ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (৮)

সংখ্যা: ১৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  এবং ১৬১তম সংখ্যা থেকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পাশাপাশি ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়  বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।  বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই. ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে।  আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়। অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে। কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

 استحلال المعصية كفر.

 অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)       অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।  অনরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দর এ কুফরীমূলক বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

 অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্র নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)  উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغير هم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر.

 অর্থঃ “তাওজীহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরাম বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলমায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজাম, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম- নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করা হলো।

 (পূর্ব প্রকাশিতের পর) আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক ক্যামেরায় ছবি তোলা আর হাতে আঁকার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই

কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম্ ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কমজ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, শরীয়তে ছবি তোলা জায়িয, আঁকা হারাম। নাউযুবিল্লাহ। মূলতঃ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ ও গ্রনযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে, “প্রাণীর ছবি হাতে আঁকা যেরূপ হারাম তদ্রুপ ক্যামেরা বা অন্য যে কোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন তোলাও হারাম।” তবে ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্যতম একটি ফিরক্বা শিয়া বা রাফিযীদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয ও আঁকা হারাম। নাউযুবিল্লাহ। কাজেই, যে বা যারাই প্রাণীর ছবির ব্যাপারে অনুরূপ আক্বীদা পোষণ করবে সে বা তারাই বাতিল ফিরক্বা শিয়াদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে,

             عن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغيرنا.

অর্থঃ “হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” (মিশকাত শরীফ) মুল কথা হলো- আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ ও গ্রহনযোগ্য ফতওয়া মতে প্রাণীর ছবি ক্যামেরায় বা হাতে অর্থাৎ যে কোন পদ্ধতিতেই তুলুক বা আঁকুক না কেন তা সর্বাবস্থায়ই হারাম। নিম্নে এ সম্পর্কিত কতিপয় দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলোঃ

 واما اتخاذ المصور بحيوان فان كان معلقا على حائط سواء كان له ظل اولا اوثوبا ملبوسا اوعمامة او نحو ذلكى فهو حرام.

অর্থঃ প্রাণীর ছবি চাই ওটা প্রাচীর গাত্রে ঝুলানো থাকুক, চাই ওটা দেহ বিশিষ্ট হোক কিংবা আঁকা হোক অথবা পরিধেয় বস্ত্র অথবা পাগড়িতে আঁকা থাকুক সর্বাবস্থায় ব্যবহার করা হারাম। (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ পৃঃ৩৮৩, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, পৃঃ১০৫)

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো প্রত্যেক অবস্থায় হারাম। চাই হাতে হোক অথবা ক্যামেরায় উভয়ের একই হুকুম অর্থাৎ হারাম। (বাহারে শরীয়ত ৩য় জিঃ, পৃঃ ১২৩)

 উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং তৈরী করানো নাজায়িয এবং হারাম, চাই হাতে হোক অথবা অন্য কোন পদ্ধতিতে হোক উভয়ের একই হুকুম অর্থাৎ উভয়েই ছবি। (কিফায়াতুল মুফ্তী ৯ম জিঃ, পৃঃ২২৮)

  উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ ক্যামেরার দ্বারা প্রাণীর ছবি আঁকা বা করানো এবং ওটার পেশাও নাজায়িয। কেননা ক্যামেরার ছবিও উচ্চমানের পরিপূর্ণ ছবি। তাই ছবির হুকুম সমূহ ওটার উপর বর্তাবে। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ, পৃঃ২৩৪)

   উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো সাধারণতঃ হারাম। কলম দ্বারা হোক অথবা ক্যামেরার মাধ্যমে অর্থাৎ যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন সকলের একই হুকুম অর্থাৎ হারাম। (কেননা) ছহীহ্ হাদীছ শরীফসমূহ এবং ফেকহি ইবারত সমূহের দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয ও হারাম। (ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ পৃঃ ৪৮)

  উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ কিছু লোকের ধারণা, হাদীছ শরীফে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম করা হয়েছে ক্যামেরার দ্বারা নয়। এটা তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। মূলতঃ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়াই মূল উদ্দেশ্য ওটা যে পদ্ধতিতেই তৈরী করা হোক না কেন। (তোহ্ফায়ে খাওয়াতীন পৃঃ ৯১২)

  উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………….. অর্থঃ কলম দ্বারা যেরূপ প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয (ও হারাম) তদ্রুপ ক্যামেরা, প্রেস, ছাঁচ, মেশীন ইত্যাদির দ্বারাও প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়েজ (ও হারাম) (জাদীদ মাসায়িল কে শরয়ী আহকাম পৃঃ ৪৪)

  উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ আধুনিক যে কোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম।     উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম। এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ পৃঃ ৭৪২) প্রাণীর ছবি কলম দ্বারাই আঁকা হোক আর ছাপাখানায় ছাপা হোক অথবা ক্যামেরাতেই ফটো তোলা হোক সকলেরই এক হুকুম অর্থাৎ জায়িয নয়। (বাংলা বে ফায়দা গুনাহ্ পৃঃ ৭৭) শরীয়ত ছবি তোলা ও ফটোর ব্যবহারকে হারাম বলে সাব্যস্ত করেছে। চিত্রাঙ্কন ও ফটোগ্রাফিদের একই বিধান। অর্থাৎ কোন প্রাণীর ফটো তোলা হারাম। প্রাণহীন বস্তুর মধ্যে যা পুঁজা করা হয়, ওটার ছবি তোলাও হারাম। ছবি তোলা, রাখা ও প্রচার করা নাজায়িয। (আধুনিক যন্ত্রপাতির ইসলামী আহকাম পৃঃ ১০২) উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রাণীর ছবি হাতে আঁকা যেরূপ হারাম তদ্রুপ ক্যামেরা বা অন্য যেকোন পদ্ধতিতে তোলাও হারমা। এর খিলাফ আক্বীদা পোষণকারীরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অন্তর্ভূক্ত নয়।  মুজাস্সাম বা শরীরযুক্ত আর গায়রে মুজাস্সাম বা শরীরবিহীন উভয় প্রকার প্রাণীর ছবিই শরীয়তে হারাম

কেউ কেউ বলে থাকে যে, মুজাস্সাম বা শরীরযুক্ত অর্থাৎ ছায়াযুক্ত প্রাণীর ছবি হারাম আর গায়রে মুজাস্সাম বা শরীরবিহীন অর্থাৎ ছায়াবিহীন প্রাণীর ছবি জায়িয। মূলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্যটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণই খিলাফ। আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হচ্ছে মুজাস্সাম ও গায়রে মুজাস্সাম উভয় প্রকার প্রাণীর ছবিই শরীয়তে হারাম।  কারণ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না যে, হাদীছ শরীফের কোথাও গায়রে মুজাস্সাম বা শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলা হয়েছে। বরং সকল হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবেই বিনা শর্ত শারায়িতে বা আমভাবে সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিম্নোক্ত দলীল আদিল্লাহসমূহ ভালোভাবে পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন-

عن عيسى بن حميد قال سال عقبة الحسن قال ان فى مسجد نا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.

অর্থঃ হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত, হযরত ওকবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে। তখন হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নাফ- ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال نهى رسول الله صلى اله عليه وسلم عن الصورة فى البيت ونهى ان يصنح ذلكى.

 অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন। (তিরমিযি ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭)

 عن جابر رضى اله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم امر عمر بن الخطاب زمن الفتح وهو بالبطحاء ان ياتى الكعبة فيمحو كل صورة فيها فلم يد خلها النبى صلى الله عليه وسلم حتى محيت كل صورة فيها.

অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হুকুম করলেন, তিনি যেন পাথর দিয়ে কা’বা ঘরের সমস্ত মূর্তি বা চিত্রগুলি ধ্বংস করে দেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা ঘরের মুর্তি বা চিত্রগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন না। (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯)

عن ابى عثمان رضى الله تعالى عنه قال حدثنى لبابة عن امها وكانت تخدم عثمان بن عفان ان عثمان ابن عفان كان يصلى الى تابوت فيه تماثبل فامربه فحكه.

অর্থঃ হযরত আবূ উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লুবাবাহ তার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, তার মাতা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিদমতে ছিলেন, আর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামায পড়ছিলেন। অতঃপর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আদেশে ওটা নিঃচিহ্ন করে ফেলা হলো। (মুছান্নাফ- ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها حدثته ان النبى صلى اله عليه وسلم لم يكن يتركى فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.

অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০, মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

عن ابى حجيفة رضى اله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى اله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكب وكسب البغى ولعن اكل الزبى وموكله. والواشمة والمستوشمة والمصور.

অর্থঃ হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তের দাম ও কুকুরের দাম নিতে এবং যেনাকারিনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ‘মুছাব্বির’ অর্থাৎ ছবি অংকন করে, এদের সবার উপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১) অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবসমূহেও ‘ছবি’র ক্ষেত্রে صورة-تصوير ইত্যাদি শব্দাবলী ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغير هم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن اولغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب اوبساط اودينار اودرهم اوفلس اواناء او خائط.

 অর্থঃ ‘তাওজীহ্’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। চাই ওটাকে যত¦ বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানায়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম। (উম্দাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া পৃঃ ৩৭৮, আয্ জাওয়াজির  ২য় জিঃ, পৃঃ৩৩)

وهذه الاحاريث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه غليظة التحريم ايضافيه وما من لم بقصدبها العبادة ولمضاهاة فهو فاسق صاحب ذنب كبير.

অর্থঃ উক্ত হাদীছসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানায়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরাহ্ গুনাহে গুনাহ্গার হবে। (শরহে মুসলিম, নববী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃঃ ৩৭৮)

قال اصحابنا وغير هم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكورفى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب او بساط اودينار اودرهم.

অর্থঃ আমাদের মাশায়িখগণ ও ওলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা॥পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকুকনা কেন তা সমান কথা। (মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ পৃঃ ৩৭৯, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, পৃঃ১০৫)

جاء ت الا حاديث الصحيحة الصريحة بالنهى عن صناعة التماثيل وعن تصوير ما فيه روح سواء اكان انسانا ام حيوانا ام طيرا.

অর্থঃ ছহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে। ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম। (ফিকহুস সুন্নাহ ৩য় জিঃ, পৃঃ ৪৯৮)

واما تضوير الحيوان ان كانت كاملة الاعضاء فانها لانحل (يعنىحرام)

 অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, যদি তা পূর্ণ অঙ্গ বিশিষ্ট হয়। (কিতাবুল ফিক্হ আলা মাযাহিবিল আরবায়াহ ২য় জিঃ, পৃঃ৪১) উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সকল হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও ফিক্বাহ ফতওয়ার কিতাবেই বিনা শর্ত শারায়িতে বা আমভাবে সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাতিল ফিরক্বার কেউ কেউ বলে থাকে যে, মুজাস্সাম ছবি হারাম আর গায়রে মুজাস্সাম ছবি জায়িয। নাউযুবিল্লাহ। আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নিকট এ মত গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে ফতহুল বারীতে উল্লেখ আছে,

……. فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان الممنوع ماكان له ظل له وما ملا ظل له فلابأس باتخاذه مطلقا وهو مذهب باطل.

             অর্থঃ “আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পূর্ববর্তী কারো কারো অভিমত এই যে, যেসব ছবির ছায়া রয়েছে তা ঘরে রাখা নিষেধ। আর যেসব ছবির ছায়া নেই সাধারণভাবে সেসব ছবি ঘরে রাখাতে কোন দোষ নেই। এটা বাতিল মাযহাবের মত। সুতরাং ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো, “ছায়াযুক্ত” হোক অথবা “ছায়াহীন” হোক উভয় প্রকার ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উক্ত উভয় প্রকার ছবিই তৈরী যেরূপ হারাম তদ্রুপ ঘরে রাখাও হারাম। যেমন এ প্রসঙ্গে “ফাতহুল বারী” কিতাবের ১০ খ-ের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

ولافرق فى ذالكى بين ماله ظل ومألا ظل له فان كان معلقا على حائط او ملبوس اوعمامة او نحو ذالكى ممالا يعد ممتهنا فهو حرام.

অর্থঃ “ছায়াযুক্ত ও ছায়াহীন ছবির’ মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যদি (উক্ত উভয় প্রকার ছবিই) দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ীতে থাকে অথবা অনুরূপ সম্মানিত কোন স্থানে বা বস্তুতে থাকে তবে তা হারাম।”            উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

فان استر النبى انكره النبى صلى الله عليه وسلم كانت الصورة فيه بلا ظل بغير شكى ومع ذالكى فامر بنزعه.

অর্থঃ “নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন নিঃসন্দেহে তার ছবিটিও ছায়াহীন ছিলো তা সত্ত্বেও তিনি তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।”            ‘বুখারী শরীফের’ বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী”- কিতাবের ২২তম জিঃ ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكائر .. ولماما ليس فيه صورة حيوان كالشجر ونحوه فليس حرام وسواء كان فى هذا كله ماله ظل ومالا ظل له.

 অর্থঃ “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্। … তবে প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা ইত্যাদি হারাম নয়। আর এ ব্যাপারে ‘ছায়াহীন ও ছায়াযুক্ত’ ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উভয়টাই হারাম।”          “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২২তম জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

لافرق فى تحريم التصوير بين ان نكرن الصورة لها ظل اولا.

 অর্থঃ “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন’ হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। অর্থাৎ উভয়টার একই হুকুম।” ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত “মুসলিম শরীফের” ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল মুসলিম” কিতাবের ৭ম খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

 واذ فرق فى هذا كله بين ماله صل ومالا ظل له ……… وقال بعض السلف انه بنهى عما كان له ظل ولا بأس بالصورة النى ليس لها ظل وهذا مذهب باطل فان الستر الذى انكر النبى صلى الله عليه وسلم الصورة فيه لايشكى احد انه مذموم وليس صورته ظل.

 অর্থঃ “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে “ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন” হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। … সল্ফগণের কেউ কেউ বলেন, ছায়াযুক্ত ছবি নিষেধ। আর ছায়াহীন ছবি নিষেধ নয়। তবে এমতটি সম্পূর্ণই বাতিল। কেননা, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন। এতে কারো সন্দেহ নেই যে, এটা গুণাহ্র কারণ। অথচ উক্ত ছবিটিও ছায়াযুক্ত ছিলোনা।” অনুরূপ ‘শরহুল উবাই, ফতহুল মুলহিম, মিরকাত ও শরহুত ত্বীবীতেও উল্লেখ আছে।”         যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খ-ের ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ “সাধারণভাবে প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম ‘ছায়াযুক্ত’ হোক অথবা ‘ছায়াহীন’, হাতে হোক অথবা ক্যামেরায়। সাইয়্যিদুল ইন্স ওয়াল জিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় যামানায় ছায়াযুক্ত অর্থাৎ মুজাস্সাম এবং ছায়াহীন অর্থাৎ গায়রে মুজাস্সাম উভয় প্রকার ছবিরই প্রচলন ছিলো। আর হাদীছ শরীফে আমভাবে (সকল প্রকার) ছবির ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং তা তৈরী করার কারণে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সকল প্রকার ছবিই নিষেধের আওতায় আসবে। রাফিযী বা শিয়াদের কোন একটি দল ‘ছায়াহীন’ বা ‘শরীরবিহীন’ ছবিকে জায়িয বলে থাকে। নাউজুবিল্লাহ।             অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ছায়াযুক্ত হোক বা ছায়াহীন হোক কোন প্রকার ছবিই তৈরী করা জায়িয নেই বরং উভয় প্রকার প্রাণীর ছবিই তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা হারাম।  অসমাপ্ত পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (১৫)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩৩তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৯তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩৪)