সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই ২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বছর পূর্বে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সমএর্ক বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মুল বিষয়বস্তু হলো-

৫. ‘ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে অত্যাবশ্যকীয় (ফরয) মনে করা হয় এবং যারা মুনাজাত করে না তাদেরকে তিরস্কার করা হয়।’ তাই এটা বিদয়াত।

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজত কা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তক্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরকার খপ্পর  থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াব: ‘ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে অভ্যাবশ্যকীয় (ফরয) মনে করা হয় এবং যারা মুনাজাত করে না তাদেরকে তিরস্কার করা হয়।’ তাই এটা বিদয়াত। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো- ফরয নামাযের পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যদি মুস্তাহাব ধরে নেওয়াও হয়, তথ্যাপি যেহেতু এটা নিয়ে ইসরার (বাড়াবাড়ি) হচ্ছে এবং জরুরী মনে করে দায়েমীভাবে আমল করা হচ্ছে, সেহেতু এটা বিদয়াত। কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদীর্ঘ হায়াত মুবারকে মাত্র একবার করেছেন বলে প্রমাণিত হয়। তাই সব সময় এটা আমল করা যাবে না। কেননা মুস্তাহাবের ভিতর কোন প্রকার বিদয়াত প্রবেশ করলে মুস্তাহাবকে তরক করা জরুরী।

হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। কারণ, তারা এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারবে না যে, মুস্তাহাব সর্বদা আমল করলে তা ফরয হয়ে যায় বা মুস্তাহাবকে জরুরী মনে করা নাজায়িয। তবে কেউ যদি মুস্তাহাবকে ফরয মনে করে, তবে সেটা নাজায়িয হতে পারে। এমন অনেক মুস্তাহাব রয়েছে, যা আমরা, এমনকি মুনাজাত বিরোধীরাও সর্বদা গুরুত্বের সাথে আমল করে থাকি।

‘জামিউর রুমুজ’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশ বৎসর যাবৎ ওযুতে পায়ের অঙ্গুলীর উপর দিয়ে খিলাল করে নামায পড়েছিলেন। পরে যখন জানতে পারলেন যে, পায়ের আঙ্গুলের নীচে দিয়ে খিলাল করা মুস্তাহাব, তখন তিনি বিশ বৎসরের নামায দোহরায়ে পড়েছেন। অথচ নামাযের মধ্যে কোন মুস্তাহাব তরক হলে নামায দোহরানোর আদেশ শরীয়তে নেই। তথাপিও মুস্তাহাবের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তিনি এরূপ করেছিলেন। এখন মুনাজাত বিরোধীদের নিকট প্রশ্ন হলো- মুস্তাহাবকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বা জরুরী মনে করে, তিনি কি নাজায়িয কাজ করেছেন? (নাউজুবিল্লাহ) কখনও নয়। এমনিভাবে মুস্তাহাবকে সর্বদা আমল করলেও তা যেমন ফরয হয় না, তদ্রুপ বিদয়াতও হয় না। কেননা কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-

(২) নামাযের শাব্দিক নিয়ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিল না। হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণের যুগেও নয়, পরে হয়েছে। ইমামগণ এটাকে মুস্তাহাব বলেন। আর তাও সর্বদাই করা হয়, তাহলে এটাও কি ফরয হয়ে যাবে? (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

(৩) খুতবাতে খুলাফায়ে রাশেদার নাম উল্লেখ করা মুস্তাহাব। আলিমগণ সব সময় তা করে আসছেন, তাহলে এটা কি ফরয হয়ে গেছে?

(৪) কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা মুস্তাহাব, সকলেই তা গুরুত্বোর সাথে সর্বদা আমল করে থাকেন। তবে এটাও কি ফরয হয়ে গেল?

(৫) আওওয়াবিন, ইশরাক, চাশত, দুখুলুল মসজিদ, তাহিয়্যাতুল ওযু,তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নামাযসমূহ মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত এবং অনেকে তা সর্বদাই আমল করে থাকেন। তবে কি এগু?েলাও বিদয়াত? নাউজুবিল্লাহ!

এমনিভাবে এমন অনেক মুস্তাহাবই রয়েছে, যা আমরা সর্বদা গুরুত্বের সাথে আমল করে থাকি। সেগুলোকে তো কেউ নাজায়িয, বিদয়াত ফতওয়া দেয়নি।

মুস্তাহাব আমল সর্বদা করার ব্যাপারে আল্লাহ পাক উনার কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

وهم على صلوتهم دائمون.

অর্থ: “তারা সর্বদা তাদের (নফল) নামায আদায় করতো।”

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে ‘সিরাজুম মুনীরে’ উল্লেখ রয়েছে,

هم الذين يكثرون فعل التطوع.

অর্থ: “যারা অধিক নফল ইবাদত করেন, তারাই উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত মুছল্লী।”

আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,

احب الا عمال الى اله ادومها وان قل.

অর্থ: “পরিমানে কম হলেও নেক কার্য (নফল) সর্বদা করা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক প্রিয়।”

হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن عائشة رضى الله عنها ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل ائ الا عمال احب الى الله قال ادومه وان قل.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন আমল আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক পছন্দনীয়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, পরিমানে অল্প হলেও (মুস্তাহাব) নেক কার্য সর্বদা আমল করা।” (মুসলিম শরীফ)

শুদু তাই নয়, আল্লাহ পাক তিনি হাদীছে কুদসীতে মুস্তাহাব আমল সর্বদা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لا يزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه فاذا احببته كنت بصره الذى يبصر به كنت سمعه الذى يسمع به كنت لسانه الذى ينطق به كنت يده التى يبطش بها كنت رجله التى يمشى بها.

অর্থ: “আমার বান্দাগণ সর্বদা নফল (মুস্তাহাব) আমলের দবারা আমার এতটুকু নৈকট্য হাসিল করে যে, আমি তাদেরকে মুহব্বত করি। আর আমি যখন তাদেরকে মুহব্বত করি, তখন আমি তার চোখ হয়ে যাই, সে আমার চোখে দেখে। আমি তার কান হয়ে যাই, সে আমার কানে শোনে। আমি তার জবান হয়ে যাই, সে আমার জবানে কথা বলে। আমি তার হাত হয়ে যাই, সে আমার হাতে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, সে আমার পায়ে হাঁটে।” (মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ বান্দা মুস্তাহাব আমল সর্বদা করতে করতে আল্লাহ পাক উনার পূর্ণ অনুগত হয়ে যায়।

মূলকথা হলো- মুস্তাহাবকে যদি ফরয মনে করা না হয় এবং তা সর্বদা আমল করা হয়, তবে তা কখনো নাজায়িয হতে পারে না। কাজেই মুনাজাতকে কেউই ফরয-ওয়াজিব মনে করে না এবং কেউ বলেওনি যে, মুনাজাত করা ফরয। সকলেই মুনাজতকে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে থাকেন। আর তাই দেখা যায়, ফরয নামাযের পর মুনাজাতের পূর্বে কেউ কেউ চলে যায়। অথচ তাদেরকে বাঁধথা দেওয়া হয় না এবং মুনাজাত তরক করার কারণে তাদেরকে দোষারোপও করা হয় না। তবে হ্যাঁ যারা সুন্নত বা মুস্তাহাব আমলকে গুরুত্ব দেয়না অথবা যারা বিদয়াত মনে করে মুনাজাত না করে চলে যায় তাদেরকেই মুলত, দোষারোপ করা হয় বা তিরস্কার করা হয়। আর তাও মুলত: তাদের হিদায়েতের জন্য। কাজেই যারা সুন্নতকে বিদয়াত বলে এবং মুনাজাতকে বিদয়াত মনে করে বা মুনাজাত না করে চলে যায় তাদের তিরস্কার করা শরীয়ত বিরোধী কাজ বা বাড়া বাড়ী নয় বরং সম্পূর্ণই শরীয়তসম্মত।

কাজেই মুনাজাত নিয়ে ইসরার বা বাড়াবাড়ী করা হয় বা মুনাজাতকে ফরয মনে করা হয় এবং যারা মুনাজাত করে না তাদেরকে তিরস্কার করা হয় হাটহাজারী মৌলবীদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন।

আর কোন আমল মূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি একবার করলেই যে তা সব সময় আমল করা যাবে না, এ কথার দলীল কোথায়? চামড়ার মোজা তো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনে মাত্র এক জোড়া, তাও কয়েকবার ব্যবহার করেছেন। অথচ অনেকে সব সময়ই তা ব্যবহার করে থাকেন। অনুরূপ তারাবীহ নামায নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনে চার (৪) দিন জামায়াতে আদায় করেছেন। অথচ আমরা সব সময় তা জামায়াতে আদায় করে থাকি।

সুতরাং কোন বিষয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে যদি একবারও ছাবিত থাকে, তবে সেটাই সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত আর তা ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে মুস্তাহাব বা সুন্নতের নিয়তে সব সময় আমল করলেও নাজাুয়য বা বিদয়াত হবে না।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, মুস্তাহাবকে সর্বদা গুরুত্বের সাথে আমল করলে তা যেমন ফরয-ওয়াজিব হয় না, তদ্রুপ নাজায়িয ও বিদয়াতও হয় না। সুতরাং উক্ত মুনাজাতকেও যদি কেউ মুস্তাহব জেনেই সর্বদা আমল করে, তবে সেটা কখনো নাজায়িয ও বিদয়াত নয়।

আর যদি কেউ অজ্ঞতার কারণে উক্ত মুনাজাতকে ফরয মনে করেই, তবে যে ব্যক্তি মুনাজাতে কোন প্রকার বিদয়াত প্রবেশ করেই, তবে যে ব্যক্তি মুনাজতকে ফরয মনে করে, তার আক্বীদাকে সংশোধন করতে হবে এবং মুস্তাহাবের মধ্যে প্রবেশকৃত বিদয়াতকে দুরিভূত করতে হবে। মুস্তাহবকে তরক করা যাবে না। কারণ আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য উছূল হলো মুস্তাহাবের মধ্যে কোন বিদয়াত বা নাজায়িয কাজ প্রবেশ করলে, বিদয়াত বা নাজায়িয কাজকে ছেড়ে দিতে হবে, মুস্তাহাবকে তরক করা যাবে না।

এর দলীল হলো- আশুরার রোযা। প্রথমত: আশুরার রোযা ১০ই মুহররম একটি রাখার নিয়ম ছিল, কিন্তু যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন যে, ইহুদীরাও ১০ই মুহররম একটি রোযা রেখে থাকে, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,

صوموا يوم عاشوراء وخالقوا فيه اليهود وصوموا اقبه يوما اوبعده يوما.

অর্থ: “তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ এবং তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন রোযা রেখে ইয়াহুদীদের খেলাফ কর।”

এখানে বিদয়াত তো দূরের কথা, তাশাব্বুহ বা হারাম হওয়া সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোযাকে বাদ দিলেন না, বরং মূল আমলকে ঠিক রেখে তা তাশাব্বুহ দূর করে দিলেন, আরেকটি রোযা রাখার নির্দেশ দিয়ে। সুতরাং উক্ত মত পোষণকারীদের ক্বিয়াস দলীল বহিভর্’ত এবং বাতিল ক্বিয়াস হিসেবে পরিগণিত।

সুতরাং যারা বলে মুস্তাহাবের ভিতর বিদয়াত প্রবেশ করলে মুস্তাহাব ছেড়ে দিতে হবে, তাদের একথা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মুনাজাত বিরোধীরা কুরআন-সুন্নাহ থেকে একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না যে, মুস্তাহাবের ভিতরে বিদয়াত প্রবেশ করলে মুস্তাহাবকে ছেড়ে দিতে হবে। বরং হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهورد.

অর্থ: “যে এ দ্বীনে কোন বিদয়াতের প্রবর্তন করবে, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।”

অতএব, মুস্তাহাবের ভিতর বিদয়াত প্রবেশ করলে বিদয়াত দূর করে দিতে হবে, মুস্তাহাবকে তার স্থানে বহাল রাখতে হবে।

মূলকথা হলো- হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা যে, বলছে ‘ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে অত্যাবশ্যকীয় (ফরয) মনে করা হয় এবং যারা মুনাজাত করে না তাদেরকে তিরস্কার করা হয়।’ তাই এটা বিদয়াত।

তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো। (চলবে)

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল: “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ: ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহবিদগনের সর্বসম্মতিক্রম বর্তমানে তা সমপূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াব: “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। নি¤েœ মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য খ-ন করে সঠিকও দলীল ভিত্তিক জাওয়াব পেশ করা হলো-

মাসিক মদীনায় প্রদত্ত দলীলের খ-ন মূলক আলোচনা

উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব তার মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলঅমের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ: ১৮০)

এর জবাবে বলতে হয় যে, “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ধোকাপূর্ণ ও প্রতারণা মূলক। কারণ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব বলেছে, “ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” অথচ ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে  বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণ নিষেধ।” এধরনের কোন ইবারত, কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। বরং ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবেই তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে- যেমন, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

অর্থ: “(আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা) এটাকে তাছবীব বলা হয়। জরুরতে তাছবীব করাকে জায়িয বলা হয়েছে।”

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব ফতওয়ায়ে দারুল উলুম কিতাবের ১ম খ-ের ১৮০ পৃষ্ঠার বরাত দিয়ে যে বলেছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ শাসেত্রর পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো।

দ্বিতীয়ত: সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে একথাই উল্লেখ আছে যে, “ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে বিশেস করে মুতাআখখিরীন ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তাছবীব করা সম্পূর্ণই জায়িয ও সুন্নর- মুস্তাহসান।”

“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وعن أبى حنيفة رحمه الله أنه ينبغى للمؤذن أن يمكث بعد الأذان قدر ما يقرأ الانسان عشرين اية ثم يثوب.

অর্থ:- “ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, মুয়াজ্জিনের উচিত হবে আযানের পর মানুষ যেন বিশ আয়াত পরিমাণ পড়তে পারে এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা অত:পর পুনরায় নামাযের জন্য মানুষদেরকে তাছবীব করা।”

وعن أبى يوسف رحمة الله عليه أن التثويب بعد الأذان والاقامة بساعة.

অর্থ: “ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে আযানের পর তাছবীব করবে এবং কিছুক্ষণ পর ইক্বামত দিবে।”

“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫১৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

قال محمد رحمة الله عليه فى الجامع الصغير التثويب الذى يثوب الناس فى الفجر بين الأذان والاقامة “حى على الصلاة حى على الفلاح” مرتين حسن.

অর্থ: “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি জামে’ ছগীর কিতাবে বলেছেন, ফযরে আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার

حى على الصلاة وحى على الفلاح.

)হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে সকল মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করা উত্তম।” (অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমরাদের বা বিশেস ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-ছাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য।”

“আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

অর্থ: “মুতাক্বাদ্দিমীন ও মুতাআখখিরীন ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাছবীব করাকে মুস্তাহসান বলেছেন। আর মুসলমানগণ যেটাকে উত্তম বলেছেন সেটা আল্লাহ পাক উনার নিকটও উত্তম। আর আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, মুমিনগণ যেটাকে উত্তম মনে করেন সেটা আল্লাহ পাক উনার নিকটও উত্তম।” “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

وفى شرح مختصر الكرخى للقدورى: ويثوب وهو قائم كالاذان فى قول أبى حنيفة رحمة الله عليه وأبى يوسف رحمة الله عليه قال الحسن وفيه قول يسكت بعد الاذان ساعة حتى يقول حى على الصلوة حى على الفلاح وبه نأخذ.

অর্থ: “শরহে মুখতাছার কারখী লিল-কুদূরী” কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক ক্বওল মতে তাছবীবও আযানের মত দাঁড়িয়ে দিবে। অর্থাৎ আযান যেখাবে দাঁড়িয়ে দেয় তাছবীবও সেভাবে দাঁড়িয়ে দিতে হবে। তবে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তাছবীব করার ব্যাপারে একটা মত আছে, তা হলো আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে, অত:পর

حى على الصلوة وحى على الفلاح. (হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে তাছবীব করবে। আর وبه ناخذ  এই মতটি আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে অত:পর

حى على الصلوة وحى على الفلاح. (হাইয়া আলাছ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে তাছবীব করবে। এরই উপর ফতওয়া।

“আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

العلماء المتأخرون استحسنوا التثويب فى الصلوات كلها لظهور التوانى فى الامور الدينية.

অর্থ: “উলামায়ে মুতাআখখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহসান বলেছেন।”

সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও ডাহামিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, তাছবীব সম্পর্কিত তার বক্তব্যও ভুল ও অশুদ্ধ। (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল: চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যার প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ ও রদ্দুল মুহতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…….।

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াব: আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ বা প্রাধান্যাপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারন আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।

হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।

রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দে”য়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নি¤েœ পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীলসমুহের খ-ন মূলক আলোচনা

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, “আযানের জবাব দূ’ধরনের হয়ে থাকে।”

 এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযানের জবাব দু’ধরনের নয়। বরং আযানের জবাব এক ধরনের বা একটি। আর তা হলে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।”

যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খ-ের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ينبغى لمن سمع الاذان ان يقول كما يقول المؤذن حتى يفرغ من اذانه وهو مذهب أهل الظاهر ايضا وقال الثورى وابو حنيفة وابو يوسف ومحمد واحمد فى الاصح .

অর্থ: “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি মুয়াজ্জিন যতক্ষন পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত আযান শ্রোতার উপর ওয়াজিব। আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার الاصح বা অধিক ছহীহ মতে আযান শ্রতাদের জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

“ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খ-ের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

استدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه قال الحنفية.

অর্থ: “হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটি ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটা ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লিখিত فقولوا  শব্দটি ভিত্তিতে দলীল গ্রহন করে আমাদের হানাীগণ বলেন, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

অতএব, প্রমাণিত হলো, আযানের জবাবব দেয়া দু’ধরনের নয়। বরং আযানের জবাব এক ধরনের বা আযানের জবাব একটি। আর তা হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। থাকে ফিক্বহ শাস্ত্রের পরিভাষায়  الاجابة بالقول বলে।

দ্বিতীয়ত: রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, “তবে আমাদের হানাফীদের মতে- ঋত¯্রাব ও নেফাস চলাকালীন অবস্থায় আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব নয়।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে আর  বিশেষ করে মহিলারা স্বাভাবিক মাজুরতা বা সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হয় তথাপিও জবাব দেয়া ওয়াজিব।”

যেমন, “দুররুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويجيب وجوبا ……… من سمع الاذان ولو جنبا ………. بان يقول بلسانه.

অর্থ: “যে ব্যক্তি আযান শুনবে…. তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে জুনুবা বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”

খোলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومن سمع الاذان فعليه ان يجيب وان كان جنبا.

অর্থ: “যে ব্যক্তি আযান শুনবে, তর উপর ওয়াজিব হলো, মৌখিক আযানের জবাব দেয়া যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খ-ের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

অর্থ: “ঐ সকল ব্যক্তিদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যে সকল ব্যক্তিরা আযান শুনবে। যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ২৫৯ পৃষ্ঠঅয় আরো উল্লেখ আছে,

وفى الخلاصة ومن سمع الاذان فعليه ان يجيب وان كان جنبا.

অর্থ: “খুলাছাতুল ফতওয়া নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তার জন্য ওয়াজিব হলো আযানের জাওয়াব দেয়া যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”

তাছাড়া হাদীছ শরীফ-এ কাউকে পাক-নাপাক নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং আমভাবে বলা হয়েছে, যে আযান শুনবে সেই আযানের জবাব দিবে। চাই সে নাপাক অবস্থায় থাকুক অথবা পাক-পবিত্র অবস্থায় থাকুক।

যেমন হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ কিতাব “বুখারী শরীফ-এর” ১ম খ-ের ৮৬ পৃষ্ঠায় ও মুসলিম শরীফ-রে ১ম খ-ের ১৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما يقول المؤذن.

অর্থ:- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বল।” (অনুরূপ “তিরমিযী মরীফ-এর” ১ম খ- ২৯ পৃষ্ঠা “আবূ দাউদ শরীফ”-এর ১ম খ- ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)

অতএব, প্রমাণিত হলো, হায়েয-নিফাস চলাকালীন অবস্থায় অর্থাৎ জুনুব বা নাপাকী অবসথায়ও মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের সঠিক ফতওয়া।

অপর পক্ষে রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্নিত নেই।……”

এখন আমার সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত হতাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরান, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি বরং সম্পূর্ণই ডাহামিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ উনার জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলবী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহামিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়ত সম্মত, যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে উম্মত ও মুসতাহসান।”

আর ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। যদি তাই হয়, তাহলে কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে, এবং ইজামা-ক্বিয়াসের কোথায়, কোন ইবারতে প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি শরীয়ত পরিপন্থী বলা হয়েছে, তা হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা ও ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি।

সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও ডাহামিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেছেন,

هاتوا يرها نكم ان كنتم صدقين.

অর্থ: “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলীল প্রমাণ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা-১১১)

সুতরাং হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা যদি তাদের উক্ত বক্তব্যে সত্যবাদী হয়ে থাকে, তাহলে তারা যেন কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ উল্লেখ করে প্রমাণ করে দেয় যে, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী।

কিন্তু কাশ্মিনকালেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ ও ইজমা-ক্বিয়াসের ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করে প্রমাণ করতে পারবে না যে, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম উভয়টি ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, তাদের উক্ত বক্তব্য মনগড়া, দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, ডাহামিথ্যা, এবং কুফরীমূলক হয়েছে। আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত। কারণ আল্লাহ পাক তিনি বলেন,

لعنت الله على الكذبين.

অর্থ: “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান-৬১)

দ্বিতীয়ত: ইসলামী শরীয়ত বলতে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াসকে বুঝায়। অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, কিয়াসের অনেক প্রমাণ রয়েছে।

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে মীলাদ ও ক্বিয়ামের প্রমাণ।

যেমন, মীলাদ শরীফ-এর আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করা। আর উনার ছানা-সিফতের মূল উৎসই হচ্ছে কুরআন শরীফ।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

كان خلقه القران.

অর্থ: “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরিত্র মুবারকই হচ্ছে কুরআন শরীফ।” তাফসীরে মাযহারী)

আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

قد جاء كم من الله نور وكتب مبين.

অর্থ: “অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর ও প্রকাশ্য কিতাব এসেছে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা-১৫)

هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيد. محمد رسول الله.

অর্থ: “তিনিই (আল্লাহ পাক) উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত ও সত্য দ্বিীনসহ পূর্বের ওহী দ্বারা নাজিলকৃত সমস্ত কিতাব ও ছহীফা এবং পূর্বের ও পরের সমস্ত মানব রচিত মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট। হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার রসূল।” (পবিত্র সূরা ফাতহ-২৮, ২৯ আয়াত শরীফ)

ولكن رسول الله وخاتم النبين.

অর্থ: “বরং তিনি আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং শেষ নবী।” (পবিত্র সীরা আহযাব-৪০ আয়াত শরীফ)

অর্থ: “আমি (আল্লাহ পাক) আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” (পবিত্র সূরা আলাম নাশরাহ-৪ আয়াত শরীফ)

واذ اخذ الله ميثاق النبين لما اتيتكم من كتب وحكمة ثم جاء كم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال ءاقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فاشهدوا وانا معكم من التهدين.

অর্থ: “আর যখন মহান আল্লাহ পাক নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো, অত:পর যখন সেই রসূল আগমন করে আপনাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা সত্য প্রতিপাদন করবেন। অতএব, আপনারা উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং উনার খিদমত করবেন। তিনি (আল্লাহ পাক উনাদেরকে) বললেন, আপনারা কি স্বীকার করে নিলেন? এবং আপনাদের প্রতি আমার এ অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন? উনারা (নবীগণ) বললেন, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তিনি (আল্লাহ পাক) তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমারান-৮১ আয়াত শরীফ)

এরূপ অনেক আয়াত শরীফ-এ আলাদাভাবে আখিরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, ফযীলত-মর্তবা প্রকাশ্যভাবে বর্ণনা তো করা হয়েছেই তবে মুফাসসিরীনে কিরামগণ বলেছেন, মূলত: কুরআন শরীফ-এর প্রতিটি পারা, সূরা, রুকু, আয়াত, কালিমা, হরফ এমনকি নুকতা ও হরকতে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-সিফত করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!

অতএব, উল্লিখিত বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট হলো যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ উভয়টি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

আর কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়কে নাজায়িয বলা প্রকাশ্য কুফরী। মুসলমান হয়ে যারা কুফরী করে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা মুরতাদ ও কাফির। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নি¤েœাক্ত ১২৩৭ নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসা: ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন যে, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযিলতের। তাদের মত বক্তৃতা না বয়ান কারো হবে না। ….তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

……. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরান শরফি, সুন্নাহ শরীফ, ইজাম ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নি¤েœ সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খ-মূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতার বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্বানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরাআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে উনারাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, ২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীয়া ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করে না। বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর-মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নি¤েœ এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত দলীল-আদিল্লাসহ পেশ করা হলো।

ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়ত

ইবাদতে জাহিরাহ ও ইবাদতে বাতেনাহ সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য উভয় বিষয় সম্পর্কে অন্তত: জরুরত আন্দাজ ইলম অর্জন করা ফরয। কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

العلم امام العمل

অর্থ: “ইলম হচ্ছে আমলের ইমাম।”

 বিখ্যাত কবি, জগদ্বরেণ্য সূফী সাধক, হযরত শায়খ সা’তী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহুর কিতাব “কারীমাতে” উল্লেখ করেন যে,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………..

অর্থ: ইলমহীন ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ চিনতে পারে না। অর্থাৎ পূর্ণ মা’িরিফত মুহব্বত অর্জন করতে পারে না। যার কারণে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন,

طلب العلم فريضة على كل مسم ومسلمة.

অর্থ: “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইলম অর্জন করা ফরয।”

(বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ ছবীহ, শরহুত ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)

অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

كن عاما اومتعلما اومستمعا اومحبا ولاتكن الخامسى فتهلكى.

অর্থ: “তুমি আলিম হও অথবা তালেবে ইলম (ছাত্র) হও অথবা (ইলমের মজলিসে) শ্রোতা হও অথবা (ইলম ও আলিমকে) মুহব্বতকারী হও, পঞ্চম হয়োনা, তবে হালাক বা ধ্বংস হয়ে যাবে।”

تعلموا العلم وعلموه الناس.

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “তোমরা ইলম শিক্ষা কর এবং তা মানুষকে শিক্ষা দাও।” (দারিমী, দারে কুৎনী, মিশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুবাহিরে হক্ব, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ)

শুধু তাই নয়, এছাড়াও অসংখ্য, অগণিত হাদীছ শরীফ-এ ইলম অর্জন করার জন্য তাকীদ দেয়া হয়েছে এবং ইলম ও আলিমের অশেষ ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। যদ্বারা ইলম অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইবাদত যেহেতু দু’প্রকার অর্থাৎ ইবাদতে জাহেরাহ ও ইবাদতে বাতেনাহ সেহেতু তৎসম্পর্কিত ইলমও দু’প্রকার- ইলমে যাহির ও ইলমে বাতেন, তথা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ।

ইলমে ফিক্বাহ হাছিল করার মাধ্যমে বান্দা সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে ইবাদতে জাহিরাহ অর্থাৎ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, মুয়ামিলাত, মোয়াশেরাত ও আক্বাইদ ইত্যাদি বাহ্যিক ইবাদতসমূহ পালন করতে পারবে।

আর ইলমে তাছাউফ হাছিল করার মাধ্যমে বান্দা ইবাদতে বাতেনাহ অর্থাৎ নিজ অন্তর সমূহকে ইবাদতে জাহিরাহ বিনষ্টকারী কুস্বভাব বা বদ খাছলত থেকে হিফাযত করে ইখলাছের সহিত ইবাদতে জাহিরাহসমূহ পালন করে মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী মা’রিফত ও মুহব্বত হাছিল করতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,

العلم علمان علم فى القلب فذاكى العلم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله غزوج على ابن ادم.

অর্থ: “লিম দু’প্রকার- (১) ক্বালবী ইলম অর্থাৎ লিমে তাছাউফ, আর এটাই মূলত: উপকারী ইলম। (২) যবানী ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ, যা আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল। (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলমী, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ আশয়াতুল লুময়াত, দুময়াত, মোবাহেরে হক্ব।

আর এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় মালেকী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মা, তাজুল মুজতাহিদীন, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

من تفقه ولم يتصوف فقد تفق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করলো কিন্তু ইলমে তাছাউফ অর্জন করলো না, সে ব্যক্তি ফাসেক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাউফের দাবী করে অথচ ইলমে ফিক্বাহ বা শরীয়ত স্বীকার করেনা, সে ব্যক্তি যিন্দীক। আর যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ ও লিমে তাছাউফ উভয়টাই অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই মুহাক্কিব অর্থাৎ মু’মিনে কামেল।” (মিরকাত শরহে মিশকাত) (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ্য করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে তারাবীহ নামায বিশরাকায়াত পড়ে” এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে

نقل الحافظ الحديث ابن الحجر العسقلانى رحمه الله  تعالى عنه الامام الرافعى رحمه الله  تعالى انه  صلى الله عليه وسلم صلى بالناس عشرين  ركعة  ليلتين فلما كان فى لليلة الثالثة اجتمع الناس فلم يخرج اليهم ثم قال من الغد انى خشيت ان تفرض عليكم فلا تطيقونـها.

অর্থঃ হাফিজুল হাদীছ, ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম রাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের সাথে দু’রাত্রি বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়লেন। যখন তৃতীয় রাত্রি আসলো, তখন লোকজন একত্রিত হলো, কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের নিকট আসলেন না। অতঃপর বললেন, আমার আশংকা হচ্ছে যে, এটা তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায় কিনা। আর যদি এটা ফরয হয়ে যায় তাহলে তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। এই হাদীছ শরীফখানা ছহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে সকলেই একমত। (তালখীছুল হাবীর ফি তাখরীজে আহাদীছির রাফিয়িল কাবীর, অনুরূপ লামিউদ দুরারী শরহে ছহীহিল বুখারী, মিরকাত শরহে মিশকাতে বর্ণিত রয়েছে)

عن سائب بن يزيد قال كنا نقوم من زمن عمربن الخطاب رضى الله عنه بعشرين ركعة والوتر.

ব অর্থ: হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াললাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়েছি ও বিতর নামায পৃথক আদায় করেছি। (সুনানুল মা’রিফাহ লিল বাইহাকবী, তা’লীকুল হাসান, ই’লাউস সুনান, তাহাবী শরহে মায়ানিয়িল আছার)

عن يحبى بن سعيد ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه امر رجلا يصلى بهم عشرين ركعة.

অর্থ: হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত- নিশ্চয় হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক ব্যক্তিকে সকল লোকদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা, ই’লাউস সুনান, ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার, ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম)

عن محمد بن كعب قال كان الناس يصلون فى زمان عمر بن الخطاب فى رمضان عشرين ركعة.

অর্থ: মুহম্মদ ইবনে কা’ব রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, লোকেরা (ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ) আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যামানায় (খিলাফতকালে) রমাদ্বান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায গড়েন। (ক্বিয়ামুল লাইল পৃষ্ঠা-৯১)

عن ابى الحسناء ان على بن ابى طالب رضى الله تعالى عنه امر رجلا ان يصلى بالناس خميس ترويحات عترين ركعة.

অর্থ: হযরত আবুল হাসানা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয় হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক ব্যক্তিকে সকলকে নিয়ে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়ার নির্দেশ দেন। (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, অনুরূপ মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা, আল জাওহারুন নক্বী, কানযুল উম্মাল, ই’লাউস সুনান, উমদাতুল ক্বারী, আইনী শরহে বুখারীতে বর্ণিত রয়েছে)

عن شائب بن يزيد قال كانوا يقومون على عهد عمر رضى الله تعالى عنه بعشرين ركعة وعلى عهد عثمان وعى مثله.

অর্থ: হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্নিত- তিনি বলেন, লোকেরা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়তেন। অনুরূপ হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালেও বিশ রাকায়াত তারাবীহ নামায পড়া হতো। (আইনী শরহে বুখারী, উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম)

عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب رضى الله عنه يصلى بالناس فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاث.

অর্থ: হযরত আব্দুল আযীয ইবনে রফী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফ-এর রমাদ্বান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ ও তিন রাকায়াত বিতর নামায পড়েন। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শাইবা, অনুরূপ আছারুস সুনান, তা’লীকুল হাসান, ই’লাউস সুনান, ফিক্বহুস সুনানে ওয়াল আছার, ফতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, বজলুল মাজহুদ শরহে আবী দাউদে উল্লেখ আছে। (চলবে)

ডা: মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়াল: কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলা দিয়েও কোন দোয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। নাউযুবিল্লাহ!

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দোয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াব: হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দোয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি উনাদের অজুদ মুবারক, উনাদের নাম মুবারক ও উনাদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্য মহান ওসীলা। এই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দোয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগি, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এর বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলত: হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগ বেং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো-

১৯. বাদশা’র অবস্থানের জন্য উত্তম স্থান, ভাল আবহাওয়া এবং আরো অনেক বিষয়ের আয়োজন করা হয়। যে ব্যক্তি বাদশাহর কাছে গিয়ে সববে তখন সেও ঐ সবল বস্তু হতে উপকৃত হয়।

অনুরূপভাবে যেখানে আল্লাহ তায়ালার’র প্রিয় বান্দাগণ অবস্থান করেন সেখানে আল্লাহ তায়ালার রহমত বিরাজ করে। যারা ইখলাছের সাথে উনাদের দরবার শরীফ-এর উপস্থিত হন তারা সেই রহমত লাভে ধন্য হন। ফলে তারা ইহকাল-পরকাল উভয় জগতে ফায়দা লাভ করেন। এটাই হলো ওসীলা। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يشفع يوم القيامة ثلاثة الانبياء ثم العلماء ثم الشهداء.

অর্থ: ক্বিয়ামতের ময়দানে তিন সম্প্রদায় সুপারিশ করবেন- ১. হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ, ২. হক্বানী-রব্বানী তথা আওলিয়ায়ে কিরামগণ, ৩. শহীদগণ।

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, যখন হিসাব-নিকাশ শেষ হয়ে যাবে দেখা যাবে, বহু সংখ্যক আখিরী উম্মতের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যাবে। আল্লাহ পাক তাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্যে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে পাঠাবেন যে, আপনি গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন তারা জমিনে থাকতে আমার কোন ওলী-বন্ধুর দরবার শরীফফে গিয়েছিল কিনা, মাহফিলে-মজলিসে বসেছিল কিনা, পিছনে পিছনে হেঁটেছিল কিনা, একই ঘরে বসবাস করেছিল কিনা, মেহমানদারী বা কোন খিদমত করেছিল কিনা? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে জিজ্ঞাসা করবেন। তারা জবাবে বলবে, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! হ্যাঁ, আমাদের সাথে অমুক ব্যক্তির সম্পর্ক ছিল যার সাথে অমুক আল্লাহ পাক উনার ওলী-বন্ধুর সম্পর্ক ছিল। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম লোকদের এ জবাব যখন আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌছাবেন, আল্লাহ পাক তখন ফেরেশতাকে নির্দেশ দিয়ে পাঠাবেন, তাদেরকে গিয়ে বল যে, আল্লাহ পাক উনাদের ক্ষমা করে জান্নাত দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

মুলত: আল্লাহ পাক উনার নেক বান্দাগণের ওসীলায় বান্দা ও উম্মত দুনিয়াতে কবরে, হাশরে-নশরে, মীযান, পুলছিলাত সবখানেই ফায়দা লাভ করে থাকে।

যেমন বান্দা ও উম্মতের জন্য দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে ঈমানের সাথে থাকা এবং ঈমানের সাথে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়া। এ নিয়ামত লাভের ওসীলা বা মাধ্যম হচ্ছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ। অত:পর আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ।

যেমন এ প্রসঙ্গে মাশহুর ওয়াক্বিয়া বর্ণিত রয়েছে যে, মানতিকের ইমাম হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি মাদরাসায় লেখা০পড়া শেষ করেছেন। তিনি পড়েছেন, ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয় প্রকার ইলমই অর্জন করতে হবে। প্রত্যেকের জন্য সেটা ফরয। তিনি তো ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করেছেন মাদরাসায় গিয়ে। কিন্তু তখন পর্যন্ত উনার ইলমে তাছাউফ অর্জন করা হয়নি। তাই তিনি ইলমে তাছাউফ অর্জন করার জন্য আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ গেলেন। গিয়ে বললেন, হুযূর! আমি আপনার কাছে বাইয়াত হতে এসেছি। আল্লাহ পাক উনার ওলী জিজ্ঞাসা করলেন তোমরার নামি কি? তিনি বললেন, আমার নাম ফখরুদ্দীন। আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন, কোন ফখরুদদীন, যিনি মানতিকের ইমাম? তিনি জবাব দিলেন, জী হুযূর! আমি সেই ফখরুদ্দীন। আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন। অত:পর সবক দিয়ে বললেন, তোমার ভিতর মানতিকের ইলম পরিপূর্ণ। কাজেই, তুমি আগামী এক বছর যাহিরী কোন পড়া-শুনা না করে নিরিবিলি অবস্থান করে ইলমে তাছাউফ বা তরীক্বতের সবক আদায় করতে থাক। মুর্শিদ ক্বিবলার নির্দেশ মুতাবিক তিনি নিবিবিলি অবস্থান করে তরীক্বতের সবক আদায় করতে লাগলেন। এরপর তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন মুর্শিদ ক্বিবলা তো পড়াশুনা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু লিখতে তো নিষেধ করেননি। এ চিন্তা করে তিনি তরীক্বতের সবক আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে কুরআন শরীফ-এর তাফসীর লিখতে শুরু করলেন এবং বেশ কিছু অংশ তাফসীর লিখলেন। যা তাফসীরে কবীর হিসেবে আজ সারা বিশ্বে মশহুর। বছর শেষে তিনি যখন উনার মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে দেখে বললেন, তোমার তো ইলমে মানতিক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বললেন, তোমার ভিতরে ইলমে তাছাউফ প্রবেশ করাতে হলে ইলমে মানতি কমাতে হবে এবং এটা বলে তিনি ইলমে মানতি কমানোর জন্য ফয়েজ নিক্ষেপ করলেন। এতে হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভিতরে কটকট শব্দ হতে লাগলো। তিনি মুর্শিদ ক্বিবলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আমার ভিতরে কিসের শব্দ হচ্ছে। মুর্শিদ ক্বিবলা বললেন, তোমার ভিতরে মানতিকের যে অতিরিক্ত ইলম সেটা কমিয়ে দিচ্ছি। তিনি বললেন, হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন, ফখরুদ্দীনের ফখরই তো ইলমে মানতিক। তা না কমানো;র জন্য তিনি আরজু পেশ করলেন এবং মুর্শিদ ক্বিবলার সবক নিয়ে নিজের এলাকায় চলে আসলেন। মুর্শিদ ক্বিবলার ইজাযত নিয়ে তিনি স্বীয় এলাকায় তা’লীম-তালক্বীন, দর্স-তাদরীসের কাজ করতে লাগলেন। তিনি জানেন শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সাধারণ মুসলমান তো বটে, যারা আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, ছুফী-দরবেশ দাবীদার তাদেরকেও শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং অনেককে বিভ্রান্ত করেও ফেলে। এমনকি ইন্তিকালের মুহূর্তেও শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা  করার চেষ্টা করে থাকে। সেজন্য মানতিকের ইমাম হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুখতালিফ রিওয়ায়েত একশ থেকে এক হাজার দলীল প্রস্তুত করে রাখলেন যাতে ইন্তিকালের সময় উনাকে শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করতে না পারে। সত্যিই দেখা গেল, হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন ইন্তিকালের সময় উপস্থিথ হলো তখন ইবলীস এসে হাযির হয়ে গেল। হাযির হয়ে সে আল্লাহ পাক উনার দুজন বলে যুক্তি পেশ করতে লাগলো। আর ইবলীসের সে বাতিল যুক্তি খ-ন করে হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ থেকে দলীল পেশ করতে লাগলেন। উনার সমস্ত দলীল শেষ হয়ে গেল তথাপি ইবলীসের বাতিল যুক্তি খ-ন করা গেলনা। এখন ঈমানহারা হয়ে ইন্তিকাল করার উপক্রম। তিনি এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে উনার মুর্শিদ ক্বিবলা ইশার নামাযের ওযু করছিলেন। তিনি ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এহেন ভয়াবহ অবস্থা জানতে পেরে ওযুর পানি নিক্ষেপ করে বললেন, হে ফখরুদ্দীন রাযী! তুমি ইবলীসকে বল, বিনা দলীলে আল্লাহ পাক একজন। বহু দূর থেকে যখন মুর্শিদ ক্বিবলার নিক্ষিপ্ত ওযুর পানি এসে উনার চেহারার উপর পড়লো এবং মুর্শিদ ক্বিবলার ক্বওল মুবারকের আওয়াজ উনার কানে এসে পৌঁছা তিনি ইবলীসকে জানিয়ে দিলেন, হে ইবলীস! তুমি জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক একজন এটা আমি বিনা দলীলেই বিশ্বাস করি। তখন ইবলীস বললো, হে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী! আপনি আজকে আপনার মুর্শিদ ক্বিবলার ওসীলায় বেঁচে গেলেন। অন্যথায় আপনাকে ঈমানহারা করে মৃত্যুমুখে পতিত করে চলে যেতাম।

অতএব, প্রমাণিত হলো, আল্লাহ পাক উনার ওলীগণের ওসীলায় দুনিয়াতে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় যে নিয়ামত ঈমানের উপর ইস্তিক্বামত থাকা এবং ঈমান নিয়ে ইন্তিকাল করা সেটা লাভ হয়ে থাকে। (চলবে)

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল জাওয়াব

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ