সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ১৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল:   ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- … ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন) এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি। (ধারাবাহিক) জাওয়াব:     হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।  (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি।  (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।   (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয।  (নাউযুবিল্লাহ) উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ।  হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের তৃতীয় বক্তব্য হলো- (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয।  (নাউযুবিল্লাহ) এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও হক্কানী-রব্বানী উলামায়ে কিরাম বা ফুক্বাহায়ে কিরামগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত একখানা সুন্নত আমলকে হক্কানী ফুক্বাহায়ে কিরামগণ ঐক্যমত হয়ে কখনোই নাজায়িয বা বিদয়াত বলতে পারেন না। তবে সত্য কথা হলো হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের ন্যায় বিভ্রান্ত দুই একজন নামধারী ফক্বীহ মুনাজাতকে নাজায়িয বিদয়াত বলে সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি করেছে। পক্ষান্তরে অধিকাংশ হক্কানী-রব্বানী ফুক্বাহায়ে কিরামগণ ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ আমরা বিগত সংখ্যাগুলোতে পেশ করেছি। এখানেও কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- নুয্হাতুল মাজালিস শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী, আল ই’তিছামে বিছ্ছলাত আলান নবী কিতাবে উল্লেখ আছে,

  ان رجلا صاد ظبية فقاغلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارسالى حتى ارضع اولادى اعود اليه وان لم اعد اليه اكن كمن صلى ولم يدع واشر ممن ذكرت عنده ولم يصلى عليك.

অর্থঃ- “এক ব্যক্তি একটি হরিনী শিকার করে, (নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত হলে) হরিনী বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই শিকারীকে বলুন, আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য, যেন আমি আমার বাচ্চাদেরকে দুধ পান করিয়ে ফিরে আসতে পারি। যদি আমি ফিরে না আসি, তবে আমি ঐ (হতভাগ্য) ব্যক্তির ন্যায় হবো, যে ব্যক্তি নামায পড়লো অথচ মুনাজাত করলো না। অথবা সেই নরাধমের ন্যায় হবো, যার সম্মুখে আপনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয় অথচ সে আপনার প্রতি ছলাত (দুরূদ শরীফ) পড়েনা।”  গুনিয়াতুত্ তালিবীন লি শায়খ আব্দুল কাদির জ্বিলানী, নুয্হাতুল মাজালিস কিতাবে উল্লেখ আছে,

وذا انصرف العبد من الصلوة ولم يحضر الدعاء تقول الملئكة انظروا الى هذا العبد استغنى عن الله.

 অর্থঃ- “কোন বান্দা যখন নামায শেষ করে মুনাজাতে উপস্থিত না থেকে চলে যায়, তখন ফেরেশ্তাগণ তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর, সে আল্লাহ পাক-এর রহ্মত বা নিয়ামত থেকে অমুখাপেক্ষী (বেপরোয়া) হয়ে গেল।”  অনুরূপভাবে আরো অসংখ্য ফুক্বাহায়ে কিরাম তাদের স্ব স্ব কিতাবে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে জায়িয ও সুন্নত বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা জায়িয বা সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে অনুসরনীয় সকল ফুক্বাহায়ে কিরামই একমত। যেমন- তাহ্যীবুল আয্কার র্লিরমলী, তুহ্ফাতুল মারগুবা কিতাবে উল্লেখ আছে,

قد اجمع العلماء على استحب ب الذكر والدعاء بعد الصلوت وجاءت فيه احاديث كثيرة.

অর্থঃ “আলিম বা ফক্বীহগণ একমত যে, নামাযের পর যিকির ও মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।”  তাছাড়া হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের যারা মুরুব্বী যেমন থানবী ও শফীসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দই ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত করাকে জায়িয ও সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছে। যেমন- “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ”-এর ৪র্থ খ-, ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ “ইমাম ছাহেব যখন নামায শেষ করবেন, তখন মুক্তাদীগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবেন।”  আল ইক্মাল লি আব্দিল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহ্লভী, ইস্তিহবাবুদ্ দাওয়াত, ইমদাদুল ফতওয়া নামক কিতাবে উল্লেখ আছে,

وان منها الدعاء اثر الصلوة وانكر الامام ابن عرفة وجود الخلاف فى ذالكى وقال لا اعرف فيه كراهة دعاء الامام عقب الصلوة وتأمين الحاضرين على دعائه.

অর্থঃ- “এবং নিশ্চয় নামাযের পরক্ষণ মুনাজাত কবূলের উত্তম সময়। ইমাম ইবনে আরফা এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে মনে করেন না। তিনি আরো বলেন, নামাযের পর ইমাম ছাহেবের মুনাজাত ও এর উপর উপস্থিতগণের আমীন বলার মধ্যে কোন মাকরূহ্ আছে বলে আমি মনে করিনা।”  “আশ্রাফী বেহেশ্তী জিওর” কিতাবের ১১ খ-,  ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ “নামায শেষ করার পর উভয় হাত সীনা পর্যন্ত উঠাবে এবং আল্লাহ পাক-এর নিকট নিজের জন্য মুনাজাত করবে। আর ইমাম হলে সকলের জন্য মুনাজাত করবে, মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখ মাসেহ্ করবে। মুক্তাদীগণ নিজ নিজ দোয়া চাইবে অথবা ইমাম ছাহেবের মুনাজাত শোনা গেলে তার সাথে সকলে ‘আমীন, আমীন’ বলবে।” “ফতওয়ায়ে রহীমিয়া” ৪ খ-, ২২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

 অর্থঃ “ফরয নামাযের পর ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার মধ্যে বহু ফযীলত রয়েছে। আর এটার সুন্নতি পদ্ধতি হলো ইমাম ও মুক্তাদী অল্প আওয়াজে মুনাজাত করবে।”  “ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম”-এর ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ “শরীয়তের নির্দেশ হলো, যে সকল ইবাদত সম্মিলিতভাবে করা হয়, এরপর মুনাজাতও সম্মিলিতভাবে করবে।”  “কিফায়াতুল মুফতী”-এর ৩য় খ- ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ “সুন্নত এবং নফল নামাযের পরও একাকী বা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা প্রত্যেকের জন্য জায়িয। তবে শর্ত হলো- জরুরী বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা মনে করা যাবেনা। আর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার উত্তম পদ্ধতি হলো- ফরয নামাযের পর সুন্নত ও নফল নামাযের পূর্বে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা।” (অনুরূপ নাফায়িসুল মারগুবা কিতাবে উল্লেখ আছে) অতএব হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের বক্তব্য দ্বারা কি এটাই সাব্যস্ত হয় না  যে, দেওবন্দীরা একটি বিদয়াত ও নাজায়িয আমলকে সুন্নত ও জায়িয বলে কুফরী করেছে। তারা এটা মেনে নেবে কি?  মুল কথা হলো হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা যে লিখেছে- “সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয।”  (নাউযুবিল্লাহ) তা সম্পুর্ণই মিথ্যা, মনগড়া ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো। শুধু তাই নয় অনুসরনীয় ফুক্বাহায়ে কিরামগণের প্রতি মিথ্যা তোহমত দেয়ার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব  গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”  (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০) এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।   জাওয়াবঃ  “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে  তা উত্তম বলা হয়েছে।  অর্থাৎ আযানের পর  পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করার জন্য  الصلاة الصلاة   (আছ্ ছলাত! আছ্ ছলাত!)    নামায! নামায! অথবা  قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা  التننحنح  (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক)   যেমন, এ প্রসঙ্গে “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

   উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ- “তাছবীবেরঞ্জশরয়ী অর্থ হলো (আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর) পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। দ্বদ্বদ্বদ্বআর এই তাছবীব মানুষের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। (যেমন, التنحنح  (আত্তানাহ্নুহ্)  গলা খাকড়ানো অথবা  الصلاة الصلاة   (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!)    নামায! নামায! অথবা  قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হবে।  কেননা মানুষদেরকে  নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়ার জন্যই  তাছবীব করা  হয়।  আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।”)  “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ১১২-১১৩ পৃষ্টায় আরো উল্লেখ আছে,

 وقال أبو يوسف رحمه الله تعالى لا أرى باسا أن يقول المؤذن الامير فى الصلوات كلها السلام عليكى أيها الامير ورحمة الله وبركاته حى على الصلاة حى على الفلاح الصلاة ير حمكى الله واستبعده محمد رحمه الله تعالى لان الناس سواسية فى امرالجماعة.

অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি  আলাইহিঞ্জবলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর  সকল  নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে

السلام عليك أيها الامير حى على الصلاة وحى على الفلاح.

(আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্ ) الصلاة (আছ্ ছলাত يرحمكى الله (ইয়ারহামুকাল্লাহু) বলে তাছবীব করে, তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না। তবে ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর  উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমারা, মুফতী, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।”) অনুরুপ “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৬ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে। “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ- “আর এই তাছবীব (নতুন প্রচলন যা) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পর মানুষের অবস্থা পরিবর্তন  এবং তাদের মধ্যে ইবাদতে গাফলতী ও অলসতা  প্রকাশ পাওয়ার কারণেই কুফার উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এই তাছবীবের প্রচলন করেন। অর্থাৎ প্রথম যামানায় ঘুমের গাফলতী থেকে সতর্ক করার জন্য তাছবীব করা হতো। আর এই যামানায় মানুষের মধ্যে জাগ্রত অবস্থাতেই গাফলতী ও সুস্তী-কাহেলী পয়দা হয়েছে।” (অতএব বর্তমান যামানায় তাছবীবের গুরুত্ব আরো বেশী।”) “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০ পৃষ্টায়  উল্লেখ আছে,

العلماء المتأخرون استحسنوا التثويب فى الصلوات كلها لظهور التوانى فى الامور الدينية.

অর্থঃ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী  প্রকাশের কারণেই সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান বলেছেন ।”  অনুরুপ “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৫-৩৬৬ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে। “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ১১২-১১৩ পৃষ্ঠায়  আরো উল্লেখ আছে,

 أبويوسف رحمه الله تعالى خصهم بذ لكى لزيادة اشتغالهم بامور المسلمين كيلا تفوتهم الجماعة وعلى هذا القاضى والمفتى.

অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি  তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে নিয়োজিত  ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব  ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে  খাছ করেছেন, তার কারণ হলো মুসলমানদের  ইছলাহী কাজে তাঁদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাঁদের জামায়াত যেন  ফউত হয়ে না যায়।”  (কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে  মুল ফতওয়া হলো  তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।”) “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

 অর্থঃ “মুতাক্বাদ্দিমীন ও মুতাআখ্খিরীন  ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  তাছবীব করাকে মুস্তাহ্সান বলেছেন। আর মুসলমানগণ যেটাকে উত্তম বলেছেন সেটা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটও উত্তম। আর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুমিনগণ যেটাকে উত্তম মনে করেন সেটা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটও উত্তম।” “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০ পৃষ্টায় আরো উল্লেখ আছে,

وفى شرح مختصر الكرخى للقدورى: ويثوب و هو قائم كالاذان فى قول أبى حنيفة رحمة الله عليه وابى يوسف رحمة الله عليه قال الحسن وفيه قول يسكت بعد الاذان ساعة حتى يقول حى على الصلوة حى على الفلاح وبه فاخذ

অর্থঃ “শরহে মুখতাছার র্কাখী লিল্-কুদূরী” কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম আবূ হানীফা  রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর এক ক্বওল মতে তাছবীবও আযানের মত দাঁড়িয়ে দিবে। অর্থাৎ আযান যেভাবে দাঁড়িয়ে দেয় তাছবীবও সেভাবে দাঁড়িয়ে দিতে হবে।  তবে হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তাছবীব করার ব্যাপারে একটা মত আছে, তা হলো আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে, অতঃপর

حى على الصلوة وحى على الفلاح.

(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। আর وبه فاخذএই মতটি আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে অতঃপর

حى على الصلوة وحى على الفلاح.

 (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। এরই উপর   ফতওয়া।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে,  হাদীছ শরীফ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহে যেহেতু নির্দ্দিষ্ট শব্দ যেমন   الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায!  অথবা قامت قامت(ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন,  অথবা تنحنحœ  (তানাহ্নুহ্) করে অর্থাৎ গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে  ইত্যাদি শব্দ গুলো আছে, সেহেতু  আযানের পর পুনরায় এ শব্দগুলো দিয়ে সকল নামাযেই  সকল মানুষকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করাই শরীয়তের নির্দেশ, উত্তম, মুস্তাহ্সান, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের  উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও ডাহামিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, তার উল্লিখিত দলীল “ফতওয়া দেওবন্দের” তাছবীব সম্পর্কিত বক্তব্যও ভুল ও অশুদ্ধ।  (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …। এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? জাওয়াবঃ  আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারন আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই  আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে।  সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।   হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহ্ী বৈ কিছূই নয়।   রেযাখানী  মৌলভী ছাহেবরা  “আযানের  মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।  অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে।     নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে –

  (ধারাবাহিক) রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমুহের খণ্ডন মূলক আলোচনা

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে উল্লেখ করেছে,  একটি মাসিক পত্রিকায় “র্দুরুল মুখতার ফী শারহি তানবীরুল আবছার কিতাবের   বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” এর জবাবে বলতে হয় যে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার এ বক্তব্যই  সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও দলীল ভিত্তিক। কারণ যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” এ বক্তব্য শুধুমাত্র “র্দুরুল মুখতার” কিতাবেরই নয়। বরং উক্ত বক্তব্য বিশ্বখ্যাত, সর্বজনমান্য অনেক বড় বড় ফিক্বাহের কিতাবেই উল্লেখ আছে। তাছাড়া হাদীছ শরীফে কাউকে পাক-নাপাক সম্পর্কে নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং আমভাবে বলা হয়েছে, যে আযান শুনবে সেই আযানের জবাব দিবে। চাই সে নাপাক অবস্থায় থাকুক অথবা পবিত্র অবস্থায় থাকুক।  যেমন হাদীছ শরীফের ছহীহ্ কিতাব “ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اذن المؤذن فقولوا مثل قوله.

অর্থঃ “হযরত আবূ হুরাইরাঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুয়াজ্জিন যখন আযান দেয়, তখন তোমরা মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বল।” “মিশকাত শরীফের” ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وعن عبد الله ابن عمروبن العاصرضى الله تعالى عنهم قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل مايقول.

  অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর বিন আস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম হতে বর্ণিত আছে। তিনি বর্ণনা করেন যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তখন তোমরাও অনুরূপ বল যা মুয়াজ্জিন বলে।”  (অনুরূপ “নাসাঈ শরীফের” ১ম খ-ের ১১০ পৃষ্ঠায়,  মুয়াত্তা ইবনে মালিক-এর ২৩ পৃষ্ঠায়, মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুসনাদুল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, শরহু মা’য়ানীল আছার” কিতাবেও উল্লেখ আছে।) ”  উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৫৩  পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

واجابة المؤذن واجبة ويكره الكلم عند الاذان.

অর্থঃ- “মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ তাহ্রীমী।”  আরো উল্লেখ্য যে, ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই বলেছেন আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব এবং তিনিও এতে কোন পাক-নাপাকের শর্ত শারায়েত উল্লেখ করেননি।  যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খ-ের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ينبغى لمن سمع الاذان ان يقول كما يقول المؤذن حتى يفرغ من اذانه وهو مذهب اهل الظاهر ايضا وقال الثورى وابو حنيفة وابويوسف ومحمد واحمد فى الاصح.

 অর্থঃ “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ  মৌখিক  জাওয়াব দেয়া উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি  মুয়াজ্জিন যতক্ষন পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত আযান শ্রোতা  মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ  মৌখিক  জাওয়াব দিবে এটা আযান শ্রোতার উপর  ওয়াজিব।  আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আবূ ইউসূফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, সুফিয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ  রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর   الاصح  বা অধিক ছহীহ্ মতে আযান শ্রতাদের জন্য  মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ  মৌখিক  জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব।” “ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه قال الحنفية.

 অর্থঃ- “হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব।  এটা ইমাম ত¦হাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহন করে  আমাদের হানাফীগণ  বলেন,  মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব। ” আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া যেহেতু ওয়াজিব, সেহেতু এই ওয়াজিব তরক কারিরাই  নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খ-ের ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال من الجفاء ان تسمع المؤذن ثم لا تقول مثل ما يقول انته ولا يكون من الجفاء الاتركى الواجب وتركى المستحب ليس من الجفاء.

অর্থঃ“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত যে মুয়াজ্জিনের আযান শুনে অথচ মুয়াজ্জিন যা বলে অনুরূপ বলে না। আর (আযানোর মৌখিক জাওয়াব দেয়া যেহেতু ওয়াজিব, সেহেতু) এই ওয়াজিব তরককারীরাই নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে। মুস্তাহাব তরককারী নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত নয়। অতএব, আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব নয়। বরং আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর এই ওয়াজিব তরককারীরাই নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত।” (মুছান্নিফে ইবনে আবি শাইবা)  উপরোক্ত হাদীছ শরীফের বর্ণনা অনুসারে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, আযানের মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব এবং উক্ত হাদীছ শরীফের  কোথায় পাক-নাপাকের কোন শর্ত শারায়েত উল্লেখ করা হয় নি। সুতরাং  যে আযান শুনবে সেই আযানের জবাব দিবে। চাই সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকুক অথবা জুনুব বিহীন বা পবিত্র অবস্থায় থাকুক।  আর বিশ্বখ্যাত, “দুররুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার” সহ অন্যান্য  ফিক্বাহের কিতাব গুলোতে সে কথাই উল্লেখ  করা হয়েছে যে, যারা  পবিত্র অবস্থায় থাকবে তারা তো আযানের মৌখিক জবাব দিবেই, এমনকি যারা জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকবে তারাও আযানের মৌখিক জবাব দিবে। আর সেটাই “দুররুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার, খোলাছাতুল ফতওয়া, গায়াতুল আওতার, বাহ্রুর রায়িক” সহ অন্যান্য  ফিক্বাহের কিতাব গুলোতে উল্লেখ আছে,  “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের  জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে  জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”  অতএব, প্রমাণিত হলো,   যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার এ বক্তব্যই  সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও দলীল ভিত্তিক। কারণ উক্ত বক্তব্য শুধুমাত্র “র্দুরুল মুখতার” কিতাবেরই নয়। বরং উক্ত বক্তব্য খোলাছাতুল ফতওয়া, গায়াতুল আওতার, বাহ্রুর রায়িক সহ বিশ্বখ্যাত, সর্বজনমান্য অনেক বড় বড় ফিক্বাহের কিতাবেই উল্লেখ আছে। (প্রয়োজনে বিস্তারিত ফতওয়া পেশ করা হবে ইন্শাআল্লাহ্)  অপর পক্ষে রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা  “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে ্এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।   (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।  তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-  ৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়।  (নাউযুবিল্লাহ)া  জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলভীরা  যে বলেছে,  একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। তাদের উক্ত বক্তব্যের  জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য অজ্ঞতাসূচক, জিহালতপুর্ণ ও দলীলবিহীন। শুধু তাই নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কারন তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইন্শাআল্লাহ। মুলতঃ হাটহাজারী মৌলভীরা ও তাদের সমজাতীয়রা আখিরী নবী,  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ ধরনের কাট্টা কুফরী মুলক মন্তব্য করেছে। কারণ যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা খাদিম ও উম্মত তারাই একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থাকতে পারেন। এর বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, মালাকুল মউত হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম একই সময়ে একাধিক স্থানে একাধিক লোকের রূহ্ কবয করে থাকেন।  অনুরূপভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর   যাঁরা উম্মত  তারাও যে একই সময়ে একাধিক স্থানে  উপস্থিত থাকতে পারেন এরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চক্ষু মুবারক বন্ধ করে আরশ, কুরছি, লৌহ, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, জান্নাত, জাহান্নাম সব কিছুই  এক চোখের পলকে উপস্থিত হয়ে দেখেছেন।   সুবহানাল্লাহ্। (নুযহাতুল মাজালিস)    অনুরূপভাবে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ হাদীছ বিশারদ  বিশ্ব বরেণ্য মুহাদ্দিছ, ওলীয়ে কামিল, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আরবী ভাষায় রচিত “যুবদাতুল আছার” এবং ফার্সী ভাষায় রচিত “যুবদাতুল আছার” কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে,  একবার রমজান মাসে  “মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একই দিনে একই সময়ে ৭০ জনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ইফতার করেছেন এবং নিজ বাড়িতেও ইফতার করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)  সুতরাং  আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা খাদিম ও উম্মতের অন্তর্ভূক্ত তাদের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে যিনি আখিরী নবী,  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমতা কতটুকু হবে? যা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়, অনুভূতির বিষয়। আক্বল -সমঝের বিষয়।  তাছাড়া  হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়েলের বর্ণনা প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি “তরবিহুল জানান তাশরীহি হুকমি শরবিদ্ দুখান” নামক রিসালায় লিখেছেন, “জনৈক ব্যক্তি নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “যখন তুমি মীলাদ শরীফ পাঠ কর তখন আমি মাহ্ফিলে উপস্থিত হই। কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয় তখন আমি কালবিলম্ব না করে মাহ্ফিল থেকে ফিরে যাই।”         সুপ্রসিদ্ধ “মাজমাউল বরকাত” গ্রন্থে শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,

وى عليه السلام بر احوال واعمال امت مطلع است بر مقربان وخاصان دركاه خود مفيض وحاضر وناظر است.

অর্থঃ “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ উম্মতের যাবতীয় অবস্থা ও আমল সম্পর্কে অবগত এবং তাঁর মহান দরবারে উপস্থিত সকলকেই ফয়েজ প্রদানকারী এবং ‘হাযির ও নাযির।”  “সুলূকু আকরাবুছ্ ছুবুল বিত্ তাওয়াজ্জ্ুেহ ইলা সাইয়্যিদির রুসূল” গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

 অর্থঃ “উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর  উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্বেও এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃত জীবনেই (কোন রূপ রূপক ও ব্যবহারিক অর্থে যে জীবন তা নয়) স্থায়ীভাবে বিরাজমান ও বহাল তবীয়তে আছেন। তিনি উম্মতের বিশিষ্ট কর্মকান্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ও সেগুলোর প্রত্যক্ষদর্শীরূপে বিদ্যমান তথা ‘হাযির-নাযির।’ তিনি হাক্বীক্বত অন্বেষণকারী ও মহান দরবারে নবুওওয়াতের শরাণাপন্নদের ফয়েজদাতা ও মুরুব্বীরূপে বিদ্যমান আছেন।” হযরত ইমাম ইবনুল হাজ্জ রহমতুল্লাহি আলাইহি “মাদখাল” গ্রন্থে ও হযরত ইমাম কুসতুলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মাওয়াহেব” গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছদে “জিয়ারতু কবরিহিশ্ শরীফ” শীর্ষক বর্ণনায় লিখেছেন,

ৎوقد قال علمائنا لا فرق بين موته وحيوته عليه السلام فى مشاهدته لامته ومعرفته باحوالهم ونياتهم وعزائمهم وخواطرهم وذلكى جلى عنده لاخفاء به.

 অর্থঃ “আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হায়াত ও ওফাত মুবারকের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা জানেন। এগুলো তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট, কোনরূপ অস্পষ্টতা বা পুশিদা থাকেনা।”          হযরত আবূ সাঈদ খাররাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

فلا يغيب عنه شيئ ولا يخفى عليه شيئ.

  অর্থঃ “তাঁর নিকট কোন কিছু অদৃশ্য ও লুকায়িত থাকেনা।” (তাবাকাত)   হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,

  উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ “খোদায়ী নূরে আলোকিত অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ  জাগ্রত অবস্থায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশ্তাগণকে দেখতে পান, তাঁদের সাথে কথাবার্তাও বলেন।”        “তাবাকাত” কিতাবের ২য় খন্ডের, ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

لى اربعون سنة ما حجبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لو حجبت طرفة عين ما اعددت نفسى من جملة المسلمين.

  অর্থঃ- “হযরত আবুল আব্বাস মারাসী রহমতুল্লাহি বলেছেন, আজ চল্লিশ বৎসরব্যাপী আমি রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (দর্শন) হতে বঞ্চিত হইনি। যদি এক নিমিষেও তাঁর দর্শন হতে বঞ্চিত হতাম তাহলে আমি নিজেকে মুসলমান বলে মনে করতাম না।” “ফতওয়ায়ে রশীদিয়া” কিতাবের ১০৩পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

অর্থঃ- “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলে হাযির জানা শর্ত নয় তবে আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির জানা র্শিক নয়। অন্যথায় র্শিক হবে।”           অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির জানা জায়েয রয়েছে।            আল্লামা হযরত ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে শিফা” গ্রন্থে বলেছেন,

 لان روح النبى صلى الله عليه وسلم حاضر فى بيوت اهل الاسلام.

অর্থঃ- “কেননা, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রূহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে হাযির আছেন।”  যদি তাই হয়, তাহলে পৃথিবীতে মুসলমানদের  লক্ষ- লক্ষ, কোটি-কোটি, ঘর-বাড়ী আছে।  পৃথিবীর সেই লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি, ঘর-বাড়ীসমূহে একই সময়ে উপস্থিত থাকলে, একই সময়ে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত থাকা অসম্ভব হয় কি করে?    মুলতঃ দুনিয়াস্থিতঃ অনু-পরমানুর প্রতিও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সার্বক্ষণিক মুবারক দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। আর  মসজিদ, নামায, তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, ছলাত-সালাম, মাহ্ফিলে মীলাদ শরীফ পাঠ, নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠের মাহ্ফিলে বিশেষ করে নেককারদের নামাযে জানাযায়  এক কথায় যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব-শরীরে  বা মেছালী শরীরে হাযির বা উপস্থিত  হতে পারেন এবং ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েও থাকেন। আল্লাহ্ পাক  হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়দেরকে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সর্ম্পকের্ চিন্তা-ফিকির করার, উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।  (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল:  অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই। উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- ….. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াব:      প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খ-মূলক জবাব (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-  (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত কয়েকটি সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী। অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে, ১. দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করা। অথচ ছয় উছূলীদের কথিত আলিমরা নবী-রসূল, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ দ্বীন ইসলামের অনেক বিষয়েই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেনা বরং তার খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে। অর্থাৎ তাদের কথিত আলিমদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এমনকি কুফরীমূলক অনেক আক্বীদাও রয়েছে। যেমন- ১৭. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো যে, সূরা ফাতিহার মধ্যে দোয়াল্লীন-এর স্থলে যোয়াল্লীন পড়াই শুদ্ধ মত এবং এ বিষয়ে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট লোকদের লিখিত কিতাবের বর্ণনাও রয়ে গেছে। যেমন- আঃ সাত্তার ত্রিশালী লিখিত ‘তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত’ নামক কিতাবের ৩৫ পৃষ্ঠায় এরূপ বক্তব্য রয়েছে। ১৮. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আরেকটি মারাত্মক কুফরী আক্বীদা হলো, মাওলানা আব্দুস্ সাত্তার ত্রিশালী লিখিত- তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত নামক কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “থানবী ছাহেব তরীকায়ে মীলাদ কিতাবে উল্লেখ করেছে, মীলাদ অনুষ্ঠান শরীয়তে একবারেই নাজায়েয ও পাপের কাজ।” আবার তাদের মধ্যে কারো কারো আক্বীদা হলো এই যে, “আল্লাহ্ পাক শেরেকের গুণাহ্ মাফ করবেন কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুণাহ্ কখনো মাফ করবেন না।” (নাউযুবিল্লাহ) তাই দেখা যায়, তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মীলাদ শরীফ পাঠ করেনা বা মীলাদ মজ্লিসে বসেনা। এ ধরনের আরো অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক আক্বীদা ছয় উছূলীদের কথিত আলিমরা পোষণ করে থাকে। এরূপ কাট্টা কুফরী আক্বীদা পোষণ করার পরও তারা কি করে হক্বানী আলিম দাবী করতে পারে? এরূপ অসংখ্য কুফরী আক্বীদা পোষন করার পরও যদি তাদের কথিত আলিমরা হক্কানী আলিম’ হয় তবে কাদিয়ানী কাফির হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাব কি তারা দিতে পারবে? কস্মিনকালেও দিতে পারবে না। মূলকথা হলো- যাদের আক্বীদায় কুফরী রয়েছে তারা আলিম হওয়া তো দূরের কথা, তারা মূলতঃ মুসলমানই থাকতে পারবেনা। কাদিয়ানী কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কাজেই হক্কানী আলিম হওয়ার প্রথম যে শর্ত ‘আক্বীদা বিশুদ্ধ থাকা’ তা ছয় উছূলীদের কথিত মৌলবীদের মধ্যে পাওয়া যায় না।  সুতরাং তারা যে দাবী করেছে তারা হক্কানী আলিম তাদের এ দাবী সম্পূর্ণই মিথ্যা, বানোয়াট ও অবান্তর।

 নায়ক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –  (১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে। (২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা। (৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। (৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে। (৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই। আযানে লফ্য বা শব্দগুলো যেরুপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। (৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে। (১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে। (১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন। (১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি। কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে। (৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে। এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। অতএব, হানাফী মাযহাবে “তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়ে” এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।  যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة سوى الوتر.

অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন বিতর নামায ব্যতীত। অর্থাৎ তারাবীহ বিশ রাকায়াত এবং বিতর তিন রাকায়াত মোট তেইশ রাকায়াত। (মুছান্নাফ-ইবনে আবী শায়বা) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن على وعمررضى الله تعالى عنهما وغير هما من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم عشرين ركعة.

অর্থঃ হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত। (তিরমিযী শরীফ)

روى البيهعى باسناد صحيح كانوا يقيمون على عهد عمر عشرين ركعة وعلى عهد عثمان وعلى.

অর্থঃ ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, খুলাফায়ে রাশিদীন হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান যুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সকলেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায আদায় করেছেন।

عن يزيد بن رومان رحمة الله عليه انه قال كان الناس يقومون فى زمان عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه فى رمضان بثلث وعشرين ركعة.

অর্থঃ হযরত ইয়াযীদ ইবনে রূমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই তারাবীহ নামায ও বিতর নামাযসহ ২৩ রাকায়াত পড়তেন। (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক)

عن عبد الرحمن السلمى عن على انه دعا القرانى رمضان فامر منهم رجلا بهم فى رمضان عشرين ركعة.

অর্থঃ হযরত আব্দুর রহমান সালমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কুরআন শরীফের জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে ডেকে একত্রিত করে একজনকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে বললেন, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়াবে। (বায়হাক্বী শরীফ) عن ابى الحسن ان عليا امر رحلا يصلى بهم عشرين ركعة.

অর্থঃ হযরত আবুল হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত আছে, হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একজন ছাহাবীকে ইমাম নিযুক্ত করে তাঁকে নির্দেশ দিলেন, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত পড়াবে। (মুছান্নাফ- ইবনে আবী শায়বা)

عن زيد بن وهب رحمة الله عليه قال كان عبد الله بن مسعود رضى اله تعالى عنه سصلى لنا فى شهر رمضان قال الاعمثى رحمة الله عليه يصلى عشرين ركعة ويوتر بثلت.

অর্থঃ হযরত যায়িদ ইবনে ওহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রমাদ্বান মাসে তারাবীহ নামায পড়াতেন। হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়াতেন এবং তিন রাকায়াত বিতর পড়াতেন। (চলবে)  ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪  সুওয়ালঃ  কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা  জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ) এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি। জাওয়াবঃ   হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।  নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।  মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো- ১৮. যদিও রেলগাড়ী সকল লাইনে চলে, কিন্তু পাওয়া যায় স্টেশনে। অনুরূপভাবে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের রহমত পাওয়ার স্থান হলো দরবারে নববী শরীফ এবং দরবারে আওলিয়ায়ে কিরাম। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

وما ارسلنكى الا رحمة للعلمين.

অর্থঃ “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সারা আলম তথা কুল-মাখলূকাতের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া-১০৭) অর্থাৎ কুল-কায়িনাতের সকলেই রহমতসহ যাবতীয় নিয়ামত লাভ করে যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

انـما انا قاسم وا لله يعطى.

নিশ্চয়ই আমি বণ্টনকারী আর আল্লাহ পাক হলেন দানকারী। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সবকিছুরই দাতা হলেন আল্লাহ পাক। আর তার বণ্টনকারী হলেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা ব্যতিরেকে কেউ কিছু লাভ করতে পারেনি এবং পারবেও না। একইভাবে আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নায়িব বা ওয়ারিছ হিসেবে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ হলেন বান্দা ও উম্মতের জন্য রহমত ও নিয়ামত লাভের ওসীলা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

ان رحمت الله قريب من المحسنين.

 অর্থঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ-৫৬) আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

لايزال فيكم سبعة بهم يمطرون وينصرون ويرزقون حتى ياتى امر الله.

  অর্থঃ “ক্বিয়ামত পর্যন্ত এমন সাতজন আল্লাহ পাক-এর ওলী যমীনে অবস্থান করবেন যাদের ওসীলায় কায়িনাতের সকলেই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, রিযিকপ্রাপ্ত হবে ও বৃষ্টিপ্রাপ্ত হবে।ঞ্জ(আবূ দাউদ শরীফ) অর্থাৎ আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিদায় বা বিছাল শরীফের পর উনার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ওলীগণের ওসীলায় মানুষ রহমত, নিয়ামত, হিদায়েতসহ সবকিছু লাভ করবে। অতএব, প্রত্যেকের উচিত সত্যিকার নায়িবে রসূল বা ওলীআল্লাহ চিনে উনার দরবার শরীফে গিয়ে উনার ছোহবত গ্রহণ করা।

মুহম্মদ ওমর ফারুক, মাধবদী

সুওয়ালঃ    আমারা জানি যে, নবীজি আমাদের মত স্বাভাবিক পদ্ধতিতে আগমন করেননি। কিন্তু এক কিতাবে দেখলাম, ‘নবীজি নাকি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে আগমন করেছেন।’ এটা কতটুকু সঠিক?

জাওয়াবঃ     উল্লেখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই অশুদ্ধ ও দলীলবিহীন।  মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ কেউই সাধারণ মানুষের মত আগমন করেননি। যেহেতু নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ ও বিশেষভাবে মনোনীত বান্দা।   এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,

الله يجتبى اليه من يشاء

 অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তাঁর দিকে বা জন্য মনোনীত করেন যাকে ইচ্ছা তাঁকেই।” (সূরা শুরা-১৩) আর তাই আল্লাহ পাক নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে তাঁদের শান-মান হেতু স্বীয় কুদরতে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেছেন।  মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত বা আগমন সম্পর্কে কিতাবে চারটি মত বর্ণিত হয়েছে।  যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

اعلم ان فى موضع ولادة النبى صلى اله عليه وسلم اربعة اقوال الاول انه ولد من الخاصرة اليسرى والثانى انه ولد من نقبة بين الفرج والسرة والثالث انه ولد من فم امه والرابع انه ولد من المخرج المعتاد.

অর্থঃ- “জেনে রাখুন! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ বা আগমনের পদ্ধতি সম্পর্কে চারটি ক্বওল রয়েছে। (১) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ দিয়ে আগমন করেছেন। (২)  স্বাভাবিক স্থান ও নাভীর মধ্যবর্তী স্থান হতে।  (৩) স্বীয় মাতা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর মুখ থেকে। (৪) স্বাভাবিকভাবে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত সম্পর্কে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অভিমত হলো,

كل مولود غير الانبياء يولد من افرج وكل الانبياء غير نبينا مولوذون من فوق الفرج وتحت السرة واما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع.

অর্থঃ- “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত সমস্ত মানুষই স্বাভাবিকভাবে জন্ম গ্রহণ করে। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ স্বাভাবিক স্থান ও নাভীর মধ্যবর্তী স্থান থেকে আগমন করেছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ থেকে আগমন করেছেন।” (উমদাতুন্ নুকুল ফি কাইফিয়াতে বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সাধারণ মানুষের মতো আগমন করেননি। বরং আল্লাহ পাক তাঁদেরকে খাছ কুদরতীভাবে সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে যে,

ولم يصح نقل ان نبينا من الانبياء ولد من الفرج ولهذا افتى المالكية بقتل من قال ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد من مجرى البول.

অর্থঃ- “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ স্বাভাবিক পথে আগমন করেছেন, একথা সম্পূর্ণরূপেই অশুদ্ধ।  আর এজন্যই মালিকী মায্হাবের ইমামগণ ঐ ব্যক্তিকে ক্বতল করার ফতওয়া দিয়েছেন, যে ব্যক্তি বলবে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাভাবিকভাবে আগমন করেছেন।” (উমদাতুন্ নুকূল ফী কাইফিয়াতি বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  কাজেই, এ বিষয় সকলকেই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাম পাঁজরের নিচ থেকে আগমন করেছেন।  {দলীলসমূহঃ(১) উমদাতুন্ নুকূল ফী কাইফিয়াতে বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (২) তালখীছ, (৩) আত্ তাহ্সীল ওয়াল বায়ান,(৪) জামিউল ফুছুলীন, (৫) হাশিয়াতু আলাশ্ শিফা, (৬) খুলাছা (৭) হাশিয়ায়ে জামিউল ফুছুলীন, (৮) ইক্বদুছ ছামীন, (৯) তাফসীরে ওয়াহিদী।}

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন , মুহম্মদপুর

সুওয়ালঃ    হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাদা-দাদী ও নানা-নানীগণ-এর নাম মুবারক কি ছিল? আর  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা ও চাচা এবং ফুফুরা কয় ভাই-বোন ছিলেন? তাঁদের নাম মুবারক জানতে ইচ্ছুক। জাওয়াবঃ   হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাদার নাম মুবারক ছিল- হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম ও দাদীর নাম মুবারক ছিল- হযরত ফাতিমা বিনতে আমর ইবনে আইছ আলাইহাস্ সালাম। নানার নাম মুবারক ছিল- হযরত ওহাব ইবনে আব্দে মান্নাফ আলাইহিস্ সালাম ও নানীর নাম মুবারক ছিল- হযরত র্বারা বিনতে আবদুল উজ্জা আলাইহিস্ সালাম।  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা এবং চাচারা ১২ ভাই ছিলেন।  ২ জন ছোটবেলাতেই ইন্তেকাল করেছিলেন। আর ফুফুরা ৬ বোন ছিলেন। হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম পর্যায়ক্রমে ৬টি বিবাহ করেছিলেন। তাঁদের ঘরে সর্বমোট ১৮ জন সন্তান হয়। তাঁদের নাম মুবারক নিম্নে দেয়া হলো- (১) হযরত আবদুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম, (২) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৩) হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৪) হারিস, (৫) কাশেম (কুসুম), (৬) আবু তালেব (আব্দে মান্নাফ), (৭) আবু লাহাব (আবদুল উজ্জা), (৮) ধীরার (আবদুল কাবা), (৯) গাইদাক (জাহাস, হজল, মুগিরা, মাসাব, নাওফেল), (১০) মুকাত্তয়িম (মুকাইম), (১১) জুবায়ের ও (১২) আওয়াম।              হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফুফুগণের নাম মুবারক- (১) হযরত সুফিয়া (সাফিয়া) আলাইহাস্ সালাম, (২) উম্মে হাকিম আল বায়জা, (৩) আত্তিকা, (৪) বার্রা, (৫) উমায়মা ও (৬) আরওয়া। (সীরাতুন্নবী, সীরাতে হালবী, আছাহহুস্ সিয়ার, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যাদুল মায়াদ, ইবনে হিশাম ইত্যাদি)

মুহম্মদ মিজানুর রহমান, চাঁদপুর

সুওয়ালঃ     কোন্ তরীক্বায় চুল রাখা সুন্নত? মাথা মুন্ডিয়ে রাখলে বা নেড়ে করে রাখলে সুন্নত আদায় হবে কি? জাওয়াবঃ      নিম্নলিখিত তরীক্বা অনুযায়ী চুল রাখা হচ্ছে খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। (১) জুম্মা অর্থাৎ কানের লতি বরাবর। (২) লিম্মা অর্থাৎ কাঁধ ও কানের লতির মাঝামাঝি পর্যন্ত। (৩) ওফ্রা অর্থাৎ কাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত।        মূলতঃ এ তিন তরীক্বায় আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় চুল মুবারক রাখতেন। এছাড়া তিনি মাঝে মধ্যে আরো এক তরীক্বায় চুল মুবারক রেখেছেন, তা হচ্ছে- নিছফু উয্নাইহি অর্থাৎ কানের মাঝামাঝি করে।    স্মর্তব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরে বর্ণিত তরীক্বা ব্যতীত অন্য কোন তরীক্বায় চুল মুবারক রাখেননি। অর্থাৎ তিনি চুল ছোট করেও রাখেননি এবং চুল চেঁছে চাঁছা অবস্থায়ও থাকেননি।     তবে হ্যাঁ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরী, ৭ম হিজরী, ৮ম হিজরী, তিনবার ওমরাহর নিয়তে চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন। আর ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের সাথে ওমরাহ্ করেছেন। তখনো চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন। সর্বমোট এ চারবারই তিনি চুল মুবারক মুন্ডন করেছেন, যা হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال اعتمر رسول الله صلى الله عليه وسلم اربع عمر كلهن فى ذى القعدة الا التى كانت مع عمر كلهن فى ذى القعدة الا التى كانت مع حجته عمرة من الحديبية فى ذى القعدة وعمرة من العام المقبل فى ذى القعدة وعمرة من الجعرانة حيث قسم غنائم حنين فى ذى القعدة وعمرة مع حجته.

অর্থঃ “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারবার ওমরাহ্ করেছেন। প্রত্যেকটিই করেছেন যিলক্বদ মাসে। তবে হজ্জের সাথে যেটা আদায় করেছেন সেটা ব্যতীত। (কেননা তা ছিল যিলহজ্জ মাসে) একটি ওমরাহ্ করেছেন হুদায়বিয়া হতে যিলক্বদ মাসে ৬ষ্ঠ হিজরীতে। একটি তার পরবর্তী বছর (৭ম হিজরীর) যিলক্বদ মাসে, যাকে ওমরাতুল ক্বাযাও বলা হয়। একটি ওমরাহ্ করেছেন, জি’রানা থেকে যেখানে তিনি হুনাইনের গণীমত বন্টন করেছেন, (৮ম হিজরীর) যিলক্বদ মাসে। আর একটি ছিল তাঁর হজ্জের সাথে। অর্থাৎ ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জে।”             এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকে বলে থাকে এবং কিতাবে লিখে থাকে যে, মাথা মুন্ডিয়ে রাখা সুন্নত। কিন্তু এটি সম্পূর্ণই ভুল কথা। কেবল হজ্জ ও ওমরাহকালীন সময়েই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম চুল মুন্ডিয়ে রেখেছেন। কারণ সে সময়ে চুল মুন্ডিয়ে রাখাই সুন্নত। অথচ অন্য সময়ে তা আদৌ সুন্নত নয়। কাজেই, কেউ যদি হজ্জ ও ওমরাহ্ করতে যায় তখন তার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর অনুকরণে চুল মুন্ডানো সুন্নত হবে। কিন্তু এমনিতে অন্য সময়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তরীক্বায় চুল রাখতেন- জুম্মা, লিম্মা ও ওফরা, সে তরীক্বায় রাখাই সুন্নত হবে। এর বিপরীত আমল করা বিদ্য়াত হবে এবং সে বিদ্য়াতী আমলকে সুন্নত বলে প্রচার করা জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে আমার নামে মিথ্যা কথা বলে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বুখারী শরীফ)     আরো উল্লেখ্য যে, মাথা চেঁছে ফেলা ও মুন্ডিয়ে ফেলা সুন্নত তো নয়ই বরং তা হচ্ছে খারিজীদের লক্ষণ। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, মাথা ঘন ঘন চাঁছা ও ঘাড় মোটা করা হচ্ছে- খারিজীদের লক্ষণ। যা পরহেয করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, মিশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, সীরাতুন্নবী, সীরাতে হালবী, আছাহ্হুস্ সিয়ার, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যা’দুল মায়াদ ইত্যাদি)

 মুহম্মদ হাফিজুর রহমান খান, মালিবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  অনেকে বলে থাকে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যেহেতু ছেলে সন্তান কেউ হায়াতে ছিলেন না, তাই তাঁর কোন বংশও পৃথিবীতে নেই।” এটা কতটুকু সত্য? জাওয়াব: “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যেহেতু ছেলে সন্তান কেউ হায়াতে ছিলেননা, তাই তাঁর কোন বংশও পৃথিবীতে নেই”- একথা শুদ্ধ নয়। এটা কাফিরদের বক্তব্য যা কাট্টা কুফরী। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার বংশ জারী থাকবে আমার কলিজার টুকরা হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর মাধ্যমে। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশ জারী রয়েছে তাঁর কণিষ্ঠা মেয়ে সাইয়্যিদাতুন্ নিসা হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর দু’ ছেলে হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাধ্যমে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 ان فاطمة رضى الله تعالى عنها سيدة النساء اهل الجنة وان الحسن والحسين رضى الله تعالى عنهما سيدا شباب اهل الجنة.

অর্থঃ “হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হলেন জান্নাতবাসী মেয়েদের সাইয়্যিদ। হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হলেন জান্নাতবাসী যুবকদের সাইয়্যিদ।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালিকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব) অন্য রেওয়ায়েতে “বুখারী ও মুসলিম” শরীফেও বর্ণিত রয়েছে। তাঁদের বংশ পরস্পরায় যে সকল সন্তান যমীনে আগমন করেন তাঁরাই সাইয়্যিদ এবং তাঁরাই আওলাদে রসূলের অন্তর্ভুক্ত।  উল্লেখ্য, আওলাদে রসূল বা সাইয়্যিদ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আওলাদ বা সন্তান হওয়া। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর আওলাদ বা সন্তান হওয়া। তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর যে কোন একজনের আওলাদ বা সন্তান তথা বংশধর হওয়া।  উল্লেখ্য, মানুষের বংশ জারী হয় পিতার মাধ্যমে। কিন্তু আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশ জারী থাকার মাধ্যম হচ্ছেন তাঁর একমাত্র মেয়ে সাইয়্যিদাতুন্ নিসা আহ্লিল জান্নাহ্ হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং তাঁর দু’ ছেলে সাইয়্যিদা শাবাবি আহ্লিল জান্নাহ্ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তাঁদের বংশধরগণই আওলাদে রসূল এবং তাঁরাই সাইয়্যিদ। আর এটা হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য খুছূছিয়তের মধ্যে একটা খুছূছিয়ত। অর্থাৎ তাঁর বংশ মুবারক জারি থাকার মাধ্যম হচ্ছেন তাঁর একমাত্র মেয়ে সাইয়্যিদাতুন্ নিসা আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহা। আর হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর অন্যান্য সন্তানের দ্বারা যে বংশ জারী রয়েছে তাঁরা ফাতিমী নামে পরিচিত। আর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অন্যান্য আহলিয়াগণের সন্তানদের মাধ্যমে যে বংশ জারী রয়েছে তাঁরা আলূবী নামে পরিচিত। {দলীলসমূহঃ (১) রুহুল মায়ানী, (২) রুহুল বয়ান, (৩) খাযিন. (৪) বাগবী, (৫) কুরতুবী, (৬) বুখারী, (৭) মুসলিম, (৮) তিরমিযী, (৯) মিশকাত, (১০) ফতহুল বারী, (১১) উমদাতুল ক্বারী, (১২) ইরশাদুস্ সারী, (১৩)  উরফুশ্ শাজী, (১৪) তুহফাতুল আহওয়াযী, (১৫) মিরকাত, (১৬) আশয়াতুল লুময়াত, (১৭) লুময়াত, (১৮) মুযাহিরে হক্ব, (১৯) শরহুত্ ত্বীবী, (২০) তালিক্বুছ্ ছবীহ্ (২১) সিররুশ্ শাহাদাতাইন ইত্যাদি}

 মুহম্মদ আবুল হায়াত, কক্সবাজার সুওয়ালঃ  অনেকে বলে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাকি ‘ছায়া’ মুবারক ছিলোনা।” কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, সমস্ত মানুষেরই তো ছায়া রয়েছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর থাকবে না কেন? জাওয়াবঃ   আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু নূরে মুজাস্সাম এবং তিনি আমাদের কারো মত নন।  যেমন মুসলিম শরীফের ছহীহ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لست كاحدكم. অর্থাৎ- আমি তোমাদের কারো মতই নই।” এ কারণেই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছায়া মুবারক ছিলোনা। অতএব, কোন বিষয়েই সাধারণ মানুষের সাথে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তুলনা করা বা ক্বিয়াস করা যাবেনা। এটা সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকের কোন ছায়া ছিলনা। কারণ, তিনি নূরে মুজাস্সাম অর্থাৎ নূরের তৈরী। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এটাই সঠিক ও দলীলভিত্তিক ফতওয়া। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ আল্লামা হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “নাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে হাদীছ বর্ণনা করেন,

 اخرج الحكيم الترمذى عن ذكوان فى نوادر الاصول ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر.

অর্থঃ- হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি “নাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে হযরত জাকওয়ান থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “ছায়া মোবারক” দেখা যেতনা।” ইমামুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা জালালুদ্দীন  সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর “খাছায়িছুল কুবরা” নামক কিতাবে উক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে এ মতের সমর্থন করেন। বাহরুল উলুম, শাইখুল মাশায়িখ, হযরত আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “শিফাউছ্ ছুদুর” কিতাবে লিখেছেন,

ان ظله كان لا يقع على الارض لانه كان نورا فكان اذا مشى فى الشمس اوالقمر لاينظرله ظل.

 অর্থঃ “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর ছায়া মুবারক যমিনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর। অতঃপর যখন তিনি সূর্য অথবা চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন তাঁর ছায়া মোবারক দৃষ্টিগোচর হতো না।” আওলাদে রসূল, হাফিজুল হাদীছ, বিখ্যাত ব্যখ্যাকার, হযরত আল্লামা সাইয়্যিদ যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “শরহে মাওয়াহিবুল লাদুন্নীয়া শরীফে” বর্ণনা করেছেন,

لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل فى شمسى ولا قمر لانه كان نورا.

অর্থঃ “চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছায়া মুবারক থাকতো না। কেননা তিনি নূর ছিলেন।” (আর নূরের কোন ছায়া নেই) ইমুামুল আল্লাম, জালালু মিল্লাত ওয়াদ্ দ্বীন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “আলমু’যাজুল লবীব ফী খাছায়িছিল হাবীব” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বিতীয় বাবের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেন,

لم يقع ظله على الارض ولايرى له ظل فى شمس ولا قمر قال ابن سبع لانه كان نورا قال رزين لغلبق انواره.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছায়া মোবারক মাটিতে পড়েনি। চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও তাঁর ছায়া মোবারক দেখা যেতো না। হযরত আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যেহেতু সম্পূর্ণ নূর ছিলেন সেহেতু তাঁর ছায়া মুবারক ছিল না। হযরত ইমাম রাজীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অবশ্যই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূর সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যেতো।” ইমামুল জলীল, মুহাদ্দিছুশ শাহীর, ফক্বীহুল আছার, ইমাম আল্লামা কাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “শিফা শরীফ” কিতাবে লিখেন,

وما ذكر من انه لاظل تشخصه فى شمس ولا قمر لانه كان نورا.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূরের দেহ মুবারকের ছায়া মুবারক সূর্য ও চাঁদের আলোতেও পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর।” বিখ্যাত বুযুর্গ, ওলীয়ে কামিল, হযরত ইমাম ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আফজালুল কোরায়” উল্লেখ করেন,

انه صلى الله تعالى عليه وسلم صار نورا انه كان اذا مشى فى الشمس والقمر لايظهر له ظل.

অর্থঃ “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূর ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন তাঁর ছায়া মোবারক প্রকাশ পেতো না।”  বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি “নাসীমুর রিয়াজ” নামক কিতাবে লিখেন,

  من ذلائل نبوته صلى الله عليه وسلم ماذكر من انه لا ظل لشخصه اى جسده الشريف اللطيف اذا كان فى شمس او قمر لانه صلى الله عليه وسلم نورا. …….. وقد رواه صاحب الوفاء عن ابن عباس قال لم يكن لرسول الله صلى الله عليه وسلم ظل ولم يقم مع شمس الا غلب ضوئه ضوئها ولامع السراج الاغلب ضوئه ضوئه.

 অর্থঃ “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “নবুওওয়াতের” প্রমাণের মধ্যে এটাও একটি প্রমাণ যে, তাঁর শরীর মোবারকের “ছায়া” ছিল না। যখন তিনি সূর্য ও চন্দ্রের আলোতে হাঁটতেন তখনও তাঁর “ছায়া মোবারক” পড়তোনা। কেননা তিনি (আপাদ মস্তক) “নূর”। …..কিতাবুল ওয়াফা-এর লিখক, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “ছায়া মোবারক” ছিলনা। তাঁর নূরের উজ্জলতা সূর্য ও বাতির আলোর উপর প্রাধান্য লাভ করতো…।” কাইয়্যুমে আউয়াল, আফজালুল আওলিয়া, শায়খ আহমদ ফারূকী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর জগৎখ্যত কিতাব “মাকতুবাত শরীফ”-এর ৩য় জিঃ ১৫৫ পৃষ্ঠায়  আরো লিখেন,

উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………..

অর্থঃ “মহান আল্লাহ্ পাক-এর কি করে “ছায়া” পড়তে পারে? “ছায়া” তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তবে কি তাঁর কোন মেছাল রয়েছে? তবে কি তিনি কামালে লাতাফাত-এর অধিকারী নন? দেখুন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “কামালে লাতাফাত-এর অধিকারী হওয়ার কারণে তাঁর দেহ মোবারকের “ছায়া” পড়তো না। যদি তাই হয়ে থাকে তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খোদা পাকের কি করে ‘ছায়া’ থাকতে পারে। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবাররকের ‘ছায়া’ যমীনে পড়তো না। যেহেতু তিনি নূরে মুজাস্সাম। অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিসম্ মুবারকের কোন ছায়া ছিলো না। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।

মুছাম্মত জান্নাতুল ফিরদাউস, ঘোড়াশাল, নরসিংদী

সুওয়ালঃ   শুনেছি, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সুন্নত মুতাবিক প্রতিটি কাজ করেন। কিন্তু তিনি যে মহিলা নিয়ে সারাদেশে ছফর করেন বা ইসলাম প্রচার করেন; এটা কতটুকু সুন্নত? আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি এরূপভাবে মহিলা নিয়ে ছফর করতেন? জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে নিয়ে এবং মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে নিয়ে ছফর করতেন। যেমন যুদ্ধ-জিহাদে গিয়েছেন, হজ্জ ও উমরাহ করেছেন ইত্যাদি। যেমন এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফের” ইফকের ঘটনার পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها وبعض حديثهم يصدق بعضا وان كان بعضهم اوعلى له من بعض قالوا قالت عائشة رضى الله تعالى عنها كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اراد سفرا اقرع بين از واجه فايهن خرج سهمها خرج بها رسول الله صلى الله عليه وسلم معه قالت عائشة رضى الله تعالى عنها فاقرع بيننا فى غزوة غزا ها فخرج فيها سهمى فخرجت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد ما انزل الحجاب فكنت احمل فى هودجى وانزل فيه فسرنا حتى اذا فرغ رسول الله صلى الله عليه وسلم من غزوته تلكى وقفل دنونا من المدينة فافلين اذن ليلة بالرحيل.

অর্থঃ “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাঁর আহলিয়াদের মাঝে লটারি করতেন। এতে যাঁর নাম মুবারক আসতো তাঁকেই তিনি সাথে নিয়ে ছফরে বের হতেন। এমনি এক জিহাদে তিনি আমাদের মাঝে লটারি করলেন এতে আমার নাম মুবারক উঠলো। তাই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে আমিই ছফরে গেলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিলো। এ কারণে আমাকে হাওদাজসহ ছাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হতো। এরূপভাবে আমরা চলতে লাগলাম। অবশেষে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ জিহাদ থেকে অবসর হলেন তখন তিনি বাড়ির দিকে ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা মদীনা শরীফের নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন।” উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আহলিয়া বা মহিলাদেরকে নিয়ে ছফর করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। আরো প্রমাণিত হয় যে, আহলিয়া বা মহিলাদেরকে নিয়ে রাতের বেলা ছফর করাই খাছ সুন্নত ও পর্দার ক্ষেত্রে বিশেষ ফায়দাজনক। “বুখারী শরীফের” কিতাবুল হজ্জ বাবু তাওয়াফিন নিসা মার্য়া রিজাল অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,

وقال عمرو بن على حدثنا ابو عاصم قال ابن جريج اخبرنا قال اخبرنى عطاء اذ منع ابن هشام النساء الطواف مع الرجال قال كيف يمنعهن وقد طاف نساء النبى صلى اله عليه وسلم مع الرجال قلت ابعد الحجاب او قبل قال اى لعمرى لقد ادركته بعد الحجاب قلت كيف يخالطن الرجال قال لم يكن يخالطن كانت عائشة رضى الله عنها تطوف حجرة من الرجال لا تخا لطهم فقالت امرأة انطلقى نستلم يا ام المؤمنين قالت عنكى وابت يخرجن متنكرات بالليل فيطفن مع الرجال ولكنهن كن اذا دخلن البيت قمن حتى يدخلن واخرج الرحال وكنت اتى عائشة انا وعبيد بن عمير وهى مجاورة فى جوف ثبير …..

 অর্থঃ- “(হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) হযরত আমর ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ বর্ণনা করেন হযরত আবূ আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছান হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর দেন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি। (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) যখন হযরত ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেন, তখন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আপনি কি করে নিষেধ করছেন? অথচ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়াগণ পুরুষ ছাহাবীগণের সাথে তাওয়াফ করেছেন। আমি (ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে) প্রশ্ন করলাম, তা কি পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরে, না পূর্বে? তিনি বললেন, হাঁ, আমার জীবনের কসম, আমি পর্দার আয়াত নাযিল বা অবতীর্ণ হওয়ার পরের কথাই বলছি। আমি জানতে চাইলাম, পুরুষগণ মহিলাগণের সাথে মিশে কিভাবে তাওয়াফ করতেন? (উত্তরে বললেন) বরং হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পুরুষগণের পাশ কাটিয়ে তাওয়াফ  করতেন? তাদের মাঝে মিশে যেতেন না। একদা জনৈকা মহিলা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বললেন, চলুন, উম্মুল মু’মিনীন! তাওয়াফ করে আসি। তিনি জবাব দিলেন, “তোমার মন চাইলে তুমি যাও” নিজে যেতে অস্বীকার করলেন। তাঁরা রাতের বেলা পর্দা করে বের হয়ে (সম্পূর্ণ না মিশে) পুরুষগণের পাশাপাশি থেকে তাওয়াফ করতেন। উম্মুল মু’মিনীনগণ বাইতুল্লাহ শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাইলে সকল পুরুষ বের করে না দেয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন। হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমি হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছে গেলাম। তিনি তখন ‘ছবীর’ পর্বতে অবস্থান করছিলেন।…” (ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী) উপরোক্ত হাদীছ শরীফের দ্বারা যে বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয়েছে তাহলো, ১. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আহলিয়াগণকে নিয়ে ছফর করেছেন। ২. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছফরে পুরুষ ছাহাবীগণ থাকতেন। ৩.  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের সাথে মহিলা ছাহাবীরাও ছিলেন। তবে উনারা সবক্ষেত্রেই খাছ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতেন। যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। স্মর্তব্য যে, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে মহিলাসহ মদীনা শরীফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ছফর করেছেন একথা তো সকলের মাঝেই মশহুর। তাছাড়া যারা এ প্রশ্ন করছে, তারা কি কখনো মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা অর্থাৎ মহিলা নিয়ে ছফরে বা একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায় না? কাজেই, এ প্রশ্ন করাটাই তো জিহালতী ও বেয়াকুফী। সুতরাং দ্বীনি কাজে হোক কিংবা অন্য কোন জরুরতে হোক পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরকে নিয়ে ছফর করা জায়িয তো অবশ্যই খাছ সুন্নতও বটে। তবে অবশ্যই প্রতি ক্ষেত্রে খাছ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতে হবে। আল্লাহ পাক-এর রহমতে যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী মুক্বীম ও ছফর সর্বাবস্থায়ই খাছ শরয়ী পর্দা পালন করে থাকেন।

 মুহম্মদ আজহার আলী, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম

সুওয়ালঃ  শরীয়তে একজনের রক্ত, পেশাব অন্যজনের জন্য হারাম। একটি কিতাবে দেখলাম, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নাকি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক পান করেছেন।’ এটা কতটুকু সঠিক ও দলীলভিত্তিক? জাওয়াবঃ    হ্যাঁ, এটা অবশ্যই সঠিক এবং দলীলভিত্তিক। বস্তুতঃ একজনের রক্ত বা পেশাব অন্যজনের জন্য হারাম। এ কথার অর্থ হলো, একজন উম্মতের রক্ত আরেকজন উম্মতের জন্য হারাম।  কেননা, তা নাপাক বা অপবিত্র। কিন্তু উম্মতের জন্য তাঁর রসূল রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক হালাল ও পবিত্র। শুধু পবিত্রই নয় বরং পবিত্রকারীও বটে। তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পবিত্রতা লাভের উদ্দেশ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক পান করেছেন বলে ছহীহ হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে। যেমন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-

এর পেশাব মুবারক পান করা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ও সীরতগ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে,

عن حكيمة بنت اميمة بنت دقيقة عن امها انها قالت: كان النبى صلى الله عليه يبول فى قدح عيدان ثم يرفع تحت سريره فبال فيه ثم جاء فاراده فاذا القدح ليس فيه شيئ فقال لامرأة يقال لها بركة،كانت تخدم ام حبيبة جائت بها من ابض الحبتة اين البول الذى كان فى القدح قالت شربته، فقال لقد احتظرت من النار بحظار.

অর্থঃ- “হযরত হাকীমা বিনতে আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা তাঁর মাতা হযরত আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পাত্রে পেশাব মুবারক রাখলেন অতঃপর চকি মুবারকের নিচে রেখে দিলেন। এরপর তার একটা ব্যবস্থা করার ইচ্ছা করলে এসে দেখলেন পাত্রের মধ্যে কিছু নেই। তখন তিনি বারাকা নামের এক মহিলা, যে হাবশা হতে হযরত উম্মু হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর খাদিমা হিসেবে এসেছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, পাত্রের মধ্যে যে পেশাব মুবারক ছিল তা কোথায় গেল? উত্তরে তিনি বললেন, আমি উহা পান করে ফেলেছি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই তুমি তোমার নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ রাখলে।” (দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ্ ২য় জিঃ ৬৫৪, ৬৫৫ পৃষ্ঠা, আত্ ত্ববারানী ফিল্ মু’জামিল কবীর ২৪ জিঃ ১৮৯ পৃষ্ঠা, ২৫ জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা,  আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু হাব্বান হাদীছ নং ১৪১৩, আল্ মুসতাদরিক লিল্ হাকিম ১ম জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা ৫৯৩ নং  হাদীছ ৪র্থ জিঃ ৭১ পৃষ্ঠা ৬৯১২ নং হাদীছ শরীফ, আদ্দারু কুতনী, আবূ ইয়ালা, মুসনাদে আর্ব্দু রাযযাক, আল খাছায়িছুল কুবরা লিস্ সুয়ূতী ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠা) অনুরূপ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মুবারাক পান করা সম্পর্কে রর্ণিত রয়েছে যে, উহুদ যুদ্ধে হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মুবারক পান করায় তিনি বলেছিলেন, তোমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল তথা জাহান্নাম হারাম হয়ে গেল। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

فقال عليه الصلاة والسلام من مسى دمى لم تصبه النار.

 অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্  নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার রক্ত মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছে, তাঁকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবেনা।” (আল্মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়াহ্ বিল মিনাহিল মুহম্মদিয়া লিল্ আল্লামাতিল কুসত্বলানী ২য় জিঃ ৪২৬ পৃষ্ঠা) “শরহুল্ আল্লামাতিয্ যারক্বানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ” নামক কিতাবের ২য় জিঃ ৪২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,

فقال له انشرب الدم فقال نعم يارسول اله صلى الله عليه وسلم (فقال عليه الصلاة والسلام من مس دمى لم تصبه) وفى رواية م تمسه (التار، وسبأتى ان شاء الله تعالى حكم دمه عليه الصلاة اسلام) وهو الطهارة على الراجح.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তুমি কি আমার রক্ত মুবারক পান করে ফেলেছ? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হ্যাঁ, আমি পান করে ফেলেছি। (তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার রক্ত মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছে তাকে স্পর্শ করবেনা) অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা (জাহান্নামের আগুন)। ইনশাআল্লাহু তায়ালা, অচিরেই আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  রক্ত মুবারকের হুকুম আলোচনা করব) আর সে আলোচনা হচ্ছে, প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিশুদ্ধ মতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রক্ত মুবারক পাক, পুতঃপবিত্র বা পবিত্রতম।” অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইস্তিঞ্জা মুবারক, রক্ত মুবারক পান করা জাহান্নাম হারাম হওয়ার এবং জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার কারণ। কেননা তাঁর রক্ত মুবারক পুতঃপবিত্র, পবিত্রতম। এটাই প্রসিদ্ধ, ছহীহ ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। তাই বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেহ মুবারকের সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম এবং সে সমস্ত যার ভিতরে প্রবেশ করেছে বা করবে তার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। এ ফতওয়ার উপরই উলামায়ে কিরাম ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। {দলীলসমূহঃ দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ্ আত্ ত্ববারানী ফিল্ মু’জামিল কবীর,  আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু হাব্বান আল্ মুসতাদরিক লিল্ হাকিম, আদ্দারু কুতনী, আবূ ইয়ালা, মুসনাদে আর্ব্দু রাযযাক, আল খাছায়িছুল কুবরা লিস্ সুয়ূতী, দুররুল মুখতার, শরহুল্ আল্লামাতিয্ যারক্বানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ ইত্যাদি।}

আবুল হাছান মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ, মাদারটেক, ঢাকা।

সুওয়ালঃ    আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেকে তাদের মত মনে করে। প্রমাণ হিসেবে তারা সূরা আহযাবে বর্ণিত-

قل انما انا بشر مثلكم يوحى الى.

 “হে রসূল আপনি বলূন, আমি তোমাদের মতই বাশার।” এ আয়াত শরীফ পেশ করে।  প্রকৃতপক্ষে আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন? জাওয়াবঃ   যারা বলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মত এবং প্রমাণ হিসেবে তারা যে আয়াত শরীফ পেশ করে তাদের পেশকৃত সে আয়াত শরীফেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মত বা অন্য কারো মত নন।  যেমন আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, আমি তোমাদের মিছাল (মত) বাশার। কিন্তু হাক্বীক্বত আমি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ। ফলে আমার উপর ওহী নাযিল হয়ে থাকে।  মূলতঃ মেছাল আর হাক্বীক্বত এক জিনিষ নয়। সম্পূর্ণ বিপরীত। যার কারণে ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলেন-

لست كاحد كم.

অর্থঃ “আমি তোমাদের কারো মত নই।”  হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন-

ايكم مثلى.

 অর্থঃ “তোমাদের মধ্যে কে রয়েছে আমার মত?” অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মত কেউই নেই এবং হতেও পারে না। কারণ তিনি হলেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব। তাঁর নিসবত-তায়াল্লুক, সম্পর্ক, অবস্থান সবকিছু আল্লাহ পাক-এর সাথে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন

– لى مع الله وقت لا يسعن فيه ملكى مقرب ولا نبى مرسل.

অর্থাৎ- “আল্লাহ পাক-এর সাথে আমার প্রতিটা মুহূর্ত বা সময় এমনভাবে অতিবাহিত হয় যেখানে কোন নবী-রসুল ও কোন নৈকট্যশীল ফেরেশ্তারও স্থান নেই।” মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর বিষয়গুলি যেমন কুদরতের অন্তর্ভূক্ত একইভাবে তাঁর যিনি হাবীব যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়গুলিও কুদরতের অধীন। উনার সৃষ্টি, অবস্থান ইত্যাদি সবকিছুই কুদরতের অন্তর্ভূক্ত। এককথায় উনার পরিচয় উনি শুধু আল্লাহ পাক নন এ ছাড়া সবদিক থেকে তিনি আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত। মেছাল ও হাক্বীক্বত যে এক বিষয় নয় সেটা আরবী ক্বাওয়াদের কিতাবেও উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- زيد كالا سد যা আলীয়া-ক্বওমী সকল নিছাবের ছাত্র ও শিক্ষকরাও পড়ে ও পড়িয়ে থাকে। উক্ত আরবী বাক্যের অর্থ হচ্ছে ‘যায়িদ বাঘের মত।’ কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, যায়িদ বাঘ। কাজেই, যায়িদ বাঘের মত বলার কারণে যদি বাঘ না হয় তবে مثلكمতোমাদের মত বলার দ্বারা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি করে অন্যান্য মানুষের মত হন? তাছাড়া আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে হযরত মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

 ليس اذكر كالانثى.

অর্থঃ “তিনি এমন এক মহিলা যার সমকক্ষ কোন পুরুষও নন।” (সূরা মায়িদা-৩৬)  এ আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত দুনিয়ার সমস্ত পুরুষ থেকে হযরত মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম শ্রেষ্ঠা। অর্থাৎ তাঁর মত কোন পুরুষ নেই। অপরদিকে উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ينساء النبى لستن كاحد من النساء.

 অর্থঃ “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়াগণ! আপনারা অন্য কোন মহিলার মত নন।” (সূরা আহযাব-৩২) এ  আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের মত কোন পুরুষ ও কোন মহিলা নেই। অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণও সাধারণ মানুষের মত নন।   প্রশ্ন হলো, হযরত উম্মুল মু’মিনীনগণ তাঁরাই যদি সাধারণ মানুষের মত না হন তবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ মানুষের মত হন কি করে? মূলতঃ بشر مثلكم এর অর্থ হলো তিনি ছুরত বা আকৃতি ও ছিফাতে বাশারীর দিক থেকে অন্যান্য মানুষের মত অর্থাৎ অন্য সব মানুষের যেরূপ হাত, পা, নাক, কান, চোখ, মুখ ইত্যাদি রয়েছে এবং যেরূপ খাদ্য খায়, ঘর সংসার করে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছূরতান তিনিও তদ্রুপ। হাক্বীক্বতান বা প্রকৃত দিক থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন দিক দিয়েই অন্য কারো মত নন। নিম্নে তার কিছু নমুনা পেশ করা হলো- ১. রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি নূরের তৈরী। তাঁর নূর মুবারককেই আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন।  এ প্রসঙ্গে হাদীছ  শরীফে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 اول ما خلق الله نورى وخلق كل شىء من نورى.

  অর্থঃ “আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।” (নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী) কিন্তু অন্যান্য মানুষ সরাসরি নূরের তৈরী নয়। ২. রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকের ‘ছায়া’ যমীনে’ পড়তো না। কারণ তিনি ছিলেন আপাদমস্তক ‘নূর’।  এ প্রসঙ্গে বাহরুল উলুম, শাইখুল মাশায়িখ, হযরত আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “শিফাউছ্ ছুদুর” কিতাবে লিখেছেন,

ان ظله كان لا يقع على الارض لانه كان نورا فكان اذا مشى فى الشمس اوالقمر لاينظر له ظل.

 অর্থঃ “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর ছায়া মুবারক যমিনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর। অতঃপর যখন তিনি সূর্য অথবা চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন তাঁর ছায়া মোবারক দৃষ্টিগোচর হতোনা।” অথচ অন্যান্য মানুষের ‘ছায়া’ রয়েছে। ৩. রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘাম মুবারকের ঘ্রাণ ছিলো মেশ্ক ও গোলাপের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণযুক্ত। যা বরকতের জন্য ‘আতর’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।  এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

عن انسى رضى الله تعالى عنه قال دخل علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال عندنا فعرق وجاءت امى بقارورة فجعلت تسلت العرق فيتيقظ النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا ام سلميم ما هذا الذى تصنعين قات هذا عرق نجعله لطيبنا وهو اطيب الطيب.

অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ঘরে আগমণ করলেন এবং কায়লুলা বা দ্বিপ্রহরের নিদ্রা করলেন। তাঁর পবিত্র শরীর থেকে ঘাম মুবারক বের হতে লাগল। আমার মা শিশি নিয়ে এলেন এবং ঘাম মুবারক মুছে তাতে ভর্তে লাগলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাগ্রত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন উম্মেল সুলাইম! কি করছ? তিনি বললেন এ ঘাম মুবারক সুগন্ধি হিসেবে আমরা ব্যবহার করি কেননা এটা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট সুগন্ধি। (মুসলিম শরীফ)  অথচ অন্যান্য মানুষের ঘাম কি এরূপ? কখনই নয়। ৪. রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকের বাইরে ও অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম। শুধু তাই নয়, পবিত্রতা দানকারী ও জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়ার উসীলা। যেমন, রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক। ছহীহ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে, এ পবিত্র রক্ত ও ইস্তিঞ্জা মুবারক যারা পান করেছেন তারা এত পবিত্রতা অর্জন করেছেন যে, তাদের জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حكيمة بنت اميمة بنت دقيقة عن امها انها قالت: كان النبى صلى اله عليه وسلم يبول فى قدح عيدان ثم يرفع تحت سريره فبال فيه ثم جاء فاراده فاذا القدح ليس فيه شيئ فقال لامرأة يقال لها بركة، كانت تخدم ام حبيبة جائت بها من ارض الحبشة اين البول الذى كان فى القدح؟ قالت شربته، فقال لقد احتظرت من النار بحظار.

অর্থঃ “হযরত হাকীমা বিনতে আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা তাঁর মাতা হযরত আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পাত্রে পেশাব মুবারক রাখলেন অতঃপর চকি মুবারকের নিচে রেখে দিলেন। এরপর তার একটা ব্যবস্থা করার ইচ্ছা করলে এসে দেখলেন পাত্রের মধ্যে কিছু নেই। তখন তিনি বারাকা নামের এক মহিলা, যে হাবশা হতে হযরত উম্মু হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর খাদিমা হিসেবে এসেছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, পাত্রের মধ্যে যে পেশাব মুবারক ছিল তা কোথায় গেল? উত্তরে তিনি বললেন, আমি উহা পান করে ফেলেছি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই তুমি তোমার নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ রাখলে।” (দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ্ ২য় জিঃ ৬৫৪, ৬৫৫ পৃষ্ঠা, আত্ ত্ববারানী ফিল্ মু’জামিল কবীর ২৪ জিঃ ১৮৯ পৃষ্ঠা, ২৫ জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা,  আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু হাব্বান হাদীছ নং ১৪১৩, আল্ মুসতাদরিক লিল্ হাকিম ১ম জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা ৫৯৩ নং  হাদীছ ৪র্থ জিঃ ৭১ পৃষ্ঠা ৬৯১২ নং হাদীছ শরীফ, আদ্দারু কুতনী, আবূ ইয়ালা, মুসনাদে আর্ব্দু রাযযাক, আল খাছায়িছুল কুবরা লিস্ সুয়ূতী ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠা) কিন্তু অন্যান্য মানুষের বেলায় কি তা প্রযোজ্য? কস্মিনকালেও নয়। বরং কেউ যদি সাধারণ মানুষের রক্ত বা ইস্তেঞ্জা পান করে তবে সে হারাম পান করলো ও কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হলো। আর যদি তা হালাল মনে করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা তা সম্পূর্ণ নাপাক ও হারাম। ৫. সকলেই এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, রওজা শরীফের যে মাটি মুবারক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকের সাথে লেগে আছে সে মাটি মুবারকের মর্যাদা আল্লাহ পাক-এর আরশের চেয়েও লক্ষ-কোটি গুণ বেশী। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার (শামী)’ এর বাবুয্ যিয়ারহ-তে বর্ণিত আছে,

 ان التسربة التى اتصلت الى اعظم النبى صلى الله عليه وسلم افضلا من الارض والسماء حتى العرش العظيم.

 অর্থাৎ, নিশ্চয়ই রওযা শরীফের যে মাটি মুবারক  সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীর মুবারকের সাথে লেগে রয়েছে, তা যমীন ও আসমানের সমস্ত কিছু থেকে ফযীলতপূর্ণ। এমনকি সুমহান আরশে আযীমের থেকেও ফযীলতপূর্ণ। (সুবহানাল্লাহ) কিন্তু অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রে এরূপ কোন বর্ণনা আছে কি? এরূপ কল্পনা করাটাই কুফরী। যদি তাই হয়ে থাকে তবে একথা বলা কি করে জায়িয বা শরীয়তসম্মত হতে পারে যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্যদের মতই বাশার।” বস্তুত একথা বলা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।  উল্লেখ্য, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “বাশারী ছূরত মুবারক” ধারণ করার করণে যদি “সাধারণ মানুষের মত” হয়ে যান। তাহলে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, ফেরেশতারাও ‘মানুষ’। কেননা হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালামসহ অনেক ফেরেশতাই মানুষের ‘ছুরত’ ধারণ করেছেন বলে প্রমাণিত আছে। কাজেই এক্ষেত্রে যেরূপ ফেরেশতারা ‘ছূরতান’ মানুষের আকৃতি ধারণ করলেও হাক্বীক্বতান তারা ফেরেশতা। তদ্রুপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছূরতান “বাশার” হলেও হাক্বীক্বতান তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ।  আর এ কারণেই কবি বলেন-

উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………..

 অর্থঃ “আকৃতির দ্বারাই যদি মানুষ মনুষত্ব লাভ করতো তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবূ জেহেলের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতোনা।  এটা (বাহ্যিক) যা দেখ তা মনুষত্বের গিলাফ, মনুষত্ব নয় বরং মনুষত্বের খিলাফ।”  কাজেই, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কারো মত মনে করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মুহম্মদ বেলায়েত হুসাইন, দিনাজপুর সুওয়ালঃ     “আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে সামান্যতম খুশী প্রকাশ করে আবূ লাহাব কাট্টা কাফির হওয়া সত্ত্বেও সে নাকি কবরে ফায়দা পাচ্ছে”- এটা কতটুকু সঠিক? দলীল-আদিল্লাহসহ জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াবঃ     আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন এই যমীনে মুবারক তাশরীফ আনেন সেদিনটি ছিল সোমবার। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের পর পরই আবূ লাহাবের বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁকে এক নজর দেখে আনন্দে আত্মাহারা হয়ে স্বীয় মনিব আবূ লাহাবকে গিয়ে বললেন, ‘হে আমার প্রাণের আঁকা! আপনার ভাই হযরত খাঁজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর ঘরে এমন এক সন্তান আগমন করেছেন, জীবনে এমন সন্তান আমি আর কখনও দেখিনি যিনি পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও অনেক অনেক সুন্দর।’ তখন আবূ লাহাব এই ভ্রাতুস্পুত্রের বিলাদত শরীফে খুশী হয়ে তাঁর খিদমত করার জন্যে দু’অঙ্গুলের ইশারায় বাঁদী সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে আযাদ করে দেয়।  এই আবূ লাহাব আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভীষন কষ্ট দিয়েছিলো। যার কারণে আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর তাকে সরাসরি জাহান্নামের আযাবে নিক্ষেপ করা হয়। তবে এরপরেও আবূ লাহাবের জন্য একটি খুশীর সংবাদ রয়েছে তা হচ্ছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের সুসংবাদ পেয়ে খুশীতে আত্মাহারা হয়ে, সে যে দু’অঙ্গুলী দ্বারা বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে আযাদ করে দিয়েছিলো; সেই বৃদ্ধা ও তর্জনী অঙ্গুলের মধ্যস্থান থেকে প্রতি সপ্তাহে যখন সোমবার আগমন করে তখন সেস্থান থেকে ঠান্ডা সুশীতল পানি প্রবাহিত হয়, যা পান করলে আবূ লাহাবের বিগত এক সপ্তাহের আযাব-গযব এর কষ্ট দুরিভূত হয়ে যায়। এই ঘটনা অসংখ্য বিশ্বখ্যাত কিতাবসমূহে রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি কিতাবের পৃষ্ঠাসহ ইবারত উল্লেখ করা হলো- যেমন, ছিহাহ সিত্তাহ্-এর অন্যতম বিশুদ্ধ কিতাব “ছহীহ বুখারী শরীফ”-এর ২য় খ-ের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় (কিতাবুন্ নিকাহ অধ্যায়ে) বর্ণিত রয়েছে,

 قال عروة وثويبة مولاة لابى لهب كان ابو لهب اعتقها فارضعت النبى صلى الله عليه وسلم فلما مات ابو لهب اريه بعض اهله بشر حيبة قال له مذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعد كم غير انى سقيت فى هذه بعتا قتى ثويبة.

অর্থঃ “হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলো আবূ লাহাবের বাঁদী এবং আবূ লাহাব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফে খুশী হয়ে তাঁর খিদমত করার জন্য ঐ বাঁদীকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনি দুধ পান করান। অতঃপর আবূ লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারে একজন অর্থাৎ তার ভাই হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে স্বপ্নে দেখলেন যে, সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে।’ আবু লাহাব উত্তরে বললো, ‘যখন থেকে আপনাদের কাছ থেকে দূরে রয়েছি তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। তবে বাঁদী সুয়াইবাকে দু’অঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে তা থেকে কিছু ঠান্ডা শীতল পানি পান করতে পারছি।” এই হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ “ফতহুল বারী” কিতাবের ৯ম খণ্ড, ১১৮ পৃষ্ঠায় এবং আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত বিশ্বখ্যাত কিতাব “উমদাতুল ক্বারী”-এর ২০ খ-, ৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

وذكر السهيلى ان العباس قال لما مات ابولهب رايته فى منامى بعد حول فى شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عنى فى لك يوم اثنين وذلك ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها.

অর্থঃ “হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবূ লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত (কঠিন) দূরাবস্থায় রয়েছে। সে বললো, (হে ভাই আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু!) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখিনি। তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবূ লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারণ হচ্ছে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের দিন ছিলো সোমবার। তাঁর বিলাদত শরীফের সুসংবাদ নিয়ে আসায় বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে খুশীতে আযাদ তথা মুক্তি করে দিয়েছিলো।” আল্লামা ইবনু কাছীর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া” গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

قال للعباس انه ليخفف على فى مثل يوم الاثنين قالوا لانه لما بشرته ثويبة بمياد ابن اخيه محمد بن عبد الله اعتقها من ساعته فجوزى بذلكى لذلكى.

অর্থঃ “আবু লাহাব হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললো, ‘(হে ভাই!) অবশ্যই এই কঠিন আযাব সোমবারের দিন লাঘব করা হয়। আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যরা বলেন, হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন আবু লাহাবকে তার ভাতিজা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর নূরের সন্তান হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের সুসংবাদ দেন তৎক্ষনাত সে খুশীতে তাঁকে মুক্ত করে দেয়। এই কারণেই আযাব লাঘব হয়ে থাকে।” আর পানি পান করার কারণেই এই আযাব লাঘব হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে “বুখারী শরীফ”-এর ২য় খ-ের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় ৮নং হাশিয়ায় বর্ণিত আছে

, سقيت فى هذه زاد الاسمعيى واشار الى النقرة بين الابهام والتى تليها من الاصابع وفى ذكى اشرة الى حقارة ماسقى من الماء بعتاقتى هذا خاص به اكراما للنبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ “আবু লাহাব বললো, আমাকে ঠা-া পানি পান করানো হয়, ইসমাঈলী তথা ছহীহ বর্ণনায় এসেছে এই বলে, সে তার বৃদ্ধা অঙ্গুলের ও অন্যান্য অঙ্গুলের নীচের ফাঁকা স্থানের দিকে ইঙ্গিত করে বুঝালো যে, সেইস্থান থেকে পানি প্রবাহিত হয়।”  এটার দ্বারা সে আরো ইঙ্গিত করলো যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য সামান্যতম সম্মানার্থে খুশী প্রকাশ করে আমার বাঁদীকে আযাদ করায় এই ঠা-া পানি আমাকে পান করানো হয়।’ (শরহুয্ যারকানী ১ম খ-, ২৬১ পৃষ্ঠা) “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২০ খ-, ৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,

سقيت …….. بالاشارة الى النقرة التى بين الابهام والمسبحة.

অর্থঃ “আবু লাহাব বললো, আমাকে ঠা-া পানি পান করানো হয় এই বলে, সে তাঁর বৃদ্ধা অঙ্গুল ও শাহাদত অঙ্গুলের মধ্যস্থানের ফাঁকা গর্তের দিকে ইশারা করলো।” “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২০ খ-, ৯৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

فقي له ما فعل ربكى هنا كى فقال سقيت مثل هذه واشار الى ظفر ابهامه بعتاقتى ثويبة.

অর্থঃ “অতঃপর আবু লাহাবকে বলা হলো, তোমার রব তায়ালা কবরে তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করছেন? উত্তরে আবূ লাহাব বললো, (কঠিন অবস্থা) তবে বাঁদী সুয়াইবাকে যে অঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করেছি তা থেকে ঠা-া শীতল পানি প্রবাহিত হয় তা আমাকে পান করানো হয়। এই বলে সে বৃদ্ধাঙ্গুলের নখের দিকে ইঙ্গিত করলো।” এ প্রসঙ্গে জগৎ বিখ্যাত আলিমে দ্বীন, আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ” কিতাবের ১ম খ-, ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

وارضعته صلى اله عليه وسم ثويبة عتيقة ابى لهب اعتقها حين بشرته بولادته صلى الله عليه وسلم وقد روى ابو لهب بعد موته فى النوم فقيل له ما حالكى قال فى النار الا انه خفف عنى كل ليلة اثنين وامص من بين اصبعى هاتين ماء واشار الى رأس اصبعيه وان ذلكى باعتاقى لثوبة عند ما بشرتنى بولادة النبى صلى الله عليه وسلم وبارضا عهاله.

অর্থঃ “(বিলাদত শরীফের পর) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবূ লাহাবের আযাদকৃতা বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহা তায়ালা আনহা দুধ পান করাতেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের সুসংবাদ এই বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আবূ লাহাবকে জানালে সে খুশী হয়ে তাঁকে আযাদ করে দেয়। বর্ণিত আছে, আবূ লাহাবের মৃত্যুর পর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার অবস্থা কিরূপ? উত্তরে বললো, আমার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারিত হয়েছে। তবে প্রত্যেক সোমবার রাত্রিতে আমার শাস্তি হ্রাস করা হয় এবং আমার দু’অঙ্গুল দ্বারা পানি পান করে থাকি। এই বলে সে অঙ্গুলীদ্বয়ের অগ্রভাগের দিকে ইশারা করে দেখালো এবং বললো, এটা এ কারণেই হয়ে থাকে যে, যখন হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমাকে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের সুসংবাদ দিয়েছিলেন তখন আমি খুশী হয়ে তাঁকে আযাদ তথা মুক্ত করে দিয়েছিলাম এবং তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুধ পান করিয়েছিলেন এই কারণেই।” (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, শরহুয্ যারকানী ১ম খ-, ২৫৮-২৬০ পৃষ্ঠা) ‘বৃদ্ধা ও শাহাদত অঙ্গুলীদ্বয়ের উল্লেখ কেন করা হয়েছে’ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহুয্ যারকানী” কিতাবের ১ম খ-, ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

واظا هر انهما السبابة والابهام وحكمة تخصيصهما اشرته لها بالعتق بهما.

অর্থঃ “প্রকাশ থাকে যে, আবু লাহাব যেহেতু তার শাহাদত ও বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় দ্বারা ইশারা করে বাঁদীকে আযাদ করে দিয়েছিলো এই কারণে ঐ অঙ্গুলদ্বয়কে তাখছীছ বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।” براس اصبعه এর ব্যাখ্যায় আল্লামা যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন,

(برأس اصبعه) الى النقر التى تحت ابهامه كما مر فى رواية عبد الرزاق قال ابن بطال يعنى ان الله سقاه ماء فى مقدار نقرة ابهامه لأجل عتقها وقال غيره اراد بالنقرة التى بين ابهامه وسبابة اذا مذ ابهامه فصار بينهما نقرة يقى من الماء بقدر ما تسعه تلكى النقرة.

অর্থঃ “অঙ্গুলের মাথা দ্বারা এখানে বৃদ্ধাঙ্গুলীর নীচে তথা গোড়ার অংশকে বুঝানো হয়েছে। যেমন পূর্বে আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ইবনে বাত্তাল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ পাক আবু লাহাবকে পানি পান করিয়েছিলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফে খুশী হয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা বাঁদীকে আযাদ করার কারণে। সেই বৃদ্ধাঙ্গুলের নীচের গিরা থেকে পানি প্রবাহিত হতো। অন্যান্য ইমামগণ বলেন, আবু লাহাব যেহেতু শাহাদত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা বাঁদীকে আযাদ করে দিয়েছিলো সেই কারণে উভয় অঙ্গুলীর মাঝের গর্তের স্থান থেকে ঠা-া পানি প্রবাহিত হতো, যা সে পান করে পূর্বের আযাব ভুলে যেত। কেননা বৃদ্ধাঙ্গুলী ও শাহাদত অঙ্গুলে লম্বা করলে উভয়ের মাঝে গর্তের মত দেখায় একেই (نقرة) নক্বরাত বলে।” (শরহুয্ যারকানী ১ম খ-, ২৬০ পৃষ্ঠা) এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ আছে যা বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আরাইহি তাঁর “তারিখী ইয়াকুবী” গ্রন্থে ১ম খ-, ৩৬২ পৃষ্ঠায় লিখেন,

قال النبى صلى الله عليه وسلم رأيت ابا لهب فى النار يصيح العطش العطش لعطش فيسقى فى نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال ب بعتقى ثويبة لانها ارضعتكى.

 অর্থঃ “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও; পানি দাও। অতঃপর তার বৃদ্ধাঙ্গুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে। আমি বললাম, কি কারণে এ পানি পাচ্ছো? আবু লাহাব বললো, হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে মুক্ত করার কারণে। কেননা, তিনি আপনাকে দুধ পান করিয়াছেন।” এই বর্ণনা আরো বহু বিশ্বখ্যাত গ্রন্থে রয়েছে যা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বপ্নে দেখেছেন। এই ঘটনার প্রতি বিরাট নছীহত ও যথেষ্ট গুরুত্ব আছে বলেই হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন। আর তারীখে ইয়াকুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্য মুতাবিক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং দেখেছেন এবং বর্ণনা করেছেন যা ওহীর অংশ বিশেষ যা অস্বীকারকারী কাট্টা কাফির চির জাহান্নামী। কাজেই বুঝা গেলো যে, আবূ লাহাব আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এত কষ্ট দেয়ার পরেও, কাট্টা কাফির হওয়ার পরেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে সামান্যতম খুশী প্রকাশ করে জাহান্নামের আগুন থেকেও যদি এত বড় নিয়ামত পেতে পারে তাহলে যারা মু’মিন-মুসলমান হয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হয়ে তাঁর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে মীলাদ শরীফ পাঠ করে, তাবাররুকের ব্যবস্থা করে, দান-ছদকা করে খুশী প্রকাশ করে তাহলে তাদের জন্য অবশ্যই সরাসরি জান্নাত নছীব হবে ইনশাআল্লাহ এতে কোন বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যেমন, এ প্রসঙ্গে “মাওলাহিবুল লাদুন্নিয়া” কিতাবের বিখ্যাত শরাহ “শরহুয্ যারকানী” কিতাবের ১ম খ-ের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال ابن الجزرى فاذا كان هذا الكافر الذى نزل القران بذمه جوزى فى النار بفرحه ليلة مولد النبى صلى الله عليه وسلم به فما حال المسلم الموحد من امته عليه السلام يسر بمولده ويبذل ما تصل اليه قدرته فى محبته صلى الله عليه وسلم لعمرى انما يكون جزاؤه من اله الكريم ان يدخل بفضله العميم جنات النعيم.

অর্থঃ “হযরত ইবনুল জাযরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবূ লাহাবের মত কাট্টা কাফির যার নিন্দায় কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও সূরা পর্যন্ত নাযিল হয়েছে, তাকে যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের রাত্রিতে আনন্দিত হওয়ার কারণে জাহান্নামেও তার পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের কোন মুসলমান যদি তার সাধ্যানুযায়ী টাকা-পয়সা ইত্যাদি খরচ করে তাহলে তাদের অবস্থা কিরূপ হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার ফযল ও করমে তাকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (মা ছাহবাতা বিস্ সুন্নাহ ১ম খ-, ৮৩ পৃষ্ঠা) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদ শরীফ উপলক্ষে খুশী করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঈদ।  এ কারণে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছে আ’যম, ফারূকে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর মহান তাজদীদ তিনি ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম-এর নাম সংস্কার করেছেন, “সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম ও ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের যথার্থ মর্যাদাকে অনুধাবন করে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে জীবনের সর্বস্ব শক্তি, সামর্থ, টাকা-পয়সা দিয়ে খুশী প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) {দলীসমূহঃ বুখারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী, বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ, শরহুয্ যারকানী, আব্দুর রাজ্জাক, মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ, তারীখে ইয়াকুবী, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ইত্যাদি।}

মুহম্মদ শামছুল হুদা, কিশোরগঞ্জ

সুওয়ালঃ     আমাদের এলাকার এক ক্বওমী মাদ্রাসার মুফতী ওয়াজ করতে গিয়ে বলে যে, নবীজির পিতা-মাতা যেহেতু নুবওওয়াত প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই ইন্তিকাল করেছেন। তাই তারা ঈমানদার ছিলেননা। আর ঈমান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যেতে পারবেনা।’ এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে শরীয়তের সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে উপকৃত হতাম। জাওয়াবঃ  তথাকথিত মুফতীর উপরোক্ত বক্তব্য থেকে আমরা আল্লাহ পাক-এর কাছে পানাহ চাইছি। কারণ, তার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বিরোধি তথা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মূলতঃ যার ভিতরে কুফরী রয়েছে তার পক্ষেই সম্ভব আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিস্ সালাম সম্পর্কে এরূপ বেয়াদবী ও কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করা। নিম্নে তথাকথিত মুফতীর উক্ত কুফরী বক্তব্যের দলীলভিত্তিক দাতভাঙ্গা জবাব তুলে ধরা হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতা আলাইহিমাস্ সালাম ফিতরাত যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তাঁরা দ্বীনে হানীফের উপর কায়িম ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ঘোষণার বহু পূর্বে এবং হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পরে তাঁর পিতা-মাতা আলাইহিমাস্ সালাম উভয়েই বেছাল শরীফ লাভ করেন। যাঁরা কোন নবীর আমল পাননি, যাঁদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি এবং যাঁরা দুই নবীর অন্তবর্তীকালীন সময়ে ইন্তিকাল করেন। এ সময়টাকে বলা হয় ফিতরাত যুগ।  এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

 ولولا ان تصيبهم مصيبة بما قدمت ايديهم فيقولوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتكى ونكون من المؤمنين.

অর্থঃ “যারা ফিত্রাত যুগের তাদের কৃতকর্মের জন্য যখনই কোন মুছীবত আসত তখন তারা বলত, আল্লাহ্ তায়ালা কেন কোন রসূল প্রেরণ করেননি, আমরা তাঁর আয়াতের অনুসরণ করতাম ও ঈমানদার হতাম।”(সূরা ক্বছাছ-৪৭)   এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে বলেছেন, তারা জান্নাতবাসী। কেননা পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফের ঘোষণানুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না  (যদি তারা কুফরী ও শিরেকী না করে থাকে)। আর যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, অথচ কুফরী ও শিরেকী পরিত্যাগ করেনি তারা অবশ্যই জাহান্নামী। এতে কারো দ্বিমত নেই। সুতরাং দুই নবীর অন্তবর্তীকালীন সময়ে মৃত বা ইন্তিকালকারীগণ আহ্লে ফিত্রাত বিধায় তাদের হুকুম ব্যতিক্রম। অর্থাৎ তাঁরা যদি শুধু কুফরী ও শিরেকী থেকে মুক্ত থাকেন তাহলে তাঁরা আযাব বা শাস্তি থেকেও মুক্ত থাকবেন। (মাসালেকুল হুনাফা লিস সুয়ূতী দ্রষ্টব্য) যেমন ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস্ সালাম। তাঁরা কোন প্রকার কুফরী ও শিরেকী করেননি। অর্থাৎ তাঁরা উভয়ে দ্বীনে হানীফে কায়িম ছিলেন। তাঁরা কখনো তাওহীদ বিরোধী কোন আমল করেছেন এমন কোন প্রমাণ আল্লাহ্ পাক-এর যমীনে কেউই পেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত পোষণ করেন।  “ত্ববারানী শরীফে” উল্লেখ আছে, নিম্ন বর্ণিত ব্যক্তিগণ আল্লাহ্ পাক-এর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাঁরা পাক-নাপাকীরও বিশ্বাসী ছিলেন। যদি তাঁদের কেউ নাপাক হতেন, তাহলে অজু-গোছল করে পবিত্র হতেন, এমনকি তাঁরা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর ধর্মের বিশ্বাসী হয়ে আমল করতেন। তাঁদের নাম হলো- (১) হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম (২) হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম, (৩) হযরত আসওয়াদ বিন সারারা বিন মায়রুর আনসারী, (৪) হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা ও (৫) হযরত আবূ কাইস বিন সারমা ইত্যাদি।         উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মুশরিক ও কাফিররা কখনও উত্তম হতে পারেনা, কারণ তারা নাপাক। তাই সাধারণ মু’মিন ও মু’মিনাও তাদের থেকে উত্তম।  স্বয়ং জান্নাতই উদগ্রীব হয়ে আছে কখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতা আলাইহিমাস্ সালাম জান্নাতে প্রবেশ করবেন এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم وامهاته الى ادم وحواء عليهما السلام ليس فيهم كافر.

 অর্থঃ “আমি সর্বদা পবিত্র পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ববর্তী যত পুরুষ ও মহিলা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম হতে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম পর্যন্ত অতীত হয়েছেন, তাঁদের কেউই কাফির ছিলেন না।”  এ হাদীছ শরীফই প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ব পুরুষ সকলেই ছিলেন যুগের সব চাইতে সম্ভ্রান্ত, মর্যাদাশীল ও আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মকবুল বান্দাহর অন্তর্ভুক্ত। তিনি পবিত্র পুরুষ ও পবিত্রা মহিলাগণের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এ যমীনে তাশরীফ এনেছেন। চাই পিতার দিক থেকে হোক কিংবা মাতার দিক থেকে হোক তাঁদের কেউই মুশরিক বা কাফির ছিলেন না। এমন কি তাঁদের মধ্যে কেউ চারিত্রিক দোষেও দোষী ছিলেন না। প্রত্যেকেই পবিত্র চরিত্র মুবারকের অধিকারী ছিলেন।  এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

لم يلتق ابواى قط على سناح.

অর্থঃ “হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষগণ কেউই চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেননা।” অতএব, এটাতে প্রমাণিত হয়, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ব পুরুষগণ শুধু ঈমানদারই নন বরং তাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর খাছ মাহবুব বান্দা-বান্দীর অন্তর্ভূক্ত। আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,

وتقلبكى فى الساجدين.

 অর্থঃ “এবং আপনি সিজদাকারীদের সাথে উঠা-বসা করেন।” (সূরা শুয়ারা-২১৯) “তাফসীরে মাদারিক ও জামাল”-এর গ্রন্থকার এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুধু পিতা-মাতা আলাইহিমাস্ সালাম নন বরং তাঁর সকল পূর্বপুরুষকে আল্লাহ্ পাক-এর তাওহীদভুক্ত বলে ঘোষণা দেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর পূর্বপুরুষ সকলেই ঈমানদার ও সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।       উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম সর্বযুগে যুগশ্রেষ্ঠ বান্দা-বান্দীদের মাধ্যম দিয়ে এসেছেন। তাহলে তাঁরা কেন ঈমানদার হবেন না? কি করে এর ব্যতিক্রম হতে পারেন কারণ প্রথমতঃ কাফিররা হচ্ছে নাপাক। দ্বিতীয়তঃ সাধারণ ঈমানদার দাস-দাসীরাও সমস্ত কাফির, মুশরিকদের চেয়েও উত্তম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেহঃস্থিত সবকিছু পাক ও তা গলধঃকরণ নাযাত হাসিলের কারণ হলে, যাঁদের মাধ্যমে তিনি এসেছেন তাঁদের কি হুকুম হাদীছ শরীফে এসেছে, উহুদের ময়দানে কিছু ছাহাবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুবরকের ক্ষতস্থান হতে নির্গত রক্ত মুবারক যাতে যমীনে না পড়তে পারে সেজন্য তাঁরা তা চুষে চুষে পান করেছিলেন। এতদ্বশ্রবনে তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের জন্য জাহান্নামের আগুণ হারাম হয়ে গেল। অর্থাৎ তোমরা নিশ্চিত জান্নাতী। এছাড়া যে সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন তাঁদের ক্ষেত্রেও তিনি উক্ত সুসংবাদ দান করেছিলেন। (সুবহানাল্লাহ্) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অসুস্থতার কারণে হুজরা শরীফের ভিতর একটি গামলার মধ্যে ইস্তেঞ্জা (পেশাব) মুবারক রাখলেন। সকাল বেলা এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আসলে তিনি তাঁকে উক্ত গামলাটি দিয়ে বললেন, তুমি এগুলো এমনস্থানে ফেলে দিবে যাতে কেউ মাড়াতে না  পারে।  তখন সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উক্ত গামলাটি নিয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে একস্থানে রেখে চলে আসলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তা কোথায় ফেলে আসলে? তখন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তা এমন স্থানে রেখে এসেছি যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ মাড়াতে পারবেনা। ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন কথা বলছিলেন, তাঁর মুখ দিয়ে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু! তুমি কি তা পান করে ফেলেছ? ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তা রাখার জন্য আমার পেটের চাইতে উত্তম স্থান খুঁজে পাইনি, তাই তা পান করে ফেলেছি।  হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর কথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন আবাদুল আবাদের জন্য হারাম হয়ে গেল। কস্মিনকালেও জাহান্নামের আগুন তোমাকে স্পর্শ করবেনা। আর তুমি জান্নাতী। (সুবহানাল্লাহ্) এখন কথা হলো, যেই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রক্ত মুবারক, পেশাব মুবারক স্বল্পকালীন, স্বল্প পরিমাণ পান করার কারণে কোন ব্যক্তির জন্য যদি জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় আর জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, তাহলে খোদ নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ সময় যাঁর  বা যাঁদের রেহেম শরীফে অবস্থান করলেন এবং এর পূর্বে যাঁর বা যাঁদের ললাট মুবারকে অবস্থান করলেন, অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্ব পুরুষ এবং পিতা ও মাতা আলাইহিমাস্ সালামগণ উনাদের হুকুম কে হবে? উনারা যে জান্নাতী হবেন তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? উনারা জান্নাতী একথা অবিশ্বাসকারীদের চাইতে আল্লাহ পাক-এর যমীনে বড় ও কাট্টা কাফির আর কেউ হতে পারেনা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পর্শধন্য রওযা শরীফের ধুলি মুবারকের মর্যাদা আরশে আযীমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হলে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ধারক, বাহকগণ অর্থাৎ তাঁর পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস্ সালামগণের ফায়সালা কি? সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজমা করেছেন যে, রওযা শরীফের যে মাটি মুবারক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারক স্পর্শ করে আছে তা আরশে আযীম থেকেও বেশী মর্যাদাবান ও সম্মানিত।  তাহলে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস্ সালাম ধারণ করেছেন এবং যাঁদের শরীর মুবারকের স্পর্শে ছিলেন তাঁদের ফযীলত কত বেশী এবং তাঁরা কতটুকু সম্মানিত তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। আর বেহেশ্তে তাঁদের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে দুনিয়াবাসী কোন মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, নবীকুল শ্রেষ্ঠের পিতা-পিতামহ অর্থাৎ উর্ধ্বতন পূর্ব পুরুষ আলাইহিমুস্ সালামগণ যাঁদের মাধ্যমে তিনি যুগে যুগে স্তরে স্তরে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন তাঁদের সকলেই ঈমানদার তথা ওয়াহ্দানিয়াতের উপর ছিলেন। অন্যথায় বুখারী শরীফের ছহীহ্ রিওয়ায়েত এবং পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফের ঘোষণা ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ্) “মিশকাত শরীফে” কবর যিয়ারত অধ্যায়ে বর্ণিত। একদা পেয়ারা নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে তাঁর জননীর রওজা শরীফ যিয়ারত করার আকাঙ্খা করলে আল্লাহ্ পাক যিয়ারত করার অনুমতি প্রদান করেন। কারণ হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম ঈমানদার ছিলেন। কাফিরদের কবর যিয়ারত করা নিষেধ। তবে, মহিয়সী জননীর জন্য মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে মহান আল্লাহ্ পাক তা রহিত করে দেন।  কারণ ক্ষমা প্রার্থনা ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে পাপী। আর হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম ছিলেন নিঃসন্দেহে খালিছ ঈমানদার। কারো শিশু সন্তান মারা গেলে আমরা তার জানাযার নামাযে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া ইস্তিগ্ফার কোনটাই করিনা। কারণ সে নিষ্পাপ ও বেগুনাহ্ অবস্থায় মারা গেছে। তাই তার জন্য দোয়া ইস্তেগফার করার প্রয়োজন নেই। এই নীতিমালার ভিত্তিতেই হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম-এর রওজা শরীফ যিয়ারত করা হয়েছিল কিন্তু দোয়া ত্যাগ করা হয়েছিল।  উপরোন্ত একজন বণী ইসরাঈলীকে, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক চুম্বন করার কারণে তাঁকে জান্নাত দেয়া হলো, তাঁর জন্য জাহান্নাম হারাম করা হলো। শুধূ তাই নয় বরং তাঁর মর্যাদা আরো বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ্ পাক-এর জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালামকে তাঁর গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি জান্নাতী হয়েছিলেন। তাহলে যিনি হাবীবুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কয়েক মাস রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন ও যিনি সরাসরি চুম্বন করেছেন, তাহলে তাঁর জান্নাতী হওয়া সম্পর্কে এরপরও কি করে প্রশ্ন উঠতে পারে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতার নাম হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম ও হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম হওয়ার হাক্বীক্বত “আব্দ” অর্থঃ ‘আনুগত্য স্বীকারকারী’ আর এর সাথে আল্লাহ্ পাক-এর নাম মুবারক যুক্ত হয়ে আব্দুল্লাহ্ অর্থাৎ তিনি আল্লাহ্ পাক-এর বশ্যতা স্বীকার করতেন। তিনি যদি মূর্তি পুজারী হতেন তাহলে তাঁর নাম হতো ‘আব্দুল উজ্জা। (নাউযুবিল্লাহ্) অথচ তাঁর নাম হলো ‘আব্দুল্লাহ্।’  তেমনিভাবে ‘আমিনা’ শব্দটির অর্থ হলো, ‘ঈমান আনয়নকারী বা নিরাপদ’। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি ঈমান এনে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়েছেন (সুবহানাল্লাহ্) এতে বুঝা গেলো, আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ালেদাইন শারীফাইনকে ঈমানদার তো অবশ্যই বরং আখাচ্ছুল খাছ বান্দা ও বান্দী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ আল্লাহ্ পাক বলেছেন,

والطيبت للطيبين والطيبون للطيبت.

অর্থঃ “সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য ও সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্র নারীদের জন্য।” (সূরা নূর-২৬) তাছাড়া কোন একজন নবী আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা-মাতা কাফির ও মুশরিক ছিলেন এ মর্মে কারো নিকট কোন প্রমাণ নেই বা কেউ তা পেশ করতে পারবে না। কেননা শরীয়তের উছূল হলো, প্রত্যেক নবী রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ-পূর্বমাতা সকলেই ঈমানদার ছিলেন।  এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,

فالاية دالة على ان جميع اباء محمد صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما.

অর্থঃ “উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। সুতরাং এর দ্বারা অকাট্যরূপে প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা মুসলমান ছিলেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)  এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

فلا يمكن ان يكون كافرا فى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতার (পূর্ব পুরুষের) সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” (তাফসীরে মাযহারী ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা) এ সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

ان احدا من اجداده ما كان من المشركين.

 অর্থঃ “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাপ-দাদাগণ কেউই মুশরিক ছিলেননা।” (তাফসীরে কবীর/১৩ খ- ৩৯ পৃষ্ঠা) স্মরণীয় যে, “যদি নবীদের নবী-রসূলদের রসূল” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতা আলাইহিমাস্ সালাম জান্নাতবাসী না হন তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর যমীনে এমন কোন পিতা-মাতা খুঁজে পাওয়া যাবে কি যারা জান্নাতী হবে?” ইহা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।         অতএব, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ও ফতওয়া হলো- আখিরী রসূল, সরকারে দো’আলম, খাতামুল আম্বিয়া, ছাহিবে মীছাক্ব, উসওয়ায়ে হাসানাহ, ছাহিবে আছালিবে ত্বাহিরীনা ওয়া আরহামি ত্বাহিরা, ছাহিবে আসমাউল হুস্না, ছাহিবে আলক্বাব, ছাহিবে ইক্বরা, সাইয়্যিদুল খালায়িক্ব, রউফুর রহীম, ছাহিবে ছলাত ও সালাম, ছাহিবে বাশীর ওয়া নাযীর, ছাহিবে লাওলাক, ফখরে বাহ্র ওয়া বার, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, সরওয়ারে কাওনাইন, সিরাজাম মুনীরা, ফখরে কায়িনাত, আল আমীন, সাইয়্যিদুল আলম, ইমামুন্ নাবিয়্যীন, শাফিউল উমাম, হুব্বুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল জিন্নে ওয়াল ইন্স, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা-মাতা আলাইহাস্ সালাম উভয়েই জান্নাতী অর্থাৎ উনাদের অবস্থানের জন্যই জান্নাত সৃষ্টি হয়েছে। একথা আরো উত্তমভাবে বলা আদবের ও নাজাতের অন্তর্ভুক্ত। তা হলো, “সেজন্য স্বয়ং জান্নাত উদগ্রীব হয়ে রয়েছে কখন হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ ও পূর্বমাতা এবং পিতা ও মাতা আলাইহিমাস্ সালামগণ জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কারণ, তাঁরা জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাত সম্মানিত হবে, জান্নাতে ফযীলত বৃদ্ধি পাবে ও জান্নাতের অবস্থান, সৃষ্টি ও নামকরণ স্বার্থক হবে।”  কাজেই, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ ও প্রকাশ করাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। {দলীলসমূহঃ  (১) তাফসীরে কবীর, (২) খাযিন, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) মাদারিক, (৬) মাযহারী, (৭) ইবনে কাছীর, (৮) যাদুল মাছীর জামাল, (৯) জালালাইন, (১০) বুখারী শরীফ, (১১) ফতহুল বারী, (১২) উমদাতুল ক্বারী, (১৩) মিশকাত, (১৪) মিরকাত, (১৫) আশয়াতুল লুময়াত, (১৬) ত্বীবী, (১৭) তালীক্ব, (১৮) তিবরানী, (১৯) দুররুল মুখতার, (২০) আন নি’মাতুল কুবরা, (২১) নূরে মুহম্মদী, (২২) তাজকিরাহ্, (২৩) হিলইয়াতুল আওলিয়া, (২৪) আবু নঈম, (২৫) ছীরাতে হালবিয়া, (২৬) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, (২৭) তাওয়ারিখে মুহম্মদী, (২৮) কানযুল ইবাদ, (২৯) ফতওয়ায়ে সূফিয়া, (৩০) মুহীত, (৩১) কুওয়াতুল কুলুব, (৩২) ফতওয়ায়ে খাজিনাতুর রিওয়ায়েত, (৩৩) ফতওয়ায়ে সিরাজুম্ মুনীর, (৩৪) ফতওয়ায়ে মিফতাহুল জিনান, (৩৫) তাহ্ক্বীক্বুল মাকাম আলা ক্বিফায়াতিল আওয়াম, (৩৬) বারাহীনে কাতিয়া ফি মাওলিদীহি খাইরুল বারিয়্যাহ্, (৩৭) মজমুয়ায়ে ছগীর, (৩৮) মাওয়াহিব, (৩৯) শরহে মাওয়াহিব, (৪০) দালায়িলুন নুবুওওয়া, (৪১) আশ্ শিফা, (৪২) খাছায়িছুল কুবরা, (৪৩) মাদারিজুন নুবুওয়াত, (৪৪) শরফুল আলম, (৪৫) নশরুত ত্বীব ইত্যাদি।}

 মুহম্মদ মুফিজুর রহমান, কুমিল্লা সুওয়াল:   অনেকে বলে থাকে, ‘আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক।’ তাদের একথা কতটুকু ছহীহ? জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াব:  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যারা আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক বলে থাকে তারা তাদের কম ইলম, কম বুঝের কারণে সম্পূর্ণ কুফরী করে থাকে। মূলত: তাদের একথা সম্পূর্ণরূপেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খিলাফ।  সাধারণভাবে যে কোন রসূল আলাইহিস্ সালামকে শুধু ‘নবী’ বলা আদবের খিলাফ। কারণ সব রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ‘নবী’। কিন্তু সব নবী আলাইহিমুস্ সালাম ‘রসূল’ নন।  কাজেই, রসূলদেরকে শুধুমাত্র ‘নবী’ বলা যদি আদবের খিলাফ হয় তাহলে যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, যিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ পাক কিছুই সৃষ্টি করতেন না তাঁকে আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক বলা কতটুকু আদবের খিলাফ ও কুফরী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, দুনিয়াবী আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক অতীতেও অনেক ছিলেন বা এখনও থাকতে পারেন।  হাদীছ শরীফে পারস্যের বাদশাহ নওশেরওয়াকেও ইনসাফগার বাদশাহ বলা হয়েছে। অথচ সে মুসলমানও ছিলো না। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وما محمد الارسول.

অর্থঃ “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূল ব্যতীত অন্য কিছু নন।” (সূরা আলে ইমরান-১৪৪)

ما كان محمد ابا احد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبين.

 অর্থ: “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি কেবল আল্লাহ পাক-এর রসূল এবং শেষ নবী।” (সূরা আহযাব-৪০)

هو الذى ارسل رسوله باهدى ودين الحق ليظهرة على الدين كله وكفى بالله شهيدا محمد رسول الله.

অর্থ: “সেই আল্লাহ পাক যিনি তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন সমস্ত দ্বীন তথা পিছনের ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত এবং পিছনের ও সামনের মানবরচিত মতবাদকে বাতিল বা রদ করে দিয়ে। যার সাক্ষী স্বয়ং আল্লাহ পাক আর আল্লাহ পাক-এর সেই রসূল হচ্ছেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা ফাত্হ-২৮,২৯) উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের ধারণার উৎপত্তিস্থল হলো গ্রীসে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত যত মতবাদ সব বিধর্মীয় মতবাদ। প্লেটো, এ্যারিষ্ট্রটল এবং তাদের পরবর্তী টমাস ম্যাকুইনাস, টমাস হবস জন লক, টমাস জেফরসন, কালমার্কস ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রের উৎপত্তি গঠন ও পরিচালনা সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন।  বিশেষ করে কথিত মধ্যযুগে খ্রিস্টান পাদরীদের অধম ও কুপমুন্ডুকতার কারণে খ্রিস্টানদের মাঝে গীর্জা থেকে আলাদা হয়ে তাদের কথিত রাষ্ট্র পৃথক রূপ লাভ করে। এ কারণে ইউরোপীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বলে থাকেন, ‘মধ্যযুগে ধর্ম ও গীর্জার প্রভাব যদি না কমতো তাহলে ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থার আধুনিক যুগে উত্তরণ ঘটত না।” আর আধুনিককালে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা চারটি বিষয় উল্লেখ করেন। ১. নির্দিষ্ট ভূখন্ড, ২. জনসমষ্টি, ৩. স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্ব, ৪. সরকার।  উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের এ সংজ্ঞার মাঝে ইসলাম নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং কথিত রাষ্ট্রীয় সরকার বা সংবিধান কোনোটাই স্বীকার করে না।  সুতরাং, ইসলাম যখন কথিত রাষ্ট্রকেই স্বীকার করে না সেখানে কী করে বলা যাবে, “যিনি ইসলামের প্রবর্তক, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, তিনি আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।” মূলত: একথা বলা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানের খিলাফ ও কুফরী।

মুহম্মদঞ্জশাহাদাত হুসাইন, দিয়ার ভিটা, নাটোর সুওয়াল:   ইদানিংকালে অনেকে ‘লাল রুমালকে’ হাজী রুমাল বলে থাকে এবং হাজী রুমাল হিসেবে এটা পড়াকে জায়িয ও ফযীলতের কারণ বলে প্রচার করে থাকে। তাদের একথা কতটুকু শরীয়তসম্মত? জাওয়াব:  তাদের একথা সম্পূর্ণ ভুল ও অশুদ্ধ। কেননা, হাজী রুমাল বা পোশাক বলে কোন পোশাক শরীয়তে নেই। যেহেতু হজ্জের মাসয়ালা মোতাবেক মাথায় কোনো কাপড় রাখা যায় না সেহেতু হাজী টুপি বা হাজী রুমাল বলে কোনো পোশাকের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, হজ্জ করতে গিয়ে কোন কিছু কিনলেই তা হাজী হয়ে যায় না। কারণ, সেখানে সব সুন্নতী জিনিসই বিক্রি হয় না। আর কেবল মুসলমানরাই সব জিনিস বিক্রি করে না। বরং অনেক বিধর্মী রাষ্ট্র মুসলমানদের জন্য জিনিস তৈরী করে এবং অনেক বিধর্মীরাও তাদের জিনিস বিক্রি করে। আর এ সুযোগে ইহুদী-নাছারারা এমন জিনিসও বিক্রি করে যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। কথিত হাজী রুমাল বা লাল রুমাল তন্মধ্যে একটি। কিন্তু সৌদি আরবে পাওয়া যায় বলে আমাদের দেশের নামধারী মাওলানারা সেটাকেই হাজী রুমাল বলে প্রচার করে। আরো উল্লেখ্য যে, বিধর্মীরা সৌদি আরবে শরাবও সাপ্লাই দেয় এবং বিক্রি করে। সুতরাং তাই বলে এদেশে এসে শরাব খাওয়া যেমন জায়িয নয় তেমনি সেখানে পাওয়া যায় বলেই এদেশে এসে লাল রুমাল পড়াও জায়িয নয় এবং এটাকে হাজী রুমাল বলাও জায়িয নয়।  কারণ, হাজীদের জন্য ইহরাম অবস্থায় কোনো রুমাল ব্যবহার করাই জায়িয নয়। আর মুসলমানকে পালন করতে হবে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত। কোনো হাজী ছাহেবের আমল শরীয়তের দলীল নয়। আরো উল্লেখ্য যে, পুরুষের জন্য যে লাল রং নিষিদ্ধ তা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। সাথে সাথে অসংখ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবেও উল্লেখ আছে। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عن عبد اله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال مررجل وعليه ثوبان احمران فسلم على النبى صلى الله عليه وسلم ولم يرد عليه.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি এক জোড়া লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অতিক্রম করার সময় সালাম দেয়। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জবাব দেননি। (তিরমিযী, আবু দাউদ শরীফ)     হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উটের হাওদার উপর লাল রংয়ের কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল বসার জন্য কিন্তু তিনি সে লাল কাপড়ের উপর বসেননি, বরং সেটা তুলে তারপর বসেছিলেন।” (সীরাতুন্ নবী)        আর হানাফী মায্হাবের বিখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব “তানবীরুল আবছারে” উল্লেখ আছে যে,

وكره لبس المعصفر والمزعفر الاحمر والاصفر للرجال.

  অর্থঃ “পুরুষের জন্য কসূম রং, জাফরানী লাল ও হুলুদ রংয়ের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”  দলীলসমূহ ঃ- (১) বুখারী (২) তিরমিযী, (৩) আবু দাউদ, (৪) ফতহুল বারী, (৫) উমদাতুল ক্বারী, (৬) ইরশাদুস্ সারী (৭) তাইসীরুল ক্বারী, (৮) মায়ারিফুস্ সুনান, (৯) মায়ারিফে মাদানিয়া, (১০) উরফুশ্ শাজী, (১১) শামায়িলে তিরমীযী, (১২) বজলুল মাযহুদ, (১৩) ফতওয়ায়ে শামী, (১৪) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (১৫) ইখতিয়ার (১৬) শরম্বলালী, (১৭) মুলতাকিউল আবহুর (১৮) জখীরা, (১৯) তানবীরুল আবছার (২০) তোহ্ফা, (২১) মুজতবা, (২২) কাহেস্তানী, (২৩) শরহুন্ নেকায়া, (২৪) ইমদাদুল ফতওয়া, (২৫) ফতওয়ায়ে রশীদিয়া, (২৬) ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়াহ্, (২৭) সীরাতুন্ নবী, (২৮) সীরতে আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, (২৮) আল কামুস আল মুহীত, (২৯) লিসানুল আরব, (৩০) তাজুল উরুস, (৩১) বয়ানুল লেসান, (৩২) মু’জামুল ওয়াসীত, (৩৩) কামুস আল জাদীদ, (৩৪) মু’জামুল ওয়াজীয ইত্যাদি।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল জাওয়াব

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ