সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৯৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

খুবাইব আহমদ

চামেলীবাগ, ঢাকা

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাত মাঝে হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ উনার ৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّاۤ اَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সাক্ষ্যদানকারী, প্রত্যক্ষদশীর্ হিসেবে প্রেরণ করেছি।’

জানা আবশ্যক, যিনি সাক্ষ্য দিবেন উনার জন্য যেরূপ হাযির বা উপস্থিত থাকা শর্ত, তদ্রƒপ নাযির বা দেখাও শর্ত।

কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কুল-মাখলুক্বাতের সবকিছুই হাযির ও নাযির।

এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ’ উনাদের বরাত দিয়ে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّما اَنَا قَاسِمٌ وَّاللهُ يُـعْطِىْ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকু নিয়ামত বণ্টন করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, যিনি মাখলুক্বাতের জন্য নিয়ামত  বণ্টনকারী; তিনি যদি মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন, তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন? কাজেই কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামত বণ্টনকারী, সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না- সবকিছুই উনার নিকট হাযির ও নাযির।

হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ قَدْ رَفَعَ لِىَ الدُّنْـيَا فَاَنَا اَنْظُرَ اِلَيْـهَا وَاِلٰى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْـهَا اِلٰى يَـوْمِ الْقِيَامَةِ كَاَنَّمَا اَنْظُرُ اِلٰى كَفِّىْ هٰذِهٖ

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার নিকট এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি, যেরূপ আমার হাত মুবারকের তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, আততানউয়ীর শরহু জামিউছ ছগীর, আল জামিউছ ছগীর ওয়া যিয়াদাতুহ ইত্যাদি)

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন ইলিম ও কুদরত মুবারকের দ্বারা কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। অনুরূপ মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলিম ও মু’জিযা শরীফ দ্বারা কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা হচ্ছে, বাতিল ফিরক্বার আক্বীদা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৪তম সংখ্যা এবং মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণা কেন্দ্র হতে প্রকাশিত রেসালা শরীফ পাঠ করুন।

খন্দকার মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন

শান্তিবাগ, ঢাকা।

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে গইব সম্পর্কে জানতেন না। নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবকিছুই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত, সেহেতু উনার আলাদা কোন অবস্থা নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা বলতে বলেন, করতে বলেন, তিনি তাই বলেন, তাই করেন। উনার ইচ্ছা মুবারকই উনার ইচ্ছা মুবারক। উনার প্রদত্ব ইলিম মুবারকই উনার ইলিম মুবারক; তা ইলমে গইব হোক কিংবা ইলমে হাদ্বির হোক, ইলমে বাতিন হোক কিংবা ইলমে যাহির হোক। অর্থাৎ আউওয়াল ও আখিরের সর্বপ্রকার ইলিম মুবারক এবং সর্বপ্রকার নিয়ামত মুবারক উনাকে হাদিয়া করা হয়েছে।

যেমন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

أُعْطِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ

অর্থাৎ- “আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলিম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)

এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللهُ يُعْطِيْ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত মুবারক উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাখলুক্বাতের যাকে যতটুকু বা যে পরিমাণ ইচ্ছা তাকে সে পরিমাণ বণ্টন করে দিয়ে থাকেন।

এখন যিনি মাখলুক্বাতের জন্য বণ্টনকারী তিনি মূলত সৃষ্টির শুরু হতে সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত বণ্টনকারী। আর বণ্টনকারী যাদের মাঝে বণ্টন করবেন তিনি তাদেরকে অবশ্যই চিনেন ও জানেন। অন্যথায় না চিনলে ও না জানলে কাকে কতটুকু বা কি পরিমাণ দিবেন? কাজেই বলার অপেক্ষা রাখেনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে বাতিন বা ইলমে গইবসহ সমস্ত ইলিমের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, লওহে মাহফূয সম্পর্কে বলা হয়, সৃষ্টির শুরু হতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে সবকিছুই সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে বলতে হয়, লওহে মাহফূয সৃষ্টি হয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওজুদ পাক নূর মুবারক উনার এক কাতরা অংশ হতে। আর লওহে মাহফূয যেহেতু সৃষ্টিরাজির মধ্যে একটি সৃষ্টি সেহেতু তারমধ্যে সংরক্ষিত নিয়ামত তথা ইলিম মুবারকের বণ্টনকারীও হচ্ছেন নূরে  মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার ইলিম মুবারকের একটা অংশ রাখা হয়েছে লওহে মাহফূযে যেই ইলিম মুবারক মাখলুক্বাত সম্পর্কিত এবং মাখলুক্বাতের জন্য বণ্টিত। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু মাখলুক্বাতের সর্বপ্রকার নিয়ামত মুবারকের বণ্টনকারী সেহেতু তিনি মাখলুক্বাতের অবস্থা সম্পর্কিত ও তাদের জন্য বণ্টিত লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত সমস্ত ইলিম মুবারকের অধিকারী এবং তার বণ্টনকারীও।

মূলকথা হলো, লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ইলিম মুবারক যেরূপ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার ইলিম মুবারকের একটা কাতরা অনুরূপভাবে উক্ত ইলিম মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ইলিম মুবারকের এক কাতরা। সুবহানাল্লাহ!

জানা অপরিহার্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবল ইলমে গইবের অধিকারীই নন বরং তিনি পরিপূর্ণরূপে ইলমে গইবের বণ্টনকারীও। কেননা, উনার মধ্যেমেই বান্দা ও উম্মত গইবের ইলিম জেনেছে, বুঝেছে ও লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ!

 যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি আলিমুল গইব। তিনি উনার গইবের ইলিম উনার মনোনীত রসূল আলাইহিমুস সালাম ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-২৬, ২৭)

প্রতিভাত হলো, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ইলমে গইবের অধিকারী। আর উনারা এই নিয়ামতের অধিকারী হয়েছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বণ্টনের উসীলায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১২৯তম সংখ্যা এবং মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ গবেষণা কেন্দ্র হতে প্রকাশিত রেসালা শরীফ পাঠ করুন।

আহমাদুর রহমান,

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: ইদানীংকালে কিছু কিছু মৌলভী বলে থাকে যে, ‘ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির সৃষ্টি। আবার কেউ কেউ বলে যে, মাটি ও নূর উভয়টির দ্বারা তিনি সৃষ্টি হয়েছেন।’ আসলে কোনটি সঠিক? আর মানুষ মাটির তৈরী বলে যে আয়াত শরীফ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে তার সঠিক ব্যাখ্যা কি?

জাওয়াব:  আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূর মুবারক উনার তৈরি’ হিসেবে অস্বীকার করা বা মাটির তৈরি বলা এবং নূর ও মাটির সমন্বয়ে  তৈরি বলা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ও অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র নূর মুবারক উনার তৈরি বা সৃষ্টি। সেজন্য বলা হয়, তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ তিনি আপাদমস্তক নূর মুবারক।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি “সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ” উনার ১৫ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُـوْرٌ

অর্থ: “নিশ্চয় তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ‘নূর’ মুবারক এসেছেন।”

উল্লেখ্য, এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি “নূর” শব্দ মুবারক দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক “নূর বা নূর মুবারক উনার সৃষ্টি।”

যেমন ক্বাজিউল কুজাত হযরত ইমাম আবূ সউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মশহূর তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে আবী সউদ” উনার ৩য় খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُـوْرٌ) … اَلْـمُرَادُ بِالْاَوَّلِ هُوَ الرَّسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: বর্ণিত আয়াত শরীফ উনার প্রথম শব্দ মুবারক অর্থাৎ নূর মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি।”

তাছাড়া স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নিজেকে নূর মুবারক উনার তৈরি বলে উল্লেখ করেছেন। এবং এ ব্যাপারে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قُـلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاَبِىْ اَنْتَ وَاُمِّىْ اَخْبِرْنِىْ عَنْ اَوَّلِ شَىْءٍ خَلَقَ اللهُ تَـعَالٰى قَـبْلَ الْاَشْيَاءِ قَالَ يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اِنَّ اللهَ تَـعَالٰى قَدْ خَلَقَ قَـبْلَ الْاَشْيَاءِ نُـوْرَ نَبِيِّكَ

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুর পূর্বে আপনার সম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।” (মুসনাদে আব্দির রযযাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত ইত্যাদি)

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টিই হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ওজূদ পাক নূর মুবারক। আর উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক থেকেই মাটিসহ সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে উনাকে মাটির সৃষ্টি বলা কিভাবে শুদ্ধ হতে পারে?

মূলত, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বাশার, ইনসান বা মানুষ মাটির তৈরি বলতে একমাত্র হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। আর কাউকে নয়। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি  ইরশাদ মুবারক করেন-

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّنْ طِينٍ

অর্থ: “যখন আপনার মহান রব তায়ালা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করবো মাটি দ্বারা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ছোয়াদ শরীফ: সম্মানিত ও  পবিত্র আয়াত শরীফ ৭১)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে সামারকান্দী” কিতাবের ৩য় খণ্ড, ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّنْ طِينٍ) يَعْنِىْ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থ: “(নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করবো বাশার মাটি থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে।”

উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার যত আয়াত শরীফের মধ্যে ‘মানুষকে’ মাটির তৈরি বলা হয়েছে সকল আয়াত শরীফের মধ্যে উল্লিখিত ‘মানুষ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন “হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম।” কেননা, শুধুমাত্র হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ব্যতীত আর কেউই সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি বা তৈরি নন।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানকে এ আক্বীদাই রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ নূর মুবারক উনার তৈরি, মাটির তৈরি নন। অথবা নূর ও মাটি মিশ্রিতও নন। উনাকে মাটির বা মাটি ও নূরের তৈরি বলা সুস্পষ্ট গুমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

(বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগ “৬০তম সংখ্যা থেকে ৮২তম” সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ২৪১টি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে দলীলসহ বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ৯৪তম ও ১৬২তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ দেখুন।)

মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম

মানিকনগর, ঢাকা

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিন্দিগী মুবারক দু’ভাগে বিভক্ত। ১. ব্যক্তিগত যিন্দিগী, ২. নুবুওওয়াতী যিন্দিগী। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُوْلٌ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ব্যতীত অন্য কিছুই নন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا يَـنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّـوْحٰى

অর্থ: “নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেননি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)

স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

أَلَا وَأَنَا حَبِيْبُ اللهِ

অর্থ: “সাবধান হয়ে যাও, আমি হলাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব।” (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত)

অর্থাৎ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। আর তিনি সম্পূর্ণরূপে ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

কাজেই যিনি নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারক ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাহলে উনার সম্পর্কে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই নুবুওওয়াতী, রিসালতী ও হাবীবী যিন্দিগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

কোন নবী কিংবা রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে এ প্রকারের প্রশ্ন করা ও আক্বীদা পোষণ করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

কারণ, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক স্বপ্নও ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তার মানে উনারা ঘুমের মধ্যেও হযরত নবী-রসূল হিসেবেই থাকেন ব্যক্তি হিসেবে নয়। আর সজাগ অবস্থায় অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, আলাপ-আলোচনা, ওয়ায-নছীহত ইত্যাদি সর্বাবস্থায় তো অবশ্যই উনারা নবী ও রসূল হিসেবে অবস্থান করেন। তাই সর্বাবস্থায়ই উনাদের প্রতি ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে। এমনকি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিছানা মুবারক-এ থাকা অবস্থায়ও উনার প্রতি ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে।

তাহলে এটা কি করে বলা যেতে পারে যে, হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে?

আরো উল্লেখ্য, যদি বলা হয় কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক রয়েছে, তাহলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কখন নবী হিসেবে থাকেন আর কখন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে থাকেন? অর্থাৎ তিনি কত সময় ব্যাপী নবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আর কত সময়ব্যাপী ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করেন? তা কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

কারণ, আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণ পাই যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের প্রতি চব্বিশ ঘন্টাই ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে। এমনকি স্বপ্নেও উনাদের প্রতি ওহী মুবারক নাযিল হতো ও হয়েছে। যার কারণে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। এর বহু প্রমাণ রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قَالَ يَابُـنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ

অর্থ: “হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার ছেলে (হযরত ঈসমাঈল আলাইহিস সালাম!) নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ (কুরাবানী) করছি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)

অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত ঈসমাইল আলাইহিস সালাম উনাকে মিনা বাজারে শোয়ায়ে কুরবানী করার উদ্দেশ্যে গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক পুনরায় নাযিল করলেন-

قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا

অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনি আপনার স্বপ্ন মুবারককে সত্যে পরিণত করেছেন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৫)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী মুবারক বলতে কোন যিন্দিগী মুবারকই ছিলনা। উনাদের সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই ছিলো নুবুওওয়াতী বা রিসালতী যিন্দিগী মুবারক। সুতরাং ব্যক্তিগত যিন্দিগী ছিলো বলে মত পোষণ করা ও বিশ্বাস করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মুহম্মদ মুনিরুল ইসলাম,

পাবনা সদর।

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিলো না। এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিল না। এটাই সঠিক।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ আল্লামা হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “নাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “নাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে হযরত যাকওয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, “নিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া দেখা যেত না।”

ইমামুল মুহাদ্দিছীন, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার “খাছায়িছুল কুবরা” নামক কিতাবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে এ মতের সমর্থন করেন।

বাহ্রুল উলূম, শায়খুল মাশায়িখ, হযরতুল আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “শিফাউছ ছুদূর” কিতাবে লিখেছেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর মুবারক। অতঃপর যখন তিনি সূর্য অথবা চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া দৃষ্টিগোচর হতো না।”

হযরতুল আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু সম্পূর্ণ নূর মুবারক ছিলেন সেহেতু উনার ছায়া মুবারক ছিল না।

হযরত ইমাম রযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যেত।”

বিখ্যাত বুযুর্গ, ওলীয়ে কামিল, হযরত ইমাম ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “আফদ্বালুল কুরা” কিতাবে উল্লেখ করেন, “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর মুবারক ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক প্রকাশ পেতো না।”

ক্বাইয়ূমে আউওয়াল, আফদ্বালুল আওলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগদ্বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাত শরীফ” উনার ৩য় জিলদ্ ১৫৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কি করে ছায়া পড়তে পারে? ছায়া তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তবে কি উনার কোন মিছাল রয়েছে? তবে কি তিনি কামালে লাতাফাত উনার অধিকারী নন? দেখুন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘কামালে লাতাফাত’ উনার অধিকারী হওয়ার কারণে উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক পড়তো না।”

পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নির্ভরযোগ্য উল্লিখিত ক্বওল শরীফ উনার দ্বারা প্রতিভাত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরাণী জিসিম মুবারক উনার কোন ছায়া মুবারক ছিলেন না।

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল কাদীর (মুস্তাক্বীম)

মিঞাপাড়া, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: শিশু বাচ্চাদের চিবুকে কিংবা কপালের এক পার্শ্বে এবং দু’পায়ের তলায় কাজল দ্বারা ফোটা দেয়া জায়িয কিনা। অনেকে ইহাকে কুসংস্কার ও বদ প্রথা বলে। আবার কেউ কেউ শিরিক বলেও প্রচার করে। তা কতটুকু শুদ্ধ?

জাওয়াব: শিশু সন্তানেরা চিবুকে কিংবা কপালের এক পার্শ্বে কাজল দ্বারা ফোটা দেয়া জায়িয এবং সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। বদ নযর বা কুদৃষ্টির ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকার জন্য কাজল দ্বারা কালো ফোটা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ رَأَى صَبِيًّا مَلِيْحًا فَـقَالَ دَسِّمُوْا نُـوْنَـتَهٗ لَيْلًا تُصِيْـبُهُ الْعَيْنُ

অর্থ: একদা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালম একজন খুব ছূরত বিশিষ্ট (সুন্দর আকৃতির) একজন শিশুকে দেখলেন। অতঃপর বললেন, তার চিবুকে একটি কালো দাগ দিয়ে দাও। যাতে সে বদ নযর বা কুদৃষ্টি হতে মুক্ত থাকতে পারে। সুবহানাল্লাহ! (শরহুস সুন্নাহ লিল বাগবী-১২/১৬৬, শরহুত ত্বীবী-৮/২৯৩, তাফসীরে কুরতুবী-১১/৩২৯, মিরকাতুল মাফাতীহ-৭/২৮৭০)

যাদুল মায়াদ কিতাবের ৪/১৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ رَأَى صَبِيًّا تَأْخُذُهُ الْعَيْنُ فَـقَالَ دَسِّمُوْا نُـوْنَـتَهٗ

অর্থ: হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি একদা একজন বদ নযরে আক্রান্ত শিশুকে দেখে বললেন, তার চিবুকে একটি কালো দাগ দাও। (গরীবুল হাদীছ, আল কাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ-১/১৮০)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ الْفَارُوْقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّهٗ رَأَى غُلَامًا صَغِيْـرًا حُسْنَ الصُّوْرَةِ وَخَافَ عَلَيْهِ الْعَيْنَ فَـقَالَ لِأَهْلِهٖ دَسِّمُوْا نُـوْنَـتَهٗ فَـفَعَلُوْا

অর্থ: একদিন হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একজন সুদর্শন শিশুকে দেখলেন। যার উপর বদ নযরের আশঙ্কা করলেন। তখন তার অভিভাবককে বললেন, এই শিশুটির চিবুকে কালো দাগ দিন। অতঃপর অভিভাবকরা তাই করলেন। (আত তামহীদ শরহু কিতাবুত তাওহীদ)

উল্লেখ্য যে, মুসলমান-মুমিনগণ সবাই জানেন ও মানেন যে, রোগ, শোক, বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত থেকে রক্ষাকারী মহান আল্লাহ পাক তিনিই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কেউই উদ্ধারকারী বা মুক্তিদাতা নেই। ঔষধ-পত্র, উপায়-উপকরণ এগুলো উসিলা বা মাধ্যম মাত্র।

কেউ কেউ খেঁাড়া যুক্তি দেখিয়ে ফোটা দেয়াকে শিরক বা কুসংস্কার বলে থাকে। সেটা তাদের অজ্ঞতা, কল্পনা প্রসূত ও মনগড়া। তারা ধারণার বশবর্তী হয়ে এরূপ ফতওয়া দিয়ে থাকে। তা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা যদি তাদের এই কল্পনা প্রসূত ও মনগড়া কথা যথাযথ ধরা হয় তাহলে ঔষধ সেবনকারীকেও মুশরিক ও কাফির বলতে হবে। নাউযুবিল্লাহ! কেননা ঔষধকে যদি কেউ নিরাময়কারী মনে করে তাহলে সেও মুশরিকের অন্তর্ভুক্ত হবে।

অথচ কেউই ঔষধকে আরোগ্যদাতা, নিরাময় দানকারী মনে করে না। এমনকি ডাক্তারও বলে যে, আরোগ্যদাতা-নিরাময়কারী মহান আল্লাহ পাক তিনিই। ঔষধ শুধু উসিলা বা মাধ্যম মাত্র।

আর শিশু-সন্তানের কপালের পাশে বা চিবুকে কালো দেয়ার দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয় না, বরং সৌন্দর্য গোপন রাখা হয়। শিশু সন্তানের কপালে বা চিবুকে কালো ফোটা দিলে নযরদাতার দৃষ্টি প্রথমতঃ সেই কালো টিপের উপরই পড়ে। অতঃপর সন্তানের উপর পড়ে। ফলে শিশু-সন্তান বদ নযর থেকে রক্ষা পায়। সরাসরি শিশু সন্তানের উপর বদ নযর বা কুদৃষ্টি প্রভাব ফেলতে পারে না। ইহা একটি বদ নযর বা কুদৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকার বিশেষ উসিলা বা মাধ্যম। যাকে নিরাপত্তার জন্য এক প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতিও বলা যেতে পারে। যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লুহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই তা’লীম বা শিক্ষা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমগণ উনারা তার অনুসরন-অনুকরণ করেছেন।

ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘সুনানুল কুবরার ৬/১৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,

اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَرَ بِالْجَمَاجِمِ اَنْ تَجْعَلَ فِى الزَّرْعِ مِنْ اَجَلِ الْعَيْنِ

অর্থ: নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদ নযর (কুদৃষ্টি) থেকে হেফাযত (নিরাপদ) থাকার জন্য শস্যক্ষেতে (পশুর) মাথার খুলী স্থাপনের আদেশ মুবারক দিয়েছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

اَنَّهٗ لَمْ يَـزَلْ يَـرَى النَّاسَ يَجْعَلُوْنَ الْجَمَاجِمَ فِى الْحَرْثِ

অর্থ: আমি মানুষদেরকে শুরু থেকে শষ্য ক্ষেত্রে (পশুর) মাথার খুলী স্থাপন করতে দেখে আসছি।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

أَنَّ اِمْرَأَةً جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَتْ نَحْنُ مِنْ أَهْلِ الْحَرْثِ وَإِنَّا نَخَافُ عَلَيْهِ الْعَيْنَ فَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَّجْعَلَ فِيْهِ الْجَمَاجِمَ

অর্থ: একদিন একজন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হলেন। অতঃপর বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা পেশায় কৃষক। আমরা ফসল উৎপাদন করি। তাই আমরা শস্য ক্ষেতে বদ নযরের আশঙ্কা করি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শস্য ক্ষেত্রে পশুর মাথার খুলী স্থাপনের নির্দেশ মুবারক করলেন। (ফাতওয়ায়ে খানিয়া-৩/৪২৫, রদ্দুল মুহতার-৬/৩৬৪, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫৬)

ফতওয়ায়ে শামী কিতাবের ৬/৩৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

لا بأس بوضع الجماجم في الزرع والمبطخة لدفع ضرر العين، لأن العين حق تصيب المال، والادمي والحيوان ويظهر أثره في ذلك عرف بالآثار فإذا نظر الناظر إلى الزرع يقع نظره أولا على الجماجم، لارتفاعها فنظره بعد ذلك إلى الحرث لا يضره روي أن امرأة جاءت إلى النبي صلى الله عليه وسلم وقالت نحن من أهل الحرث وإنا نخاف عليه العين فأمر النبي صلى الله عليه وسلم أن يجعل فيه الجماجم

অর্থ: বদ নযরের ক্ষতি থেকে নিরাত্তার জন্য শস্য ক্ষেতে (পশুর) মাথার খুলী স্থাপন করায় কোন অসুবিধা নেই। কেননা বদ নযরের প্রভাব সত্য। যেটা যেমন ধন-সম্পদের উপর ক্রিয়া করে, তেমনি মানুষ ও পশু-পাখির উপর প্রভাব বিস্তার করে। বদ নযর বা কু দৃষ্টির ফলে যে ক্ষতি সাধিত হতে পারে তা পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

কাজেই, বদ নযরদাতা যখন শস্য ক্ষেতে নযর বা দৃষ্টি দেয় তখন তার দৃষ্টি সর্বপ্রথম সেই মাথার খুলির উপর পড়ে। অতঃপর তার দৃষ্টি শস্য ক্ষেতের উপর পড়ে। তখন শস্যের ক্ষতি সাধিত হয় না। পবিত্র হাদীছ শরীফ এ বর্ণিত আছে- একদা এক মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলেন। বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কৃষক, আমরা চাষাবাদ করি। আমরা আমাদের শষ্য ক্ষেতে বদ নযরের কু প্রভাবের ভয় করি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে শস্য ক্ষেতে (পশুর) মাথার খুলী স্থাপনের নির্দেশ মুবারক দিলেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنْ أَبِيْهِ ، عَنْ جَدِّهٖ، قَالَ : قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِيْـنَةَ، فَـقَالَ : يَا مَعْشَرَ قُـرَيْشٍ ، إِنَّكُمْ تُحِبُّـوْنَ الْمَاشِيَةَ ، فَأَقَـلُّوْا مِنْـهَا؛ فَإِنَّكُمْ بِأَقَلِّ الْأَرْضِ مَطَرًا، وَاحْتَـرَثُـوْا فَإِنَّ الْحَرْثَ مُبَارَكٌ ، وَأَكْثَـرُوْا فِيْهِ مِنَ الْجَمَاجِمِ

অর্থ: হযরত উমর ইবনে আলী আলাইহিস সালাম তিনি উনার পিতা থেকে। তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিয়ে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আপনারা তো পশুচারণ খুবই পছন্দ করেন। আপনারা পশুচারণ কম করুন। আপনারা চাষাবাদ করুন। কেননা, চাষাবাদের মধ্যে বরকত রয়েছে। আর শস্য ক্ষেতে অধিক পরিমাণে (পশুর) মাথার খুলি স্থাপন করুন।

কাজেই শস্য ক্ষেতকে কু দৃষ্টি বা বদ নযর থেকে সুরক্ষার জন্য শস্য ক্ষেতে মাথার খুলী বা এই জাতীয় জিনিষ স্থাপন করা যেমন জায়িয ও সুন্নত তেমনি শিশু সন্তানকে বদ নযর বা খারাপ দৃষ্টি থেকে মুক্ত রাখার জন্য কপালের পাশে কিংবা চিবুকে কালো ফোটা দেয়া জায়িয ও সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। কিছু লোক কিল্লতে ইলম কিল্লতে ফাহাম (কম জ্ঞান-কম বুঝ) এর কারণে মনগড়া ও অজ্ঞতা প্রসূত ফাতওয়া দিয়ে থাকে। ফলে সমাজে নানা ফিতনা ফাসাদের সূত্রপাত ঘটে।

উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্নিত আছে-

لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٍ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেকটি রোগেরই ঔষধ আছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-

مَا اَنْـزَلَ اللهُ دَاءً اِلَّا اَنْـزَلَ اللهُ لَهٗ شِفَاءٌ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক বা ঔষধ সৃষ্টি করেননি। অর্থাৎ প্রত্যেকটি রোগেরই ঔষধ রয়েছে। (ফাতহুল বারী)

আর সন্তান-সন্ততিকে বদ নযর বা কু দৃষ্টির প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য ঔষধ বা প্রতিষেধক হচ্ছে, কপালের পাশে, চিবুকে কালো ফোটা দেয়া। তাছাড়া যদি কোন কোন শিশু সন্তানের হাত ও পা খুবই আকর্ষণীয় হয়ে। সেক্ষেত্রে তাদের পায়ের তলায় কালো ফোটা দেয়া জায়িয ও সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।

আর কোন সন্তান-সন্ততি যদি বদ নযরে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে ঝাড়-ফুঁক করাও সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদ নযরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝাড়-ফঁুক করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।

ঝাড় ফুঁকের দোয়া-১

بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُـؤْذِيْكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَـفْسٍ أَوْ عَيْنٍ أَوْ حَاسِدٍ اَللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরক্বীকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউযীক্বা ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদীন আল্লাহু ইয়াশফীকা বিসমিল্লাহি আরক্বীকা।

অর্থ: আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নামে এমন প্রতিটি জিনিষ থেকে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি যা আপনাকে কষ্ট দেয়। প্রতিটি সৃষ্টি জীবের এবং চোখের তথা বদ নযরের, প্রত্যেক হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (মুসলিম শরীফ)

ঝাড় ফুঁকের দোয়া-২

أُعِيْذُكَ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ: উয়ীযুকা বিকালিমাতিল্লাহি তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।

অর্থ: আমি মহান আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ বাক্যাবলীর মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান, বিষধর বস্তু অনিষ্টকারী বদ নযর হতে আপনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

আহমদ মা’রূফা জান্নাত

পলাশ, নূরানীবাদ

সুওয়াল: পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকে বলে থাকে যে, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম ছিল আযর এবং সে ছিল একজন মূর্তিপূজক। অথচ আমরা জানি যে, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব আমার সুওয়াল হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনাদের মধ্যে কেউ মূর্তিপূজক তথা কাফির-মুশরিক থাকার বিষয়টি কতটুকু শুদ্ধ? সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা হিফাযত করবেন।

জাওয়াব: হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এরূপভাবে মনোনীত যে, উনাদের কারো পিতা-মাতা উনারা কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। বরং উনাদের মধ্যে অনেকে নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন আর যাঁরা নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না উনারা ঈমানদার তো অবশ্যই উপরন্তু উনারা ছিলেন উনাদের যুগে মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল বান্দা-বান্দী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। এটাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের মত। এ মতের বিপরীত সকল অভিমত কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নবী ও রসূল হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত ও পথের পরিপূর্ণ অনুসারী একজন খালিছ ঈমানদার। সর্বোপরি তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াত প্রকাশের মহানতম ওসীলা। কেননা সমগ্র সৃষ্টির যিনি মূল উৎস সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ওজুদ ‘নূর মুবারক’ উনার একজন মহান ধারক-বাহক।

হযরত আবুল বাশার আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উম্মুল বাশার হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে যে সকল মনোনীত ও সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ওজুদ ‘নূর’ মুবারক আবূ রসূলিনা হযরত আব্দুল্লাহ যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উম্মু রসূলিনা হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে উনারা সকলেই ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম পবিত্রতম সুমহান ব্যক্তিত্ব। উনাদের মধ্যে কেউই কাফির, মুশরিক বা বেদ্বীন ইত্যাদি ছিলেননা। উনারা সকলেই ছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত মনোনীত খাছ বান্দা-বান্দী উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

মূলত যারা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা বা পরিবারকে মূর্তিপূজক হিসেবে অভিহিত করে কুফরী কাজটি করে থাকে তারা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তাফসীর সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও জাহিল হওয়ার কারণেই করে থাকে। এছাড়া তারা মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত নবী ও রসূল হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহানতম ও পবিত্রতম শান, মান, মর্যাদা, মর্তবা সম্পর্কে এবং উনার সুমহান পরিচয় সম্পর্কে চরম অজ্ঞ ও গণ্ড মূর্খ হওয়ার কারণে এবং পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত لِاَبِيْهِ اٰزَرَ উনার মূল ও সঠিক অর্থ যা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে তা গ্রহণ না করে তার বিপরীতে শুধুমাত্র আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থের উপর ভিত্তি করে অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করার কারণে করে থাকে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

যেমন, বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ উনার ৩য় খণ্ড ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَكَانَ اٰزَرُ عَلَى الصَّحِيْحِ عَمًّا لِاِبْـرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَالْعَرَبُ يُطْلِقُوْنَ الْاَبَ عَلَى الْعَمِّ كَمَا فِىْ قَـوْلِهٖ تَـعَالٰى نَـعْبُدُ اِلٰـهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَائِكَ اِبْـرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰـهًا وَّاحِدًا

অর্থ: “বিশুদ্ধ মতে, আযর ছিলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। আর আরবরা চাচাকেও اَبٌ (আবুন) শব্দে অভিহিত করে থাকে।” যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমরা আপনার প্রতিপালক ও আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম উনাদের একক প্রতিপালক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবো।”

সুতরাং, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ৭৪নং আয়াত শরীফে اَبِيْهِ اٰزَرَ এর অর্থ হলো আযর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার চাচা। উনার পিতা নন।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ اَبَا اِبْـرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمْ يَكُنْ اِسْمُهٗ اٰزَرَ وَاِنَّمَا كَانَ اِسْمُهٗ تَارَحٌ

অর্থ : “রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতার নাম আযর নয়। বরং উনার পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম শরীফ, ইবনে কাছীর শরীফ- ৩/২৪৮)

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

اِنَّ اٰبَاءِ الْاَنْبِيَاءِ مَاكَانُـوْا كُفَّارًا وَيُدَلُّ عَلَيْهِ وُجُوْهٌ مِّنْـهَا قَـوْلُهٗ وَتَـقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা বা পূর্বপুরুষ উনারা কেউই কাফির ছিলেননা। তার দলীল হচ্ছে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এ কালাম বা  পবিত্র আয়াত শরীফ-

وَتَـقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ

অর্থাৎ: “তিনি আপনাকে (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সিজদাকারীগণ উনাদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (সম¥ানিত ও পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ ২৯, তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)

প্রকাশ থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ।

কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাঁদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত উনারা সকলেই ছিলেন সিজদাকারী। অর্থাৎ সকলেই নামায-কালাম, যিকির-আযকার, ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। উনারা সকলেই পূর্ণ পরহেযগার, মুত্তাক্বী ও দ্বীনদার ছিলেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

لَـمْ اَزَلَ اَنْـقُلُ مِنْ اَصْلَابِ الطَّاهِرِيْنَ اِلٰى اَرْحَامِ الطَّاهِرَاتِ

অর্থ : “আমি সর্বদা পূত-পবিত্র নারী ও পুরুষ উনাদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩/৩৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

فَلَا يُـمْكِنُ اَنْ يَّكُوْنَ كَافِرًا فِى سِلْسِلَةِ اٰبَائِهٖ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা (পূর্ব পুরুষ) উনাদের সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড ৩০৮ পৃষ্ঠা)

এ কথা বিশেষভাবে  স্মরণীয় ও প্রণিধানযোগ্য যে, সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা এ বিষয়ে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল মুজাসসাম শরীফ বা পবিত্র জিসিম মুবারকে, পবিত্র নূরুদ দারাজাত শরীফ (পা মুবারকে) যা কিছু স্পর্শ করেছে তা আরশে মুআল্লা উনার চাইতে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি মর্যাদাবান। সুবহানাল্লাহ!

তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র অজুদ ‘নূর’ মুবারক তা যাঁদের মাধ্যম হয়ে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয়ে তিনি যমীনে আগমন করেছেন সেই সকল ব্যক্তিগণ উনাদের মর্যাদা কত বেমেছাল হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

বস্তুত সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহান শানে এরূপ কুফরীমূলক উক্তি করার অর্থ হলো খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করা। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

আরো উল্লেখ্য, যেই পবিত্র নসব-নসল সূত্রে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনেন উনাদের পূর্ব-পুরুষ উনাদের নসব-নসলনামায় ‘কেউ কেউ ঈমানদার ছিলেননা’ এরূপ কল্পনা বা ধারণা করাও কাট্টা কুফরী।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিতা ছিলেন হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল উনার চাচা।

আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পূর্বপুরুষগণ এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষগণ হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আবূ রসূলিনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারকের অধিকারী, পূর্ণ দ্বীনদার ও পরিপূর্ণ মুসলমান।

অতএব, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ও পরিবার সম্পর্কে কুফরীমূলক আক্বীদা রাখবে ও বক্তব্য-লিখনী প্রকাশ করবে, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী তার উপরে মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। অর্থাৎ সে ইসলাম বা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। ইসলামী খিলাফত থাকলে তাকে তিনদিন সময় দেয়া হতো তওবা করার জন্য। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তার শাস্তি হতো মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া জায়িয হবে না। তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না; বরং তাকে মৃত কুকুর-শৃগালের মত মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। তার জীবনের সমস্ত নেক আমল বাতিল হয়ে যাবে। বিবাহ করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে এবং সে হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। সে ওয়ারিছসত্ব থেকেও বঞ্চিত হবে।

{দলীলসমূহ : (১) তাফসীরে মাযহারী, (২) ইবনে কাছীর, (৩) ইবনে আবী হাতিম, (৪) কবীর, (৫) আহকামুল কুরআন, (৬) আহমদী, (৭) তাফসীরে বাইযাবী, (৮) বয়ানুল হক্ব, (৯) মাআলিমুত তানযীল, (১০) তাফসীরে জালালাইন, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) তিরমিযী, (১৪) বাইহাক্বী, (১৫) মিশকাত, (১৬) মুস্তাদরাকে হাকিম, (১৭) তবারানী, (১৮) কামূস, (১৯) ফতহুল বারী,(২০) উমদাতুল ক্বারী, (২১) মিরকাত, (২২) আশয়াতুল লুময়াত, (২৩) লুময়াত, (২৪) তা’লীকুছ ছবীহ, (২৫) শরহুত ত্বীবী, (২৬) মুযাহিরে হক্ব, (২৭) ফতহুল মুলহিম, (২৮) শরহে নববী, (২৯) আহমদ, (৩০) ইবনে আসাকির, (৩১) ইবনে মারদুবিয়া, (৩২) তাক্বদীসু আবায়িন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (৩৩) দুররুল মুখতার, (৩৪) ফিকহুল আকবর, (৩৫) শরহুশ শিফা, (৩৬) শুমুলুল ইসলাম লি উছূলির রসূলিল কিরাম, (৩৭) আকাইদে নিজামিয়া, (৩৮)  কাছাছূল আম্বিয়া, (৩৯) কাছাছূল কুরআন, (৪০) কুরআন কাহিনী, (৪১) কিতাবুদ্ দারাযিল, (৪২) মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া, (৪৩) শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াহ, (৪৪) কিছাছে আম্বিয়া, (৪৫) মাতালিউন নূর, (৪৬) আল মুসতালিদ, (৪৭) বারাহিনে ক্বাতিয়া ইত্যাদি।}

সুওয়াল জাওয়াব

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ