পবিত্র মাহে জিলহজ্জ শরীফ এবং উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৫৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সৃষ্টির শুরু হতে যে চারটি মাসকে পবিত্রতা দান করা হয়েছে তারমধ্যে পবিত্র জিলহজ্জ শরীফ মাস অন্যতম। যা পবিত্র হারাম মাস এবং পবিত্র হজ্জ ও কুরবানীর মাস হিসেবে সমাদৃত। কুরবানী শব্দটি এসেছে ‘র্কুব্’ শব্দ থেকে; যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া। মহান আল্লাহ পাক উনার নামে কুরবানী করে উনার নৈকট্য মুবারক হাছিল করা যায়।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ الله عَلى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ

অর্থ: “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র যবেহ বা কুরবানী উনার বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছি। যাতে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া গৃহপালিত চতুষ্পদ পশু যবেহ করার সময় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)

গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে অন্যতম হলো ‘গরু’। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ কিতাব “বুখারী শরীফ” উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক নামে গরু কুরবানী দিয়েছেন।

ইতিহাসে যুগে যুগে দেখা গেছে গরু কুরবানী বন্ধে সবসময় হিন্দুরা জোর-যুলুম করেছে। আর তা প্রতিবাদের দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক বিস্তার হয়েছে। খোদ বাংলাদেশেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রবেশ হয়েছে গরু কুরবানী বন্ধে যালিম হিন্দু সন্ত্রাসী গৌরগোবিন্দের জোর-যুলুমের প্রতিবাদে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার জিহাদের দ্বারা। গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কোনো শাসকই টিকে থাকতে পারেনি এবং কখনো পারবেও না। ইনশাআল্লাহ!

তাই সাংবিধানিকভাবে এদেশে রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ইসলাম স্বীকৃত সরকারের উচিত যে, মুসলমানগণ উনাদের পবিত্র কুরবানী করার সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি এলাকায় ও গ্রামে পবিত্র কুরবানীর পশুর হাটের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ পর্যাপ্ত হাটের ব্যবস্থা করা।

উল্লেখ্য, প্রতি বৎসর পবিত্র কুরবানী আসলেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী মালউন ইহুদী, মুশরিক ও নাস্তিক এবং তাদের ভাবাপন্ন বিধর্মী তোষণকারী এদেশীয় ভারতীয় ও বিজাতীয় দালালরা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।

গত বছরও (১৪৩৬ হিজরী) তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কুরবানীর পশুর হাট বসাতে বিলম্ব করেছে, তথাকথিত অ্যানথ্রাক্সের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে, কথিত জনদুর্ভোগ ও কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তার কথা বলে পবিত্র কুরবানীর পশুর হাট ঢাকার বাইরে নেয়া হয়েছে এবং হাটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। পশু মোটাতাজাকরণে বিষ থাকার অজুহাতে ও পশুর রক্ত পরীক্ষার নামে কুরবানী দাতাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

এছাড়া তাদের নতুন চক্রান্ত হলো কুরবানীর জন্য আলাদা স্পট করা বা স্থান নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়ে অর্থাৎ কুরবানী করাকে বিশেষ ঝামেলাযুক্ত করা ও কুরবানীর গোশত পাওয়াকে চরম বাধাগ্রস্ত করা এবং কার্যত কুরবানীতে মুসলমাদের নিরুৎসাহিত করা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সংবিধানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। সংখ্যানুপাতে বণ্টন না হওয়া বৈষম্যের বড় পরিচয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ১.৫% হিন্দুর তুলনায় ৯৮% মুসলমান এদেশে বড় বৈষম্যের শিকার। ১.৫% হিন্দুর পূজায় যেভাবে জেলার ডিসি থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল, কোটি কোটি টাকা এবং ব্যাপক ও সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা দেয়া হয়, সে তুলনায় মুসলমানদের প্রধান দ্বীনি উৎসবগুলোতে কিছুই করা হয় না। নাউজুবিল্লাহ!

সংবিধানে যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে তার বড় পরিচয় হলো সংখ্যানুপাতে বণ্টন না হওয়া। অর্থাৎ কোনো ধর্মাবলম্বী যদি ১% থেকে থাকে আর তাদের জন্য যদি ১ গুণ সুযোগ-সুবিধা বণ্টন করা হয়, তাহলে কোনো ধর্মাবলম্বী যদি ৯৯গুণ থাকে সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ৯৯গুণ বেশি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। সরকারের উচিত আসন্ন পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উপলক্ষে সারা দেশের সর্বত্র গরিব মুসলমানদের জন্য কুরবানী করার ও গোশত বিতরণের ব্যবস্থা করা।

এদিকে আম জনতা এখন কুরবানীর পশু কেনার পর থেকে গোশত কাটাকাটি এবং খাওয়ার দৃশ্য পর্যন্ত ভিডিও করছে। নাউযুবিল্লাহ!

বলাবাহুল্য, এ ছবক তারা ধর্মব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই পেয়েছে। কারণ ধর্মব্যবসায়ীরাই তাদের কুরবানী ব্যবসার স্যাম্পল দেখানোর কৌশল হিসেবে প্রথম ছবিকে জায়িয করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

তা থেকেই আজকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কুরবানীর মতো ওয়াজিব আমলের ক্ষেত্রেও বিবিধ হারাম চেতনা প্রবেশ করেছে। কুরবানীর হাটেও অবিরত গান-বাজনার আয়োজন তার বড় প্রমাণ। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে- আক্বলকে সাধারণ যৌক্তিকতার পথ থেকে এবং নফস্কে সহজাত প্রবণতার পথ থেকে ফিরিয়ে, সম্মানিত শরীয়ত উনার লাগাম লাগিয়ে, নির্ভেজাল আনুগত্যের পথে পরিচালিত করে ঈমানী জজবা জাগ্রত করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لن ينال الله لحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم

 অর্থাৎ “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কুরবানীর পশুর গোশত কিংবা রক্ত কিছুই পৌঁছে না, কেবল পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া।”

সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ, সম্মানিত যিলক্বদ শরীফ ও সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা