মসজিদ ভাঙ্গিয়া জায়নামায পোড়ানো, পুলিশ প্রহার ও তাহাদের অস্ত্র লুট-এর সাহিত জড়িত- তথাকথিত নারী নীতিবিরোধীরাই মূলতঃ জোট সরকারের সমর্থনে ছবি, বেপর্দা ও নারী নেতৃত্বকে জায়েয করিয়া; আজকের ইসলাম বিরোধী নারী নীতিমালা তৈরীর সাহস ও স্পর্ধার সুযোগ সৃষ্টি করিয়া তাহার ভিত তৈরী করিয়াছে। একইভাবে তাহাদের এখনকার কর্মকাণ্ড যোগান দিতেছে বাংলাদেশকে পরাশক্তির হামলার তাজা রসদ হিসাবে

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠী আরেকবার কলকাঠি নাড়িল। আরেকটা মহড়ার অবতারণা করিল। যথারীতি এইবারও তাহারা আশাতীত ফল দেখিতে পারিল। স্পষ্ট অনুধাবন করিতে পারিল তাহাদের নীল নকশার ফাঁদে উলামায়ে ছূরা কেমন ছকবাধা ঘুরপাক খাইতেছে।

উলামায়ে ছূ’দের ইল্ম, আক্বল ও আমল কেমন ঘুনে ধরিয়া ঝাঁঝড়া ঝাঁঝড়া হইয়া গিয়াছে। উলামায়ে ছূ’দের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের পরিম-ল- কতটা অর্বাচীন অন্ত:সারশূন্য, অকার্যকর তথা রুগ্ন ও দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে।

গত ৪ই এপ্রিল তাহারা যেই লাম্ফঝম্প দেখাইয়া ছিলো পরের সপ্তাহে ১১ই এপ্রিল মাত্র কয়েকশত বেশী পুলিশের উপস্থিতিতে ও পুলিশের এ্যাকশন নেয়ার হুমকিতে তাহাদের আন্দোলন কেমন নির্বাপিত হইয়া গেল। নিস্তেজ হইয়া পড়িল। তাহারা সবাই সটকাইয়া পড়িল। তাহারা সবাই নিস্ক্রিয় হইয়া পিছুটান দিলো।

অথচ ঐ উহারাই তাহার আগের সপ্তাহে পুলিশকে নির্বিকার পাইয়া তাহাদের উপর নির্বিচারে ঝাপাইয়া পড়িয়া তাহাদের মরণদশা তৈরী করিয়াছিল। পুলিশ মসজিদকে শ্রদ্ধা করিয়া প্রবেশ করে নাই বলিয়া সেটাকে সুযোগরূপে গ্রহণ করিয়া তাহারা মসজিদ হইতেই সমানে ইটবৃষ্টি করিয়া পুলিশকে রক্তাক্ত করিয়াছে। ক্ষত-বিক্ষত করিয়াছে।

প্রসঙ্গতঃ এইখানে অপর একটি বিষয় উল্লেখ করিতে হয়। উহারা বায়তুল মোকাররম যেমন পুলিশের উপর ইটবৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়াছিলো ঠিক একইভাবে তাহারা সুযোগ পাইলে রাজারবাগ শরীফের মাহফিলেও এইরূপ ইটবৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া উহাদের মজ্জাগত মৌলবাদী চেতনা ও জঙ্গীপনার প্রমাণ দেয়। আবার মিডিয়াকে প্রলুদ্ধ করিয়া সেই ঘটনাকেই বিকৃতভাবে উপস্থাপন করিয়া রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ঢোল সোহরত বাজায়।

এদিকে সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি এবং ইহুদী  আশীর্বাদ পুষ্ট মিডিয়াগুলো যাহা চাহিয়াছিল তাহা অযাচিতভাবে পাইয়া লুফিয়া নিলো এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিয়া রাখিলো।

মোষের পানি ঘোলা করিবার মত কারণ দেখাইবার জন্য বাংলাদেশ মৌলবাদীদের আক্রা হইয়া উঠিয়াছে, জাতীয় মসজিদও জঙ্গীরা দখল করিয়া লইয়াছে- এই দৃশ্য উহারা তৃপ্তির সহিত ধারণ করিলো, জমা রাখিলো। ভবিষ্যতে দুইয়ে দুইয়ে চার করিবার মওকা পাইলো।

অথচ পালের গোদা ও আঁতাতকারী কতিপয় নেতা ব্যতীত বাকী মৌলবাদীরা ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার ন্যায় শুধু লাফালাফি করিল। কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝিতে পারিলনা যে এই ষড়যন্ত্রের আন্দোলনের দ্বারা- তাহারা তাহাদের দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তি, পলায়নপর মানসিকতা, ইলম ও ঈমানী বলহীনতা প্রমাণের বিপরীতে- নিজেদের মৌলবাদী চেতনা ও জঙ্গীপনার নিখুত চিত্র প্রদর্শন করিল। সাম্রাজ্যবাদীদের কথিত মৌলবাদী-জঙ্গীবাদ নির্মূলের নামে আক্রমনের প্রেক্ষাপট তৈরী করিল।

আজকে তাহারা যেইসব ধারাকে ইসলাম বিরোধী বলিয়াছে মূলতঃ এ জাতীয় ধারাগুলি নিয়াই  ২০০৪ সালে জোট সরকারও নারী উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করে। এর আগে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারও প্রায় একই ধারার নীতিমালা ঘোষণা করে।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সালে কথিত নারী দশক এবং ১৯৯২-৯৫ এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী আন্দোলনগুলো যদি তাহারা বুঝিতেন তাহা হইলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আগে উহাদের নেতাদের বিরুদ্ধেই সোচ্চার আন্দোলনে নামিতেন।

উল্লেখ্য, আবশ্যক রাষ্ট্রধর্মী ইসলামের এই দেশে, শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের এই দেশে এই প্রথমবারের মত সরকার, ইসলাম বিরোধী কথিত নারী-নীতিমালা ঘোষণা করে নাই।

১৯৭৫-১৯৮৫ নারী দশক, ১৯৯২-১৯৯৫ অনুষ্ঠিত বিশ্ব সম্মেলনগুলোর গৃহীত কর্মসূচীর আলোকে জাতিসংঘ সিডও সনদ, ভিয়েনা মানবাধিকার কর্মসূচী এবং বেইজিং প্লাটফরম ফর অ্যাকশন কর্মসূচী ও কর্মপরিকল্পনার আলোকে তথাাকথিত এই নারী উন্নয়ণ নীতি ঘোষণা করা হইয়াছে।

উল্লেখ্য, নারী-পুরুষের সমতা সাধনে প্রণীত জাতিসংঘের সিডও সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে ১৯৮৪ সালেই।

ইহা ছাড়া ২০০০ সালে মিলেনিয়াম সামিট অধিবেশনে বাংলাদেশ অপশনাল প্রটোকল অন সিডওতে স্বাক্ষর করিয়াছে। নারী-পুরুষ সমতা বিধানের এই সনদে স্বাক্ষরকারী প্রথম ১০টি দেশের একটি হইতেছে বাংলাদেশ।

আজ উহারা মাত্র যে ১১টি ধারা সংশোধনের সুপারিশ করিয়াছে সেইগুলি হইলো ১.১, ১.৭, ১.১০. ৩.১, ৩.৪, ৩.৫, ৩.৯. ৪.১, ৪.৪, ৯.৫ এবং ৯.১০। ইহা ছাড়া  যে চারটি ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো- ৩.২, ৯.১৪.২, ৯.১৪.৩, ১০.৫ ও ১০.৬। তথাকথিত নারী উন্নয়ন নীতিমালায় অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, এর মধ্যে পারিবারিক জীবনের সর্বত্র নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা, বিদ্যমান  সব বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ করার বিষয় বলা হয়েছে।

যেসব ধারা নিয়ে পর্যালোচনা করা হইয়াছে, তাহার মধ্যে রহিয়াছে- ২ নম্বর ধারা। এতে বলা হইয়াছে, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি লক্ষ্য উন্নয়নের মূল স্রোতধারার সকল স্তরের নারীকে সম্পৃক্ত  করা ও তার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির মূল লক্ষ্য।

ইহা ছাড়াও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। ওই অনুচ্ছেদের ১.১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করা। ১.৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা।

ইহা ছাড়া পর্যালোচনায় স্থান পাওয়া ধারা এবং তাহার বিষয়গুলো হইতেছে, ১.১০ রাজনীতি, প্রশাসন ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে, আর্থ-সামাজিক কর্মকা-,শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং পারিবারিক জীবনের সর্বত্র  নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা।

৩.১ মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার সকল ক্ষেত্রে, যেমন রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ যে সমঅধিকারী তাহার স্বীকৃতিস্বরূপ নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ করা।

৩.৪ স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ধর্মে কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থি এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য বা অনুরূপ কাজ করা বা কোন উদ্যাগ না নেয়া।

৩.৯ এ বলা আছে, পিতা ওমাতা উভয়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচিতির ব্যবস্থা করা। যেমন- জন্ম নিবন্ধিকরণ, সকল সনদপত্র, ভোটার তালিকা, ফরম, চাকরির আবেদনপত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে ব্যক্তির নাম প্রদানের সময় পিতা ও মাতার নাম উল্লেখ করা।

৪.১ বাল্যবিবাহ, মেয়ে শিশু ধর্ষণ, নিপীড়ন, পাচার এবং পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা।

৪.৪-এ বলা হইয়াছে শিশু শ্রম বিশেষ করে মেয়ে শিশুশ্রম দূরীকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রতিবিশেষ গুরুত্ব, প্রদান করা।

৯.৫-এ বলা হইয়াছে, সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমানসুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া।

৯.১০-এ বলা হইয়াছে, সরকারের জাতীয় হিসাবসমূহে গার্হ্যস্থ শ্রমসহ সকল নারীশ্রমের সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করা।

৯.১৪.২ ধারায় বলা হইয়াছে, চাকরির ক্ষেত্রে নারীর বার্ধিত নিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবেশ পর্যায়সহ সকল ক্ষেত্রে কোটা বৃদ্ধি এবং কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

৯.১৪.৩-এ বলা হইয়াছে, সকল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুসৃত কোটা ও কর্মসংস্থান নীতির আওতায় চাকরির ক্ষেত্রে নারীকে সকল প্রকার সমসুযোগ প্রদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।

১০.৫ ধারায় বলা হইয়াছে, জাতীয় সংসদের এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ ও সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া।

১০.৬ ধারায় বলা হইয়াছে, জাতীয় সংসদে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

মূলতঃ জাতিসংঘ সিডও সনদে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করিবার সাথে সাথেই উপরোক্ত ধারাগুলোর ভিত্তিমূল তখনই গ্রোথিত হইয়া গিয়াছে।

কিন্তু সেই তখন হইতে উলামায়ে ছূ’রা ছিল একদিকে অজ্ঞতার অন্ধকারে। অপরদিকে নিজেদের ধর্মব্যবসার সুবিধাবাদী কৌশলী চক্রে। এই কারণে সামান্য পার্থক্য থাকিলেও উহারা জোট সরকারের আমলে ঘোষিত নারী নীতিমালার বা তাহারও পূর্বে আওয়ামী লীগ আমলেও কোন আওয়াজ তুলে নাই।

বরং আওয়াজ যাহা তুলিয়াছিল তাহা হইলো ‘এই যুগে নারী নেতৃত্ব জায়িয।’ সব নারী নেতৃত্ব জায়িয বলিবার কারণেই তাহারা খালেদা জিয়ার আচলে আশ্রয় লইয়া তৎকালে ঘোষিত নারীনীতির বিরুদ্ধে বলিবার যোগ্যতা ও ভাষা হারাইয়া ফেলিয়াছিল । কারণ স্বাভাবতঃই তখন কথা উঠিয়াছিল যে, এইযুগে যদি নারী নেতৃত্ব জায়িয হইতে পারে তাহলে নারী নীতিমালাও  জায়িয। নাঊযুবিল্লাহ। এই কথার ভয়েই উহারা তখন রা-চা করে নাই।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সেই সুবাদেই আজকের কথিত নারী-নীতিমালা ঘোষণা করা এতটা সহজ ও সম্ভব হইয়াছে অর্থাৎ আজকের ইসলাম বিরোধী তথাকথিত নারী নীতিমালার জন্য প্রথমে দায়ী ঐ উলামায়ে ছূ’ তথা ধর্মব্যবসায়ীরাই।

-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিলআলুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৪৯

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৮

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৪৯

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাউসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী