সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৭৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মুহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন,

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা

 সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মুল বিষয়বস্তু হলো-

… ৭. মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে নাকি এখনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা হয়না এবং পূর্বেও কখনো করা হতো না।”

এখন সুওয়াল হলো- ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবাদীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদী।

ধারাবাহিক

 জাওয়াবঃ তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, তারা যে বলেছে æমক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে নাকি এখনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা হয়না এবং পূর্বেও কখনো করা হতো না।” তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া। কারণ তারা তাদের এ বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল পেশ করতে পারেনি।

দ্বিতীয়তঃ তারা উক্ত বক্তব্য দ্বারা শরীয়তের মধ্যে ইফরাত-তাফরীত করার কারণে কাট্টা কুফরী করেছে। কারণ শরীয়ত উছূল নির্ধারণ করেছে চারটি- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। অথচ তাদের বক্তব্য হলো- মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফও শরীয়তের দলীল। নাউযূবিল্লাহ।

তৃতীয়তঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও সরাসরি মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের অনুসরণ-অনুকরণ করতে বলা হয়েছে, এরূপ একটি দলীলও তারা পেশ করতে পারবে না? আর মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে যা প্রচলিত রয়েছে, তা অনুসরণ না করা যে, বিদ্য়াত ও গোম্রাহী এর দলীল কোথায়? যদি তাই হয়, তবে সে দেশে যে হারাম কাজগুলো যেমন- ভিডিও, টিভি, গান-বাজনা ইত্যাদি প্রচলিত ও প্রচারিত রয়েছে। মুনাজাত বিরোধীরা  কি সেগুলোও অনুসরণ করবে? এবং এগুলোকে জায়িয বলবে?

মূলকথা হলো- কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায়, অধিকাংশ লোক  বা রাষ্ট্রকে ততক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি, সম্প্রদায় রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণ কায়িম না থাকবে।

আর তাই আল্লাহ্ পাক বলেন,

اَطِيْعُو اللّٰهَ  وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ  وَاُولِى  الْاَمْرِ مِنْكُمْ

অর্থঃ æতোমরা আল্লাহ্ পাক-এর অনুসরণ কর, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ কর, এবং উলিল আমর (যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ অনুযায়ী চলে)-এর অনুসরণ কর।”

সুতরাং যে ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক উপরোক্ত আয়াত শরীফের আওতায় পড়বে, তাকে অবশ্যই অনুসরণ ও অনুকরণ করা যাবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তবে তােেদরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবেনা। এর উদাহরণ হলো-আওলাদে রাসূলগণ। অর্থাৎ যাঁরা আওলাদে রাসূল তাঁদের প্রত্যেককে মুহব্বত, তা’যীম-তাক্রীম করতে হবে, আর অনুসরণ-অনুকরণ শুধু ঐ সকল আওলাদে রাসূলগণকে করতে হবে, যাঁর আমল-আখলাক ছূরত-সীরতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ কায়মোক্বাম। আর এ প্রসঙ্গেই ইমাম শাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আওলাদে রাসূলগণ হলেন- আয়াতে কুরআনীর ন্যায়, অর্থাৎ কুরআন শরীফে দু’প্রকার আয়াত শরীফ রয়েছে। প্রথম প্রকার আয়াত শরীফ হলো- যা তিলাওয়াত এবং আমল উভয় করতে হয় ও তার যথাযথ মুহব্বত, তাযীম-তাকরীমও করতে হয়। দ্বিতীয় প্রকার আয়াত শরীফ হলো- যা আমল করতে হয়না, যার আমল মানসূখ (রদ) অর্থাৎ মাশরুহ্ (ব্যাখ্যা) হয়েছে। তবে তাঁর  মুহব্বত, তাযীম-তাকরীম ও তিলাওয়াত যথাযথ বহাল রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নিম্নে দু’টি উদাহরণ পেশ করা হলো-

প্রথম উদাহরণঃ আল্লাহ্ পাক প্রথম এ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন-

وَاِنْ  تُبْدُوْا مَا فِىْۤ اَنْفُسِكُمْ اَوْ تُخْفُوْهُ   يُحَاسِبْكُمْ بِهِ  اللّٰهُ

অর্থঃ æতোমাদের অন্তরের গোপন ও প্রকাশ্য সব বিষয়ের হিসাবই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট দিতে হবে।” (সূরা বাক্বারা-২৮৪)

উক্ত আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ হওয়ার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ খুব চিন্তিত হয়ে গেলেন এবং বার বার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে লাগলেন, æইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি এটাই হয়ে থাকে, তবে আমাদের অবস্থা কি হবে? কারণ আমাদের অন্তরে তো অনেক কিছুই উদয় হয়।” তখন আল্লাহ্ পাক এ আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ করেন,

لاَ يُكَلِّفُ اللّٰهُ  نَفْسًا اِلاَّ وُسْعَهَا

অর্থঃ æকোন নফস্কেই তার সামর্থের অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া হবেনা।” (সূরা বাক্বারা-২৮৬)

এ আয়াত শরীফ দ্বারা উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর হুকুমকে মানসূখ (রদ) অর্থাৎ মাশরুহ্ (ব্যাখ্যা) করা হয়েছে।

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর হুকুম যদিও মানসূখ অর্থাৎ মাশরুহ্ হয়েছে কিন্তু তার তা’যীম-তাকরীম তিলাওয়াত ঠিকই বহাল রয়েছে।

দ্বিতীয় উদাহরণঃ আল্লাহ্ পাক রোযা রাখার ব্যাপারে প্রথম নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করেন,

وَعَلَى الَّذِيْنَ  يُطِيْقُوْنَهُ  فِدْيَةٌ  طَعَامُ  مِسْكِيْنٍ

অর্থঃ æকোন সামর্থ্যবান ব্যক্তি রোযা না রেখে ফিদিয়া দিলেও চলবে।” (সূরা বাক্বারা-১৮৪)

কিন্তু আল্লাহ্ পাক পরবর্তীতে নিম্মোক্ত আয়াত শরীফ অবতীর্ণ করে উপরোক্ত আয়াত শরীফের হুকুমকে মান্সূখ (রদ) অর্থাৎ মাশরুহ্ (ব্যাখ্যা) করে দেন। আল্লাহ্ পাক বলেন,

فَمَنْ  شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

অর্থঃ æতোমাদের মধ্যে (সামর্থ্যবান) যে কেউ রমযান মাস পাবে, তাকে অবশ্যই রোযা রাখতে হবে।” (সূরা বাক্বারা-১৮৫)

এখানে দ্বিতীয় আয়াত শরীফ দ্বারা প্রথম আয়াত শরীফ-এর হুকুমকে যদিও মানসূখ অর্থাৎ মাশরুহ্ করা হয়েছে কিন্তু তার তা’যীম-তাকরীম, ফাযায়িল-ফযীলত ঠিকই বহাল রয়েছে।

অনুরূপ আওলাদে রাসূলগণ প্রত্যেকেই তা’যীম- তাকরীম ও মুহব্বতের পাত্র। তবে তাঁদের মধ্যে যাঁরা শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন, তাঁদেরকে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সাথে অনুসরণ-অনুকরণও করা যাবে। আর যাদের আমল শরীয়তের খিলাফ, তাদেরকে আওলাদে রাসূল হিসাবে তা’যীম-তাকরীম করতে হবে, কিন্তু অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবেনা।

তদ্রুপ যাঁরা মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের অধিবাসী, তাঁরা সমষ্টিগতভাবে তা’যীম-তাকরীমের পাত্র। যেহেতু তারা আল্লাহ্ পাক-এর পবিত্র ঘর মক্কা শরীফ ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা শরীফের প্রতিবেশী। কিন্তু অনুসরণ শুধু তাঁদেরকেই করতে হবে, যাঁরা শরীয়তের অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণ কায়িম থাকবেন। আর যাদের আমল এর বিপরীত, তাদেরকে কখনো অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। তবে তাদের মধ্যেও কেউ যদি শরীয়ত মোতাবেক শাস্তির উপযুক্ত হন,  (যেমন হদ, কিসাস) তবে তাদের উপরও সে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।

 যেমন- কাউয়ূমে আউয়াল, মাহ্বূবে সোবহানী, কুতুবে রাব্বনী হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘মাক্তুবাত শরীফে’ উল্লেখ করেন, æযখন হযরত ইমাম মাহ্দী আলাইহিস্ সালাম আসবেন এবং ইসলামী আইন-কানুন চালু করবেন, তখন মদীনা শরীফ-এর এক তথাকথিত আলিম ইমাম মাহ্দী আলাইহিস্ সালামকে কাফির ফতওয়া দিবে।” তখন ইমাম মাহ্দী আলাইহিস্ সালাম ঐ ব্যক্তিকে কতল করার নির্দেশ দিবেন।

মোট কথা হলো মক্কা-মদীনাবাসী যতক্ষণ পর্যন্ত শরীয়তের উপর কায়িম থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করা যাবে, আর এর বিপরীত হলে তাকে কখনো অনুসরণ করা যাবে না।

সুতরাং ফরজ নামাজের পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যেখানে অসংখ্য ক্বাওলী, ফে’লী, ছহীহ্, জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত, সেখানে মক্কা-মদীনাবাসী করে না বলে এটাকে বিদ্য়াত বলা গোম্রাহী ও চরম জিহালত ব্যতীত আর কিছুই নয়। অতএব কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের বিপরীত কোন ব্যক্তি, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে অনুসরণ-অনুকরণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।

 সুওয়াল: æমাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতওয়া দারুল উলুম, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- æআযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

 জাওয়াব: আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নিম্নে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খন্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হল-

মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের খণ্ডনমূলক আলোচনা-

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, ‘আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম, ১ম খন্ড, পৃ.১৮০)

এর জবাবে বলতে হয় যে, æআযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণামূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক ছাহেব বলেছে, æফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”

অথচ ফেক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ।” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ‘ফতওয়ায়ে দারুল উলুম’ কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। বরং ‘ফতওয়ায়ে দারুল উলুম’ কিতাবেই তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে- যেমন, ‘ফতওয়ায়ে দারুল উলুম’ কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে.

یہ تثویب ہےجس کوبضرورت جائز رکھا گیا تھا.

অর্থ:-æ(আযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা) এটাকে তাছবীব বলা হয়। জরুরতে তাছবীব করাকে জায়িয রখা হয়েছে।’ সুতারাং মাসিক মদীনার সম্পাদক ছাহেব ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম কন্ডের ১৮০ পৃষ্টার বরাত দিরয় যে বলেছে, æআযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেক্বাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থকলেও ফিক্বাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।’ তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোকাপুর্ণ বলে প্রমানিত হলো।

দ্বিতীয়ত: ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম, খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মত উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে,

اور امام ابو یوسف رحمت اللہ علیہ نےخاص قاضی وغیرہ کہ لئے اس اطلاع کو جائز رکھاتھا کہ یہ لوگ مسلمانوں کے کاموں میں مشغول رہتے ہیں ان کو دوبارہ جماعت کی ضرورت ہے.  وخصه ابو يوسف رحمة الله عليه بمن يشتغل بمصالح العامة كالقاضي والمفتى والمدرس واختاره  قاضى خان الخ .

অর্থ: æইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাছ করে বিশেষ ব্যক্তিদের যেমন-কাজী, মুফতী, মুর্দারিস প্রমুখ ব্যক্তিদের জন্য এ আহবানকে (অর্থাৎ ‘আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য আহবান করাকে) জায়িয রেখেছেন। কেননা তাঁরা (অর্থাৎ কাজী, মুফতী, মুর্দারিস প্রমুখ ব্যক্তিগণ) সর্বসাধারণের ইছলাহী কাজে মশগুল থাকেন। তাই তাঁদেরকে দ্বিতীয়বার জামায়াতের জন্য আহবান করা জরুরী।” æকাজীখান” এটাকে গ্রহণ করেছেন।

এর জবাবে বলতে হয় যে, ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায়, উল্লিখিত ইবারতের দ্বারা দিবালোকের ন্যায় এটাই প্রমানিত হয় যে, আমরা যদি ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতকে ধরে নেই। তাহলেও তাছবীব করা জায়িয প্রমানিত হয়। কারন ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, খাছ করে অর্থাৎ বিশেষ ব্যক্তি যারা সর্বসাধারণের কাজে তথা মুসলমানদের ইছলাহী কাজে মশগুল আছেন যেমন, কাজী, মুফতী, মুর্দারিস সাহেব, তাদেরকেও (বেশী বেশী করে জানিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে) তাছবীব করা জায়িয আছে।

অতএব, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০পৃষ্ঠায় উল্লিখিত ইবারতে ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতেও তাছবীব জায়িয প্রমাণিত হলো।

এ ছাড়াও বিশ্বখ্যাত, সর্বজনমান্য অনেক বড় বড় ফিক্বাহের কিতাবেই ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত মতটি উল্লেখ আছে।

যেমন, ‘আইনী শরহে হিদায়া’ কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০-৫৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ابو يوسف رحمه الله تعالى خصهم بذالك لزيادة اشتغالهم بامور المسلمين كيلا تغوتهم الجماعة وعلى هذا القاضى  والمفتى.

অর্থাৎ, æহযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, তার কারণ হলো মুসলমানদের ইছলাহী কাজে তাদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাদের জামায়াত যেন ফউত হয়ে না যায়।’ (কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো তাখছীছ ছাড়াই আম খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।’) (অনুরূপ æবিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ১১২-১১৩ পৃষ্ঠায়, æহিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)

আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور ابو یوسف رحمۂ اللہ علیہ نے حکام کو اس تثویب کے ساتھ  اس لئے خاص کیا  کہ  مسلمانو  ں کے مشغولیت زیادہ ہے تاکہ  ان کی  جماعت  فوت نہ ہوجائے – اور اسی حکم پر قاضی اور مفتی ہے

অর্থঃ æইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র হাকীমগণ তথা মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কাজী সাহেব, মুফতী ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, তার কারণ হলো মুসলমানদের ইছলাহী কাজে তাদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাদের জামায়াত যেন ফউত হয়ে না যায়।” (কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়্ বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।)

æহাশিয়াতুত তাহতাবী আ’লা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويثوب … بين الاذان والاقامة…كل الصلواة المجموعى…كل الخلق من غير تخصيص امير او مشتغل بأمر العامة كقاضى كما قاله الامام ابو يوسف رحمة الله عليه.

অর্থা:-æআযান ও ইকামতের মাঝে প্রত্যেক জামায়াত বিশিষ্ট নামাযে, সকল মানুষকেই তাছবীব করবে (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আমীর-উমারা অথবা সর্বসাধরণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কাজী সাহেব যেমন হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য)।’

æফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعن أبى يوسف رحمة الله عليه أن التثويب بعد الاذان والاقامة  بساعة.

অর্থ: æইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে আযানের পর তাছবীব করবে এবং কিছুক্ষণ পর ইক্বামত দিবে।”

æআইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৫০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

وفى شرح مختصر الكرخى للقدورى: ويثوب وهو قائم كا لاذان فى قول ابى حنيفة رحمة الله عليه و ابو يوسف رحمة الله عليه قال الحسن وفيه قول يسكت بعد الاذان ساعة حتى يقول حى على الصلوة حى على الفلاح وبه ناخذ

অর্থঃ æশরহে মুখতাছার কারখী লিল কুদুরী” কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক ক্বওল মতে তাছবীবও আযানের মত দাড়িয়ে দিবে। অর্থাৎ আযান যেমনিভাবে দাঁড়িয়ে দেয় তাছবীবও সেভাবে দাঁড়িয়ে দিতে হবে। তবে হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তাছবীব করার ব্যাপারে একটা মত আছে, তা হলো আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে, অতঃপর

حى على صلوة وحى على الفلاح

æহাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে তাছবীব করবে। আর وبه ناخذ

এই মতটি আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে অতঃপর

حى على صلوة  وحى على الفلاح

æহাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে তাছবীব করবে। এরই উপর ফতওয়া।

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব ফতওয়ায়ে দারুল উলূম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে যে বলেছে, æআযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহ্বান করাকে ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফিকাহ বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা ও ধোঁকাপূর্ণ বলে প্রমাণিত হলো।

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্রগ্রাম।

 সুওয়াল: চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে æআল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা æআযানের মৌখিক জবাব” দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াব: আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে না ফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়। রেযাখানী মেীলভী ছাহেবরা æআযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তহাব” বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসাবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরাবায়া’ কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

   উল্লেখ, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরা হলো:

যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, æআর দ্বিতীয় প্রকারের আযানের জবাব দেয়া, অর্থাৎ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়া শরীয়ত সম্মত কোন ওজর বা আপত্তি না থাকলে আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। যেমন-সর্বমান্য হানাফী ফক্বীহ ইমাম আব্দুর রহমান জাযীরাহ্ রহমাতুল্লহি আলাইহি æআল ফিক্বহ আ’লা মাযাহিবিল আরব ‘আহ গ্রন্থের مباحث الاذان  অধ্যায়ের  اجابة المؤذن পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন যে,

 اجابة المؤذ ن مندوبة لمن يسمع الاذان ولو كان جنبا…..ان الحنفية اشترطوا ان لاتكون حائضا اونفساء فان كانت فلا تندب لها الاجابة بخلاف باقى الائمة-لانهما ليت من اهل الا جابة بالفعل فكذا بالقول.

অর্থাৎ, যে আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। যদিও সে নাপাকি অবস্থায় থাকে। কিন্তু হানাফীদের মতে স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর সম্পন্না মহিলাদের জন্য আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব নয়। কিন্তু অন্যান্য ইমামগণের মতে মুস্তাহাব। যেহেতু স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর সম্পন্না মহিলা স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে আযানের  بالفعل তথা কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার উপযুক্ত নয়। তেমনিভাবে মৌখিকভাবেও জবাব দেবেনা। আল ফিক্বহু আ’লা মাযাহিবিল আরবাআ, ১ম ভাগ, পৃ.৩১৭-৩১৮, ইস্তাম্বুল থেকে প্রকাশিত।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা যে বলেছে, æজামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।” তাদের এ ধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত কিতাবের ইবারতে নেই।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

চতুর্থত: ধোঁকাবাজ রেযাখানীরা শুধু ইবারতের ক্ষেত্রেই নয়। বরং অর্থকেও জোড়াতালি দিয়ে একই সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে।

অর্থাৎ, রেযাখানীরা ধোঁকা দেয়ার জন্যই কিতাবে উল্লিখিত ৩১৭ পৃষ্ঠার ইবারতের অর্থের সঙ্গে ৩১৮ পৃষ্ঠার ইবারতের অর্থকে জোড়াতালি দিয়ে উভয় পৃষ্ঠার ইবারতকে একই সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে।

পঞ্চমত: ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব তার এই

اجابة  المؤذن  مند وبة  لمن يسمع  الاذان……

বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করতে পারেননি বিধায় তার দলীলবিহীন বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ষষ্ঠত: ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব তার ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ৩১৭ পৃষ্ঠায় স্ববিরোধী বক্তব্য পেশ করেছেন। যেমন ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের ৩১৭ পৃষ্ঠার

اجابة المؤذن  পরিচ্ছেদে প্রথম লাইনে উল্লেখ করেছেন,

اجابة  المؤذن   مند وبة  لمن  يسمع  الاذان   ولو كان   جنبا أو كانت  حائضا  أونفساء

আবার   اجابة المؤذن  পরিচ্ছেদের তৃতীয় লাইনে উল্লেখ করেছেন-

ان الحنفية  اشترطوا ان  لا تكون حائضا أو نفساء

অর্থাৎاجابة المؤذن   পরিচ্ছেদে প্রথম লাইনে উল্লেখ করেছেন জুনুব অথবা স্বাভাবিক মাজুর বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হলেও আযানের জবাব দিতে পারবেন। আবারاجابة المؤذن  পরিচ্ছেদের তৃতীয় লাইনে হানাফী মাযহাবের বরাত দিয়ে বলেছেন, হানাফীগণ শর্ত করেছেন  যে, স্বাভাবিক মাজুর অথবা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হতে পারবেন না। অর্থাৎ স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হলে আযানের জবাব দিতে পারবেন না।

সুতরাং আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেবের এ ধরনের দলীলবিহীন স্ববিরোধী বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সপ্তমত: ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব তার ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ৩১৭ পৃষ্ঠায় اجابة المؤذن পরিচ্ছেদের প্রথম এবং তৃতীয় লাইনে যে দলীলবিহীন স্ববিরোধী বক্তব্য পেশ করেছেন। সে কারণে রেযাখানীরা আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেবের দলীলবিহীন স্ববিরোধী বক্তব্যগুলো কারচুপি করে উল্লেখ করেনি। বরং রেযাখানীরা ডট ডট (… …) দিয়ে তার স্ববিরোধী বক্তব্যগুলো এড়িয়ে গেছে এবং আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেবকে তার দলীলবিহীন স্ববিরোধী বক্তব্য থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু আল বাইয়্যিনাতের বলিষ্ঠ কলমে তার শেষ রক্ষা হলো না বরং রেযাখানীদের কারচুপি এবং জাযীরী সাহেবের দলীলবিহীন স্ববিরোধী বক্তব্য ধরা পড়ে গেল।

অষ্টমত: ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব তার মনগড়া ও দলীলবিহীন স্ববিরোধী বক্তব্যকে হানাফীদের নামে চালিয়ে দিয়ে বলেছেন।

ان الحنفية  اشترطوا ان  لا تكون حائضا  اونفساء

অর্থাৎ হানাফীগণ শর্ত করেছেন যে, (যারা আযানের জবাব দিবেন তারা) স্বাভাবিক মাজুর বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হতে পারবেন না। অর্থাৎ স্বাভাবিক মাজুর বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হলে আযানের জবাব দিতে পারবেন না।

অথচ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ বিশেষ করে মহিলারা যদি স্বাভাবিক মাজুর বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হয় তথাপিও জবাব দেয়া ওয়াজিব।”

যেমন, হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব æদুররুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার” এ উল্লেখ আছে,

  ويجيب وجوبا …. من سمع الاذان ولوجنبا….بان يقول  بلسانه.

অর্থঃ æযে ব্যক্তি আযান শুনবে …. তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ বিশেষ করে যদিও মহিলারা স্বাভাবিক মাজুর হয় তথাপিও আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব। অনুরূপ খোলাছাতুল ফতওয়া, গায়াতুল আওতার, বাহরুর রায়িকসহ বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য অনেক বড় বড় হানাফী ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে (প্রয়োজনে বিস্তারিত ফতওয়া পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

সুতরাং ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব তার ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া কিতাবের ৩১৭ পৃষ্ঠায়

اجابة المؤذن পরিচ্ছেদের তৃতীয় লাইনে যে বলেছে-

ان  الحنفية  اشترطوا ان  لا تكون حائضا  أونفساء

অর্থাৎ হানাফীগণ শর্ত করেছেন যে, (যারা আযানের জবাব দিবেন তারা) স্বাভাবিক মাজুর বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হতে পারবেন না। অর্থাৎ স্বাভাবিক মাজুর বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হলে আযানের জবাব দিতে পারবেন না।

তার এ বক্তব্য হানাফী মাযহাবের নামে মিথ্যাচার ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো। এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে ‘আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের লিখক আব্দুর রহমান জাযীরী সাহেব নিজের মনগড়া বক্তব্যকে হানাফীদের নামে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

 সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত æমীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, æআমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

 জাওয়াবঃ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি, বরং ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের æমাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, æআমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।” (নাউযূবিল্লাহ)

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, æআমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ও ছাহাবার অন্তর্ভূক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

আর ইসলামী শরীয়ত বলতে- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। যদি তাই হয়, তাহলে কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফে প্রচলিত মীলাদ-কিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং ইজমা-ক্বিয়াসের কোথায়, কোন ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।

সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়তঃ ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াসে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।

হাদীছ শরীফে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ

যেমন, মীলাদ শরীফ-এর আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত বর্ণনা করা।

আর তাঁর ছানা-ছিফতের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদীছ শরীফ। তাই হাদীছ শরীফেও আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত সম্পর্কে যে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।

 যেমন, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে, স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে হযরত হাস্সান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদে নববী শরীফে দাঁড়িয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে ছানা-ছিফত, না’ত, কাছীদা ও কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতেন।

এ প্রসঙ্গে æমিশকাত শরীফ” কিতাবের ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن عائشة رضى الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع لحسان منبرا فى المسجد يقوم عليه قائما يفاخر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم او ينافح ويقول رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله يؤيد حسان بروح القدس ما نافح او فاخر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ æহযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাস্সান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য মসজিদে নববীতে মিম্বর শরীফ স্থাপন করেছিলেন। তিনি তাতে দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রশংসামূলক ক্বাছীদা শরীফ (কবিতা) পাঠ করতেন অথবা তাঁর পক্ষ থেকে (মুশরিকদের বিরুদ্ধে) প্রতিবাদমূলক কবিতা পাঠ করতেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা রুহুল কুদুস (হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম) দ্বারা হযরত হাস্সান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাহায্য করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ হতে প্রতিবাদ করতে থাকেন অথবা প্রশংসা করতে থাকেন।” (বুখারী শরীফ)

তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল।

যেমন, এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم  شفاعتى.

অর্থঃ æহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা তাঁর নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটণাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর (ছলাত-সালাম) দরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব। (সুবহানাল্লাহ)

(কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى درداء رضى الله تعالى عنه انه  مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون  لك  من فعل فعلك  نجى  نجتك.

অর্থঃ æহযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটণাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন।

এতদশ্রবণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, æনিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমতের দরজা আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশ্তাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, আপনার মত সেও নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (সুবহানাল্লাহ)

(কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

সুতরাং মীলাদ শরীফ স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। আর যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল তা কিরূপে নাজায়িয বলা যেতে পারে?

অতএব, উল্লিখিত বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট হলো যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম উভয়টি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

আর কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়কে নাজায়িয বলা প্রকাশ্য কুফরী। মুসলমান হয়ে যারা কুফরী করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা মুরতাদ ও কাফির।                    (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

 সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা এই হাদীছ শরীফ খানা ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত æজিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতের সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খ-নমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) æপ্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্বানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়াল প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্বানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষন করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুশিদের নিকট বাইয়াত করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তর পরিশুদ্ধ করে আল্লাহ ভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলি সমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করে না বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়েখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। আথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা হক্বানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

ইলমে তাছাউফ অর্জন করা

ফরজ হওয়ার কারণ

স্বরণযোগ্য যে, ইলমে ফিক্বাহ্ যেমন-আক্বাইদ, ইবাদত, মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত ইত্যাদি সম্পর্কিত ইলম অর্জন করা ফরজ (এ প্রসঙ্গে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৪১তম সংখ্যায় ছক সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে)।

তদ্রুপ æতাযকিয়ায়ে ক্বালব অন্তর থেকে বদ্ খাছলত বা কুস্বভাবসমূহ বের করে নেক খাছলত বা সুস্বভাবসমূহ হাছিল করে অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্যও জরুরত আন্দাজ ইলমে তাছউফ অর্জন করা ফরজ। যা কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلاً مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِهٖ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ

অর্থ ঃ æমু’মিনদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর ইহ্সান যে, তাদের মধ্যে হতে তাদের জন্য একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি আল্লাহ্ পাক-এর আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তায্কিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েত প্রাপ্ত ছিলনা।” (সূরা ইমরান-১৬৪)

অনুরূপ সূরা বাক্বারার ২৯ ও ১৫১নং আয়াত শরীফে এবং সূরা জুমায়ার ২নং আয়াত শরীফে উপরোক্ত আয়াত শরীফের সমার্থবোদক আয়াত শরীফ উল্লেখ আছে।

মূলত ঃ উল্লিখিত আয়াত শরীফ সমূহে বিশেষ ভাবে চারটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনানো এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়া। এ তিনটি বিষয় হচ্ছে-ইলমে হুনরের অন্তরর্ভুক্ত। যা ইবাদতে জাহেরা বা দ্বীনের যাবতীয় বাহ্যিক হুকুম-আহ্কাম পালন করার জন্য ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের অর্থাৎ হালাল কামাই করার জন্য প্রয়োজন। আর চতুর্থ হচ্ছে- (يزكيهم) তাযকিয়ায়ে ক্বাল্ব অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করা।

মুফাস্সিরীনে কিরামগণ ”يزكيهم”-এর ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাফসিরের কিতাব যেমন- তাফসীরের কিতাব যেমন-তাফসীরে জালালাইন, কামালাইন, বায়হাক্বী, কুরতবী, তাবারী, কবীর, খাযেন, বাগবী, ইবনে কাছীর, দুররে মান্ছুর, আবী সউদ, মাজহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী,  মায়ারেফুল কোরআনসহ আরো অনেক তাফসীর প্রন্থে æতাযকিয়ায়ে ক্বালব” বা অন্তর পরিশুদ্ধ করাকে ফরজ বলেছেন এবং তজ্জন্য ইলমে তাছাউফ অর্জন করাকেও ফরজ বলেছেন।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ইলমে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করে অর্থাৎ অন্তর সমূহ পয়দা থেকে বদ্ খাছলতসমূহ দূর করে দিয়ে নেক খাছলত সমূহ পয়দা করা ফরজ।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাস্সির ফক্বীহুল উম্মত, হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ্ পানি পথি রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ করেন,

 واما العلم اللدنى الذى  يسمون اهلها بالصوفية الكرام فهو فرض عين لان من ثمراتها تصفية القلب عن الاشتغال بغير الله تعالى واتصافه بداوم الحصور وتركية النفس عن ذائل الاخلاق وتجعليها بكرام الاخلاق.

অর্থঃ æযে সকল লোক ইলমে লাদুন্নী বা ইলমে তাছাউফ হাছিল করে, তাদেরকে æসূফী” বলে। ইলমে তাছাউফ হাছিল অর্জন করা ফরজে আইন। কেননা (ইলমে তাছাউফ) মনকে গায়রুল্লাহ্ হতে ফিরিয়ে আল্লাহ্ পাক-এর দিকে রুজু করে দেয়। সর্বদা আল্লাহ পাক-এর হুজুরী পয়দা করে দেয় এবং অন্তর থেকে বদ্ খাছলত সমূহ দূর করে নেক খাছলতসমূহ পয়দা করে অন্তর পরিশুদ্ধ করে দেয়।” ইলমে তাছ্উাফ অর্জন করা ফরজ হওয়া সম্পর্কে æজামিউল উসূল” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

واعلم ان العلم الباطن الذى هو من اعظم المنجيات والسلوك ولرياضات والمجاهدت فرض عين.

অর্থঃ æইলমে তাছাউফ, যা (বদ্ খাছলতসমূহ হতে) নাযাত বা মুক্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ প্রাপ্তি, রিপু বিনাশন ও সংযম শিক্ষার একমাত্র পথ। এটা (ইলমে তাছউফ) শিক্ষা করা ফরজে আইন।”

আর হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

فان البخل والجبن والكبر والتقتير حرام ولايكن التحرز عن المحرم فرض كما استفيد عن ذالك لامندوبا مايصادها.

অর্থঃ æনিশ্চয় কৃপণতা, অহংকার, পরিবার পরিজনকে খাওয়াা পরায় কষ্ট দেয়া ইত্যাদি হারাম। উল্লেখিত বদ্ খাছলত সমূহ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করা ব্যতীত তা হতে বেঁচে থাকা অসম্ভ বা অথচ হারাম কাজ হতে বেঁচে থাকা ফরজ। যেহেতু হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা ফরজ, সেহুতু উক্ত বদ্ খাছলত সমূহকে অন্তর থেকে দুর করার জন্য ইলমে তাছাউফ অর্জন করাও ফরজ। মুস্তাহাব মোটেও নয়।

আর æফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

(علم القلب) اى علم الاخلاق وهو علم يعرف به انواع الفصائل وكيفية اكتسابها وانواع الرائل وكفية اجتنابها.

অর্থ ঃ æযে ইল্মের মাধ্যমে নেক খাছলত বা সদ্ গুণাবলীর প্রকারভেদ এবং বদ্ খাছলত বা অসৎ গুণাবলীর শ্রেণী বিভাগ এবং সেগুলি ৮হতে নাযাত বা মুক্তি পাবার পদ্ধতি জানা যায়, তাকে ইল্মে ক্বাল্ব বা ইল্মে তাছউফ বলে।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, তাযকিয়ায়ে ক্বাল্ব থেকে বদ্ খাছলতসমূহ দূর করে নেক খাছলত সমূহ অন্তরে হাছিল করা ফরজে আইন। আর এটাই মূলতঃ ইল্মে তাছাউফ হাছিল করার মুল উদ্দেশ্য বা কারণ। (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়ে” এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তারাবীহর নামায বিশ রাকায়াত এ বিষয়ের উপর পূর্ববর্তী ১৭৬ ও ১৭৭তম দু’ সংখ্যাতে অনেকগুলো হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, যামানার তাজদীদী মুখপত্র অত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ২৫ থেকে ২৯তম এ পাঁচ সংখ্যার মধ্যে বিশ্বখ্যাত, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয় হাদীছ শরীফ-এর কিতাব এবং তার শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ থেকে ৩০৪খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ দলীল-আদিল্লাহ’র ভিত্তিতে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছে।

উক্ত ফতওয়ার মধ্যে যেসব বিষয় প্রমাণ করা হয়েছে তা হলো:

১। রমজান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়া পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যেই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এটা ছহীহ্ হাদীছ শরীফ, ইজ্মায়ে আযীমত, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদগণের আমল ও ক্বওল মুবারক দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

২। তারাবীহ নামায আট রাকায়াত, এ দাবী সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট, কাল্পনিক, অজ্ঞতাপ্রসূত ও গোমরাহীর নামান্তর। উপরন্তু ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও ইজ্মায়ে আযীমতকে অস্বীকার করার শামিল। যা সম্পূর্ণই কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

৩। তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ন নামায, এ দু’টোকে একই নামায বলা জিহালত বৈ কিছু নয়। কেননা তারাবীহ জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়িয়াহ্।

৪। বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায শুধুমাত্র পুরুষের জন্যেই জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। ৫। মহিলাদের জন্যে তারাবীহ নামাযসহ সকল নামায মসজিদে গিয়ে জামায়াতে আদায় করা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

৬। তারাবীহ নামাযে অন্ততঃ একবার কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। কিন্তু শুধুমাত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়।

৭। সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার শর্তে তারাবীহ নামাযে ও অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম বা পাঠ করে উজরত গ্রহণ করা ফতওয়াগ্রাহ্য মতে জায়িয।

৮। তারাবীহ নামাযের প্রতি চার রাকায়াতের পর বিশ্রাম নেয়া সুন্নত এবং প্রতি চার রাকায়াত পর পর উভয় হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব।

৯। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বুখারী শরীফে বর্ণিত এগার রাকায়াতের বর্ণনাটি তাহাজ্জুদ নামাযের বর্ণনা। তারাবীহ নামাযে নয়।

১০। পাক ভারত উপ-মহাদেশে ছিহাহ্ সিত্তাহ নামে হাদীছ শরীফ-এর যে ছয়টি কিতাব মাশহুর রয়েছে, তার কোনটির মধ্যেই তারাবীহ নামাযের বর্ণনা নেই।

১১। হযরত ইব্নে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের রেওয়ায়েতটি মুহাদ্দিছগণের মতে ছহীহ্ ও হাসান পর্যায়ের।

১২। ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাদ্বান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন।

১৩। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইব্নুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের উপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজ্মা প্রতিষ্ঠিত হয় ও জামাত জারী করা হয়। এবং উনারা সকলেই নিয়মিতভাবে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায আদায় করতেন।

১৪। চার মাযহাবের ইমামগণসহ সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ, মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহ্গণ বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামাযের ক্বায়িল বা প্রবক্তা। উনাদের মধ্য হতে কেউ তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াতের কম বর্ণনা করেননি। অতএব, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত হওয়ার ব্যাপারে উনাদেরও ইজ্মা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মোটকথা হলো, ৩০৪খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে, আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মায্হাবের মতানুসারে তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত। যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, ইমাম, মুজ্তাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের আমল ও ক্বওল মুবারক দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। (চলবে)

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন।

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

 সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

২১. হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর যারা হাক্বীক্বী নায়িব বা ওয়ারিছ হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁরা তো অবশ্যই দুয়া কবুলের ওসীলা এমনকি তাঁরা বান্দা ও উম্মতের নাজাতেরও ওসীলা। এ বিষয়ে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর দলীল সাপেক্ষে পূর্ববর্তী ১৭৭তম সংখ্যায় যদিও স্বল্পাকারে জাওয়াব পেশ করা হয়েছে সে জাওয়াবই যারা হক তালাশী তাঁদের জন্য মানা বা গ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট। তারপরও এ সংখ্যাতে একই বিষয়ে জাওয়াব পেশ করা হলো যাতে হক্বপন্থীদের আক্বীদা এ বিষয়ে আরো মজবুত হয় আর যারা বাতিলপন্থী রয়েছে তারা সম্পূর্ণ লা-জাওয়াব হয়ে যায়।

   পূর্ববর্তী ১৭৭তম সংখ্যায় ‘ইখলাছ’ হাছিল করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। যেই ইখলাছ ব্যতীত বান্দা বা উম্মতের কোন আমল বা ইবাদত আল্লাহ পাক-এর নিকট কবুল বা গ্রহণযোগ্য হয় না।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله لايقبل من العمل الا ما كان له  خالصا وابتغى به  وجهه.

অর্থঃ হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ঐসব আমল কবুল করেন না যা ইখলাছের সাথে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা হয় না। (নাসায়ী, দারিমী)

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

اخلص دينك يكفيك العمل القليل.

অর্থঃ  ইখলাছের সহিত ইবাদত কর। অল্প আমলই তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। (তারগীব, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত)

স্মরণীয় যে, একমাত্র আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে ইবাদত বা আমল করার নামই হলো ইখলাছ। আর এর বিপরীত তথা গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে ইবাদত বা আমল করার নাম ‘রিয়া’। উল্লেখ্য, রিয়া অর্থ লৌকিকতা। এই রিয়া অন্তর থেকে দূর না করা পর্যন্ত ইখলাছ  অর্জিত হয় না। তাই যতদিন রিয়া দূর করে কেউ ইখলাছ অর্জন না করবে ততদিন তার কোন ইবাদত-বন্দিগী আল্লাহ পাক-এর নিকট কবুল হবে না। উপরন্তু তার রিয়াযুক্ত ইবাদত বা আমলই জাহান্নামী হওয়ার কারণ হিসেবে গণ্য হবে। তা যত বড় আমলই হোক না কেন। যার বর্ণনা আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করেছেন। যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ. الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ. الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآؤُوْنَ .

অর্থঃ ঐ সকল মুছল্লী বা নামাযীদের জন্য ওয়ায়িল দোযখ যারা গাফলতির সাথে এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে। (সূরা মাউন -৪,৫,৬)

আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اول الناس يقضى عليه يوم القيامة رجل استشهد فاتى به فعرفه نعمته فعرفها فقال فما عملت فيها قال قاتلت فيك حتى استشهدت قال كذبت ولكنك قاتلت لان يقال  جرى فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القى فى النار ورجل تعلم العلم وعلمه  وقرأ القران فاتى به فعرفه  نعمه  فعرفها قال فما عملت قال تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القران قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال انك عالم وقرأت القرأن ليقال هو قارئ فقد قيل ثم امر به  فسحب على وجهه  حتى القى فى النار ورجل وسع الله عليه واعطاه من اصناف المال كله فاتى به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها قال ما تركت من سبيل تحب ان ينفق فيها الا انفقت فيها لك قال كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد فقد قيل ثم امربه  فسحب  به على وجهه  ثم القى  فى النار.

অর্থাৎঃ- হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তিনজন লোককে প্রথমে বিচারের জন্য আনা হবে। প্রথম যে ব্যক্তিকে আনা হবে, সে হলো একজন শহীদ। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে æহে ব্যক্তি! তোমাকে আমি এত শক্তি-সামর্থ দিলাম,তা দিয়ে তুমি করেছ?” সে বলবে, আল্লাহ পাক! আমি জিহাদ করতে করতে আপনার জন্য শহীদ হয়েছি। আল্লাহ পাক বলবেন, æমিথ্যা কথা! তুমি আমার জন্য জিহাদ করনি, মানুষ তোমাকে বড় পালোয়ান বা শক্তিশালী বা শহীদ বলবে, সেজন্য তুমি জিহাদ করেছ, যুদ্ধ করেছ। আর মনুষ তোমাকে শহীদ বলেছে।” (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)। তখন আল্লাহ পাক ফেরেশ্তাদেরকে বলবেন, æহে ফেরেশ্তারা! এ লোকটাকে চুলে ধরে জহান্নামে নিক্ষেপ কর।” তাই করা হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

দ্বিতীয় আরেকজন লোককে আনা হবে, যাকে ইলম দান করা হয়েছে। সে কুরআন শরীফ ছহীহ-শুদ্ধভাবে পড়তে শিখেছে এবং অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে। আল্লাহ পাক তাকে বলবেন, æহে আলিম ছাহেব, ক্বারী ছাহেব! তোমাকে এত ইলম দেয়া হয়েছিল, শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ পাঠ শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, তুমি কি করলে?” সে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহ পাক! আমি আপনার জন্যে ইলম শিক্ষা করেছি এবং তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি, আর আপনার জন্যই আমি কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করেছি। আল্লাহ পাক বলবেন, æমিথ্যা কথা! বরং মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলবে, সে জন্যেই তুমি ইলম অর্জন করেছ, কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়া শিখেছ। কাজেই মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলেছে (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)।” তখন আল্লাহ পাক ফেরেশতাদেরকে বলবেন, æহে ফেরেশতারা! তোমরা এ লোকটাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।” তখন তাকেও চুলে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

এরপর তৃতীয় আরেকজনকে আনা হবে, যাকে অনেক সম্পদ দান করা হয়েছে। তাকে আল্লাহ পাক বলবেন, æহে ব্যক্তি! তোমাকে আমি দুনিয়াতে অনেক সম্পদের মালিক করেছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি আমল করছে?”

সে ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ পাক! আমি আপনার পছন্দনীয় এমন কোন পথ নেই, যে পথে দান-খয়রাত করিনি। অর্থাৎ আপনি যতগুলো রাস্তা পছন্দ করতেন- মসজিদ, মাদরাসা, লঙ্গরখানা, ইয়াতীমখানা, গরীব-মিসকীন, রাস্তা-ঘাট, পুল, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্ত জায়গায় আমি কম-বেশী দান করেছি। কোন প্রার্থীকে আমি খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনি। সবাইকে কম-বেশী দান করেছি একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহ পাক বলবেন, æমিথ্যা কথা! তুমি এজন্য দান করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। আর তোমাকে তা বলা হয়েছে।” (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)।

আল্লাহ পাক তখন বলবেন, æহে ফেরেশতারা! এ দানশীল ব্যক্তিকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।” তখন ফেরেশতারা তাকেও চুলে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” (নাউযুবিল্লাহ)

(মুসলিম, মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ, শরহে নববী, মিরকাত)

অতএব প্রতিভাত হলো, হযরত ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণ শুধু দুয়া কুবুলেরই ওসীলা নন বরং তাঁরা নাজাত লাভেরও ওসীলা।

কেননা তাঁদের নিকট বাইয়াত হয়ে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করা এবং তরীক্বা মুতাবিক ক্বলবী যিকির ও অন্যান্য সবক্ব আদায়ের মাধ্যমে  রিয়া দূর করা ব্যতীত ইখলাছ অর্জন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

মুহম্মদ জুনায়েদ, চাকতাই, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-

১.    আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে ভ-, প্রতারক ও বিদ্য়াতী বলে গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

২.    মাসিক আল বাইয়্যিনাত জুন, ’৯৯ সংখ্যায় যেসকল বিষয়ে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে তাতে কুফরীমূলক কোন বক্তব্য আছে কি?

৩.    রাজারবাগ শরীফ-এর অনুসারীদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই তাদের এ মন্তব্য কতটুকু দলীলভিত্তিক?

৪.    রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের বিষয়টি বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।

৫.    তারা লিখেছে ‘যার পিছনে নামায পড়া হারাম তার পিছনে নামায পড়লে নামায কাযা করা বা দোহরানোর প্রয়োজন নেই” তদের এ ফতওয়া সঠিক হয়েছে কি?

৬.    হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণ মানুষের ঈমান হিফাযতে সহায়তা  করবেন বলে আমি আশাবাদি।

 জাওয়াবঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম জুন-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-

১. আমরা জানি ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম ও অলীআল্লাহ। অথচ তারা তাঁকে ভ-, প্রতারক ও বিদ্য়াতী বলে গালী দিল কোন দলীলের ভিত্তিতে?

দ্বিতীয় পর্ব

আরবী ভাষায় একটি ঐতিহাসিক প্রবাদ রয়েছে তাহলো-

المرء  يقس  على  نفسه

অর্থাৎ, মানুষ সাধারণতঃ অন্যকে নিজের মতই মনে করে। হাটহাজারীর খারিজী, ভ-, প্রতারক ও বিদ্য়াতী মৌলবীরাই যেহেতু সত্যিকার ভ-, প্রতারক ও বিদ্য়াতী তাই তারা হক্কানী-রব্বানী ওলীকেও তাদের মত মনে করে।

রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতি তারা যে তোহমত দিয়েছে এর স্বপক্ষে তাদের নিকট কোনই দলীল নেই। পক্ষান্তরে হাটহাজারীর গুরু শফী ও তার অনুসারীরা ভ- ও বিদ্য়াতী হওয়ার বহু প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে।

স্মর্তব্য, ভ- ও প্রতারক শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যারা আলিম না হয়েও আলিম দাবী করে মুফতী না হয়েও মুফতী দাবী করে, আলিম দাবী করার পরও কুরআন সুন্নাহ-এর খিলাফ কথা বলে, মুখে যা বলে আমলে তার বিপরীত করে। অর্থাৎ দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহ-এর খিলাফ কাজও করে তারাই মূলতঃ হাক্বীক্বী ভ- ও প্রতারক।

হাটহাজারীর গুরু শফী ও তার অনুসারীরা আলিম দাবি করলেও তারা কুরআন-সুন্নাহ-এর খিলাফ কথা বলে ও আমল করে। মুখে যা বলে আমলে তার বিপরীত করে। নিম্নে এ সম্পর্কিত কয়েকটি দলীল প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-

হাটহাজারীর গুরু শফী ও তার অনুসারীরা বলে ও লিখে থাকে যে, কদম বূছী করা হারাম ও শিরক” নাউযূবিল্লাহ।

অথচ ছিহাহ সিত্তাসহ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্বদমবূছী করেছেন। যেমন- হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-

عن وازع بن زارع عن جدها وكان فى وفد عبد القيس قال لما قد منا المدينة  فجعلنا نتبادر من رواحلنا فنقبل يد رسول الله صلى عليه  وسلم ورجله.

অর্থঃ হযরত ওয়াযে ইবনে যারে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ি অবতরণ করে সাইয্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি-এর হাত ও পা মুবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবূ দাউদ শরীফ-২য় জিলদ ৭০৯ পৃষ্ঠা, বযলুল মাযহুদ- ৬ষ্ঠ জিলদ ৩২৮ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী- ১১ জিলদ ৫৭ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ, মিরকাত-৭ জিলদ ৮০ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, ই’লাউস সুনান- ১৭ জিলদ ৪২৬ পৃষ্ঠা।)

হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরা আরো বলে ও লিখে থাকে যে, æফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত” নাউযূবিল্লাহ। অথচ অসংখ্য ক্বওলী ও ফে’লী হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। যেমন- হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لا يؤمن قوما فيخص نفسه بدعوة دونهم فان فعل خانهم.

অর্থঃ- কোন ইমাম সাহেব মুক্তাদীগণকে বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য মুনাজাত করবে না। যদি সে তা করে, তবে সে মুক্তাদীগণের প্রতি খিয়ানতকারী হবে।” (তিরমিযী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ-৪৭)

উল্লেখিত হাদীছ শরীফখানা ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়। কেননা এ হাদীছ শরীফে সরাসরী ইমাম ও মুক্তাদীর কথা উল্লেখ রয়েছে।

لا يجتمع ملاء فيدعو بعضهم ويؤمن بعضهم الا اجابهم

অর্থঃ- সম্মিলিত মুনাজাতে কিছু লোক মুনাজাত করলো, আর কিছু লোক ‘আমিন’ বললো, আল্লাহ্ পাক অবশ্যই তাদের এ মুনাজাত কবূল করবেন।” (মায়ারিফুস্ সুনান)

উল্লেখিত হাদীছ শরীফ ফরজ, নফল বা কোন সময়ের নির্ধারণ ছাড়াই সম্মিলিত মুনাজাত কবূল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ হাদীছ শরীফ ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয হওয়ারও প্রমাণ বহন করে। তাছাড়া হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারাও ফরজ নামাজের পর (ইজতিমায়ী) সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। যেমন ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবায়’ উল্লেখ রয়েছে,

عن الاسواد العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.

অর্থঃ- হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তাঁর পিতা বলেন- আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামাজ পড়লাম। যখন তিনি নামাজের সালাম ফিরালেন, ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠিয়ে মুনাজাত করলেন।”

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরা ইসলামের অনেক বিষয়েই কুরআন-সুন্নাহ-এর খিলাফ কথা বলে থাকে। আর যারা আলিম নাম দিয়ে সরাসরি ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ কথা বলে তারাই মূলত হাক্বীক্বী ভ- বা প্রতারক। কাজেই, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, হাটহাজারী গুরু শফী ও তার অনুসারীরাই মূলতঃ সত্যিকার ভণ্ড ও প্রতারক।  (চলবে)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ