ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা

সংখ্যা: ২৯৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত খাওলা বিনতে ছা’লাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

হযরত খাওলা বিনতে ছা’লাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন একজন বিখ্যাত মহিলা ছাহাবী। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার প্রখ্যাত খাযরাজ গোত্রের “বনু আওফ” শাখায় উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ। উনার আহাল বা স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আওস ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। পবিত্র মদীনা শরীফে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকেই অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ১৩তম সনে আহাল বা স্বামীর সঙ্গে তিনি সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেন।

পবিত্র কুরআন শরীফে জিহার সম্পর্কীয় আয়াত শরীফ ও উনার হুকুম হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং উনার আহাল (স্বামী) সম্পর্কেই নাযিল হয়। এই সম্পর্কে তিনি বলেন যে, উনার আহাল বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে যাওয়ায় উনার আহালের মেজাজ রুক্ষ হয়ে গিয়েছিল। একবার কোন এক কারণে রাগান্বিত হয়ে তিনি বলে ফেললেন, আপনি আমার মায়ের পিঠের মত। অতঃপর তিনি বাইরে চলে গেলেন। জাহিলী যুগের রীতি ছিল যে, কেউ এই কথা বললে তার আহলিয়া চিরদিনের জন্য তার উপর হারাম হয়ে যেত। কিছুক্ষণ পর আহাল অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসলে হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফায়ছালা ব্যতীত আমি আমার আহাল বা স্বামীর আহলিয়া রূপে থাকতে পারি না। অতঃপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন এবং বারবার তিনি কাকুতি মিনতি করে উনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক যেন বহাল থাকে সেরূপ ফায়ছালা কামনা করছিলেন। তিনি হাত উঠিয়ে এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মুনাজাত করছিলেন যে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমরা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম সকলেই কেঁদে ফেললাম। (তবাকাত)

ইতিমধ্যে উনাদের ফায়ছালাস্বরূপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সম্মানিত ও  পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ উনার আয়াত শরীফ নাযিল হল-

قَدْ سَمِعَ اللهُ قَـوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا ….. وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বরীর মুবারক দিয়ে (মুচকি হেসে) মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়ছালা মুবারক শুনিয়ে দিলেন এবং বললেন, আপনার আহাল উনাকে একটি গোলাম আযাদ করে দিতে বলুন। হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, উনার কোন গোলাম নেই এবং আযাদ করার সামর্থ্যও নেই।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তবে একাধারে দুই মাস রোযা রাখতে বলুন। হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, তিনি তো বৃদ্ধ ও দুর্বল। দিনে বহুবার পানি পান করেন, কাজেই উনার ঐরূপ শক্তি নাই।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে ৬০ জন মিসকিনকে আহার করাতে বলুন। হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, এই সামর্থ্যও উনার নেই। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছু খেজুরের ব্যবস্থা করলেন এবং হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বাকি খেজুরের ব্যবস্থা করে ৬০ জন মিসকিনকে ছদকা করে দিলেন। এভাবে উনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক পূর্বের মত বহাল রইলো।

এই ঘটনার পর হতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মর্যাদা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। নেতৃস্থানীয় ছাহাবীগণও উনাকে খুবই সম্মানের চোখে দেখতেন। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে একবার তিনি লোকজন নিয়ে বের হলেন। পথিমধ্যে হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সাক্ষাত পেলেন। তিনি তখন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে পেয়ে হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম! এমন এক সময় ছিল যে, আমি আপনাকে উকাজের বাজারে দেখতে পেয়েছিলাম। তখন আপনাকে সকলে উমাইর বলত। হাতে লাঠি নিয়ে ছাগল চরাতেন। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই লোকেরা আপনাকে উমর বলতে শুরু করল। আর কিছুদিন পরে আপনাকে আমীরুল মু’মিনীন বলা হতে লাগল। আমি বলি, জন সাধারণের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে চলবেন। স্মরণ রাখবেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার অভিশাপকে ভয় করে, তার জন্য দূরের লোকও নিকট আত্মীয়ের মত হয়ে যায়। আর যে মৃত্যুকে ভয় করে, তার সম্পর্কে আশঙ্কা হয়, সে যে জিনিষকে রক্ষা করতে চায়, তা হয়ত সে হারিয়ে ফেলবে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাওলা বিনতে ছা’লাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দীর্ঘ আলাপচারিতায় অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার ফলে জারুদ আল-আবদী নামে এক ব্যক্তি অধৈর্য হয়ে বললো, আমীরুল মু’মিনীন! আপনি এহেন এক বৃদ্ধার কারণে লোকজনকে আটকে রেখেছেন! আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! তুমি জানো ইনি কে? ইনি সেই মহিয়সী মহিলা ছাহাবী হযরত খাওলা বিনতু ছা’লাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি সপ্ত আকাশের উপর হতে যার অভিযোগ শ্রবণ করেছিলেন। উনার সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই আয়াত শরীফ নাযিল করেছিলেন, বলে তিনি আয়াত শরীফখানা তিলাওয়াত করলেন-

قَدْ سَمِعَ اللهُ قَـوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا ….. وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ

অতঃপর তিনি বললেন, আর আমি কি উনার কথা শ্রবণ করবো না? মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তিনি যদি রাত্রি পর্যন্তও আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন তবু আমি কেবল নামাযের জন্য ছাড়া উনার নিকট হতে পৃথক হবো না। নামায শেষে আবার উনার নিকট ফিরে আসবো। (ইছাবা)

হযরত খাওলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ইনতিকালের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে বিভিন্ন ঘটনা দ্বারা জানা যায় যে, তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের আমলের বেশির ভাগ সময় জীবিত ছিলেন এবং এ সময়কালেই ইনতিকাল করেছেন। (তবাকাত, উসুদুল গাবা, ইছাবা)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করার তাওফিক দান করুন।

-তাসনীম আহমদ খান

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা হযরত আসমা বিনতু উমাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা

মুসলিম পরস্পরের প্রতি হামদরদী থাকা খুবই জরুরী

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা হযরত উম্মে ওয়ারাকা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা

সন্তান সম্ভবা মায়ের ফযীলত

প্রচলিত হারাম রছম করুন বর্জন, পবিত্র দ্বীন পালনেই কামিয়াবী অর্জন