ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে-১২৪

সংখ্যা: ১৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

প্রসঙ্গঃ স্বীয় শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা-এর মুহব্বত ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিম্নলিখিত মাক্বাম দশটি হাছিলের কোশেশ করবে।

আলোচিতব্য মাক্বাম দশটি হচ্ছে মৌলিক মাক্বাম। এ মাক্বামগুলো হাছিল হলে অন্যান্য মাক্বামগুলো অতি সহজেই হাছিল করা যায়। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরাসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিল করা এবং তাতে ইস্তিক্বামাত (অবিচল) থাকার জন্য এ মাক্বাম দশটি হাছিল করা অতীব জরুরী। একইভাবে স্বীয় শায়খ বা মুর্শিদের মুহব্বত-সন্তুষ্টি ও নৈকট্য তথা প্রিয়ভাজন হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

ছাত্র অনুগত হলে, মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন হলে শিক্ষক খুশী হন। তাকে মুহব্বত করেন। স্বীয় নৈকট্য দান করেন। অনুরূপভাবে মুরীদ শায়খ-এর অনুগত হলে, আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের যোগ্যতা সম্পন্ন হলে শায়খ সন্তুষ্ট হন। তাকে মুহব্বত করেন এবং স্বীয় নৈকট্য দান করেন। এমন কি সে মুরীদ তার ফখর বা গৌরবের কারণ হয়।

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলতানুল আরিফীন, কাইয়্যূমুয যামান, জাব্বারিউল আউয়াল, ক্বাবীউল আউয়াল, হাবীবে আ’যম, ছহিবে ইসমে আ’যম, হাকিমুল হাদীছ, ফক্বীহুল উম্মাত, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, সাইয়্যিদুল মুনাজিরীন, সুলতানুন নাছিহীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হচ্ছেন তার বাস্তব মিছাল বা দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন তাঁর শায়খ, কুতুবুল মাশায়িখ, তাজুল মুফাস্সিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন আল্লামাতুদ দাহর, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজিহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পবিত্র আত্তার ইত্মিনানের কারণ। তিনি তাঁকে পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। অনেকবারই বলেছিলেন, “আল্লাহ পাক যদি আমাকে বলেন যে, আপনি আমার জন্য কি করেছেন? আমি বলবো আল্লাহ পাক! আমি আমার শাহ ছাহেবকে দুনিয়াতে রেখে এসেছি।” সুলতানুল আওলিয়া, কুতুবুল মাশায়িখ, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীকত, মুজাদ্দিদে যামান, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে নিয়ে তাঁর শায়খ কুতুবুল আলম, শামছুল আরিফীন, শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, খাজায়ে খাজেগাঁ শাহ ছূফী হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহিও ফখর (গৌরব) করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আল্লাহ পাক যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, হে উছমান হারূনী! তুমি আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ? জাওয়াবে আমি বলবো- আল্লাহ পাক! আমি আপনার জন্য মঈনুদ্দীনকে নিয়ে এসেছি।”

আলোচিত মাক্বাম দশটি হাছিল করতে পারলে মুরীদ আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত-মুহব্বত ও নৈকট্য পাওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন হয়। কাজেই সকল সালিককে তা হাছিল করার কোশেশকে অব্যাহত রাখা আবশ্যক।

প্রথম মাক্বাম ‘তওবা’

“তওবা” এর মাক্বাম হাছিল করার জন্য কামিল শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়া আবশ্যক। কারণ কামিল শায়খ-এর ফয়েজ- তাওয়াজ্জুহ ব্যতীত এ মাক্বাম হাক্বক্বীভাবে হাছিল করা সম্ভব নয়। শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হয়ে তাঁর নির্দেশ মত যিকির-ফিকির, কান্না-কাটি, রোনাজারী, তওবা-ইস্তিগ্ফার করলে হাক্বীক্বীভাবে এ মাক্বাম হাছিল করা সহজ ও সম্ভব হয়।

তওবা-এর ফযীলতঃ

তওবা-এমন এক ইবাদত যার দ্বারা অতি সহজেই আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেজামন্দি তথা নৈকট্য পাওয়া যায়। জীবনের সমস্ত গুনাহ-খতা মাফ হয়। উপরোন্ত পূর্বের সমস্ত গুনাহ নেকী বা পূণ্যে পরিণত হয়। রিযিকও বৃদ্ধি পায়। খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলতানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হাকীমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, ফক্বীহুল উম্মত, হাবীবে আ’যম, ছহিবে ইসমে আ’যম, গাউছুল আযম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন- “বান্দা যেই মুহুর্তে তওবা করে সেই মুহুর্তে সে মা’ছুম (নিষ্পাপ) হয়ে যায়। আল্লাহ পাক তার জীবনের সমস্ত গুনাহ-খতা ক্ষমা করে দেন। বান্দা তওবা করতে সময় লাগে কিন্তু আল্লাহ পাক-এর ক্ষমা করতে সময় লাগে না। চোখের পলকেই তার সারা জিন্দিগীর সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।”

আল্লাহ পাক বলেন,

يا يها الذين امنوا توبوا الى الله توبة نصوحا.

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা হাক্বীক্বীভাবে (খালিছভাবে) তওবা কর তথা আল্লাহ পাক-এর দিকে প্রত্যাবর্তন কর।ঞ্জ (সূরা তাহরীম-৮)

তিনি আরো বলেন,

توبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون لعلكم تفلحون.

অর্থঃ হে মু’মিনগণ, তোমরা সকলে আল্লাহ পাক-এর সমীপে তাওবা কর। অবশ্যই তোমরা সফলকাম হবে।” (সূরা নূর-৩১)

-èব্দব্ধ তওবা শব্দের অর্থঃ প্রত্যাবর্তন করা, রুজু হওয়া। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাক-এর নিকট অনুতপ্ত হয়ে অন্যায় কাজ হতে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতের জন্য আমলে ছালেহ (নেক কাজ) করার দৃঢ় সংকল্প করা। অতঃপর নেক কাজ দ্বারা বিগত পাপ কাজের ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা। মানুষের হক্ব নষ্ট হয়ে থাকলে তা আদায় করে দেয়া বা ক্ষমা চেয়ে নেয়া। কারো মান-সম্মান নষ্টকরা, দুর্ণাম করা, মিথ্যা অপবাদ দেয়া ইত্যাদি মানুষের হক্বের অন্তর্ভূক্ত। কাজেই তা মাফ চেয়ে নেয়া আবশ্যক। আর আল্লাহ পাক-এর হক্বের মধ্যে কোন ফরয কাজ বাকী থাকলে তা অতি তাড়াতাড়ি আদায় করা।

আল্লাহ পাক বলেন,

انما التوبة على الله الذين يعملون السوء بجها لة ثم يتوبون من قريب فاولئك يتوب الله عليهم وكان الله عليما حكيما.

অর্থঃ আল্লাহ পাক কেবল সে সমস্ত লোকের তাওবা কবুল করেন যারা অজ্ঞতাবশত খারাপ কাজে লিপ্ত হয় অতঃপর তাড়াতাড়ি তওবা করে। এরাই সে সেমস্ত লোক, আল্লাহ পাক যাদের তওবা কবুল করেন। আল্লাহ পাক হচ্ছেন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান। (সুরা নিসা-১৭)

আল্লাহ পাক ইহাও বলেছেন যে,

وليست التوبة للذين يعملون السيئات حتى اذا حضر احدهم الموت قال انى تبت الئن ولا الذين يموتون وهم كفار اولئك اعتدنا لهم عذا با اليما.

অর্থঃ আর সে সকল লোকের তওবা কবুল করা হবেনা যারা সবসময় পাপ কাজ করতে থাকে। অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে আমি এখন তওবা করলাম। পাশাপাশি তাদেরও তওবা কবুল করা হবে না, যারা কুফরীর উপর মৃত্যুবরণ করে। আর তারা সেই সমস্ত লোকের অন্তর্ভূক্ত যাদের জন্য আমি কষ্টদায়ক আযাব তৈরী করে রেখেছি। (সূরা নিসা-১৮)

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

يايها الناس توبوا الى الله فانى ابوب اليه فى اليوم مائة مرة.

অর্থঃ হে মানুষেরা! তোমরা আল্লাহ পাক-এর নিকট তওবা কর। আমি প্রতিদিন একশতবার তাঁর দরবার শরীফে তওবা করি। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসারলীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের থেকে সবচেয়ে বেশী তওবা করেন। তাঁর অন্যতম লক্বব মুবারকই হচ্ছে نبى التوبة (নবীয়ে তওবা তথা অধিক তওবাকারী নবী।) তিনি স্বীয় উম্মতকে তা’লীম বা শিক্ষা  দেয়ার জন্য এবং তওবার মহত্ম ও গুরুত্ব বুঝানোর জন্য অধিক পরিমানে তওবা করেছেন।

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

ان الله يبسط يده بالليل ليتوب مسى النهار ويبسط يده بالنهار ليتوب مسى الليل تطلع الشمس من مغربها.

অর্থঃ আল্লাহ পাক রাতে আপন কুদরতী হাত মুবারক প্রসারিত করেন যাতে দিনে গুনাহকারী তাওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত মুবারক প্রসারিত করেন যাতে রাতের গুনাহগার তওবা করে। তিনি এভাবে করতে থাকবেন, যতক্ষন না পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হয়। (মিশকাত শরীফ, মাছাবিহুস্ সুন্নাহ)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-

ان العبد اذا اعترف ثم تاب تاب الله عليه.

অর্থঃ যখন বান্দা গুনাহ স্বীকার করে এবং মাফ চায় তখন আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)  অসমাপ্ত।

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৫)

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৭)

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৬) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৫) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৭)