সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৯৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “মু’মিনদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান যে, তাদের মধ্যে  তাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত রসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তাযকিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েত প্রাপ্ত ছিল না। ” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)

অনুরূপ পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৯ ও ১৫১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ এবং পবিত্র সূরা জুমুয়া শরীফ উনার ২ নম্বর আয়াত শরীফ-এ উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর সমার্থবোধক আয়াত শরীফ উল্লেখ আছে।

মূলত অন্তর থেকে বদ খাছলতসমূহ দূর করে দিয়ে নেক খাছলতসমূহ পয়দা করার মাধ্যমেই হাক্বীক্বী ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা লাভ সম্ভব।

অভিজ্ঞমহল মন্তব্য করেছেন, ভয়ঙ্কর জেদের কারণে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়েছে। গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ‘হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি’। ‘এদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হবে কবে?’ ‘প্রতিহিংসা নয়, রাজনীতি হোক রুচি সমৃদ্ধ।’ প্রকাশিত কলামের শিরোনাম হয়েছে “ক্ষমতার লোভের করালগ্রাস।” “দেশকে লোভ ও ক্ষমতায় আসক্তি মুক্ত করা যাবে কী!” “আদর্শহীন ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার রাজনীতি।”

পর্যবেক্ষক মহল লিখেছেন ছাত্র রাজনীতিতে এখন ভোগের ‘ধারাই প্রধান’।

আওয়ামী লীগে বঞ্চিতরা মন্তব্য করেছেন, “দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব নেতাদের পদ দেয়া হতো যোগ্যতার বদলে বরং স্বজনপ্রীতি যা অর্থের বিনিময়ে এসব পদ দেয়া হয়েছে।” বিশ্লেষকরা বলেছেন, “দুঃশাসনেই” আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পতিত সরকার সব ক্ষেত্রে চরম সীমালঙ্ঘন করেছে। আর সীমালঙ্ঘনকারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পাকড়াও করেন। তারা আরো বলেন দাম্ভিক, অহংকারী ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন না। এবং তার পতন মহা লাঞ্ছিতভাবে হয়। পতিত সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

অপরদিকে পতিত সরকারী দল থেকে সাবেক ক্ষমতাসীন দল সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছে: “ইফতার পার্টিতে আওয়ামীলীগের গীবত করে বি.এন.পি জামাত।” পতিত প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছে- “সুদখোর দিয়ে দেশের উন্নতি হয় না”। তার মন্তব্যে এসেছে “বি.এন.পি- লোক দেখানো ইসলাম করে”।

প্রণিধানযোগ্য হলো উপরিল্লিখিত জেদ, ক্ষমতার লোভ, ভোগ, হিংসা, প্রতিহিংসা, গীবত, সীমালঙ্ঘন, স্বজনপ্রীতি, নিষ্ঠুরতা দমন লোক দেখানো ইত্যাদি বদগুণ সম্পর্কে সংবিধানে কোন বর্ণনা নাই। এসব খারাবি থেকে রক্ষার কোনো অনুচ্ছেদ নাই। এসব কলুষতার সংশোধনের কোনো ধারা নেই। এসব কু-প্রবৃত্তির শাস্তির কোন বিধান নেই। এসব রিপুর কোনো উল্লেখ নেই।

অথচ এসব কু-রিপুর কারণে দেশ জাতির কত বড় ক্ষতি, কত নৃশংস প্রাণহানি কত নিষ্ঠুর আচরণ, কত দুভোর্গ হয়; প্রচারিত ছাত্র জনতার আন্দোলনে সহিংসতা, নিস্পাপ, প্রস্ফুটিত হাজার শিশু হত্যা, হাজার হাজার গণহত্যা চিরকালীন পঙ্গু বানিয়ে দেয়া তার বিশেষ প্রমাণ।

পতিত প্রধানমন্ত্রীর জেদ আর প্রতিহিংসার কোনো বয়ান, ধরণ, পরিণতি কোনো রাষ্ট্রীয় কিতাবে নাই।

কিন্তু এর পরিশুদ্ধি বা পরিসমাপ্তি যে একান্তভাবে দরকার তা সংস্কারপন্থী ও সচেতন জনতা হারে হারে টের পাচ্ছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করছেন। জোরদার আওয়াজ তুলছেন।

কিন্তু তার প্রাপ্তিটা কোথায়? প্রক্রিয়াটা কী? পরিধি কী? পর্যবেক্ষণ কী?

পৃথিবীর আর কোথাও, কোন মতবাদে, কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায়; কোন ধর্মগ্রন্থে, কোন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে, অথবা অন্য কোনো সনদে, কোন সংবিধানে, কোনো সংলাপে এসবের উল্লেখ নেই।

কেবলমাত্র, একমাত্র সত্যদ্বীন, পরিপূর্ণ দ্বীন, ইসলামে সব কুরিপুর সংজ্ঞা, প্রকৃতি, পরিণতি, পরিশুদ্ধির পর্যাপ্ত বর্ণনা আছে।

ইসলামী পরিভাষায় বদগুণগুলো হলো:- ১। কিবর (অহঙ্কার), ২। হাসাদ (হিংসা), ৩। বোগয (শত্রুতা), ৪। গদ্বব (রাগ), ৫। গীবত (পরনিন্দা), ৬। হিরছ (লোভ), ৭। কিযব (মিথ্যা), ৮। বোখল (কৃপণতা), ৯। রিয়া (লোক দেখানো), ১০। গুরুর (ধেঁাকাবাজী), ১১। কিনা (দুশমনী), ১২। ত্বমা (হালাল-হারাম না দেখে ভবিষ্যতে পাওয়ার আশা করা), ১৩। কাছীরুল কালাম (অতিরিক্ত কথা বলা), ১৪। শরফ (সম্মান কামনা করা), ১৫। হুব্বেজাহ (প্রভুত্ব প্রিয়তা), ১৬। হুব্বুদ দুনিয়া (দুনিয়ার মুহব্বত), ১৭। খোদপছন্দী (আত্মগৌরব), ১৮। কুওওয়াতে শাহওয়াত (কামশক্তি), ১৯। খতা (ভুল, মোহ বা ভ্রম), ২০। হুব্বুল মাল (মালের মুহব্বত), ২১। নিফাক্ব (কপটতা), ২২। গাফলত (অলসতা,), ২৩। শাবয়ান (অধিক আহার করা), ২৪। খছম (ঝগড়া), ২৫। নাম্মাম (চোগলখোরী), ২৬। ফুহুশ (অশ্লীলতা), ২৭। মুনাজিরা (তর্ক), ২৮। বদ দোয়া (অভিশাপ), ২৯। তোহমত (অপবাদ), ৩০। মকর  ধেঁাকাবাজী), ৩১। শেকায়েত (খারাপ বলা, দোষ বর্ণনা করা), ৩২। বদ গুমান (কুধারণা), ৩৩। আফাতুল লিসান (জবানের খারাবী), ৩৪। জুব্ন্ (ভীরুতা), ৩৫। আযল (তাড়াহুড়া করা), ৩৬। কুফর (অস্বীকার করা), ৩৭। আমাল (অবৈধ আকাক্সক্ষা), ৩৮। জিহালত (অজ্ঞতা) ইত্যাদি।

মহা দু:খজনক হলেও সত্য যে এসব বদগুণ ও তার সংশোধন সম্পর্কে কোন আলোচনা ও ইলমের চর্চা সমাজে, রাষ্ট্রে নেই। কিন্তু তার কুফলে সমাজ আজ মহা কলুষিত এবং কথিত রাষ্ট্র বিপর্যস্ত এবং নাগরিক জীবন বিধ্বস্ত। আয়নাঘরে মহা বিপর্যস্থ। গুম, খুনে লাখ লাখ জীবন নাশ প্রাপ্ত।

তাই কথিত রাষ্ট্র সংস্কার হোক আর মুসলমানের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্য হোক বর্ণিত কুরিপু বা বদগুণ থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া চর্চা করা ফরজে আইন। অর্থাৎ ইলমে তাসাউফ অর্জন ফরজ।

উল্লেখ্য, মুহলিকাতের (বদ খাছলত) কারণে ক্বলব বিনষ্ট হয়। আর মুনজিয়াতের (নেক খাছলত) কারণে ক্বলব পরিশুদ্ধ হয়। অতএব, মুহলিকাত ও মুনজিয়াত সম্পর্কিত ফরয পরিমাণ ইলম অর্জন করাও প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।

স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বলব অর্জন করতঃ অন্ততপক্ষে বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করতে হলে অবশ্যই একজন কামিল পীর ছাহেব বা কামিল শায়েখ ও কামিল মুরশিদ উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে।

ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব।

পাশাপাশি মনে রাখা কর্তব্য, হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবে আ’যম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক রূহানী সংযোগ সমৃদ্ধ ও উনার মহান সুন্নত মুবারক দ্বারা সুশোভিত।

ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকের মাধ্যমেই আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব।

সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জাত ও পবিত্র ছিফত মুবারক সম্পর্কিত ইলম ও ফিকির। উনার হাক্বীক্বত মুবারক সম্পর্কিত মা’রিফত এবং উনার পূর্ণ অনুসরণ ও সুন্নত মুবারক পালনের এবং সর্বোপরি, পরম ও গভীর মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম ও আদবের সাথে অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের কুওওয়াত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়