নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহাব্বত, আদব, তা’যীম-তাকরীম মুবারক উনার কতিপয় দৃষ্টান্ত

সংখ্যা: ২৯৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَ وَسَلَّمَ لَا يُـؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى اَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ

অর্থ: “খাদিমু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাদের নিকট তোমাদের সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা এবং অন্য সমস্ত লোকদের চেয়ে অধিক প্রিয় না হবো।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৫, মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৭৮, মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ইত্যাদি)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নিজের মাল-সম্পদ ও জান থেকেও বেশি মুহাব্বত করতে হবে। মূল কথা হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে তার সমস্ত কিছু- অর্থাৎ পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, আত্নীয়-স্বজন, সমস্ত মানুষ, নিজের ধন-সম্পদ এমনকি নিজের জান থেকেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহাব্বত করতে হবে। অন্যথায় কস্মিনকালেও কেউ ঈমানদার হতে পারবে না।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা ছিলেন এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হাক্বীক্কী মিছদাক্ব। সুবহানাল্লাহ! উনাদের জবান এবং অন্তর মুবারক এক ছিলেন। অর্থাৎ উনারা জবানে যা বলতেন তাই বাস্তবায়ন করতেন। উনাদের মাঝে কোনো বানোয়াটি ছিলোনা। সুবহানাল্লাহ!

তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুহাব্বত, আদব, তা’যীম-তাকরীম মুবারক উনার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করতে গেলে উনারাই হবেন অগ্রগামী। নিম্নে এ বিষয়ে কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো:

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আপনাদের মুহাব্বত মুবারক কেমন ছিলেন? তিনি জবাবে বলেন,

وَاللهِ اَحَبُّ اِلَيْـنَا مِنْ اَمْوَالِنَا وَاَوْلَادِنَا وَاٰبَائِنَا وَاُمَّهَاتِنَا وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ عَلَى الظَّمَأِ

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতার চেয়েও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের কাছে অধিক মুহাব্বতের ছিলেন। এমনকি একজন পিপাসার্তের নিকট ঠাণ্ডা পানি যেমন প্রিয় তারচেয়েও বেশি প্রিয় ছিলেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! (শিফা শরীফ ২/৫৬৮)

সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই বলেছিলেন,

مَا رَاَيْتُ مِنَ النَّاسِ اَحَدًا يُحِبُّ اَحَدًا كَحُبِّ اَصْحَابِ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: “আমি মানুষদের মধ্যে কাউকে এতটা মুহাব্বত করতে দেখিনি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা যতটা মুহাব্বত মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মা’রিফাতুছ ছাহাবা ৮/২৭৮, আর রওদ্বুল উন্ফ, সীরাতে ইবনে হিশাম ২/১৭২, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/৬৫, শিফা শরীফ ২/২৩ ইত্যাদি)

বাস্তবে ছিলোও তাই। হযরত উরওয়া ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি (সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের পূর্বে) হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় কুরাইশ মুশরিকদের পক্ষ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট দূত হিসেবে আসেন। তখন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের যেই বেমেছাল সম্মান, তা’যীম-তাকরীম ও মুহাব্বত মুবারক দেখেন। তিনি উনার ক্বওমের নিকট ফিরে যেয়ে তা এভাবে বর্ণনা করেন,

اَىُّ قَـوْمٍ وَاللهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى الْمُلُوْكِ وَقَدَمْتُ عَلـى قَـيْصَرَ وَكِسْرٰى وَالنَّجَاشِىِّ وَاللهِ اِنْ رَاَيْتُ مَلِكًا قَطُّ يُعَظِّمُه اَصْحَابُه مَا يُعَظِّمُ اَصْحَابُ سَيِّدِنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدَنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللهِ اِنْ يَـتَـنَخَّمْ نُخَامَةً اِلَّا وَقَـعَتْ فِىْ كَفِّ رَجُلٍ مِّنْـهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَه وَجِلْدَه وَاِذَا اَمَرَهُمُ ابْـتَدَرُوْا اَمْرَه وَاِذَا تَـوَضَّاَ كَادُوْا يَـقْتَـتِلُوْنَ عَلَى وَضُوْئِهٖ وَاِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوْا اَصْوَاتَـهُمْ عِنْدَه وَمَا يُحِدُّوْنَ اِلَيْهِ النَّظَرَ تَـعْظِيْمًا لَه

অর্থ: “হে আমার ক্বওম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি দুনিয়াবী অনেক শাসকদের কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়ছার-কিসরা ও হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছেও প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছি। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা যেভাবে তা’যীম-তাকরীম মুবারক করেন সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনি তাদের শাসককে সম্মান করতে। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!

اِنْ يَــتَـنَخَّمْ نُخَامَةً اِلَّا وَقَـعَتْ فِىْ كَفِّ رَجُلٍ مِّنْـهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَه وَجِلْدَه

তিনি যখনই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল বারাকাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র থুথু মুবারক) ফেলেন তখন উনাদের কেউ না কেউ তা উনাদের হাতে নিয়ে নেন এবং (বরকত লাভের জন্য) উনাদের চেহারা ও শরীর মুবারক-এ মাখেন। সুবহানাল্লাহ!

وَاِذَا اَمَرَهُمُ ابْـتَدَرُوْا اَمْرَه

তিনি যখন উনাদেরকে কোন আদেশ মুবারক দেন তখন উনারা সঙ্গে সঙ্গে তা পালন করেন। সুবহানাল্লাহ!

وَاِذَا تَـوَضَّاَ كَادُوْا يَـقْتَـتِلُوْنَ عَلَى وَضُوْئِهٖ

তিনি যখন সম্মানিত অযূ মুবারক করেন তখন উনার সম্মানিত অযূর পানি মুবারকের জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা প্রতিযোগিতা শুরু করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

وَاِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوْا اَصْوَاتَـهُمْ عِنْدَه

তিনি যখন সম্মানিত কথা মুবারক বলেন, তখন উনারা উনাদের আওয়াজ মুবারক নিচু করে (নিরবে) অত্যন্ত মনোযোগের সাথে শ্রবণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

وَمَا يُحِدُّوْنَ اِلَيْهِ النَّظَرَ تَـعْظِيْمًا لَه

উনার প্রতি বেমেছাল তা’যীম মুবারক উনার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা কখনোই উনার দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকান না।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, শু‘আবুল ঈমান ৩/১০৫)

মুহাব্বতের একটা ধরণ এমনও রয়েছে যে, হযরত আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,

وَمَا كَانَ اَحَدٌ اَحَبَّ اِلَىَّ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَلَا اَجَلَّ فِىْ عَيْنِىْ مِنْهُ وَمَا كُنْتُ اُطِيْقُ اَنْ اَمْلَأَ عَيْنَيَّ مِنْهُ اِجْلَالًا لَه وَلَوْ سُئِلْتُ اَنْ اَصِفَه مَا اَطَقْتُ لِاَنِّىْ لَمْ اَكُنْ اَمْلَأُ عَيْنَيَّ مِنْهُ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে অধিক মুহাব্বতের ব্যক্তিত্ব আমার নিকট আর কেউ নেই। আমার চোখে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশী মর্যাদাবান। (আমার অন্তর মুবারকে উনার প্রতি এতো সম্মান-মর্যাদা আর মুহাব্বত ছিলো যে,) আমি উনার দিকে কখনো চোখ তুলে তাকাতে পারতাম না। আমাকে যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মুজাসসাম মুবারক (জিসিম মুবারক) উনার বর্ণনা দিতে বলা হয়, আমি পারব না। কারণ, আমি দুচোখ ভরে কখনো উনাকে দেখতে পারিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৯২)

আরো বর্ণিত রয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالَى عَنْهُ قَالَ لَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْحَلَّاقُ يَحْلِقُه وَاَطَافَ بِهٖ اَصْحَابُه فَمَا يُرِيْدُوْنَ اَنْ تَـقَعَ شَعْرَةٌ اِلَّا فِىْ يَدِ رَجُلٍ

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এমন অবস্থায় দেখেছি যে, ক্ষৌরকার উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ফাতহ্ মুবারক (চুল মুবারক) হলক্ব (মুণ্ডণ) করছেন আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা উনার চারদিক প্রদক্ষিণ করছেন অর্থাৎ উনাকে ঘিরে রয়েছেন। উনারা চাচ্ছিলেন উনার একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ফাতহ্ মুবারকও যেন নিচে না পড়ে। বরং উনাদের কারো না কারো হাত মুবারকেই পড়ে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ ৩/১৩৭)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম বা সম্মান মুবারক উনার কারণে উনার সামনে বসা অবস্থায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ উনারা উনাদের মাথা মুবারক উচু করতেন না। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন। হযরত বুরাইদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,

كُنَّا اِذَا قَـعَدْنَا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ نَـرْفَعْ رُءُوْسَنَا اِلَيْهِ تَـعْظِيْمًا لَه

অর্থ: “আমরা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ছোহবত মুবারক-এ বসতাম তখন উনার প্রতি বেমেছাল তা’যীম, সম্মান মুবারক উনার কারণে আমরা আমাদের মাথা মুবারক উচু করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘আবুল ঈমান ৩/১০৫)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে বা উনার মজলিস মুবারকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমগণ উনারা এমনভাবে বসতেন যেন উনাদের মাথা মুবারকে পাখি বসে আছে। একটু নড়া-চড়া করলেই সেটা উড়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,

وَرُوِّيْنَا فِىْ حَدِيْثِ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ فِىْ قِصَّةِ الْجَنَازَةِ قَالَ فَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسْنَا حَوْلَه كَاَنَّ عَلَى رُءُوْسِنَا الطَّيْـرَ

অর্থ: “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত জানাযার ঘটনা সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছেন। হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসলেন আর আমরা উনার চারিদিকে এমনভাবে বসলাম; যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসে রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (শু‘আবুল ঈমান ৩/১০৫)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারকে উনাদের শব্দ চয়ন ছিলো আশ্চর্যজনক। উনারা যে সর্বদিক থেকেই সবচেয়ে বেশি মুহাব্বত মুবারক করতেন এবং সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করতেন। তার বাস্তব নমুনা ফুটে উঠেছে নিম্নোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনার মাঝে।

عَنْ حَضْرَتْ قَـيْسِ بْنِ مَخْرَمَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهٖ قَالَ وُلِدْتُ اَنَا وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ‏‏ وَسَاَلَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَضْرَتْ قُـبَاثَ بْنَ اَشْيَمَ اَخَا بَنِىْ يَعْمَرَ بْنِ لَيْثٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ اَاَنْتَ اَكْبَـرُ اَمْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْبَـرُ مِنِّىْ وَاَنَا اَقْدَمُ مِنْهُ فِى الْمِيْلَادِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ

অর্থ: “হযরত ক্বাইস ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত পিতা থেকে, তিনি উনার সম্মানিত দাদা থেকে বর্ণনা করেন। উনার দাদা বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং আমি হস্তী বছরে (আবরাহার বাহিনী ধ্বংসের বছর) বিলাদত শরীফ গ্রহণ করি। (তিনি বলেন,) ইয়া’মার ইবনে লাইছ গোত্রীয় হযরত কুবাছ ইবনে আশইয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে তৃতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, (বয়সের দিক থেকে) আপনি বড় নাকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড়? তিনি জবাব দিলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার চেয়ে অনেক বড়, তবে আমি বিলাদত শরীফ গ্রহণের দিক থেকে যমীনে আগে এসেছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাতীর বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৬১৯)

আরো বর্ণিত রয়েছেন,

عَنْ حَضْرَتْ مُغِيْـرَةَ بْنِ اَبِىْ رَزِيْنٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْهُ قَالَ قِـيْلَ لِحَضْرَتْ عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَيُّـمَا اَكْبَـرُ اَنْتَ اَمْ اَلنَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ هُوَ اَكْبَـرُ مِنِّىْ وَ اَنَا وُلِدْتُ قَبـْـلَه

অর্থ: “হযরত মুগীরা ইবনে আবী রযিন রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত খাতিমুল মুহাজিরীন আলাইহিস সালাম (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম) উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় নাকি আপনি? তিনি জবাবে বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার চেয়ে অনেক বড় তবে আমি উনার পূর্বে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহন করেছি।” (মুস্তাদরাকে হাকিম ৩/৩৬২)

বিষয়টা অত্যন্ত সূক্ষ্ম উনারা কিন্তু বলতে পারতেন যে আমি বড়। কিন্তু এটা বলেননি। এখানেও উনারা সর্বোচ্চ আদবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের আদত মুবারক ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনাদেরকে কোনো বিষয় জিজ্ঞাসা করতেন। উনারা কোনো জবাব না দিয়ে বলতেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই সবচেয়ে ভালো জানেন। এখান থেকেও উনাদের সর্বোচ্চ আদবের বিষয়টা প্রমাণিত হয়।

যেমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,

قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِحَضْرَتْ اَبِىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَـعَالَى عَنْهُ حِيْنَ غَرَبَتِ الشَّمْسُ تَدْرِىْ اَيْنَ تَذْهَبُ قُـلْتُ اَللهُ وَرَسُوْلُه اَعْلَمُ قَالَ فَاِنَّـهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَـتَسْتَاْذِنَ فَـيُـؤْذَنَ لَـهَا وَيُـوْشِكُ اَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُـقْبَلَ مِنْـهَا وَتَسْتَاْذِنَ فَلَا يُـؤْذَنَ لَـهَا يُـقَالُ لَـهَا اِرْجِعِىْ مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَـتَطْلُعُ مِنْ مَّغْرِبِـهَا

অর্থ: “একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হযরত আবূ যর গিফারী রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনি কি জানেন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর কোথায় যায়? তিনি বললেন মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবুব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ভালো জানেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সূর্য যেতে যেতে পবিত্র আরশে আযীমের নিচে গিয়ে সিজদা করে! এরপর সে পুনরায় উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর অচিরেই এমন দিন আসবে যেদিন (সূর্য) সিজদা করবে কিন্তু তার থেকে সেটা গ্রহণ করা হবেনা এবং অনুমতি চাইলে অনুমতিও দেয়া হবেনা। তাকে বলা হবে যে পথে এসেছো সে পথে ফিরে যাও! তখন সে পশ্চিম আকাশে উদিত হবে। (তখনই ক্বিয়ামত ঘনিয়ে আসবে, সেদিন থেকে আর তাওবা ক্ববূল হবেনা)।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭২, ৩১৯৯)

এ বিষয়টা আরো সুস্পষ্ট হয় পবিত্র বিদায় হজ্জ মুবারক উনার খুৎবা মুবারক দ্বারা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (বিদায় হজ্জ মুবারকে) মিনায় অবস্থানকালে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা কি জানেন এটি কোন্ দিন? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই সবচেয়ে ভালো জানেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন মাস? উনারা একই জবাব দিলেন। এটা কোন শহর? এর জবাবেও উনারা একই উত্তর দিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই সবচেয়ে ভালো জানেন। সুবহানাল্লাহ!

এই প্রত্যেকটা প্রশ্নের জবাবই উনাদের জানা ছিলো। কিন্তু উনারা উত্তর না দিয়ে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারাই সবচেয়ে ভালো জানেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনাদের মুহাব্বত, আনুগত্য, আদব কতো উচ্চ পর্যায়ের ছিলেন। সেটা চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়। সুবহানাল্লাহ!

পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহাব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা এবং সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করা।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।

মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী-রসূল হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, উনার মাহবূব, মুরাদ ও সমগ্র কায়িনাতের মালিক হিসেবে সৃষ্টি মুবারক করেছেন

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারাই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। উনাদের মুহব্বত মুবারক ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ পূর্ণ হয় না

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের প্রতি সমস্ত সৃষ্টির হক

মওযূ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ নির্ণয়ের প্রকৃত মানদণ্ড

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র গোলামী মুবারক করা সমস্ত সৃষ্টির জন্য ফরয