বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৫

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহ্লবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তরঃ মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক

আঠারতম মজলিসঃ শায়খের খিদমতে হাযির হওয়ার পর আমি আরয করলাম যে, শহরের মধ্যে দুটি স্থান ব্যতিত অন্যকোন স্থান আমার অন্তরে কোন তাছির করে না বা ভাল লাগেনা। আর তা হচ্ছে হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ এবং আপনার এই বরকতপূর্ণ মজলিস। তখন শায়খ নাছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি রাস্তায় চলাচল না করবেন ততক্ষণে মঞ্জিলে মাকছুদে পৌঁছতে পারবেন না। আর যদি কোন কিছু (নিয়ামত) চান তবে নিরিবিলি বসে বসে মঞ্জিলে মকছুদে পৌছার জন্য রিয়াযত-মুশাক্কাত করা আবশ্যক। যেমন ইরশাদে রব্বানী হচ্ছে-

وَالَّذِيْنَ جَاهَدُوْا  فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

অর্থঃ যারা আমাকে পাওয়ার জন্য কোশেশ করে অবশ্যই অবশ্যই আমি তাকে আমাকে পাওয়ার পথ বাতলিয়ে দেই। (সূরা আনকাবুত-৬৯)

এরপরে তিনি বললেন যে, মুজাহিদা-এর মাধ্যমে এটাই হাছিল হয় যে, অন্তর থেকে সর্বপ্রকার গইরুল্লাহ দূরীভূত হয়ে কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক-এর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হওয়া যায়। এর ভেদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু”এর মধ্যে উহ্য। গইরুল্লাহ থেকে অন্তর ফিরিয়ে রাখা হচ্ছে নফী। আর আল্লাহ পাক-এর ইবাদত বন্দিগীতে মনোনিবেশ করা হচ্ছে ইছবাত। অতঃপর আমি আরয করলাম যে, হযরত আমার কিছুটা ব্যস্ততা রয়েছে। কাজেই আমার পক্ষে সর্বদা রোযা রাখা সম্ভব নয়। আপনার জানা রয়েছে যে, গ্রীষ্মকালে দিল্লীতে প্রচুর গরম পড়ে যার কারণে খুব বেশী করে পানির পিপাসা লাগে। উত্তরে তিনি বললেন,

যদি রোযা রাখতে না পারেন তবে খানা-পিনা কমিয়ে দিন। এরপর শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সেই কর্মব্যস্ততাটা কি? তা কি নিজ ঘরের মধ্যে না বাইরে? উত্তরে আমি বললাম, ঘরের মধ্যের ব্যস্ততা যা খুব কষ্টদায়ক এবং অন্য কাজ। কিন্তু আমার ঐ সকল কাজের কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। যখন কোন পেরেশানী এবং দুঃখকষ্ট আসে তখন কোন বাগানে অথবা জঙ্গলে গিয়ে ঝোপঝাড়পূর্ণ কোন গাছের নিচে বসি যাতে আমাকে কেউ দূর থেকে দেখতে না পারে এবং আমিও কাউকে না দেখি। তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনি জঙ্গলে যাওয়ার সময় কাগজ কলম নিয়ে যাবেন এবং গজল ও কবিতা লেখার কাজে আত্ম নিয়োগ করবেন। তবে আমি এই কাজকে কর্মব্যস্ততা বলবো না। বরং হাক্বীক্বী ব্যস্ততা ঐ সকল কাজ যা কেবলমাত্র আল্লাহ পাক-এর জন্য করা হয়। আমি আরয করলাম যে, আপনার সবকিছুই কাশফের মাধ্যমে জানা রয়েছে। যখন কোন কবিতা স্মরণে আসবে তৎক্ষণাত তা লিপিবদ্ধ করব এরপরে নিজেকে প্রকৃত (হালতে) অবস্থায় নিয়ে আসব। এতদশ্রবণে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, যদি নিজেকে প্রকৃত হালতে নিয়ে আসা যায় তবে খুবই ভাল কথা অন্যথায় কবিতা বলার চেয়ে খারাপ অন্য কিছু নেই।

উনিশতম মজলিসঃ

পবিত্র রমাদ্বান মাসে শায়খ নাছীরুদ্দীন মাহমুদ চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খাদিমগণ তার দরবার শরীফে অনেক লোকের আগমন করার ব্যবস্থা করলেন এবং মজলিস বসল। তাদের একজন কলন্দর মজলিস থেকে উঠে চলে যেতে লাগলেন। তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি উচু আওয়াজে তাকে সম্বোধন করে বললেন, হে দরবেশ! আপনি কোথায় যাচ্ছেন? কলন্দর উহা শ্রবন করে না শোনার ভান করে দ্রুত বাইরে চলে গেলেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্য কলন্দরদেরকে তাঁকে নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। তারা তাঁকে নিয়ে বাইরে দরজায় পৌছালেন। খাদিমগণ তার হাত ধরে খোশামোদ করে সম্মানের সাথে তাকে ভিতরে নিয়ে আসলেন। তিনি ভিতরে এসে পূর্বের স্থানে আমার ডান পার্শ্বে কিছুটা উপুড় হয়ে বসে গেলেন। তখন হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমুদ চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, একদা হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খানকা শরীফে একজন কলন্দর আসলেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন তাঁর হুজরায় আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল ছিলেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর রীতি এই ছিল যে, যখন তিনি স্বীয় হুজরা শরীফে গমন করতেন তখন তিনি ভিতর দিক থেকে দরজা বন্ধ করে রাখতেন। বন্ধ করার পর থেকে তাঁর রুমে অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি ছিল না। কিন্তু তার পরেও ঐ কলন্দর ব্যক্তি তাঁর হুজরায় প্রবেশ করলেন এবং তাঁর কম্বল দ্বারা তৈরী আসনে বসে পড়লেন। শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খাছ খাদিম হযরত বদরুদ্দীন ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি শায়খের আদব রক্ষার্থে তাকে কিছুই বললেন না। বরং সামান্য কিছু খাদ্য তার সামনে রাখলেন। কলন্দর ব্যক্তি বললেন, প্রথমে শায়খের সাথে দেখা করব, অতঃপর খানা খাব। খাদিম তখন বললেন, শায়খ ফরীদুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি এখন স্বীয় হুজরা শরীফে আল্লাহ পাক-এর ধ্যানে মশগুল আছেন। সেখানে কারো যাওয়ার অনুমতি নেই। আপনি প্রথমে খানা খান পরে আপনাকে শায়খের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে। তখন তিনি খানা খেলেন। অতঃপর তিনি স্বীয় খাদ্য যা তিনি প্রায়ই খেতেন একপ্রকার সব্জি স্বীয় থলি থেকে বের করলেন এবং নিজের পেয়ালার মধ্যে রেখে সব্জির সাথে মিশিয়ে নিলেন। যার কয়েক ফোটা শায়খের বৈঠকখানায় বিছানার উপরে পড়ল। এটা দেখে খাদিম বদরুদ্দীন সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে তা খেতে নিষেধ করলেন। একথা শ্রবণ করে কলন্দর খাদিমকে মারার জন্য নিজের পেয়ালা তুললেন। ইতিমধ্যে শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি ভিতর থেকে দৌঁড়ে এসে কলন্দরের হাত ধরে বললেন, হে কলন্দর (দরবেশ) আমাকে ক্ষমা করুন। কলন্দর তখন বললেন, দরবেশগণ সাধারণত হাত উঠান না, আর যদি কখনো উঠানই তখন আর হাত নীচু করেন না। তখন শায়খ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তাহলে আপনার এটা দ্বারা এই দেয়ালের উপর আঘাত করুন। দরবেশ তখন সেই দেয়ালের উপরে আঘাত করলেন যাতে সেই দেয়ালটা ভেঙ্গে পড়ে গেল। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর শায়খ হযরত নাছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন যে, সাধারণ লোকের মাঝে অনেক খাছ লোকও থাকেন। অতঃপর তিনি এই ঘটনা বর্ণনা করলেন।  (চলবে)

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৩৪

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৭

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৮

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার- ১৩৯

বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার-১৪০