সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মুহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন,

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা

 সুওয়ালঃঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ণ করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মুল বিষয়বস্তু হলো-

… ৮. দুয়া ইবাদতের মগজ এবং উত্তম ইবাদত হলো দুয়া। এই হাদীছে তো প্রচলিত দুয়ার ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই এবং এধরনের কোন হাদীছ কেউ দেখাতে পারবে না। হাদীছে যে ধরনের দুয়ার কথা বলা হয়েছে এখানে তো ঐ ধরনের দুয়া ও মুনাজাতকে বিদয়াত বলা হচ্ছে না।

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবাদীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদী।

ধারাবাহিক

 জাওয়াবঃঃ হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য তাদেরকে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হিসেবেই সাব্যস্ত করেছে। অর্থাৎ শরীয়ত সম্পর্কিত ইলম যে তাদের শূন্যের কোঠায় উপরোক্ত বক্তব্যই তার বাস্তব প্রমাণ। সামান্যতম ইলম ও আক্বলও যার রয়েছে সেও কখনো এরূপ জিহালতপুর্ণ মন্তব্য করতে পারে না। হাদীছ শরীফে যে ইরশাদ হয়েছে যে,

الدعاء  مخ  العبادة

অর্থাৎ, “দুয়া হচ্ছে ইবাদতের মুল বা মগজ”

افضل العبادة  الدعاء

অর্থাৎ, “উত্তম ইবাদত হচ্ছে দুয়া।”

উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয়ে মূলত কোন বিশেষ প্রকারের দুয়াকে নির্দিষ্ট করা ব্যতীতই আমভাবে সর্বপ্রকার দুয়ার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ, খাছ করে ফরয নামাযের পর দুয়া করাও এর অন্তর্ভূক্ত। কেননা ইসলামী শরীয়তে আম দলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়। নিম্নে তার কিছু প্রমান পেশ করা হলো।

ঈদ, তারাবীহ্ ও আযানের পর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাত তুলে দোয়া-মুনাজাত করেছেন বলে কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও সুস্পষ্ট বা খাছভাবে উল্লেখ নেই। তথাপিও ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহ্গণ مطلق বা ‘আম’ দলীলের ভিত্তিতে ঈদ, তারাবীহ্ ও আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করাকে জায়িয ফতওয়া দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মুনাজাত বিরোধীদের মুরুব্বী উলামায়ে দেওবন্দও এটাকে مطلق বা ‘আম’ দলীলের ভিত্তিতে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-

প্রসঙ্গঃ দোয়া-মুনাজাতে হাত উঠানো

দোয়া-মুনাজাতে হাত উঠানোর ব্যাপারে অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণের ফতওয়া হলো নামাযের বাইরে যে কোন দোয়াতেই হাত উঠানো জায়িয। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই দোয়ায় হাত উঠিয়েছেন এবং হাদীছ শরীফে হাত উঠিয়েই দোয়া করার কথা ব্যক্ত হয়েছে। যেহেতু কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও হাত উঠানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের কথা উল্লেখ নেই। তাই ইমাম-মুজতাহিদগণ আমভাবে সকল দোয়াতে হাত উঠানোকেই জায়িয ও সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “ফতহুল ক্বদীর”-এর বিত্রের অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,

ووجهه عموم دليل الرفع الدعاء ويجاب بانه مخصوص بما ليس فى الصلوة  لاجماع على ان  رفع  فى دعاء

 অর্থঃ- “দোয়ায় হাত উঠানোর বিষয়টি আম দলীলের দ্বারা প্রমাণিত। তাই যাবতীয় দোয়াতেই হাত উঠানো জায়িয। তবে ইজমা মতে নামাযে তাশাহ্হুদের সময় হাত উঠানো জায়িয নেই।” আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ফতওয়ায়ে শামী”তে লিখেন,

قوله كالدعاء اى كما يرفعهما لمطلق الدعاء فى سائر الامكنة  والازمنة  على طبق  ماوردت  به السنة.

 অর্থঃ “দোয়া বা মুনাজাতে হাত উঠানোর বিষয়টি مطلق বা আম অর্থাৎ ব্যাপক বিধায় সর্বত্র এবং সবসময় হাত উঠিয়ে দোয়া করা হাদীছ শরীফ অনুযায়ী জায়িয ও সুন্নত।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কুরআন-সুন্নায় স্পষ্ট বর্ণিত না থাকার পরও ইমাম-মুজতাহিদগণ আম দলীলের দ্বারা নামাযের বাইরে যে কোন দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয ও সুন্নত প্রমাণ করেছেন।

প্রসঙ্গঃ আযানের দোয়ায় হাত উঠানো

অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ যেহেতু আম দলীলের দ্বারা যেকোন দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয বলেছেন। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে,তাদের মতে আযানের দোয়াতেও হাত উঠানো জায়িয। মূলতঃ তাঁরা এটাকে জায়িয বলেই ফতওয়া দিয়েছেন। শুধু যে অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণই এটাকে জায়িয বলেছেন তাই নয় বরং যারা দোয়া করার ক্ষেত্রে আম দলীলকে গ্রহণ করতে চায় না তাদের মুরুব্বী দেওবন্দীরা পর্যন্ত আম দলীলের ভিত্তিতে আযানের দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে।  যেমন,“ইমদাদুল ফতওয়াতে” উল্লেখ আছে যে

بالتخصیص دعاء اذان میں ہاتھ اٹانا تو نہیں دیکھا گیا مگر مطلقا دعا میں ہاتھ اٹانا احادیث قولیہ, فعلیہ, مرفوعه, موقوفہ کثیرہ شہیدہ سے ثابت ہے من غیر تخصیص بدعاء دون دعاء پس دعا اذان میں بھی ہاتھ اٹانا سنت ہوگا لاطلاق الدلائل.

অর্থঃ- “খাছভাবে আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা পরিলক্ষিত হয়না। তবে আম বা সাধারণভাবে (যে কোন) মুনাজাতের সময় হাত উঠিনো সম্পর্কে বহু ক্বাওলী, ফে’লী, মরফূ, মওকূফ ও বহু প্রসিদ্ধ হাদীস শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। কোন দোয়াকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সুতরাং আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়। কেননা দলীলসমূহ মুত্লক্ব বা আম অর্থাৎ ব্যাপক।” “ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ” ২য় জিঃ ১১০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

خصوصیت کے ساتھ اس موقع پر رفع یدین ثابت نہیں ہے اگر چہ عموما دعاء میں رفع یدین کا مستحب ہونا اسکے استحاب کو مقتضی ہے.

অর্থঃ- “খাছভাবে আযানের মুনাজাতে হাত উঠানো প্রমাণিত নেই। তবে আম বা সাধারণভাবে যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত উঠানো মুস্তাহাব, তাই আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণই বহন করে।”

দেওবন্দীদের উক্ত বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত হলো যে, আম দলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়। কেননা তারা নিজেরাই আম দলীলের দ্বারা খাছ বিষয়কে অর্থাৎ আযানের দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয ও সুন্নত প্রমাণ করেছে।” (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।

 সুওয়ালঃঃ চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াবঃঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।

হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খন্ডনসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত ‘আল ফিক্বহু আলাল

মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরা হলো। যেমন- রেযাখানীরা বলেছে, “আর দ্বিতীয় প্রকারের আযানের জবাব দেয়া, অর্থাৎ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়া শরীয়তসম্মত কোন ওজর বা আপত্তি না থাকলে আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। যেমন-সর্বমান্য হানাফী ফক্বীহ ইমাম আব্দুর রহমান জাযীরাহ্ রহমতুল্লহি আলাইহি “আল ফিক্বহ আলাল মাযাহিবিল আরবায়া” গ্রন্থের مباحث الاذان            অধ্যায়ের     اجابة المؤذنপরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন যে,

اجابة المؤذ ن مندوبة لمن يسمع الاذان ولو كان جنبا…..ان الحنفية اشترطوا ان لاتكون حائضا اونفساء فان كانت فلا تندب لها الاجابة بخلاف باقى الائمة لانهما ليستا من اهل الاجابة بالفعل فكذا بالقول.

অর্থাৎ, যে আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। যদিও সে নাপাকি অবস্থায় থাকে। কিন্তু হানাফীদের মতে স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারনে মাজুর সম্পন্না মহিলাদের জন্য আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব নয়। কিন্তু অন্যান্য ইমামগণের মতে মুস্তাহাব। যেহেতু স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারনে মাজুর সম্পন্না মহিলা স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে আযানের  بالفعل তথা কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার উপযুক্ত নয়। তেমনিভাবে মৌখিকভাবেও জবাব দেবেনা। “আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া” ১ম ভাগ, পৃঃ ৩১৭-৩১৮, ইস্তাম্বুল থেকে প্রকাশিত।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা যে বলেছে, “জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।” তাদের এ ধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত কিতাবের ইবারতে নেই।

সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখকের প্রশংসা করে বলেছে, “সর্বজনমান্য হানাফী ফক্বীহ্ ইমাম আবদুর রহমান জাযীরাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি…..।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের বক্তব্য মোতাবিক ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব যদি হানাফী হন, তাহলে হানাফীদের বিরুদ্ধে এধরনের স্ববিরেধী বক্তব্য প্রদান করে কিভাবে?

কারণ ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব, তার লিখিত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ১১৭ পৃষ্টার اجابة المؤذن উল্লেখ করেছেন।

اجابة  المؤذن  مندوبة

(অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব)

অথচ হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের মতে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব।

যেমন, “ফিক্বহুল ইসলাম ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

يجب في الراجح عند الحنفية لمن سمع الاذان…..فالاجابة انما هى باللسان وهو الظاهر عند الحنفية.

অর্থঃ “হানাফী মাযহাবের راجح  (রাজেহ্) অর্থাৎ তারজীহ্ প্রাপ্ত ফতওয়া হলো যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই…..মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” আর হানাফী মাযহাবের এটাই জাহের রেওয়ায়েত।”

“বদরুল মুত্তাক্বা ফী শরহে মুলতাক্বা” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اجابة المؤذن باللسان قيل واجبة…..قاله المصنف لكن رجع فى البحر والنهر القول بالوجوب.

অর্থঃ “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব বলা হয়েছে,…..মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তবে “বাহ্রুর রায়িক” ও “নাহরুল ফায়িক” কিতাবের

(তারজীহ্ প্রাপ্ত) বা প্রধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذان کی وقت  سامعین کو جواب دینا واجب  ہے اور جواب دینا یہ ہے کہ جو اذان کہتا ہے یہ بھی کہے.. یہں صحیح  ہے.

অর্থঃ ‘আযানের সময় শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবেই দিবে যে, আযানে যা বলা হয় তাই বলবে।

 …….আর ইহাই صحيح বিশুদ্বমত।

“হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আল র্দুরিল মুখতার“ কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعلى  المعتمد  يجيب  باللسان.

অর্থঃ “وعلى المعتمد নির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”  (চলবে)

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।

 সুওয়ালঃঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতওয়া দারুল উলুম, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো-“আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

 জাওয়াবঃঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতওয়া দারুল উলূম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হল-

মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের খন্ডনমূলক আলোচনা-

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিক্বাহ, শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতয়া দারুল উলূম, ১ম খন্ড, পৃ.১৮০)

এর জবাবে বলতে হয় যে, “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণা মূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব বলেছে, “ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”

অথচ ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই।

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেবের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা ও ধোঁকাপূর্ণ বলেই প্রমাণিত হলো।

ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর বক্তব্য খ-ন

দ্বিতীয়ত: ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম, খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে,

یہ تثویب ہے جس کو بضروت جائز رکھا گیا تھا اور امام ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ نے خاص قاضی وغیرہ کے لئے اس اطلاع کو جائز رکھا تھا کہ یہ لوگ مسلمانوں کے کاموں میں مشغول رہتے ہیں ان کو دو بار جماعت کی ضرورت ہے وخصہ ابو یوسف رحمۃ اللہ علیہ بمن یشتغل بمصالح العامۃ کالقاضی والمفتی والمدرس واختارہ قاضی خان الخ پس اب یہ قصہ ہی نہیں لہذا تثویب بھی متروک ہوگئے.

অর্থঃ (“আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা) এটাকে তাছবীব বলা হয়। জরুরতে তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে। ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাছ করে বিশেষ ব্যক্তিদের যেমন- কাজী, মুফতী, মুর্দারিস প্রমুখ ব্যক্তিদের জন্য এ আহ্বানকে (অর্থাৎ “আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য আহবান করাকে) জায়িয রেখেছেন। কেননা তাঁরা মুসলমানদের খিদমতে মশগুল থাকেন। তাই তাঁদেরকে দ্বিতীয়বার জামায়াতের  জন্য আহ্বান করা জরুরী। সুতরাং এখন যেহেতু এ কারণ অবশিষ্ট নেই। তাই তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম-এর উক্ত বক্তব্য কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়।

(ক) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবে উল্লিখিত

تثویب بھی متروک ہوگئے.

(তাছবীব পরিত্যাজ্য হয়েছে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবের দলীল পেশ করতে পারেনি। কাজেই ফতওয়ায়ে দারুল উলূমের উক্ত দলীলবিহীন, বানোয়াট, গুমরাহীমূলক ও  মনগড়া বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

(খ) ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের উল্লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণই ইমাম মুজতাহিদগণের খিলাফ। কারণ ইমাম মুজতাহিদগণ বলেছেন, তাছবীব আমভাবেই জায়িয। আর ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে জরুরতে জায়িয বলেছে। অথচ সর্বজনমান্য, নির্ভরযোগ্য, ফিক্বাহের কোন কিতাবেই জরুরতের কথা উল্লেখ নেই।

(গ) একাধিক মত থেকে ফতওয়ায়ে দারুল উলূমে একটিমাত্র মত অর্থাৎ ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে উল্লেখ করেছে। যা ফতওয়াগ্রাহ্য মত নয়। বরং ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত। কেননা “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।

কারণ ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহসান।” অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয়। বরং আম-খাছ সকলের জন্যেই প্রযোজ্য)

যেমন- “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খ-ের ২১৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال أبو يوسف رحمه الله لا ارى باسا ان يقول المؤذن للامير فى الصلوة كلها السلام عليك  ايها الامير ورحمة الله  وبركاته حى على الصلوة حى على الفلاح الصلوة  يرحمك الله. واستبعده محمد رحمه الله  لان الناس سواسية  فى امر الجماعة.

অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর সকল নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে

السلام عليك ايها الامير حى على الصلاة وحى على الفلاح.

(আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হইয়া আলাল ফালাহ) الصلوة  (আছ ছলাহ) يرحمك الله (ইয়ারহামুকাল্লাহ) বলে তাছবীব করে তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না।

তবে ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, মুর্দারিস, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।”)

“হাশিয়াতুুত তাহ্তাবী আ’লা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খ-ের ১৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويثوب … بين الاذان والاقامة … كل الصلواة  المجموعى … كل الخلق من غير تخصيص امير او مشتغل بامر العامة كقاضى كما قوله  الامام ابو يوسف  رحمة  الله  عليه.

অর্থঃ “আযান ও ইক্বামতের মাঝে প্রত্যেক জামায়াত বিশিষ্টনামাযে, সকলমাুষকেই তাছবীব করবে (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আমীর-উমারা অথবা সর্বসাধারণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কাজী সাহেব যা হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য।”

মূলকথা হলো তাছবীব করার ব্যাপারে ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি শুধুমাত্র আমীর-উমারা অথবা মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে বা সর্বসাধারণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কাজী ছাহেব, মুর্দারিস ছাহেব, মুফতী ছাহেব ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।

“শরহে বিকায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ১৩৫ পৃষ্ঠার ৭নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ما اختاره  المتاخرون  ان التثويب مستحسن فى جميع الصلوت  لجميع  الناس لظهور التكاسل فى امور الدين لاسيما فى الصلواة  ويستثنى منه المغرب.

অর্থঃ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের গ্রহনীয় মত এই যে, মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযে সকল মানুষের জন্য তাছবীব করা মুস্তাহসান।” (অর্থাৎ, আযান ও ইকামতের মাঝে আমীর-উমারাসহ সকল নামাযীকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। কেননা তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য।) কারণ দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা হয়।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলুমের তাছবীব সম্পর্কে উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, গুমরাহীমূলক, মনগড়া ও দলীলবিহীন। যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

 সুওয়ালঃঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

 জাওয়াবঃঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি, বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভূলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

আর ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। যদি তাই হয়, তাহলে কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং ইজমা-ক্বিয়াসের কোথায়, কোন ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।

সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়তঃ ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে এর অনেক প্রমান রয়েছে।

এছাড়াও হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদীনগণ, ছলফে ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকেও মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ রয়েছে। কারণ উনারা স্বয়ং নিজেরাই মীলাদ শরীফের তাকীদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

قال ابو بكر الصديق رضى الله تعالى عنه من انفق درهما على قراءة  مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى  فى الجنة.

অর্থঃ (“নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষ্যে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে। (সুবহানাল্লাহ।)

وقال عمر رضى الله تعالى عنه  من عظم مولد النبى صلى الله  عليه  وسلم فقد  احيا الاسلام.

অর্থঃ “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলতঃ ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” (সুবহানাল্লাহ।)

وقال عثمان رضى الله تعالى عنه  من انفق  درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكأنما شهد  غزوة  بدر وحنين.

অর্থঃ “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।“ (সুবহানাল্লাহ।)

وقال على رضى الله تعالى عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب.

অর্থঃ “হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ।)

وقال حسن البصرى رحمة الله عليه وددت لو كان لى مثل جبل احد ذهبا فانفقته على قرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ (“বিশিষ্ট তাবিয়ী) হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ।)

وقال الامام الشافعى رحمة الله عليه من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم اخوانا وهيا طعاما واخلى مكانا وعمل احسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيامة مع الصديقين والشهداء والصالحين ويكون فى جنات النعيم.

অর্থঃ “(শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম) হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ শরীফ পাঠের জন্য উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতুন নাঈমে।“ (সুবহানাল্লাহ।)

সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

من حضر مولد النبى صلى الله عليه وسلم وعظم قدره  فقد  فاز بالايمان.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে। অর্থাৎ সে বেহেশতি হবে। সুবহানাল্লাহ। (আন নি’মাতুল কুবরা)

উপরোক্ত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যেহেতু আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফে তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-সিফত করেছেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা-সিফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের দ্বারা করিয়েছেন এবং ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহতেও এর বর্ণনা রয়েছে।

আর মীলাদ শরীফেরও আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-সিফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে তথা আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়?

প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ছলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

 সুওয়ালঃঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

 জাওয়াবঃ- প্রলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খন্ডনণমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠ পোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্বানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্বানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদ্বা পোষন করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহন করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পস্ট হয়ে যাবে।

হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২.ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলো মেলো কথা বলে থাকে। আথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্বানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরয আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

ইলমে তাছাউফ অর্জন করা

ফরজ হওয়ার কারণ

নেক খাছলত ও বদ্ খাছলতসমূহ

অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ ও ওলী আল্লাহ্গণ ইল্মে তাছাউফকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। (১) মুহলিকাত, (২) মুনজিয়াত। এ প্রসঙ্গে “মুছাল্লামুছ ছুবূত” নামক কিতাবের মুকাদ্দিমায় উল্লেখ আছে যে,

وعلم الطريقة  وهى  مباحث  المهلكات  والمنجيات

অর্থঃ- “মুহলিকাত” অর্থাৎ ক্বাল্ব বা আত্মার ধ্বংস সাধনকারী বদ্ খাছলতসমূহ এবং “মুনজিয়াত” অর্থাৎ অন্তরকে মুক্তিদানকারী নেক খাছলত সম্পর্কিত ইল্মকেই ইল্মে তরীক্বত বা ইলমে তাছাউফ বলে।”

হুজ্জাতুল ইসলাম, শায়খুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাস্সিরীন, বিখ্যাত দার্শনিক হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর জগদ্বিখ্যাত কিতাব ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাবে লিখেন,

اعلم …. والباطنة ايضا قسمان ما يجب تزكية القلب عنه من الصفات مذمومة وما يجب تحلية القلب به من الصفات المحمودة.  فقال الامام الغزالى فى ختبته ولقد اسسته على اربعة ارباع. ربع العبادات وربع المعملات وربع المهلكات وربع المنجيات.

অর্থঃ- “জেনে রাখ! ………… ইল্মে তাছাউফ দু’ভাগে বিভক্ত। (১) “মুহ্লিকাত” ঐ সকল বদ্ খাছলতসমূহ, যা অন্তর থেকে দূর করা ওয়াজিব। (২) “মুন্জিয়াত” ঐ সকল নেক খাছলতসমূহ, যা অন্তরে পয়দা করা ওয়াজিব।  ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাবকে চার ভাগে বিভক্ত করেছি। প্রথমাংশ ইবাদত, দ্বিতীয়াংশ মুয়ামেলাত, তৃতীয়াংশ মুহ্লিকাত ও চতুর্থংশ মুনজিয়াত।”

মূলতঃ অন্তর থেকে বদ্ খাছলতসমূহ দূর করে দিয়ে নেক খাছলতসমূহ পয়দা করার মাধ্যমেই হাক্বীক্বী ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ সম্ভব।

আর তাই বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

ان فى الجسد  مضغة اذا صلحت صلح الجسد كله  واذا فسدت  فسد  الجسد كله  الا وهى  القلب.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানব শরীরে এক টুকরা গোশ্ত রয়েছে, তা পরিশুদ্ধ হলে গোটা শরীরটাই পরিশুদ্ধ হবে এবং তা বিনষ্ট বা ধ্বংস হলে গোটা শরীরটাই ধ্বংস হবে। সাবধান! উক্ত গোশ্তের টুকরাটি হলো- ক্বাল্ব বা অন্তর।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)

আর পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, মুহ্লিকাতের (বদ্ খাছলতের) কারণে ক্বাল্ব বিনষ্ট হয়। আর মুন্জিয়াতের (নেক খাছলতের) কারণে ক্বাল্ব পরিশুদ্ধ হয়। অতএব, মুহ্লিকাত ও মুন্জিয়াত সম্পর্কিত ফরজ পরিমাণ ইল্ম অর্জন করাও প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ। তাই নিম্মে মুহ্লিকাত ও মুন্জিয়াত সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, তাসাউফ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ সাধারণতঃ দু’ভাগে বিভক্ত। ১। ইল্মী অর্থাৎ তাসাউফ বা মুহ্লিকাত ও মুন্জিয়াত সম্পর্কিত ইল্ম। ২। আ’মালী অর্থাৎ তরীক্বা বা সবকসমূহ আদায় করা বা যিকির-ফিকির, মুরাক্বাবা-মুশাহাদাহ্ ইত্যাদি। এখানে প্রথমতঃ তাসাউফ বা মুহ্লিকাত-মুনজিয়াত সংশ্লিষ্ট ইল্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। আর আ’মালী বিষয় সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে ইন্শাআল্লাহ্।

মুহ্লিকাতের বিবরণ

মুহ্লিকাত  ঐ সকল বদ্ খাছলত বা কুস্বভাব সমূহকে বলে, যে সকল বদ্ খাছলতসমূহ মানুষকে বা মানুষের অন্তরকে ধ্বংস বা হালাক করে দেয়।

এ সকল বদ্ খাছলত অনেক, তবে তন্মধ্যে দশটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ও পরিত্যজ্য। যেমন- ১। কিবর (অহংকার), ২। হাসাদ (হিংসা), ৩। বোগ্য (শত্রূতা), ৪। গযব (রাগ), ৫। গীবত (পরনিন্দা), ৬। হেরছ (লোভ), ৭। কিয্ব (মিথ্যা), ৮। বোখল (কৃপনতা), ৯। রিয়া (লোক দেখানো), ১০। গুরুর (ধোকাবাজী) ইত্যাদি।

এছাড়া ‘মুহ্লিকাত’ বা ধ্বংসকারী অনেক বদ্ খাছলত রয়েছে, যেমন- ১। কিনা (দুশমনী), ২। ত্বমা (হালাল-হারাম না দেখে ভবিষ্যতে পাওয়ার আশা করা), ৩। কাছীরুল কালাম (অতিরিক্ত কথা বলা), ৪। শরফ (সম্মান কামনা করা), ৫। হুব্বেজাহ্ (প্রভুত্ত্ব প্রিয়তা), ৬। হুব্বুদদুনইয়া (দুনিয়ার মহব্বত), ৭। খোদপছন্দী (আত্ম গৌরব), ৮। কুওওয়াতে শাহ্ওয়াত (কাম শক্তি), ৯। খতা (ভুল, মোহ্ বা ভ্রম), ১০। হুব্বুল মাল (মালের মহব্বত), ১১। নেফাক্ব (কপটতা), ১২। গাফলতী (অলসতা), ১৩। শাব্য়ান (অধিক আহার করা), ১৪। খোছম (ঝগড়া), ১৫। নাম্মাম (চোগলখোরী), ১৬। ফুহুশ (অশ্লিলতা), ১৭। মোনাজেরাহ (তর্ক), ১৮। বদ্ দোয়া (অভিশাপ), ১৯। তোহ্মত (অপবাদ), ২০। মোকর (ধোকাবাজী), ২১। শেকায়েত (খারাপ বলা, দোষ বর্ণনা করা), ২২। বদ্ গোমান (কুধারণা), ২৩। আফাতুল লিসান (জবানের খারাবী), ২৪। জুব্ন (ভীতু), ২৫। আয্ল (তাড়াহুড়া করা) ২৬। কুফ্র (অস্বীকার করা), ২৭। আমল (অবৈধ আকাংখা), ২৮। জিহালত (অজ্ঞতা) ইত্যাদি।

কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মুহ্লিকাত বা উল্লিখিত বদ্ খাছলত সমূহ যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, তার পক্ষে “ইবাদতে জাহেরার” দ্বারা আল্লাহ্ পাক-এর হাক্বীক্বী রেজামন্দী কস্মিনকালেও অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ উল্লিখিত বদ্ খাছলত সমূহ বান্দার ইবাদত সমূহকে হালাক বা ধ্বংস করে দেয়। (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

 সুওয়ালঃঃ  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

 জাওয়াবঃঃ বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়ে” এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তারাবীহর নামায বিশ রাকায়াত এ বিষয়ের উপর পূর্ববর্তী ১৭৬ ও ১৭৭তম দু’ সংখ্যাতে অনেকগুলো হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যামানার তাজদীদী মুখপত্র অত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ২৫ থেকে ২৯তম এ পাঁচ সংখ্যার মধ্যে বিশ্বখ্যাত, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয় হাদীছ শরীফ-এর কিতাব এবং তার শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ থেকে তিন শতাধিক অকাট্য ও নির্ভরযোগ দলীল-আদিল্লাহ’র ভিত্তিতে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছে।

উক্ত ফতওয়ার মধ্যে প্রমাণ করা হয়েছে যে, আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মায্হাবের মতানুসারে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত। যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত ইমাম, মুজ্তাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের আমল ও ক্বওল মুবারক দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

এরপরও লা-মাযহাবীরা তাদের গোমরাহী সমাজে ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বুখারী শরীফ-এ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণিত একখানা হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলে থাকে যে, তারাবীহ নামায আট রাকায়াত পড়া সুন্নত। অথচ বুখারী শরীফসহ এ উপমহাদেশে ছিহাহ সিত্তাহ নামে হাদীছ শরীফ-এর যে ছয়টি ছহীহ কিতাব মশহুর বা সুপরিচিত তার কোনটির মধ্যে তারাবীহ নমাযের কোন বর্ণনা নেই। বরং বর্ণনা রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাযের। আর সেই তাহাজ্জুদ নামাযের বর্ণনাকেই লা-মাযহাবীরা তারাবীহ বলে অপপ্রচার করে নিজেদের চরম জিহালতী ও গোমরাহী প্রকাশ করে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ।

 তারাবীহ নামায আট রাকায়াত বলে তারা যে হাদীছ শরীফখানার বুলি আওড়ায় সে হাদীছ শরীফখানা বুখারী শরীফ প্রথম জিলদ ১৫৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত।

عن ابى سلمة بن عبد الرحمن انه سال عائشة رضى الله تعالى عنها كيف كان صلوة رسول الله صلى الله عليه وسلم فى رمضان فقالت ماكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيد فى رمضان ولا فى غيره على احدى عشرة ركعة يصلى اربعا.

অর্থঃ হযরত আবূ সালমাহ্ ইবনে আব্দুর রহ্মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান মাসে কত রাকায়াত নামায পড়তেন? তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযান মাসে ও রমযান মাস ব্যতীত অন্য মাসে এগার রাকায়াতের অধিক নামায পড়তেন না। আর তিনি তা চার চার রাকায়াত করে পড়তেন।”

উপরোক্ত হাদীছ শরীফে فى رمضان অর্থাৎ রমযান মাসে এর  সাথে   সাথে ولا فى غيره   অর্থাৎ রমযান মাস ব্যতীত অন্য মাসে একথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য মাসে যেরূপ এগার রাকায়াত নামায পড়তেন তদ্রূপ রমযান মাসেও এগার রাকায়াত নামায পড়তেন। এখন প্রশ্ন হলো, রমযান মাসে না হয় তারাবীহ নামায পড়েছেন কিন্তু গায়রে রমযান অর্থাৎ রমযান ব্যতীত অন্য মাসে তারাবীহ নামায পড়বেন কিভাবে? তারাবীহ নামায তো শুধু রমযান মাসে পড়তে হয়।

মূলতঃ এ হাদীছ শরীফে তারাবীহ নামাযের কথা বলা হয়নি বরং তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বৎসরই তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ শামসুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

اما المراد بها صلوة الوتر والسوال والجواب واردان عليه.

অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা তাহাজ্জুদ নামাযকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রশ্ন ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর জাওয়াব তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। (কাওকাবুদ্ দুরারী শরহে বুখারী)। উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وصحیح  آنست کہ آنچہ آنخصرت صلی اللہ علیہ وسلم گزارد ہمہ تہجد وے  بود کہ یازدہ رکعت باشد.

 “বিশুদ্ধ বা ছহীহ্ মত এটাই যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্রসহ যে এগার রাকায়াত নামায পড়েছেন, তা তাহাজ্জুদ নামায ছিল।” (আশয়াতুল লুময়াত)

আর হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উহার ব্যাখ্যায় বলেন,

وقد اوتر رسول الله صلى الله عليه وسلم بركعة وثلاث وخمس وهكذا  بالاوتار الى احدى عشر ركعة والرواية  مترودة  فى  ثلاث  عشرة  وفى حديث  شاذ سبع عشرة  وكان هذه  الركعات اعنى  ما سمينا  جملتها  وترا  صلاة   بالليل  وهو  التهجد.

অর্থঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয় এবং এগার রাকায়াত বিত্র আদায় করতেন। তের রাকায়াতের বর্ণনাটি (مترود) পরিত্যাজ্য, আর একখানা (شاذ) হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে সতর রাকায়াতের কথাও উল্লেখ আছে। আর এসকল নামাযের রাকায়াত যার সাথে আমি বিত্র শব্দটি ব্যবহার করেছি, তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রি বেলায় আদায় করতেন। আর এটাই হলো তাহাজ্জুদ নামায। (ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন)

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত বুখারী শরীফ-এর উক্ত হাদীছ শরীফখানা তারাবীহ নামাযের পক্ষে মোটেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটা তাহাজ্জুদ নামাযের দলীল হিসেবেই গ্রহণযোগ্য।

এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-২৬তম সংখ্যা ফতওয়া বিভাগ ‘তারাবীহ নামায আট রাকায়াত হওয়ার দাবী খ-ন’ অধ্যায়টি পাঠ করুন।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, খুলনা জেলা নিবাসী জনৈক লা-মাযহাবী তার প্রচারিত এক লিফলেটে তারাবীহ নামায ৮ রাকায়াত হওয়ার স্বপক্ষে এক লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে। সে তার লিফলেটে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে এক ও অভিন্ন বলে উল্লেখ করে। আমরা তার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি এবং তার প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেই যে, সে তারাবীহ নামায ৮ রাকায়াত এবং তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে এক ও অভিন্ন প্রমাণ করতে পারলে তাকে দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তখন সে গড়িমসি করতে থাকে এবং আমাদের সাথে আলোচনায় বসতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে।

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন।

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

 সুওয়ালঃঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

 জাওয়াবঃঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

২২. হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর যারা হাক্বীক্বী নায়িব বা ওয়ারিছ হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁরা তো অবশ্যই দুয়া কবুলের ওসীলা। আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা ব্যতীত উম্মতের কোন দুয়াই আল্লাহ পাক-এর নিকট কবুল বা গৃহীত হয় না। সে প্রসঙ্গে তিরমিযী শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন হাদীছ  শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال ان الدعاء موقوف بين السماء والارض لايصعد منها شىْء حتى تصلى على نبيك.

অর্থঃ হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই দুয়া আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ না করবে ততক্ষণ তোমার কোন দুয়াই আল্লাহ পাক-এর নিকট পৌঁছবেনা।

‘তাইসীরুল উছূল’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

الدعاء موقوف بين السماء والارض لا يصعد حتى  يصلى على النبى صلى الله عليه وسلم. صلوا على اول الدعاء  واوسطه   واخره.

অর্থঃ “দুয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত দুয়া উপরে উঠে না বা কবুল হয় না। সুতরাং তোমরা দুয়ার শুরুতে, মধ্যখানে ও শেষে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করো।”

হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ‘শরহুত ত্বীবী গ্রন্থে’ উল্লেখ করা হয়েছে-

اى لا يرفع الدعاء اى الله تعالى حتى يستصحب الرافع معه يعنى ان الصلوة على النبى صلى الله عليه وسلم هى الوسيلة الى الاجابة.

অর্থঃ দুয়া আল্লাহ পাক-এর নিকট পৌঁছা বা কবুল হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ দুয়া কবুল হওয়ার জন্য ওসীলা।

কাজেই, দুয়া করার সময় শুরুতে, মাঝে অথবা শেষে অবশ্যই নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহ পাক-এর নিকট দুয়া পৌঁছবে না বা আল্লাহ পাক দুয়া কবুল করবেন না।

সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন এবং বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবে সূরা ছফ্ফাত-এর শেষোক্ত আয়াত শরীফ-

سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين  والحمد  لله  رب العالمين.

বলে দুয়া শেষ করার কথা বর্ণিত রয়েছে। অর্থাৎ উক্ত আয়াত শরীফ পাঠের মাধ্যমে দুয়া শেষ করা সুন্নত।

অনুরূপ মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ ও তাহতাবী কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে যে-

ثم يختمون بقوله تعالى سبحان ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العالمين  ثم يمسحون بها اى  بايديهم ووجوههم.

“অতঃপর আল্লাহ পাক-এর কালাম ‘সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফুন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীনা ওয়ালহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন” পাঠ করে দুয়া বা মুনাজাত শেষ করবে এবং উভয় হাত দ্বারা মুখম-ল মাসেহ করবে।

উল্লেখ্য, সূরা ছফ্ফাত-এর শেষোক্ত যে আয়াত শরীফ পাঠ করে দুয়া শেষ করার কথা বলা হয়েছে সে আয়াত শরীফেও রসূলগণের প্রতি সালাম পেশ করার বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। এর দ্বারাও দুয়া কবুল হওয়ার জন্য রসূলগণের ওসীলা গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণ করে।

অতএব, প্রতিভাত হলো, আল্লাহ পাক-এর নিকট দুয়া কবুল হওয়ার জন্য ওসীলা হলেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (চলবে)

মুহম্মদ জুনায়েদ, চাকতাই, চট্টগ্রাম।

 সুওয়ালঃঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-

১.         আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

২.         মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?

৩.         রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?

৪.         রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।

৫.         তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?

৬.         হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণ মানুষের ঈমান হিফাযতের সহায়তা  করবেন বলে আমি আশাবাদি।

 জাওয়াবঃঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-

১. আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

তৃতীয় পর্ব

আরবী ভাষায় একটি ঐতিহাসিক প্রবাদ রয়েছে তাহলো-

المرء  يقيس  على  نفسه

অর্থাৎ, মানুষ সাধারণতঃ অন্যকে নিজের মতই মনে করে।

হাটহাজারীর খারিজী, ভ-, প্রতারক ও বিদ্য়াতী মৌলবীরাই যেহেতু সত্যিকার ভ-, প্রতারক ও বিদ্য়াতী তাই তারা হক্কানী-রব্বানী ওলীকেও তাদের মত মনে করে।

রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতি তারা যে তোহমত দিয়েছে বা অশ্লীল-অশালীন ভাষায় গালী-গালাজ করেছে এর স্বপক্ষে তাদের নিকট কোনই দলীল নেই। পক্ষান্তরে হাটহাজারীর গুরু শফী ও তার অনুসারীরা ভ- ও বিদ্য়াতী হওয়ার বহু প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।

স্মর্তব্য, ভ- ও প্রতারক শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যারা আলিম না হয়েও আলিম দাবী করে মুফতী না হয়েও মুফতী দাবী করে, আলিম দাবী করার পরও কুরআন সুন্নাহ-এর খিলাফ কথা বলে, মুখে যা বলে আমলে তার বিপরীত করে। অর্থাৎ দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহ-এর খিলাফ কাজও করে তারাই মূলতঃ হাক্বীক্বী ভ- ও প্রতারক।

হাটহাজারীর গুরু শফী ও তার অনুসারীরা আলিম দাবি করলেও তারা কুরআন-সুন্নাহ-এর খিলাফ কথা বলে ও আমল করে। মুখে যা বলে আমলে তার বিপরীত করে। নিম্নে এ সম্পর্কিত কয়েকটি দলীল প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-

হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরা যা বলে ও লিখে তা আমল করে না বরং সম্পূর্ণরূপে তার বিপরিত আমল করে।

(১)

তারা মুখে বলে ও পত্রিকায় লিখে যে পর্দা করা ফরয, বেপর্দা হওয়া হারাম। যেমন তাদের অখ্যাত পত্রিকা মুহীনুল ইসলামের জুন-’০৫ সংখ্যায় লিখেছে,

… যেখানে নবীপতœীদেরকে উম্মতের জননী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং উম্মতের জন্য তাদেরকে পুনঃবিবাহ করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর পুরুষকে তাকিয়ে না দেখার ব্যাপারে কড়া তাগিদ দিয়েছেন।

পর্দার প্রথম পর্যায়ের নির্দেশে নারীদেহ এবং তাদের কাজ কর্ম, চলাফেরা, উঠাবসা ইত্যাদি গায়রে মুহাররাম পুরুষের দৃষ্টির অন্তরালে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পর্দা সম্পর্কে অবতীর্ণ কালাম পাকের আয়াতসমূহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোবারক যবানের বাণী এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) এর আমল সামনে রাখলে পর্দা যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিয়য়, তাতে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। পর্দার নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে অনুসরণ করতে গেলে নারীদেরকে নিজ বাড়ীর চার দেয়ালের মধ্যেই অবস্থান করতে হবে।। নারীদের মান-মর্যাদা ও ইজ্জত আবরুর হেফাজতের জন্য নিজ বাড়ীর আন্দর মহলই সবচেয়ে উত্তম এবং নিরাপদ জায়গা।

সূরা আল আহযাবের ৫৩নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে বেগানা নারীর কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণের ব্যাপারে ঘোষনা করেন, তোমরা যখন তাদের নারীদের নিকট কিছু চাইবে, তা পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। অর্থাৎ বেগানা নারীদের কাছ থেকে সামনা-সামনি কোন কিছু গ্রহণ বেগানা পুরুষদের জন্য হারাম, তা আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। …

পূর্বে উল্লিখিত সূরা আল আহযাবের ৫৩ নং আয়াতে যদিও নবী পতœীদের উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এ হুকুম সকল মুসলিম নারীদের উপর সমভাবে বর্তাবে। উক্ত আয়াতে নারীকে বেগানা পুরুষের সাথে নিতান্ত প্রয়োজনে কথাবার্তা ও লেনদেনের অনুমতি দেয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তা অবশ্যই পর্দার আড়াল থেকে হতে হবে। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে নারী দেহের কোন অঙ্গই প্রদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়নি। অর্থাৎ নারীরা পুরো শরীরই বেগানা পুরুষের দৃষ্টির আড়ালে রাখবে।

এ আয়াতের আলোকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, নারীর গোটা শরীরই বেগানা পুরুষের জন্য আওরাত বা গোপনীয়। অর্থাৎ নারী দেহের যে কোন অঙ্গই বেগানা পুরুষের সামনে প্রদর্শন করা নাজায়িয ও হারাম। …

… যারা আদৌ বোরকা ব্যবহার করে না অর্থাৎ মাথা, মুখম-ল, ঘাড়, হাতদ্বয় খোলা রেখে বেগানা পুরুষের সামনে তথা প্রসাধনী মেখে বাইরে ঘোরাফিরা করেন, তারা সর্বসম্মতিক্রমে দাইয়ূস হিসেবে চিহ্নিত। দায়ূসের জন্য জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়াও সম্ভব হবে না। যাদের অধিনস্থ নারীরা বেপর্দাভাবে চলাফেরা করবে, সে সব অভিভাবকরাও দায়ূসের পর্যায়ভুক্ত বলে হাদীস পাকে উল্লেখ করা হয়েছে।

… মুসলমানদের জন্য পর্দা একটি মৌলিক বিষয়, যা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।

অথচ গত ৪ঠা জুলাই-২০০৫ দৈনিক ইনকিলাবে পত্রস্থ হয়: “বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম আহমদ শফীর নেতৃত্বে ওলামা প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন।” অন্যান্য দৈনিকেও একই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

এ প্রেক্ষিতে আহমদ শফীর পত্রিকা মাসিক মুহীনুল ইসলাম আহমদ শফীর বিরুদ্ধে যে ফতওয়া দেয়: “নিতান্ত প্রয়োজনে নারীর সাথে কথা বলতে পারবে বটে কিন্তু তা অবশ্যই পর্দার আড়াল থেকে হতে হবে।” এক্ষেত্রে আহমদ শফী মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সাথে পর্দার আড়াল থেকে কথা না বলে সূরা আহযাব-এর ৫৩নং আয়াত শরীফের খেলাফ আমল নিজে করেছে এবং সহযোগী সবার গুনাহ্র ইমাম হয়েছে। নিজের কাধে গ্রহণ করেছে। দাইয়্যূস, ভ-, প্রতারক ও বিদয়াতী নেতা সাব্যস্ত হয়েছে।

“নারী দেহের যে কোন অঙ্গই বেগানা পুরুষের সামনে প্রদর্শন করা নাজায়িয ও হারাম।” (মাসিক মুঈনুল ইসলাম)

আহমদ শফী সে হারাম ও নাজায়িয কাজটি প্রকাশ্যে করেছে এবং তার নেতৃত্বে অন্যান্যদেরকেও করিয়েছে। তিনি উলামায়ে ‘ছূ’দের সার্থক নেতা ও গুরু বটে।

অতএব, যারা পর্দাকে ফরয বলে ফতওয়া দিয়ে প্রকাশ্যে বেপর্দা হয় তারাই যে হাক্বীক্বী ভন্ড, প্রতারক ও বিদয়াতী এতে কোন সন্দেহ আছে কি?

(২)

হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরা মুখে বলে ও পত্রিকায় লিখে যে, ছবি তোলা হারাম। যেমন-

হাটহাজারীর তথাকথিত পত্রিকার সেপ্টেম্বর ’০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রকাশিত জামিয়া সমাচার শীর্ষক খবরে বলা হয়, “১লা আগস্ট/২০০৩ ঈসায়ী শুক্রবার হাটহাজারী’র পরিচালক আহমদ শফি ঢাকা সফরের এক পর্যায়ে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুর্কারমে …… জুমা শেষে আয়োজিত ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মুফতী ইজহারের দ্বিতীয় পুত্র মাওলানা মুহম্মদ মূসার সাথে মুহম্মদুল্লাহ্ হাফেজ্জী-এর নাতনী ও হাফেজ আতাউল্লাহ্র একমাত্র কন্যার বিবাহ্ অনুষ্ঠানের মেহমান হিসেবে উপস্থিত থেকে আক্দ পড়িয়ে খুত্বা প্রদান ও মুনাজাত পরিচালনা করেন।

উল্লেখ্য, বিবাহের খুত্বা প্রদানকালে ফটো সাংবাদিকরা আহমদ শফির ছবি তোলার চেষ্টা করলে আহমদ শফি অত্যন্ত জোরালোভাবে ছবি তুলতে নিষেধ করে সাংবাদিকদেরকে মসজিদের ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের জন্য তিরস্কার করেন এবং কুরআন-হাদীছের আলোকে ছবির নিষিদ্ধতা সম্পর্কে এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন। তার এই সাহসী ও জোরালো ভাষণে উপস্থিত মুসল্লীগণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন।”

অথচ এই আহমদ শফি অন্যক্ষেত্রে ঠিকই হরদম ছবি তুলছে। এমনকি মহিলা প্রধানমন্ত্রীর সাথেও তার ছবি পত্রিকায় এসেছে। নাউযুবিল্লাহ।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরা যা বলে ও লিখে সে অনুযায়ী আমল করে না। অর্থাৎ মুখে বলে একটা আর আমল করে আরেকটা। আরো প্রমাণিত হলো যে, তারা প্রকাশ্যে বেপর্দা হয়ে ও ছবি তোলে কাট্টা হারাম কাজ করছে ও কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট বিরোধীতা করছে। কাজেই, যারা মুখে যা বলে আমলে তা করেনা, হারাম কাজে মশগুল থাকে আল্লাহ পাক ও তার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করে তারাই যে হাক্বীক্বী ভ-, প্রতারক ও পাক্কা বিদয়াতী তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।

অতএব, হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরাই মূলতঃ হাক্বীক্বী ভ-, গুমরাহ, প্রতারক ও পাক্কা বিদয়াতী, যা তাদের নিজস্ব বক্তব্য ও আমল দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

পক্ষান্তরে রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতি তারা যে মিথ্যা তোহমত দিয়েছে তার একটিও তারা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। সুতরাং তারা যে শুধু ভ-, প্রতারক ও বিদয়াতী তা নয় বরং তারা মহা কাজ্জাব বা ডাহা মিথ্যাবাদীও বটে। আর মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

لعنة  الله على الكاذبين

অর্থাৎ, “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (চলবে)

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

মুহম্মদপুর, ঢাকা

সুওয়ালঃ এক অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাবে দেখলাম, তারা লিখেছে, ফিকাহর কিতাবে যে احتقن (ইহ্তাক্বানা) অর্থাৎ ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গের কথা বলা হয়েছে সেই ‘ইহতাক্বানা’ শব্দের সঠিক অর্থ নাকি ইন্জেকশন নয়। বরং তার অর্থ হলো ডুশ নেয়া, যা পায়ুপথে প্রবেশ করানো হয়। আর রোযাদারের পাকস্থলী, নাড়ি অথবা গলার মধ্যে স্বভাবজাত পথ তথা মুখ, নাক, বা পায়ুপথের মাধ্যমে কোন কিছু প্রবেশ করানো হলে রোযা ভঙ্গ হবে। অন্যথায় নয়। আর এ ব্যাপারে নাকি সকল উলামায়ে কিরাম একমত।

জাওয়াবঃ উক্ত অখ্যাত পত্রিকার বক্তব্য চরম জিহালতী, ধোঁকা, প্রতারণা ও গোমরাহীমূলক ও সর্বোপরি কুফরীর শামিল। শুধু তাই নয়, মুসলমানদের অন্যতম রোকন রোযা নষ্ট করার পিছনে ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিকদের একটা গভীর ষড়যন্ত্রেরও অন্তর্ভ্ক্তু।

ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিকরা মুসলমান দেশে সরাসরি মুসলমানদের ঈমান ও আমলে বাধা দিতে গেলে তারা ধরা পড়বে এবং তারা প্রতিহত হবে সেজন্য তারা উলামায়ে “ছূ” ও মুনাফিক মুসলমানের মাধ্যমে ঈমান-আমল নষ্ট করার কোশেশ করে থাকে। তারই একটি হচ্ছে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার জবাব। যেমন কিছুদিন পূর্বে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহতামিম মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছিল, আপনারা হিন্দুস্থানে গরু কুরবানী করবেন না। কারণ গরু হচ্ছে হিন্দুদের দেবতা। নাউযুবিল্লাহ। হিন্দুদের কত বড় দালাল ও গোলাম হলে এ রকম প্রকাশ্য শরীয়তবিরোধী বক্তব্য দেয়া সম্ভব। কাজেই, শুধু ভারতেই নয় আমাদের দেশেও উক্ত মুহতামিমের স্বজাতীয় মাওলানা, মুফতী, ইমাম, খতীবের অভাব নেই।

সুতরাং,  মুসলমানের জন্য তার ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ রাখতে হলে যাকে তাকে অনুসরণ করা, যার তার ফতওয়া গ্রহণ করা উচিত হবে না। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

فانظروا  عمن  تاخذون   دينكم

“তোমরা কার কাছ থেকে দ্বীন-ইল্ম্ গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো।” (তিরমিযী, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

 যার আক্বীদা অশুদ্ধ অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মুতাবিক নয়, আমল অশুদ্ধ অর্থাৎ সুন্নত মুতাবিক নয়, যার মধ্যে আল্লাহভীতি নেই অর্থাৎ যে আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম-নাজায়িয, বিদয়াত-বেশরা তথা শরীয়তের খিলাফ কাজ থেকে বিরত নয় অর্থাৎ যে পর্দা করেনা, যে ছবি তোলে, টিভি দেখে, টিভিতে প্রোগ্রাম করে, যে কট্টর হিন্দু গান্ধীর প্রবর্তিত হরতাল করে, যে কাট্টা নাস্তিক মাওসেতুং প্রবর্তিত লংমার্চ করে, যে হিন্দু-খ্রিস্টানদের প্রবর্তিত কুশপুত্তলিকা দাহ করে, যে খ্রিস্টানদের প্রবর্তিত ব্লাসফেমী আইন তলব করে, যে ইহুদী-খ্রিস্টানদের প্রবর্তিত গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি হারাম ও কুফরী কাজ করে এমন ব্যক্তি কখনোই অনুসরনীয় নয় এবং ফতওয়া দেয়ারও উপযুক্ত নয়।

শরীয়তে ফতওয়াদাতার জন্য ইলমে ফিক্বাহর সাথে সাথে ইলমে তাছাউফ-এর ইল্ম্ শর্ত করা হয়েছে এবং ইলমে লাদুন্নীও শর্ত করা হয়েছে। ইলমে লাদুন্নী হচ্ছে আল্লাহ পাক প্রদত্ব ইল্ম্ যা আল্লাহ পাক ইলহাম-এর মাধ্যমে তাঁর ওলীগণকে জানিয়ে থাকেন।

অতএব, আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তাঁর তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ ২১ ও ২২তম সংখ্যায় ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয় এ বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস- ইসলামী শরীয়ার এ দলীল চতুষ্ঠয়ের আলোকে এবং সেই সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞান শাস্ত্রের বর্ণনা উল্লেখপূর্বক নির্ভুল, নিখুঁত ফতওয়া প্রদান করেছেন।

অতঃপর অখ্যাত পত্রিকার লেখা প্রসঙ্গে বলতে হয়, তারা মুসলমানদের রোযা নষ্ট করার জন্য বেদ্বীন-বিজাতীয়দের এমন দালাল ও গোলাম বনে গেছে যেটা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। অন্যথায় তারা কি করে বলতে পারলো যে, احتقن (ইহ্তাক্বানা) শব্দের অর্থ  ইনজেকশন নয়। অথচ প্রায় সমস্ত আরবী লুগাত বা অভিধানগ্রন্থে

حقنة- الحقنة-محقنة- احتقان

ইত্যাদি শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যার সরাসরি অর্থ ইনজেকশন, সিরিঞ্জ ইত্যাদি।

আর সেই حقنة (হুক্বনাতুন) থেকে احتقن (ইহ্তাক্বানা) শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ القاموس الجديد  (আরবী-উর্দূ) লুগাত বা অভিধানগ্রন্থের বর্ণনা উল্লেখ করা হলোঃ

 حقنة -‘হুক্বনাতুন’ অর্থ- ইনজেকশন, সিরিঞ্জ।

احتقان বাবে افتعال এর মাছদার বা ক্রিয়ামূল। অর্থ ইনজেকশন নেয়া। আর উক্ত বাব থেকে احتقن শব্দটি এসেছে। এর অর্থ হলো, সে ইনজেকশ নিল।

আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধানগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,  احتقان অর্থ- ইনজেকশন। এবং সরাসরি احتقن (ইহ্তাক্বানা) “ইনজেকশন নেয়া” শব্দটিরও উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে প্রায় সমস্ত লুগাত বা অভিধানগ্রন্থে “ইনজেকশন” শব্দের উল্লেখ রয়েছে।

আর “রোযাদারের পাকস্থলী, নাড়ি, অথবা গলার মধ্যে স্বভাবজাত পথ তথা মুখ, নাক বা পায়ুপথের মধ্যে কোন কিছু প্রবেশ করানো হলে রোযা ভঙ্গ হবে, অন্যথায় নয়।” অখ্যাত পত্রিকার এ বক্তব্যও শুদ্ধ নয়। কারণ শরীয়তের বিধান হলো, পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তা যেভাবে যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন।

এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহর বিশ্বখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘মাবসূত’ কিতাবে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত উল্লেখ রয়েছে যে,

وابو حنيفة  رحمه الله تعالى يقول المفسد للصوم وصول المفطر الى  باطنه  فالعبرة  للواصل  لا للمسلك.

অর্থঃ হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রোযা ভঙ্গের কারণ হলো, রোযা ভঙ্গকারী কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করা। সুতরাং পৌঁছাটাই গ্রহণযোগ্য। মূল রাস্তা নয়।”

একইভাবে ফিক্বাহর বিশ্বখ্যাত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফতহুল ক্বাদীর’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,

وابو حنيفة رحمة الله عليه يعتبر الوصول

 অর্থঃ হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পৌঁছাটাই গ্রহনযোগ্য।

আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ইনজেকশন দ্বারা প্রয়োগকৃত ঔষধ পাকস্থলী ও মগজে অবশ্যই পৌঁছে থাকে।

এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل.

অর্থঃ- “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

واذ احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج

অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।”

 “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن … افطر

অর্থঃ- “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে” ও উল্লেখ আছে।

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইন্জেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

এরপর উক্ত পত্রিকা কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ব্যাপারে নাকি সকল উলামায়ে কিরাম একমত।

প্রশ্ন হলো, কোন সকল উলামা একমত? প্রকৃতপক্ষে যারা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী যারা ইহুদী-নাছারা, জাহিল-যালিম রাজা-বাদশা, আমীর-উমারা, মন্ত্রী-সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী সেই সকল উলামা নামধারীরাই একমত। কোন হক্কানী-রব্বানী আলিম উলামা একমত নয়।

দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) ফতহুল বারী, (৫) উমদাতুল ক্বারী, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) শরহে নববী, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিক্বুছ্ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছূত, (১৭) মাবছূত্ লি সারাখসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়িউছ্ ছানায়ে, (২৫) খুলাছাতুল ফতওয়া, (26) Biopharmaceuties & Semisolids Chapter from the theory and practice of Industrial Pharmacy by leon Lachman/Herbart. (27)  A. Lieberman/Joseph L.Kanig. (28) Guyton’s medical physiology. (29) Remington’s pharmacology. (30) Cunningham’s manuals of practical anatomy (31) Martindate Extra pharmacopoeia. (৩২) ক্বামূস আল মুহীত, (৩৩) ওয়াসীত, (৩৪) জাদীদ, (৩৫) লিসানুল আরব, (৩৬) মুনজিদ আরবী, (৩৭) মুনজিদ উর্দূ, (৩৮) মিছবাহুল লুগাত, (৩৯) লুগাতে হীরা, (৪০) গিয়াছুল লুগাত, (৪১) লুগাতে সাঈদী, (৪২) বয়ানুল লিসান, (৪৩) আল কামূসুদ্ দরসী, (৪৪) মিছবাহুল  মুনীর, (৪৫) নিহায়া, (৪৬) আল মু’জামুল ওয়াজীয, (৪৭) মু’জামু মাক্বায়ীসুল লুগাত, (৪৮) মাগরিব, (৪৯) আল মু’জামুল বুলদান, (৫০) আল মুহীত ফিল লুগাত, (৫১) আল-মানার, (৫২) লুগাতে কিশওয়ারী, (৫৩) তাজুল আরূস, (৫৪) ইফরাতুল মাওয়ারীদ, (৫৫) ক্বামূসুল জাইবে ফী ছালাছি লুগাতিন (৫৬) কারীমুল লুগাত, (৫৭) আরবী ও বাংলা অভিধান, (৫৮) আর রইদ, (৫৯) ফিরুযুল লুগাত, (৬০) ফরহঙ্গে আমিরাহ, (৬১) আল ক্বামুসুল জাদীদ, (৬২) ফতর্হু রহমান, (৬৩) আল ক্বামুসুল ইছত্বলাহিল জাদীদ, (৬৪) মু’জামু লুগাতিল ফুক্বাহা, (৬৫) লুগাতুল হাদীছ, (৬৬) আল মুরাদাত (৬৭) আল ক্বামূছুল ওয়াজীয লি দারিসিল আরাবিয়াতিল আযীয (৬৮) আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান (৬৯) বাংলা একাডেমী আরবী-বাংলা অভিধান ইত্যাদি।

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ