ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৫)

সংখ্যা: ১৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

প্রসঙ্গঃ স্বীয় শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা-এর মুহব্বত ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিম্নলিখিত মাক্বাম দশটি হাছিল করার কোশেশ করবে।

সুলতানুল আওলিয়া, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “গুণাহ  হতে তওবা করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে প্রত্যাবর্তন করা হচ্ছে ইলমে মা’রিফাতের পথের সূচনা এবং ওলীআল্লাহগণের অমূল্য সম্পদ। সাধকগণ প্রথমে এই পথেই পা বাড়ান।”যারা সত্যপথ হতে বিচ্যূত, তাদের জন্য তওবাই হচ্ছে সৎপথে ইস্তিক্বামত (অটল) থাকার চাবিকাঠি। আর নৈকট্যশীলগণের জন্য এটাই আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মনোনয়ন লাভের ওয়াসীলা। (ইহইয়াউ ঊলূমিদ্দীন-৪/১৩৬)

তওবা-এর মাক্বামের ফযীলতঃ

হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন বান্দা আল্লাহ পাক-এর নিকট তওবা করে তখন আল্লাহ পাক তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক আনন্দিত হন যার বাহন একটি মরুপ্রান্তরে তার নিকট হতে ছুটে পালায়। আর এর পিঠের উপর থাকে তার খাদ্য-পানীয়। এতে সে হতাশ হয়ে যায়। তার নির্ঘাত মৃত্যু ভেবে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সে ঘুম থেকে জেগে দেখে তার বাহন তার নিকটে দাঁড়ানো তার পিঠের উপর খাদ্য-পানীয় রয়েছে। সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠে, “হে আল্লাহ পাক! আপনি আমার বান্দা। আর আমি আপনার রব। আপনার শুকরিয়া।” আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল করে। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরো বলেন, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক বলেন, “হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার ক্ষমার আশা রাখবে ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করতেই থাকবো। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কাউকে পরওয়া করিনা।” (সুবহানাল্লাহ)

হে আদম সন্তান! তোমার গুণাহ যদি আকাশ চুম্বি হয় অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো। আমি কারো পরওয়া করিনা।

আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুণাহ নিয়ে আমার সাক্ষাত করো এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করো তাহলে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হবো। (সুবহানাল্লাহ)। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

রঈসুল মুফাসসিরীন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি সবসময় ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে আল্লাহ পাক তার সকল সংকীর্ণতা দূর করে প্রশস্ততা দান করেন। তাকে সমস্ত চিন্তা মুক্ত করে আনন্দিত করেন। আর এমন স্থান হতে রিযিক দান করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সুবহানাল্লাহ) (আহমদ, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে,

كل بنى ادم خطاء وخير الخطائين التوابون.

অর্থঃ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক আদম সন্তানই গুণাহগার। তবে গুণাহগারদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে তওবা করে। (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, দারিমী শরীফ)

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি এই দুয়া পাঠ করবে-

استغفر الله الذى لا اله الا هو الحى القيوم واتوب اليه

অর্থঃ “আমি আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ব্যতিত কোন মা’বুদ নেই। যিনি হাইয়্যুন এবং ক্বাইয়্যুম।”

আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে জিহাদের ছফ (কাতার) হতে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

طوبى لـمن وجد فى صحيفته استغفارا كثيرا

অর্থৎ সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য, যার আমলনামায় বেশি বেশি ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) রয়েছে। (ইবনে মাযাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

التائب من الذنب كمن لا ذنب له

অর্থঃ গুণাহ হতে তওবাকারী ব্যক্তি যেন কোন গুণাহই করেনি। (ইবনে মাযাহ শরীফ)

তিনি আরো বলেন,

التائب حبيب الله

অর্থঃ “তওবাকারী আল্লাহ পাক-এর পরম বন্ধু।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-৪/১৪১)

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “শয়তান বলেছিল, প্রভু, আপনার ইজ্জতের কসম! শয়তান আপনার বান্দাদের গোমরাহ করতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তার দেহে প্রাণ থাকে। তখন আল্লাহ পাক বললেন, আমার ইজ্জত ও জালাল এবং উচ্চ মর্যাদার কসম! আমি তাদেরকে ক্ষমা করতেই থাকবো যতক্ষণ তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবে।“ (আহমদ, মিশকাত শরীফ)

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ পাক পাপ কার্য লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাগণকে তার পাপ কাজের কথা ভুলিয়ে দেন। যে হাত-পায়ের সাহায্যে উক্ত পাপ কাজগুলো করেছিল সেই হাত-পাকে উক্ত পাপগুলির কথা ভুলিয়ে দেন। আর যে স্থানে উক্ত পাপ সংঘটিত হয়েছিল সেই স্থানটিকেও পাপের কথা ভুলিয়ে দেন। যেন সে মহাবিচারক আল্লাহ পাক-এর সমীপে বিচারার্থে উপস্থিত হলে তার পাপের কোন সাক্ষী পাওয়া না যায়। (কিমিয়ায়ে সা’আদাত)

জনৈক বুযুর্গ বলেছেন, “মানুষ মাঝে মাঝে গুণাহ করে এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত অনুতাপ করতে থাকে। অবশেষে সে এর বদৌলতে জান্নাতে দাখিল হয়। তখন শয়তান বলে, চমৎকার হতো যদি আমি তাকে উক্ত গুণাহে লিপ্ত না করাতাম। এজন্যই বলা হয় যে, কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোন কোন  গুণাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হয়।

হযরত উমর বিন খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তোমরা তওবাকারীদের কাছে বস। কারণ তওবাকারীদের অন্তর অধিক নম্র থাকে। (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-৪/১৫৮)

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মু’মিন বান্দা যখন পাপ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে যদি তওবা করে এবং ক্ষমা চায়, তার অন্তর সাফ হয়ে যায়। আর যদি গুণাহ বেশি করে দাগও বেশী হয়। এক পর্যায়ে তা সমস্ত অন্তরে বিস্তার লাভ করে। মূলতঃ এটাই সে মরিচা যার উল্লেখ আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে করেছেন, “কখনোই নয়, বরং তাদের অন্তরে মরিচা পড়েছে যা তারা বরাবরই উপার্জন করেছে।” (সুরা মুতাফফিফীন) (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ ও মিশকাত শরীফ)

হযরত আবূ সায়ীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বণী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর সে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করার জন্য বের হল এবং একজন দরবেশের নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,  এরূপ ব্যক্তির জন্য তওবা আছে কিনা? তিনি বললেন নেই। সে তাকেও হত্যা করল এবং বরাবর লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে থাকল। এক ব্যক্তি বলল, অমুক গ্রামে গিয়ে অমুককে জিজ্ঞাসা কর। এ সময় তার মউত এসে গেল এবং মৃত্যুকালে সে আপন সিনাকে ঐ গ্রামের দিকে কিছু বাড়িয়ে দিল। অতঃপর রহমতের ফেরেশ্্তা ও আযাবের ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্্ সালামগণ পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, কারা তার রূহ নিয়ে যাবেন। এ সময় আল্লাহ তায়ালা ঐ গ্রামকে বললেন, তুমি মৃতের নিকটে আস আর তার নিজ গ্রামকে বললেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর ফেরেশ্তাগণকে বললেন, আপনারা উভয় দিকের দূরত্ব মেপে দেখুন। মাপে তাকে এ গ্রামের (তওবার) দিকে এক বিঘত নিকটে পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে মাফ করে দেয়া হল। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে-১২৪

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৭)

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৬) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৫) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৭)