি আশাবাদি।

জাওয়াবঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-

৩.    “রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই” তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?

হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য শুধু মিথ্যা ও দলীলবিহীনই নয় বরং তা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ শরীয়তের ফতওয়া হলো যারা ফাসিক তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আর যারা কাফির অর্থাৎ যাদের আক্বীদা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ বা যারা কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী তাদের পিছনে নামায পড়া সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম।

‘রাজারবাগ শরীফ ও তার অনুসারীরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ কোন আক্বীদা পোষন করেন” হাটহাজারী মৌলভীরা তা আগেও যেমন প্রমাণ করতে পারেনি এখনো পারছে না এবং ভবিষ্যতেও পারবে না ইনশাআল্লাহ। কারণ এটা দিবালোকের ন্যায় বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী ও তার অনুসারীগণ ইসলামের প্রতিটি বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী। আর আমলের ক্ষেত্রেও শরীয়তের পূর্ণ পাবন্দ।

যেমন- রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীগণ  বিশ্বাস করেন-১. মহান আল্লাহ পাক এক ও অদ্বিতীয়,  তাঁর কোন শরীক নেই, ২. তিনি নিরাকার, ৩. তিনি ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা সর্বোত্র বিরাজমান এবং আস্মা ও ছিফাত দ্বারা সর্বত্র জাহির বা প্রকাশমান, ৪. তাঁর হাক্বীক্বী ছূরত কেউ পৃথিবীতে দেখবে না। তবে মেছালী ছূরত দেখা সম্ভব, ৫. আল্লাহ পাক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, ৬. তিনি সমস্ত কিছু থেকে বেনিয়াজ, ৭. তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। ৮. কুরআন শরীফ মহান আল্লাহ পাক-এর  কালাম যা গায়রে মাখলূক। ৯. মহান আল্লাহ পাক মানব জাতির হিদায়াতের জন্য এক লক্ষ মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রসূল পাঠিয়েছেন। ১০. হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল। ১১. তিনি নূরে মুজাস্সাম বা নূর মুবারক দ্বারা তৈরি, ১২. তাঁর শরীর মুবারকের কোন ছায়া ছিল না, ১৩. তাঁর শরীর মুবারকের সমস্ত কিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম, ১৪. উনার পর আর কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম পৃথিবীতে আগমন করবেন না। কারণ তিনি “খাতামুন্ নাবিয়্যীন”। কেউ নবী দাবী করলে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হবে। যেমন, কাদিয়ানী, বাহাই সম্প্রদায়। ১৫. নবী-রসূলগণ সকলেই ছিলেন মা’ছূম বা নিষ্পাপ। ১৬. নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পর পৃথিবীতে সবচেয়ে মর্যাদাবান ও সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ। এর পর তাবেঈনগণ এবং অতঃপর পরবর্তীগণ। ১৭. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের বিরোধিতা ও সমালোচনা করা কুফরী, ১৮. তাঁরা প্রত্যেকেই মি’য়ারে হক্ব বা সত্যের মাপকাঠি, ১৯. তাঁদের কোন ইজতিহাদই ভুল ছিলনা।

এমনিভাবে ইসলামের প্রতিটি বিষয়েই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী। যার ফলে বাতিল পন্থিরা বা বিরোধিতাকারীরা কোন একটি আক্বীদাও ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।

অনুরূপভাবে আমলের ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণভাবে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ করেন। অর্থাৎ, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে যায়িদা এমনকি মুস্তাহাব আমলগুলোও সূক্ষাতিসূক্ষ্মভাবে পালন করেন। যেমন- ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে তাকবীরে উলার সাথে নিজে ইমাম হয়ে আদায় করেন, ২. রমাদ্বান মাসে রোযা রাখেন, ৩. বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায নিজে ইমাম হয়ে জামায়াতে আদায় করেন, ৪. প্রতি বৎসর রমাদ্বান শরীফের শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করেন, ৫. ছদকাতুল ফিতর আদায় করেন, ৬. যাকাত প্রদান করেন, ৭. ঈদের নামায ছয় তাকবীরে নিজ ইমামতীতে আদায় করেন, ৮. প্রতি রাত্রে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেন, ৯. এমনকি সফরে থাকার সময়েও কখনো তাহাজ্জুদ নামায তরক করেন না। ১০. কুরবানী করেন, ১১. খাছ শরয়ী পর্দা করেন, তাক্বওয়া বা পরহেযগারীর জন্যে সামনে ৫/৭ বছর বয়সের মেয়েদেরকেও আসতে দেননা এবং অন্দর মহলেও ৫ বছর বয়সের ছেলেও প্রবেশ করতে পারে না। ১২. যাচাই-বাছাই করে হাদিয়া গ্রহণ করেন। ১৩. বিশেষ বিশেষ দিন ও মাসে তিনি নফল রোযা রেখে থাকেন। ১৪. চলা-ফেরা, খাওয়া-দাওয়া, লেবাস বা পোষাকে পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের ইত্তেবা করে থাকেন।

এমনিভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক আমল করে থাকেন। যার ফলে বাতিল পন্থি বা বিরোধিতাকারীরা আজ পর্যন্ত উনার একটি আমলও শরীয়ত বিরোধী বা সুন্নত পরিপন্থী প্রমাণ করতে পারেনি এবং কস্মিনকালেও পারবে না ইনশাআল্লাহ।

কাজেই, হাটহাজারী মৌলবীরা যদি মিথ্যাবাদীর লা’নতী তবক্বা গলা থেকে নামাতে চায় তবে তাদেরকে অবশ্যই দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে হবে যে, রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের কোন আক্বীদা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ।

নচেৎ তারা যে শুধু মিথ্যা বলার কারণে কঠিন লা’নতগ্রস্থ হবে তাই নয় বরং সাথে সাথে মুসলমানকে কাফির বলার কারণে তারা নিজেরাই কাফির বলে সাব্যস্ত হবে। কেননা “রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই” একথার অর্থ হলো তারা কাফির। নাউযুবিল্লাহ।

অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان العبد اذا لعن شيئا صعدت اللعنة الى السماء فتغلق ابواب السماء دونها ثم تهبط الى الارض فتغلق ابوابها دونها ثم تأخذ يمينا و شمالا فاذا لم تجد مساغا رجعت الى الذى لعن فان كان لذلك اهلا والا رجعت الى قائلها.

অর্থঃ- “ হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা  আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যখন বান্দা কোন কিছুকে বা কাউকে অভিসম্পাত করে, তখন সে অভিসম্পাত আকাশের দিকে উঠতে থাকে তখন আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর ঐ অভিসম্পাত যমীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন যমীনের দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডান দিক ও বাম দিকে যায় এবং সেখানেও যখন কোন রাস্তা না পায় শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে যার প্রতি অভিসম্পাত করা হয়েছে (যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়) তার উপরে আপতিত হবে। অন্যথায় (যদি সেই ব্যক্তি বা বস্তু অভিসম্পাতের উপযুক্ত না হয় তাহলে) অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে।” অর্থাৎ যে কাফির ফতওয়া দেয় সে নিজেই কাফির হয়ে মারা যায়।

অতএব, প্রমানিত হলো যে, হাটহাজারী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্য মিথ্যা, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক হয়েছে। অর্থাৎ রাজারবাগ শরীফ-এর মনগড়া বিরোধীতা করতে গিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে কাফির সাব্যস্ত করেছে।

কাজেই, এবার ভেবে দেখুন, কাদের পিছনে নামায জায়িয, আর কাদের পিছনে জায়িয নয়। (চলবে)

মুহম্মদ হাসান মুবাশশির খান, রাজশাহী

সুওয়ালঃ যাকাত কাদের উপর ফরয?

জাওয়াবঃ যারা মালেকে নেছাব বা ছাহেবে নেছাব, তাদের উপর যাকাত ফরয। আর মালেকে নেছাব বা ছাহেবে নেছাব বলতে বুঝায় যে, মুসলমান, স্বাধীন, বালেগ বা বালেগার নিকট হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ্ (নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা) বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য (যা বর্তমানে ৫৫০ টাকা তোলা হিসেবে তার উপর যাকাত ফরয।

(দলীল সমূহ্ঃ (১) আলমগীরী, (২) আইনূল হেদায়া, (৩) বাহরুর রায়েক, (৪) ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।

মুহম্মদ হাসান রফিক, গাজীপুর

সুওয়ালঃ আপন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাকে কাকে যাকাত দেয়া যাবে?

জাওয়াবঃ নিজের পিতা, দাদা, পুত্র, নাতী, স্ত্রী, স্বামী, পরস্পর পরস্পরকে যাকাত দিতে পারবে না। তবে পুত্রবধু, জামাতা, বিমাতা, স্ত্রীর অন্য ঘরের সন্তান অথবা স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীর সন্তানদেরকে যাকাত দেয়া যায়। আর পিতা-মাতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে হিলা করে অর্থাৎ যাকাতের হক্বদার এমন কোন ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক করে উক্ত মালিক যাকাতদাতার পিতা-মাতাকে হাদীয়া হিসেবে প্রদান করলে তা জায়িয হবে; তবে তা মাকরূহ্। অনুরূপভাবে হিলা করে নিজের সস্তানকেও যাকাত দেয়া মাকরূহের সাথে জায়িয। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী)

মুসাম্মত ফাতিমাতুয্ যোহরা, কুমিল্লা।

সুওয়ালঃ খাঁদযুক্ত সোনা-চান্দির যাকাতের হুকুম কি?

জাওয়াবঃ সোনা-চান্দির মধ্যে খাঁদ থাকলে সোনা-চান্দির হিসাবেই যাকাত দিতে হবে, যদি তা নেছাব পরিমাণ না হয়, তবে এর মূল্য হিসাবে করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নেছাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাঁদ বেশী হয় এবং উভয় মিলে যদি এক নেছাব বা তার চেয়ে বেশী হয়, তবুও যাকাত দিতে হবে। খাঁদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয়টি মিলেও এক নেছাব হয়না কিন্তু তার দ্বারা ব্যবাসা করা হয়, তবে উহা ব্যবসার মালের নেছাব হিসাবে হলে যাকাত দিতে হবে; অন্যথায় যাকাত দিতে হবেনা। (দূররুল মুখতার)

মুহম্মদ আরিফুল ইসলাম, যশোর

সুওয়ালঃ জমির ফসলের যাকাত বা ওশর আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নেছাব্ পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত কি না?

জাওয়াবঃ ওশর বা জমির যাকাত আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নেছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত নয় বরং একই জমিতে প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ফসলই হোক তার দশ ভাগের একভাগ যাকাত আদায় করা ফরয। তবে যদি পরিশ্র্রম করে ফসল ফলানো হয় তখন বিশ ভাগের এক ভাগ ফসলের যাকাত দিতে হবে। (দুররুল্ মুখতার)

মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, বাইতুল মোকাররম, ঢাকা।

সুওয়ালঃ এ বছর ছদ্কাতুল্ ফিতর কত?

জাওয়াবঃ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদ্কাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে ইরশাদ করেন

صاع من بر او قمح على كل  اثنين.

অর্থঃ- প্রতি দু’জনের জন্য এক সা গম অথবা আটা। অর্থাৎ একজনের জন্য অর্ধ সা’ গম বা আটা।” (আবু দাউদ, বযলুল মাযহুদ)

আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক অর্ধ সা’ বলতে ১সের সাড়ে ১২ ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়।

= ১৬৫৬.৯৭৬৭ গ্রাম

= ১৬৫৭ গ্রাম প্রায়।

কাজেই, যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নেছাব পরিমাণ (সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্যে যা বর্তমানে ৫৫০ তোলা হিসেবে ২৮,৮৭৫ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৭৫ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।  দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৭৫ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

এ বছর ঢাকা শহরে ৪০.০০ টাকা কেজি হিসাবে এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৭৫ গ্রাম মূল্য- ৬৮.০০ টাকা (প্রায়)

যেমন বাজারে ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম ওজনের যে প্যাকেটগুলো পাওয়া যায় তাতে সাধারণতঃ ২৫ গ্রাম কম থাকে। সে হিসেবে ৯৭৫ গ্রাম আটার মূল্য হলো- ৪০.০০ টাকা।

তাহলে প্রতি গ্রাম আটার মূল্য হয়-

৪০.০০ x ৯৭৫=০.০৪১০২৫৬ টাকা।

১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য-

(১৬৫৭ x ০.০৪১০২৫৬=৬৭.৯৮ টাকা

                        =৬৮ টাকা

এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশী দিতে পারবে।

মুহম্মদ হুমায়ূন কবীর, বরিশাল

সুওয়ালঃ ঈদের নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াবঃ সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩মিঃ পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া (অস্ত যাওয়া) আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর ২৩মিঃ পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এর পর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ১২মিঃ অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাজের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ঘণ্টা যা মাকরূহ্ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কোবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া (অস্ত যাওয়া) আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে যেয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর-এর দিন বেজোড় সংখ্যক (৩, ৫,৭) খোরমা, খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন এবং তারপর খুৎবা দিতেন ও নছীহত করতেন।

“হযরত আবুল হোয়ায়রেস্ রদ্বিয়াল্লাল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে হাযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজরানের গভর্ণর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বে এবং ঈদুল ফিতর-এর নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরীতে পড়বে এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবে।”

কাজেই, ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায় দেরী না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নামায পড়া নিষিদ্ধ।

সাইয়্যিদা সফুরা তাসনীমা, কুড়িগ্রাম।

সুওয়ালঃ মহিলারা ঈদের নামায পড়তে পারবে কিনা?

জাওয়াবঃ মহিলাদের জন্য ঈদ ও জুমুয়ার নামায নেই। কারণ, ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত। হানাফী মাযহাব মতে, ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে তিনজন মুছল্লী থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদ ও জুমুয়া আদায় হবে না।

আর ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য ঈদ হোক, জুমুয়া হোক, পাঞ্জেগানা হোক, তারাবীহ্ হোক কোন নামাযেই জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া জায়িয নেই। তা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

অতএব, মহিলারা ঈদের নামাযে গেলে কঠিন গুনাহে গুনাহ্গার হবে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে আল বাইয়্যিনাতের ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন, সেখানে প্রায় ৬৫টি দলীল পেশ করা হয়েছে। (দলীলসমূহঃ উমদাতুল কারী শরহে বুখারী, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খুলাছাতুল ফতওয়া, ফতুহুল ক্বদীর, আলমগীরী)

মুসাম্মত মমতাজ বেগম, চান্দিনা কুমিল্লা।

সুওয়ালঃ কেউ কেউ বলে, রমযানের কাযা রোযা এবং শাওওয়াল মাসের নফল রোযা শাওওয়াল মাসে একই দিনে একত্রে উভয় রোযার নিয়তে রাখলে, একই সঙ্গে উভয় রোযা আদায় হয়ে যাবে এবং একই সাথে উভয় রোযার ছওয়াব পাবে।

তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াবঃ যারা বলে, ছুটে যাওয়া রমযানে কাযা রোযা এবং শাওওয়ালের নফল রোযা একই সঙ্গে আদায় করলে আদায় হবে এবং ছওয়াবও পাবে তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, ভূল ও দলীলবিহীন।

সঠিক ফতওয়া হলো, রমযানের কাযা রোযা এবং শাওওয়ালের নফল রোযা একই দিনে একত্রে নিয়ত করে রাখলে কস্মিনকালেও উভয় রোযা আদায় হবে না এবং একইসঙ্গে উভয় রোযার ছাওয়াবও পাবেনা।

বরং শুধুমাত্র রমযানের কাযা রোযা আদায় হবে। শাওওয়ালের নফল রোযা আদায় হবে না। কেননা রমযান মাসের ছুটে যাওয়া ফরয রোযার কাযা আদায় করা ফরয। আর শাওওয়াল মাসের রোযা হলো নফল।

কাজেই নফলের নিয়ত দ্বারা ফরয অথবা ফরজের নিয়ত দ্বারা নফল আদায় হয় একথা বলা চরম জিহালতী ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই একই সঙ্গে ফরয ও নফল আদায় হবে না এবং ছওয়াব পাবেনা। এটাই মূল ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণ করা গোমরাহী।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৬তম সংখ্যা পাঠ করুন।

(দলীলসমূহঃ ফতওয়ায়ে আলমগীরী, জখীরা, সিরাজুল ওহ্হাজ, মুহীত, ছরখছি কাজীখান, হিন্দিয়া ইত্যাদি)।

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ